Dhaka , Monday, 2 December 2024

অমুসলিমদেরও ফিতরা দেয়া যায়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : 04:48:44 am, Thursday, 14 May 2020
  • 532 বার

রোজার শেষে সামর্থ্যবান মুসলিমদের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা একটি দান আবশ্যক করেছেন। সেটিকে বলা হয় যাকাতুল ফিতর তথা ফিতরা।

প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির নিজের ও তার অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়ের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করার নিয়ম।

জব, খেজুর, কিশমিশ ও পনির থেকে ফিতরা আদায় করলে তিন কেজি ৩০০ গ্রাম আর গম বা গমের আটা দিয়ে ফিতরা দিলে এক কেজি ৭০০ গ্রাম বা এর সমমূল্য কোনো গরিবকে দিতে হবে।

ফিতরা বিধানের হিকমত বা রহস্য কী? এ নিয়ে বিভিন্ন মতামতের ভেতর প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে এই যে, রমজানের রোজা রাখার ক্ষেত্রে যেসব ত্রু টি বিচ্যুতি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে আল্লাহতায়ালা এ বিধান দিয়েছেন।

আরেকটি মত হচ্ছে রোজা শেষের ঈদটা যেন সবাই মিলে একসঙ্গে উদযাপন করতে পারে। ঈদের দিন অভাবী দুস্থ লোকেরা যেন আনন্দে কাটাতে পারে।

জানার বিষয় হচ্ছে, কাদেরকে ফিতরা দেয়া যাবে? নিশ্চয় গরিব দুঃখিদের মাঝে বণ্টন করতে হবে। কিন্তু কেবল গরিব মুসলিমদেরকেই কি ফিতরা দিতে হবে? অমুসলিমদের মাঝে ফিতরা বণ্টন করা যাবে না?

আমাদের সমাজে এ মাসআলাটার চর্চা হতে দেখা যায় না। অথচ বাংলাদেশে কয়েক কোটি হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান এবং অন্য আরো ধর্মের লোক রয়েছে।

আরব বা পাকিস্তানের মত অবস্থা আমাদের নয় আমরা এক মিশ্র কালচারে বসবাস করি। এধরনের পরিবেশে থাকা মানুষের জন্য ইসলামী শরিয়তের বিশেষ বিধানাবলি রয়েছে। সেগুলোর চর্চা হওয়া একান্ত আবশ্যক।

একজন মুসলিম হিসেবে দেশের দরিদ্র অমুসলিমদের খোঁজ রাখা আমাদের কর্তব্য। ইসলাম ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের কল্যাণে কাজ করতে শেখায়। দান সদকার ক্ষেত্রেও ইসলামে এ উদারতা রয়েছে। সব ধর্মাবলম্বী মানুষকে দান করার নির্দেশনা রয়েছে কোরআন সুন্নায়।

কেবল জাকাতের ক্ষেত্রে ভিন্ন বিধান। অর্থাৎ জাকাত কোনো অমুসলিমকে দেয়া যাবে না। যদিও পবিত্র কোরআনে অমুসলিমদেরও জাকাত দেওয়ার কথা এসেছে কিন্তু বিধানটি বিশেষ পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। সাধারণ অবস্থায় সে বিধান প্রযোজ্য নয়।

কখনও সেরকম পরিস্থিতি হলে ফিকহ বিশারদরা বলেন, আবারও অমুসলিমদেরও জাকাত দেওয়ার সুরত হবে।

জাকাত ছাড়া অন্য সব দান সদকা মুসলিমদের মাঝে যেমন বিলি করা যায়, অমুসলিমদেরও এসব ওয়াজিব ও নফল দানে শরিক করা যায়। যেমন কাফফারা, মানত ও সদাকাতুল ফিতর। এসব সদকা অমুসলিমদের দিলেও আদায় হয় বলে ফতোয়ার কিতাবাদিতে রয়েছে।

ঈদের দিন আপনি ঈদের আনন্দ করবেন আর আপনার প্রতিবেশি কোনো দরিদ্র হিন্দু বা বৌদ্ধ না খেয়ে থাকবে তাহলে আপনার ঈদ কি করে সুন্দর হয়?

কেবল ঈদ কেন, অন্য সময়েও অমুসলিম প্রতিবেশীর খোঁজ খবর নেয়ার বিধান খোদ রাসল সা. হাদিসে দিয়েছেন। নবীজী বলেন, মুমিন হতে পারবে না ওই ব্যক্তি, যে তৃপ্তিসহকারে আহার করে অথচ তার প্রতিবেশি থাকে অভুক্ত। [তাবারানি] এখানে মুসলিম প্রতিবেশীর কথা বলেননি রাসুল সা.। যে কোনো প্রতিবেশির ক্ষেত্রেই এ বিধান।

সাহাবায়ে কেরাম রাসুল সা.-এর এ বিধান অক্ষরে অক্ষরে পালন করে দেখিয়েছেন। হযরত ইবন উমর রা.-এর বাড়িতে একবার বকরি জবাই হলো। তিনি বাইরে থেকে এসেই জিজ্ঞেস করলেন, আমার ইহুদি প্রতিবেশির ঘরে মাংস পাঠিয়েছ কি?

বর্তমানে আমরা তো সব অমুসলিমের ভেতর ইহুদিদেরই অস্পৃশ্য মনে করি অধিক। একজন ইহুদি প্রতিবেশীর জন্যও নবীজীর সাহাবির এমন চিন্তা। ভাবলে সত্যি অবাক হতে হয়।

আমরা আজ ইসলামের শিক্ষা থেকে কতটা দূরে এসে গেছি। আজ যেন কোনো অমুসলিমকে ফিতরা দেয়ার কথা কল্পনাই করা যায় না।

পাঠকের কাছে এটা বিস্ময়কর মনে হতে পারে। আমি কোনো অভিনব কথা বলছি না। হানাফি মাজহাবের যে কোনো ফতোয়ার কিতাব উল্টে দেখতে পারেন। সব কিতাবেই এ মাসআলা লেখা আছে।

বাদায়েউস সানায়ে, তাবইনুল হাকায়েক ও অধিকাংশ ফতোয়ার কিতাবে এ মাসআলার পক্ষে দলীল দেয়া হয়েছে সুরা মুমতাহিনার আয়াত দিয়ে।

যেখানে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা ইরশাদ করেন, যে সব কাফের তোমাদের সাথে ধর্ম নিয়ে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে স্বদেশ থেকে বের করেনি তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। আল্লাহ তো ন্যায়পরায়নদেরকে ভালোবাসেন। [সুরা: মুমতাহিনা, আয়াত: ৮]

সব অমুসলিমকে শত্রু জ্ঞান করা আর অমুসলিমদের দিকে সন্দেহের চোখে দেখা চরম সংকীর্ণতার পরিচায়ক। ইসলামে কোনো সংকীর্ণতা নেই।

অনেক আয়াতে অমুসলিমদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করা হয়েছে। সেসব আয়াত নাযিল হবার বিশেষ প্রেক্ষাপট ছিল। সব অমুসলিমের ক্ষেত্রে নাযিল হয়নি তা। যাদের ধর্মের পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান নেই তারা খণ্ডিতভাবে সেসব আয়াত উপস্থাপন করে থাকেন।

পাঠক এই সুরা মুমতাহিনারই পরবর্তী আয়াত দেখুন- আল্লাহ শুধু সেসব কাফেরের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন যারা ধর্ম নিয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে স্বদেশ থেকে বের করেছে এবং তোমাদের দেশছাড়া হতে সাহায্য করেছে। এসব কাফেরের সঙ্গে যারা বন্ধুত্ব করে তারা তো জালিম। [সুরা: মুমতাহিনা, আয়াত: ৯] খোলা চোখে যে এ দুটি আয়াত দেখবে তার কাছে ইসলামের অসাম্প্রদায়িক রূপটি খুব সহজে স্পষ্ট হয়ে যাবে। নবীজীর সীরাতেও এর রিফ্লেকশন দেখা যায়।

এখানে ফতোয়ায়ে শামি থেকে নবীজীর একটি ঘটনা উল্লেখ করছি, মক্কার কাফেরদের সঙ্গে যখন চরম দুশমনি চলছে মদীনার। ঠিক সে সময়ে মক্কায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। রাসুল সা ও সাহাবিরা নিজেরাই তখন কষ্টে আছেন তা সত্ত্বেও মদীনা থেকে ৫০০ স্বর্ণমুদ্রা পাঠিয়ে দেন মক্কার কাফের সর্দার আবু সুফিয়ান ও সাফওয়ান ইবন উমাইয়ার নিকট।

মক্কার দরিদ্র মানুষদের মাঝে বণ্টন করে দিতে বলেন। [ফাতাওয়ায়ে শামি ৩/৩০২]

দুর্যোগের সময় অমুসলিমদের ত্রাণ সহায়তার প্রেরণা আমরা এঘটনা থেকেই লাভ করতে পারি।

প্রতিটি প্রাণের সেবার প্রতিই উৎসাহিত করে ইসলাম। মানবকল্যাণের সবক শিখিয়েছেন প্রিয় নবীজী সা.। সত্যিকারের মুসলিম হতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই এ নির্মল শিক্ষা ধারণ করতে হবে জীবনে।

অন্তত এবারের রোজায় যেন আমরা ফিতরা দেয়ার সময় আশপাশের দরিদ্র অমুসলিমদেরও খোঁজ খবর নেয়ার চেষ্টা করি। সদকাতুল ফিতর থেকে একটা অংশ তাদের জন্যও ব্যয় করি।

একজনের সদকায়ে ফিতর একাধিক মানুষের মাঝেও বণ্টন করা যায়। করোনার কারণে মানুষের ঘরে চাল ডাল নেই। নিত্য প্রয়োজনের বস্তু পাচ্ছে না দুস্থ দরিদ্র মানুষ।

ফিতরার টাকা দিয়ে চাল ডাল কিনে প্রতিবেশি পরিবারসমূহের মাঝে বণ্টন করে দিতে পারি এই বিশেষ সময়ে। দুর্যোগাক্রান্ত মানুষের দুর্দশা দূর করতে পারি কিছুটা। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদের সবাইকেই তাওফিক দান করুন। আমীন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার বিষয়ক রেজুলেশন গৃহীত

অমুসলিমদেরও ফিতরা দেয়া যায়

আপডেট টাইম : 04:48:44 am, Thursday, 14 May 2020

রোজার শেষে সামর্থ্যবান মুসলিমদের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা একটি দান আবশ্যক করেছেন। সেটিকে বলা হয় যাকাতুল ফিতর তথা ফিতরা।

প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির নিজের ও তার অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়ের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করার নিয়ম।

জব, খেজুর, কিশমিশ ও পনির থেকে ফিতরা আদায় করলে তিন কেজি ৩০০ গ্রাম আর গম বা গমের আটা দিয়ে ফিতরা দিলে এক কেজি ৭০০ গ্রাম বা এর সমমূল্য কোনো গরিবকে দিতে হবে।

ফিতরা বিধানের হিকমত বা রহস্য কী? এ নিয়ে বিভিন্ন মতামতের ভেতর প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে এই যে, রমজানের রোজা রাখার ক্ষেত্রে যেসব ত্রু টি বিচ্যুতি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে আল্লাহতায়ালা এ বিধান দিয়েছেন।

আরেকটি মত হচ্ছে রোজা শেষের ঈদটা যেন সবাই মিলে একসঙ্গে উদযাপন করতে পারে। ঈদের দিন অভাবী দুস্থ লোকেরা যেন আনন্দে কাটাতে পারে।

জানার বিষয় হচ্ছে, কাদেরকে ফিতরা দেয়া যাবে? নিশ্চয় গরিব দুঃখিদের মাঝে বণ্টন করতে হবে। কিন্তু কেবল গরিব মুসলিমদেরকেই কি ফিতরা দিতে হবে? অমুসলিমদের মাঝে ফিতরা বণ্টন করা যাবে না?

আমাদের সমাজে এ মাসআলাটার চর্চা হতে দেখা যায় না। অথচ বাংলাদেশে কয়েক কোটি হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান এবং অন্য আরো ধর্মের লোক রয়েছে।

আরব বা পাকিস্তানের মত অবস্থা আমাদের নয় আমরা এক মিশ্র কালচারে বসবাস করি। এধরনের পরিবেশে থাকা মানুষের জন্য ইসলামী শরিয়তের বিশেষ বিধানাবলি রয়েছে। সেগুলোর চর্চা হওয়া একান্ত আবশ্যক।

একজন মুসলিম হিসেবে দেশের দরিদ্র অমুসলিমদের খোঁজ রাখা আমাদের কর্তব্য। ইসলাম ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের কল্যাণে কাজ করতে শেখায়। দান সদকার ক্ষেত্রেও ইসলামে এ উদারতা রয়েছে। সব ধর্মাবলম্বী মানুষকে দান করার নির্দেশনা রয়েছে কোরআন সুন্নায়।

কেবল জাকাতের ক্ষেত্রে ভিন্ন বিধান। অর্থাৎ জাকাত কোনো অমুসলিমকে দেয়া যাবে না। যদিও পবিত্র কোরআনে অমুসলিমদেরও জাকাত দেওয়ার কথা এসেছে কিন্তু বিধানটি বিশেষ পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। সাধারণ অবস্থায় সে বিধান প্রযোজ্য নয়।

কখনও সেরকম পরিস্থিতি হলে ফিকহ বিশারদরা বলেন, আবারও অমুসলিমদেরও জাকাত দেওয়ার সুরত হবে।

জাকাত ছাড়া অন্য সব দান সদকা মুসলিমদের মাঝে যেমন বিলি করা যায়, অমুসলিমদেরও এসব ওয়াজিব ও নফল দানে শরিক করা যায়। যেমন কাফফারা, মানত ও সদাকাতুল ফিতর। এসব সদকা অমুসলিমদের দিলেও আদায় হয় বলে ফতোয়ার কিতাবাদিতে রয়েছে।

ঈদের দিন আপনি ঈদের আনন্দ করবেন আর আপনার প্রতিবেশি কোনো দরিদ্র হিন্দু বা বৌদ্ধ না খেয়ে থাকবে তাহলে আপনার ঈদ কি করে সুন্দর হয়?

কেবল ঈদ কেন, অন্য সময়েও অমুসলিম প্রতিবেশীর খোঁজ খবর নেয়ার বিধান খোদ রাসল সা. হাদিসে দিয়েছেন। নবীজী বলেন, মুমিন হতে পারবে না ওই ব্যক্তি, যে তৃপ্তিসহকারে আহার করে অথচ তার প্রতিবেশি থাকে অভুক্ত। [তাবারানি] এখানে মুসলিম প্রতিবেশীর কথা বলেননি রাসুল সা.। যে কোনো প্রতিবেশির ক্ষেত্রেই এ বিধান।

সাহাবায়ে কেরাম রাসুল সা.-এর এ বিধান অক্ষরে অক্ষরে পালন করে দেখিয়েছেন। হযরত ইবন উমর রা.-এর বাড়িতে একবার বকরি জবাই হলো। তিনি বাইরে থেকে এসেই জিজ্ঞেস করলেন, আমার ইহুদি প্রতিবেশির ঘরে মাংস পাঠিয়েছ কি?

বর্তমানে আমরা তো সব অমুসলিমের ভেতর ইহুদিদেরই অস্পৃশ্য মনে করি অধিক। একজন ইহুদি প্রতিবেশীর জন্যও নবীজীর সাহাবির এমন চিন্তা। ভাবলে সত্যি অবাক হতে হয়।

আমরা আজ ইসলামের শিক্ষা থেকে কতটা দূরে এসে গেছি। আজ যেন কোনো অমুসলিমকে ফিতরা দেয়ার কথা কল্পনাই করা যায় না।

পাঠকের কাছে এটা বিস্ময়কর মনে হতে পারে। আমি কোনো অভিনব কথা বলছি না। হানাফি মাজহাবের যে কোনো ফতোয়ার কিতাব উল্টে দেখতে পারেন। সব কিতাবেই এ মাসআলা লেখা আছে।

বাদায়েউস সানায়ে, তাবইনুল হাকায়েক ও অধিকাংশ ফতোয়ার কিতাবে এ মাসআলার পক্ষে দলীল দেয়া হয়েছে সুরা মুমতাহিনার আয়াত দিয়ে।

যেখানে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা ইরশাদ করেন, যে সব কাফের তোমাদের সাথে ধর্ম নিয়ে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে স্বদেশ থেকে বের করেনি তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। আল্লাহ তো ন্যায়পরায়নদেরকে ভালোবাসেন। [সুরা: মুমতাহিনা, আয়াত: ৮]

সব অমুসলিমকে শত্রু জ্ঞান করা আর অমুসলিমদের দিকে সন্দেহের চোখে দেখা চরম সংকীর্ণতার পরিচায়ক। ইসলামে কোনো সংকীর্ণতা নেই।

অনেক আয়াতে অমুসলিমদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করা হয়েছে। সেসব আয়াত নাযিল হবার বিশেষ প্রেক্ষাপট ছিল। সব অমুসলিমের ক্ষেত্রে নাযিল হয়নি তা। যাদের ধর্মের পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান নেই তারা খণ্ডিতভাবে সেসব আয়াত উপস্থাপন করে থাকেন।

পাঠক এই সুরা মুমতাহিনারই পরবর্তী আয়াত দেখুন- আল্লাহ শুধু সেসব কাফেরের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন যারা ধর্ম নিয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে স্বদেশ থেকে বের করেছে এবং তোমাদের দেশছাড়া হতে সাহায্য করেছে। এসব কাফেরের সঙ্গে যারা বন্ধুত্ব করে তারা তো জালিম। [সুরা: মুমতাহিনা, আয়াত: ৯] খোলা চোখে যে এ দুটি আয়াত দেখবে তার কাছে ইসলামের অসাম্প্রদায়িক রূপটি খুব সহজে স্পষ্ট হয়ে যাবে। নবীজীর সীরাতেও এর রিফ্লেকশন দেখা যায়।

এখানে ফতোয়ায়ে শামি থেকে নবীজীর একটি ঘটনা উল্লেখ করছি, মক্কার কাফেরদের সঙ্গে যখন চরম দুশমনি চলছে মদীনার। ঠিক সে সময়ে মক্কায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। রাসুল সা ও সাহাবিরা নিজেরাই তখন কষ্টে আছেন তা সত্ত্বেও মদীনা থেকে ৫০০ স্বর্ণমুদ্রা পাঠিয়ে দেন মক্কার কাফের সর্দার আবু সুফিয়ান ও সাফওয়ান ইবন উমাইয়ার নিকট।

মক্কার দরিদ্র মানুষদের মাঝে বণ্টন করে দিতে বলেন। [ফাতাওয়ায়ে শামি ৩/৩০২]

দুর্যোগের সময় অমুসলিমদের ত্রাণ সহায়তার প্রেরণা আমরা এঘটনা থেকেই লাভ করতে পারি।

প্রতিটি প্রাণের সেবার প্রতিই উৎসাহিত করে ইসলাম। মানবকল্যাণের সবক শিখিয়েছেন প্রিয় নবীজী সা.। সত্যিকারের মুসলিম হতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই এ নির্মল শিক্ষা ধারণ করতে হবে জীবনে।

অন্তত এবারের রোজায় যেন আমরা ফিতরা দেয়ার সময় আশপাশের দরিদ্র অমুসলিমদেরও খোঁজ খবর নেয়ার চেষ্টা করি। সদকাতুল ফিতর থেকে একটা অংশ তাদের জন্যও ব্যয় করি।

একজনের সদকায়ে ফিতর একাধিক মানুষের মাঝেও বণ্টন করা যায়। করোনার কারণে মানুষের ঘরে চাল ডাল নেই। নিত্য প্রয়োজনের বস্তু পাচ্ছে না দুস্থ দরিদ্র মানুষ।

ফিতরার টাকা দিয়ে চাল ডাল কিনে প্রতিবেশি পরিবারসমূহের মাঝে বণ্টন করে দিতে পারি এই বিশেষ সময়ে। দুর্যোগাক্রান্ত মানুষের দুর্দশা দূর করতে পারি কিছুটা। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদের সবাইকেই তাওফিক দান করুন। আমীন।