Dhaka , Monday, 2 December 2024

বিশ্বকে মানবতা নিয়ে চিন্তার সুযোগ করোনা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : 05:26:35 am, Saturday, 9 May 2020
  • 566 বার

করোনা মহামারী আমাদের মানবতা নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ দিয়েছে। এ সংকটে শিশুদের সার্বিক সুরক্ষার চেয়ে অন্য কিছু খুবই গুরুত্বপূর্ণ বা জরুরি নয়। করোনাভাইরাসে শিশুরা সন্দেহাতীতভাবে কম ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এ মহামারীর প্রভাবে আনুষঙ্গিক আরও বহু ঝুঁকিতে রয়েছে তারা।

কোভিড-১৯’র কারণে অর্থনৈতিক পতন সুস্পষ্ট ও বর্বর। লকডাউন ও ঘরে থাকার নির্দেশনার ফলে চাকরি হারানো এবং অর্থনৈতিক অনিরাপত্তা তৈরি হয়েছে। নিশ্চিতভাবে বহু পরিবারে চাপ বেড়েছে। আমরা জানি যে, ঘরে চাপ বাড়ার কারণে গৃহবিবাদ বৃদ্ধির ঝুঁকি থাকে, সেটা উন্নত দেশ হোক বা কোনো শরণার্থী ক্যাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রে বছরে প্রতি ১৫ শিশুর মধ্যে একজন তার অন্তরঙ্গ বন্ধুর কাছে গৃহবিবাদের বিষয়টি প্রকাশ করে। তাদের ৯০ শতাংশই আবার এসব সংঘাতের প্রত্যক্ষ সাক্ষী। বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন গড়ে ১৩৭ জন নারী তার পার্টনার বা পরিবারের সদস্যের হাতে হত্যার শিকার হন। ভুক্তভোগী ও হয়রানিকারী উভয়ই আইসোলেশনে থাকায় এখন এগুলো অগোচরেই থেকে যাচ্ছে।

এর মানে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিধি এ মানসিক আঘাত বৃদ্ধি এবং সংবেদনশীল শিশুকে হয়রানির জন্য সহায়ক। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী হত্যাসহ গৃহ নির্যাতনের বহু খবর প্রকাশ পেয়েছে। এটা এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন শিশুরা তাদের সুরক্ষা নেটওয়ার্ক যেমন বন্ধু, বিশ্বস্ত শিক্ষক এবং প্রিয় প্রতিবেশীর বাড়িতে ভ্রমণ থেকে বঞ্চিত, যেটা তাদের হয়রানির পরিবেশ থেকে সুরক্ষা রাখতে পারত।

কোভিড-১৯ মহামারী শিশুদের তাদের বন্ধুদের থেকে, প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া-আসা এবং স্বাধীন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। বিশ্বজুড়ে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ লকডাউনে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে। এ সময় শিশুদের শিক্ষা থেকে দূরে থাকা রোধ এবং আইসোলেশনের মধ্যে তাদের আনন্দে রাখার দিকে নজর দিতে হবে। অনেক শিক্ষার্থীর কাছে তাদের স্কুলই হয়রানির পরিবেশ যেমন যৌন নিপীড়ন, জোরপূর্বক বিবাহ ও শিশুশ্রম থেকে সুরক্ষার প্রাথমিক কেন্দ্র।

সবকিছু বিবেচনায় প্রশ্ন হল- শাটডাউনের সময় শিশুদের যৌন নিপীড়ন, যেটা তাদের বাকি জীবনে চরম প্রভাব ফেলবে, তা মোকাবেলায় আমরা কি করতে পারি? সমাজের পক্ষ থেকে শিশুদের সুরক্ষায় আমরা এখনও প্রস্তুত নই। শিশুদের ওপর এ মানসিক অবসাদের স্বাস্থ্যগত প্রভাব মোকাবেলায়ও আমাদের সমাজ ভঙ্গুর। আমরা শারীরিকভাবে একে অপর থেকে লকডাউনে থাকলেও আমরা পরিবার ও বন্ধুদের ফোনে সচেতনতা বাড়াতে পারি। বিশেষ করে যারা সম্ভাব্য ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের বিষয়ে অবহিত করতে পারি।

গৃহ নির্যাতনের বৈশিষ্ট্য এবং এটিকে কেমন সিরিয়াসলি নিতে হবে সে বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে পারি। স্থানীয় গৃহ নির্যাতন সেন্টারকেও আমরা সহায়তা দিতে পারি। দ্য গ্লোবাল পার্টনারশিপ টু অ্যান্ড ভায়োলেন্স এগেইনস্ট চিলড্রেন এ মহামারীর সময়ে শিশুদের সুরক্ষার আহ্বান জানিয়েছে। অনলাইনে শিশুদের সুরক্ষা এবং জটিল ইস্যুতে কথা বলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দ্য চাইল্ড হেল্পলাইন নেটওয়ার্ক সরাসরি পিতামাতা ও অন্য অভিভাবকের নম্বরে ফোন দিয়ে উপদেশ ও তথ্য সরবরাহ করতে পারে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার বিষয়ক রেজুলেশন গৃহীত

বিশ্বকে মানবতা নিয়ে চিন্তার সুযোগ করোনা

আপডেট টাইম : 05:26:35 am, Saturday, 9 May 2020

করোনা মহামারী আমাদের মানবতা নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ দিয়েছে। এ সংকটে শিশুদের সার্বিক সুরক্ষার চেয়ে অন্য কিছু খুবই গুরুত্বপূর্ণ বা জরুরি নয়। করোনাভাইরাসে শিশুরা সন্দেহাতীতভাবে কম ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এ মহামারীর প্রভাবে আনুষঙ্গিক আরও বহু ঝুঁকিতে রয়েছে তারা।

কোভিড-১৯’র কারণে অর্থনৈতিক পতন সুস্পষ্ট ও বর্বর। লকডাউন ও ঘরে থাকার নির্দেশনার ফলে চাকরি হারানো এবং অর্থনৈতিক অনিরাপত্তা তৈরি হয়েছে। নিশ্চিতভাবে বহু পরিবারে চাপ বেড়েছে। আমরা জানি যে, ঘরে চাপ বাড়ার কারণে গৃহবিবাদ বৃদ্ধির ঝুঁকি থাকে, সেটা উন্নত দেশ হোক বা কোনো শরণার্থী ক্যাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রে বছরে প্রতি ১৫ শিশুর মধ্যে একজন তার অন্তরঙ্গ বন্ধুর কাছে গৃহবিবাদের বিষয়টি প্রকাশ করে। তাদের ৯০ শতাংশই আবার এসব সংঘাতের প্রত্যক্ষ সাক্ষী। বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন গড়ে ১৩৭ জন নারী তার পার্টনার বা পরিবারের সদস্যের হাতে হত্যার শিকার হন। ভুক্তভোগী ও হয়রানিকারী উভয়ই আইসোলেশনে থাকায় এখন এগুলো অগোচরেই থেকে যাচ্ছে।

এর মানে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিধি এ মানসিক আঘাত বৃদ্ধি এবং সংবেদনশীল শিশুকে হয়রানির জন্য সহায়ক। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী হত্যাসহ গৃহ নির্যাতনের বহু খবর প্রকাশ পেয়েছে। এটা এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন শিশুরা তাদের সুরক্ষা নেটওয়ার্ক যেমন বন্ধু, বিশ্বস্ত শিক্ষক এবং প্রিয় প্রতিবেশীর বাড়িতে ভ্রমণ থেকে বঞ্চিত, যেটা তাদের হয়রানির পরিবেশ থেকে সুরক্ষা রাখতে পারত।

কোভিড-১৯ মহামারী শিশুদের তাদের বন্ধুদের থেকে, প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া-আসা এবং স্বাধীন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। বিশ্বজুড়ে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ লকডাউনে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে। এ সময় শিশুদের শিক্ষা থেকে দূরে থাকা রোধ এবং আইসোলেশনের মধ্যে তাদের আনন্দে রাখার দিকে নজর দিতে হবে। অনেক শিক্ষার্থীর কাছে তাদের স্কুলই হয়রানির পরিবেশ যেমন যৌন নিপীড়ন, জোরপূর্বক বিবাহ ও শিশুশ্রম থেকে সুরক্ষার প্রাথমিক কেন্দ্র।

সবকিছু বিবেচনায় প্রশ্ন হল- শাটডাউনের সময় শিশুদের যৌন নিপীড়ন, যেটা তাদের বাকি জীবনে চরম প্রভাব ফেলবে, তা মোকাবেলায় আমরা কি করতে পারি? সমাজের পক্ষ থেকে শিশুদের সুরক্ষায় আমরা এখনও প্রস্তুত নই। শিশুদের ওপর এ মানসিক অবসাদের স্বাস্থ্যগত প্রভাব মোকাবেলায়ও আমাদের সমাজ ভঙ্গুর। আমরা শারীরিকভাবে একে অপর থেকে লকডাউনে থাকলেও আমরা পরিবার ও বন্ধুদের ফোনে সচেতনতা বাড়াতে পারি। বিশেষ করে যারা সম্ভাব্য ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের বিষয়ে অবহিত করতে পারি।

গৃহ নির্যাতনের বৈশিষ্ট্য এবং এটিকে কেমন সিরিয়াসলি নিতে হবে সে বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে পারি। স্থানীয় গৃহ নির্যাতন সেন্টারকেও আমরা সহায়তা দিতে পারি। দ্য গ্লোবাল পার্টনারশিপ টু অ্যান্ড ভায়োলেন্স এগেইনস্ট চিলড্রেন এ মহামারীর সময়ে শিশুদের সুরক্ষার আহ্বান জানিয়েছে। অনলাইনে শিশুদের সুরক্ষা এবং জটিল ইস্যুতে কথা বলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দ্য চাইল্ড হেল্পলাইন নেটওয়ার্ক সরাসরি পিতামাতা ও অন্য অভিভাবকের নম্বরে ফোন দিয়ে উপদেশ ও তথ্য সরবরাহ করতে পারে।