Dhaka , Monday, 2 December 2024

অনুশোচনা হটিয়ে দেয় আজাব

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : 04:47:03 am, Thursday, 14 May 2020
  • 534 বার

আজ উনিশে রমজান। ইসলামের ইতিহাসের এক কালদিন। এ দিন ফজরের সময় আমিরুল মুমিনিন খলিফাতুল মুসলিমিন হজরত আলী (রা.) লেবাসি মুসলমান মুলজিমের ছুরির আঘাতে আহত হন।

দু’দিন পর একুশে রমজান তিনি শাহাদতবরণ করেন। ইমাম গাজ্জালি (রহ.) এহইয়াউল উলুমুদ্দিনে লিখেন, আলী (রা.) নামাজের জন্য যেই মসজিদের গেটে আসেন, সঙ্গে সঙ্গে মুলজিম তাকে ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকে। আলী (রা.) মসজিদের দুয়ারে লুটিয়ে পড়েন।

এ দৃশ্য দেখে আলী (রা.)-এর মেয়ে উম্মে কুলছুম (রা.) চিৎকার করে বলেন, ফজরের নামাজের কী হল! মুনাফিকরা এ সময়ই আমার স্বামী ওমরকে শহীদ করেছে, আজ আমার বাবাকেও তারা আঘাত করল।

হজরত ওমর (রা.)কেও একজন লেবাসী মুসলমান ছুরির আঘাতে শহীদ করেছিল। তখন হজরত ওমর (রা.) ফজরের নামাজের সেজদায় ছিলেন। ইসলামের এ দু’জন মহান খলিফার শাহাদাতের ঘটনা থেকে মুসলিম উম্মাহর জন্য অনেক বড় শিক্ষা রয়েছে। যুগে যুগে যারাই ইসলামের সর্বনাশ করেছে, তারা ইসলামের লেবাস পরে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র করেছে।

রাসূলের (সা.) যুগেও পোশাকি মুসলমানরাই ইসলামের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে। নবীজিকে (সা.) বেশি কষ্ট দিয়েছে। নবুয়্যতের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কুফরি শক্তি যতটা না ইসলামের ক্ষতি করতে পেরেছে, লেবাসি মুসলমানরা এর চেয়ে হাজারগুণ বেশি ক্ষতি করেছে। এই আলী (রা.)-এর পুত্র জান্নাতে যুবকদের নেতা ইমাম হাসান-হোসাইনকে লেবাসি মুসলমানরাই তো শহীদ করেছে। কারবালায় মুহম্মদি ইসলামের সূর্য তো পোশাকি মুসলমানরাই ডুবিয়ে দিয়েছে।

হজরত আলী (রা.)-এর কিছু উপদেশ বিশ্বাসীদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। তিনি বলেন, বিপদে-মুসিবতে অস্থির হতে নেই। মুমিন সবসময় আল্লাহর ওপর ভরসা করে অটল-অবিচল থাকবে। মনে রেখ, অস্থিরতাই একটি বিপদ। তায়াক্কুল হল কল্যাণ। আজ বিশ্বজুড়ে যে বিপদের আঁধার নেমে এসেছে, এ অবস্থায় অনেককেই হতাশ হয়ে আশা ছেড়ে দিতে দেখেছি। কী হবে? কেমন করে হবে? কীভাবে বাঁচব?

কেমন করে খাব- এ ধরনের চিন্তায় মানুষ দিনযাপন করছে। হজরত আলী (রা.) বলেন, চিন্তা একটি বিপদ। তাই তোমরা চিন্তা করো না। চিন্তা তো করছেন আল্লাহ। তিনি আরও বলেন, হে পৃথিবীর মানুষ শোনো, অনুশোচনা গোনাহ মিটিয়ে দেয়। শুধু তা-ই নয়, গোনাহের কারণে আসা আজাবও হটিয়ে দেয় অনুশোচনা।

আজ আমাদের ওপর যে আজাব নেমে এসেছে, এর সমাধানের পথ মাওলা আলী (রা.) বহু আগেই আমাদের বলে গেছেন। আমরা যদি অনুতপ্ত হয়ে অনুশোচনার আগুনে পুড়ে খোদার কাছে কান্নাকাটি করতে পারি, তাহলে আশা করি আল্লাহতায়ালা আমাদের ওপর থেকে এ মহামারী তুলে নেবেন।

একটি হাদিসের অর্থ এ রকম, নবীজি (সা.) বলেছেন, আল্লাহকে ভালোবাসতে হলে আমি নবীকে জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসতে হবে। আমাকে ভালোবাসতে হলে আমার আলীকেও ভালোবাসতে হবে। যে আলীকে ভালোবাসে আমি নবী তাকেই ভালোবাসব। মুনাফেক অর্থাৎ লেবাসি মুসলমান ছাড়া আর কেউই আমার আলীর প্রতি শত্রুতা রাখে না, রাখবেও না। হে আল্লাহ, আমাদের মুহম্মদি ধর্ম কোরআনি ধর্ম মেনে চলার তওফিক দিন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার বিষয়ক রেজুলেশন গৃহীত

অনুশোচনা হটিয়ে দেয় আজাব

আপডেট টাইম : 04:47:03 am, Thursday, 14 May 2020

আজ উনিশে রমজান। ইসলামের ইতিহাসের এক কালদিন। এ দিন ফজরের সময় আমিরুল মুমিনিন খলিফাতুল মুসলিমিন হজরত আলী (রা.) লেবাসি মুসলমান মুলজিমের ছুরির আঘাতে আহত হন।

দু’দিন পর একুশে রমজান তিনি শাহাদতবরণ করেন। ইমাম গাজ্জালি (রহ.) এহইয়াউল উলুমুদ্দিনে লিখেন, আলী (রা.) নামাজের জন্য যেই মসজিদের গেটে আসেন, সঙ্গে সঙ্গে মুলজিম তাকে ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকে। আলী (রা.) মসজিদের দুয়ারে লুটিয়ে পড়েন।

এ দৃশ্য দেখে আলী (রা.)-এর মেয়ে উম্মে কুলছুম (রা.) চিৎকার করে বলেন, ফজরের নামাজের কী হল! মুনাফিকরা এ সময়ই আমার স্বামী ওমরকে শহীদ করেছে, আজ আমার বাবাকেও তারা আঘাত করল।

হজরত ওমর (রা.)কেও একজন লেবাসী মুসলমান ছুরির আঘাতে শহীদ করেছিল। তখন হজরত ওমর (রা.) ফজরের নামাজের সেজদায় ছিলেন। ইসলামের এ দু’জন মহান খলিফার শাহাদাতের ঘটনা থেকে মুসলিম উম্মাহর জন্য অনেক বড় শিক্ষা রয়েছে। যুগে যুগে যারাই ইসলামের সর্বনাশ করেছে, তারা ইসলামের লেবাস পরে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র করেছে।

রাসূলের (সা.) যুগেও পোশাকি মুসলমানরাই ইসলামের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে। নবীজিকে (সা.) বেশি কষ্ট দিয়েছে। নবুয়্যতের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কুফরি শক্তি যতটা না ইসলামের ক্ষতি করতে পেরেছে, লেবাসি মুসলমানরা এর চেয়ে হাজারগুণ বেশি ক্ষতি করেছে। এই আলী (রা.)-এর পুত্র জান্নাতে যুবকদের নেতা ইমাম হাসান-হোসাইনকে লেবাসি মুসলমানরাই তো শহীদ করেছে। কারবালায় মুহম্মদি ইসলামের সূর্য তো পোশাকি মুসলমানরাই ডুবিয়ে দিয়েছে।

হজরত আলী (রা.)-এর কিছু উপদেশ বিশ্বাসীদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। তিনি বলেন, বিপদে-মুসিবতে অস্থির হতে নেই। মুমিন সবসময় আল্লাহর ওপর ভরসা করে অটল-অবিচল থাকবে। মনে রেখ, অস্থিরতাই একটি বিপদ। তায়াক্কুল হল কল্যাণ। আজ বিশ্বজুড়ে যে বিপদের আঁধার নেমে এসেছে, এ অবস্থায় অনেককেই হতাশ হয়ে আশা ছেড়ে দিতে দেখেছি। কী হবে? কেমন করে হবে? কীভাবে বাঁচব?

কেমন করে খাব- এ ধরনের চিন্তায় মানুষ দিনযাপন করছে। হজরত আলী (রা.) বলেন, চিন্তা একটি বিপদ। তাই তোমরা চিন্তা করো না। চিন্তা তো করছেন আল্লাহ। তিনি আরও বলেন, হে পৃথিবীর মানুষ শোনো, অনুশোচনা গোনাহ মিটিয়ে দেয়। শুধু তা-ই নয়, গোনাহের কারণে আসা আজাবও হটিয়ে দেয় অনুশোচনা।

আজ আমাদের ওপর যে আজাব নেমে এসেছে, এর সমাধানের পথ মাওলা আলী (রা.) বহু আগেই আমাদের বলে গেছেন। আমরা যদি অনুতপ্ত হয়ে অনুশোচনার আগুনে পুড়ে খোদার কাছে কান্নাকাটি করতে পারি, তাহলে আশা করি আল্লাহতায়ালা আমাদের ওপর থেকে এ মহামারী তুলে নেবেন।

একটি হাদিসের অর্থ এ রকম, নবীজি (সা.) বলেছেন, আল্লাহকে ভালোবাসতে হলে আমি নবীকে জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসতে হবে। আমাকে ভালোবাসতে হলে আমার আলীকেও ভালোবাসতে হবে। যে আলীকে ভালোবাসে আমি নবী তাকেই ভালোবাসব। মুনাফেক অর্থাৎ লেবাসি মুসলমান ছাড়া আর কেউই আমার আলীর প্রতি শত্রুতা রাখে না, রাখবেও না। হে আল্লাহ, আমাদের মুহম্মদি ধর্ম কোরআনি ধর্ম মেনে চলার তওফিক দিন।