রোজা ও ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। নির্ভরযোগ্য তথ্যমতে সচিব বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে অনির্ধারিত এক মাসের বেশী বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে বার্ষিক শিক্ষাপঞ্জি হিসেবে রোযার ছুটি শুরু হয়েছে।এরপর ঈদুল ফিতরের ছুটি শুরু হবে। সব মিলে আগামী ৩০ মে-এর পর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে।
সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, এ বিষয়ে ৫ মে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় সরকার সাধারণ ছুটি আরও ১১ দিন বাড়িয়ে আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বর্ধিত করেছে। এ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ থাকবে। এরপর রোযা ও ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে বলে ৫ মে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা-ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়ার পর প্রথম গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে সরকার। পরে দফায় দফায় ছুটি বাড়ানো হয়। তবে দেশের সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে অচিরেই অফিস-আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।
তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ খোলার পর ১৭টি নির্দেশনা মেনে চলতে হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে। সেগুলো নিম্নরূপ–
১. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে মহামারী প্রতিরোধক মাস্ক, জীবাণুনাশক এবং নন-কন্ট্যাক্ট থার্মোমিটার সংগ্রহ করে জরুরি কাজের পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। প্রতিটি ইউনিটের জবাবদিহিতা বাস্তবায়ন এবং শিক্ষক ও শিক্ষাদান কর্মীদের প্রশিক্ষণ জোরদার করতে হবে।
২. শিক্ষক, শিক্ষাদান-কর্মী ও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের অবস্থা পর্যবেক্ষণ জোরদার করতে হবে। সকাল ও দুপুরে পরীক্ষার ব্যবস্থা বাস্তবায়ন এবং ‘প্রতিদিনের প্রতিবেদন’ এবং ‘শূন্য প্রতিবেদন’ পদ্ধতি প্রবর্তন করতে হবে।
৩. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশ পথে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, শিক্ষার্থী এবং বহিরাগত শিক্ষাদানকর্মীদের শরীরের তাপমাত্রা নিতে হবে। যাদের শরীরের তাপমাত্রা বেশি পাওয়া যাবে, তাদেরকে প্রবেশে নিষেধ করতে হবে।
৪. শ্রেণিকক্ষ, খেলার মাঠ এবং পাঠাগারের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে বায়ু চলাচল ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। দিনে ২-৩ বার প্রায় ২০-৩০ মিনিটের মতো উন্মুক্ত বায়ু চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রক ব্যবহারের ক্ষেত্রে শীতাতপ নিয়ন্ত্রকের স্বাভাবিক মাত্রা নিশ্চিত করতে হবে। বিশুদ্ধ বায়ু চলাচল বৃদ্ধি করতে হবে এবং ফিরতি বায়ু চলাচল বন্ধ করতে হবে।
৫. শ্রেণি কক্ষ, সর্বসাধারণ কর্তৃক ব্যবহৃত হয়-এমন জায়গাসহ অন্যান্য জায়গার মেঝে ও ঘরের দরজার হাতল, সিঁড়ির হাতল এবং যেসব বস্তু বারবার ব্যবহৃত হয়, সেসব বস্তুর তলপৃষ্ঠ ঘন ঘন পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
৬. খাবার থালাবাসন ও পানির পাত্র পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে এবং প্রতিবার পরিবেশনের পরে পুনরায় ব্যবহারের জন্য খাবার থালাবাসন ও পানির পাত্র জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
৭. দূরে দূরে বসে খাবার গ্রহণ করতে হবে এবং সম্পূর্ণ নিজস্ব থালাবাসন বা ওয়ানটাইম থালা বাসন ব্যবহার করতে হবে।
৮. প্রতিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চত্বরের আবর্জনা পরিষ্কার এবং আবর্জনা সংরক্ষণকারী পাত্র জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
৯. অফিস কার্যালয়ে কাগজের সীমিত ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে হবে। শিক্ষাদানকর্মীদের পারস্পরিক শারীরিক যোগাযোগ কমানো এবং দূরবর্তী বা অনলাইন শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
১০. স্বাভাবিক অবস্থা না আসা পর্যন্ত কোন প্রকার অভ্যন্তরীণ জমায়েত বা ক্রিয়াকলাপের আয়োজন করা যাবে না। যেকোনও বদ্ধ বা ঘন জনবহুল স্থান বা অন্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক মিটারের কম বা সমান দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
১১. শিক্ষক, শিক্ষাদান কর্মী এবং শিক্ষার্থীদের বহির্গমন কমিয়ে দিতে হবে।
১২. শিক্ষাদান কর্মকর্তা এবং শিক্ষার্থীরা মাস্ক ব্যবহার করুন। হাত ধোয়াসহ অন্য সব স্বাস্থ্যবিধি শক্তিশালী করুন। দ্রুত হাত শুকানো জীবাণুনাশক বা জীবাণুনাশক টিস্যু ব্যবহার করুন। হাঁচি দেওয়ার সময় মুখ এবং নাক ঢাকতে টিস্যু বা কনুই ব্যবহার করতে হবে।
১৩. মহামারী প্রতিরোধকে জোরদার করতে হবে। শিক্ষক, শিক্ষাদানকর্মী ও শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের সময় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করতে হবে।
১৪. শিক্ষক, শিক্ষাদানকর্মী বা শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোভিড-১৯-এর সন্দেহভাজন কোন কেস থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে এবং যারা এই কেসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এসেছেন, তাদের দ্রুত শনাক্ত ও কোয়ারেন্টাইন-এর ব্যবস্থা করতে হবে।
১৫. কোয়ারেন্টাইনে অবস্থানরত শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী বা শিক্ষার্থীদের পিতামাতার স্বাস্থ্যের অবস্থা জানা এবং তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করার জন্য একজন বিশেষ ব্যক্তিকে নিয়োগ করতে হবে।
১৬. কোন নিশ্চিত কোভিড-১৯ কেস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ এবং বায়ু চলাচল ব্যবস্থা পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে। মূল্যায়ন না হওয়া হওয়া পর্যন্ত এটির পুনরায় ব্যবহার শুরু করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
১৭. একত্রে বসে খাওয়ার মতো ডাইনিং পরিষেবা বন্ধ রাখতে হবে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি তার বক্তব্যে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি খারাপ হলে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকতে পারে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটি বাড়বে কি না তা পরে যাচাই করে দেখা হবে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে আপাতত ৩০ মে-এর পর দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি খারাপ হলে তখন অন্যরকম সিদ্ধান্ত হতে পারে।