Dhaka , Monday, 2 December 2024

বদর যুদ্ধের মতো সাহায্য করো আল্লাহ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : 04:50:11 am, Thursday, 14 May 2020
  • 556 বার

আজ ১৭ রমজান। ঐতিহাসিক বদর দিবস। হিজরি দ্বিতীয় সনের এ দিনে বদর প্রান্তরে রাসূল (সা.)-এর নেতৃত্বে মক্কার কুফরি শক্তির বিরুদ্ধে যে সশস্ত্র যুদ্ধ হয় ইতিহাসে তাই বদর যুদ্ধ নামে পরিচিত। ইসলামের ইতিহাসে এটি প্রথম সশস্ত্র যুদ্ধ। মক্কার কাফেররা রাসূল (সা.) এবং মুমিন বাহিনীকে মক্কা থেকে বের করে দিয়েই চুপ করে বসে থাকেনি, তারা ইসলামকে শেষ করে দেয়ার জন্য নানা ফন্দি আঁটতে থাকে। এক পর্যায়ে আবু জাহেল আবু সুফিয়ান সিদ্ধান্ত নেয়, এখনই যদি মুহম্মদ বাহিনীকে নিঃশেষ করা না যায় তাহলে এ বাহিনীর সঙ্গে আর কুলিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। আবু জাহেল এক হাজার সুসজ্জিত প্রশিক্ষিত সৈন্য নিয়ে বদরপ্রান্তরে এসে মদিনা আক্রমণের জন্য অপেক্ষা করে। এ খবর জানতে পেরে রাসূল (সা.) মাত্র ৩১৩ জন নিরস্ত্রপ্রায় সাহাবি নিয়ে এ বিশাল সৈন্যবাহিনীর মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকেন।

যুদ্ধ শুরুর আগে রাসূল (সা.) আল্লাহর কাছে দুই হাত তুলে কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, ওগো আল্লাহ, আজ তোমার প্রতিশ্রুত সাহায্য বড়ই প্রয়োজন। আজ যদি এ কয়জন মুমিন বান্দা মরে যায়, তাহলে তোমার দ্বীন প্রচারের জন্য আর কোনো মানুষ থাকবে না। তোমার দ্বীনের স্বার্থে তুমি আমাদের বিজয় দান কর। আল্লাহর রাসূলের দোয়া এমনই কবুল হয়েছে, বিশেষ ফেরেশতা নাজিল করে আল্লাহতায়ালা মুমিন বাহিনীকে সাহায্য করেছেন। এ সাহায্যের কথা আবার সূরা আলে ইমরানে আল্লাহ উল্লেখ করেছেন, হে মুমিনরা, আল্লাহ তোমাদের বদরে সাহায্য করেছেন অথচ সেদিন তোমরা ছিলে অসহায়।

বদরের এ ঘটনা থেকে মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় শিক্ষণীয় বিষয় হল, মুসলিম উম্মাহ এমন একটি জাতি, যে নীরবে নিভৃতে অত্যাচার-অনাচার-জুলুম সহ্য করাকে ভয়াবহ গোনাহ মনে করে। প্রয়োজনে জীবন দিয়ে হলেও সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় কর্তব্য। আজ মুসলমানদের সামনে সেদিন এসেছে সমাজে শান্তি বজায় রাখা, শৃঙ্খলা বজায় রাখা, ধৈর্যধারণ করা খুবই জরুরি। পাশাপাশি তাদের এ কর্তব্য পালনের জন্য আল্লাহতায়ালার সাহায্য প্রার্থনা করাও জরুরি। মুসলমান কখনও জাগতিক উপায়-উপকরণ কিংবা সম্পদের ওপর ভরসা করে না। তারা সব সময় আল্লাহর ওপর ভরসা করে। তার মানে এ নয় যে, উপায়-উপকরণ ব্যবহার করা যাবে না।

বদরের ঘটনায় দেখা যায়, মুসলিম সৈন্যবাহিনী কম থাকায় রাসূল (সা.) নানা কৌশল অবলম্বন করেছেন। রাসূল (সা.) সৈন্যদের বলেছেন, একদল সৈন্য তীর ছুড়ে পেছনে চলে আসবে। তখন পেছন থেকে আরেক দল সৈন্য সামনে গিয়ে তীর ছুড়বে। যাতে শত্রুপক্ষ বুঝতে পারে একই লোক বারবার তীর ছুড়ছে না। বরং মুসলিম মুজাহিদের সংখ্যা মনে হবে অনেক বেশি। তারা একদলের পর একদল এসে তীর ছুড়ে যাচ্ছে। যুদ্ধের আগে রাসূল (সা.) বলেন, আমরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে আলাদা আলাদা রান্না করব। আলাদা আলাদা তাঁবু খাটাব। অনেক বেশি টয়লেট বানাব। যেন শত্রুপক্ষ দূর থেকে দেখে বুঝতে পারে সংখ্যায় আমরা অনেক বেশি।

একদিকে রাসূল (সা.) কান্নায় বিগলিত হয়ে মোনাজাত করেছেন, অন্যদিকে সমসাময়িক সব ধরনের যুদ্ধ কৌশলও তিনি (সা.) প্রয়োগ করেছেন। আফসোস! আজ একদল মুসলমান শুধু মোনাজাত করে বিশ্ব বদলাতে চায়। আরেক দল মুসলমান মোনাজাত ছাড়া পৃথিবীতে নেতৃত্ব করতে চায়। ফলে কেউই সফলতার মুখ দেখছে না। মুসলমান যদি আবার তাদের হারানো বিজয় ফিরিয়ে আনতে চায়, তাহলে দোয়া এবং কৌশল দুটোই সঙ্গে করে এগোতে হবে।

হে আল্লাহ, বদরের চেতনায় মুসলমান যেভাবে বিজয়ী হয়েছিল আজকের মুসলমানদেরও সেভাবে করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করার তাওফিক দিন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার বিষয়ক রেজুলেশন গৃহীত

বদর যুদ্ধের মতো সাহায্য করো আল্লাহ

আপডেট টাইম : 04:50:11 am, Thursday, 14 May 2020

আজ ১৭ রমজান। ঐতিহাসিক বদর দিবস। হিজরি দ্বিতীয় সনের এ দিনে বদর প্রান্তরে রাসূল (সা.)-এর নেতৃত্বে মক্কার কুফরি শক্তির বিরুদ্ধে যে সশস্ত্র যুদ্ধ হয় ইতিহাসে তাই বদর যুদ্ধ নামে পরিচিত। ইসলামের ইতিহাসে এটি প্রথম সশস্ত্র যুদ্ধ। মক্কার কাফেররা রাসূল (সা.) এবং মুমিন বাহিনীকে মক্কা থেকে বের করে দিয়েই চুপ করে বসে থাকেনি, তারা ইসলামকে শেষ করে দেয়ার জন্য নানা ফন্দি আঁটতে থাকে। এক পর্যায়ে আবু জাহেল আবু সুফিয়ান সিদ্ধান্ত নেয়, এখনই যদি মুহম্মদ বাহিনীকে নিঃশেষ করা না যায় তাহলে এ বাহিনীর সঙ্গে আর কুলিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। আবু জাহেল এক হাজার সুসজ্জিত প্রশিক্ষিত সৈন্য নিয়ে বদরপ্রান্তরে এসে মদিনা আক্রমণের জন্য অপেক্ষা করে। এ খবর জানতে পেরে রাসূল (সা.) মাত্র ৩১৩ জন নিরস্ত্রপ্রায় সাহাবি নিয়ে এ বিশাল সৈন্যবাহিনীর মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকেন।

যুদ্ধ শুরুর আগে রাসূল (সা.) আল্লাহর কাছে দুই হাত তুলে কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, ওগো আল্লাহ, আজ তোমার প্রতিশ্রুত সাহায্য বড়ই প্রয়োজন। আজ যদি এ কয়জন মুমিন বান্দা মরে যায়, তাহলে তোমার দ্বীন প্রচারের জন্য আর কোনো মানুষ থাকবে না। তোমার দ্বীনের স্বার্থে তুমি আমাদের বিজয় দান কর। আল্লাহর রাসূলের দোয়া এমনই কবুল হয়েছে, বিশেষ ফেরেশতা নাজিল করে আল্লাহতায়ালা মুমিন বাহিনীকে সাহায্য করেছেন। এ সাহায্যের কথা আবার সূরা আলে ইমরানে আল্লাহ উল্লেখ করেছেন, হে মুমিনরা, আল্লাহ তোমাদের বদরে সাহায্য করেছেন অথচ সেদিন তোমরা ছিলে অসহায়।

বদরের এ ঘটনা থেকে মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় শিক্ষণীয় বিষয় হল, মুসলিম উম্মাহ এমন একটি জাতি, যে নীরবে নিভৃতে অত্যাচার-অনাচার-জুলুম সহ্য করাকে ভয়াবহ গোনাহ মনে করে। প্রয়োজনে জীবন দিয়ে হলেও সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় কর্তব্য। আজ মুসলমানদের সামনে সেদিন এসেছে সমাজে শান্তি বজায় রাখা, শৃঙ্খলা বজায় রাখা, ধৈর্যধারণ করা খুবই জরুরি। পাশাপাশি তাদের এ কর্তব্য পালনের জন্য আল্লাহতায়ালার সাহায্য প্রার্থনা করাও জরুরি। মুসলমান কখনও জাগতিক উপায়-উপকরণ কিংবা সম্পদের ওপর ভরসা করে না। তারা সব সময় আল্লাহর ওপর ভরসা করে। তার মানে এ নয় যে, উপায়-উপকরণ ব্যবহার করা যাবে না।

বদরের ঘটনায় দেখা যায়, মুসলিম সৈন্যবাহিনী কম থাকায় রাসূল (সা.) নানা কৌশল অবলম্বন করেছেন। রাসূল (সা.) সৈন্যদের বলেছেন, একদল সৈন্য তীর ছুড়ে পেছনে চলে আসবে। তখন পেছন থেকে আরেক দল সৈন্য সামনে গিয়ে তীর ছুড়বে। যাতে শত্রুপক্ষ বুঝতে পারে একই লোক বারবার তীর ছুড়ছে না। বরং মুসলিম মুজাহিদের সংখ্যা মনে হবে অনেক বেশি। তারা একদলের পর একদল এসে তীর ছুড়ে যাচ্ছে। যুদ্ধের আগে রাসূল (সা.) বলেন, আমরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে আলাদা আলাদা রান্না করব। আলাদা আলাদা তাঁবু খাটাব। অনেক বেশি টয়লেট বানাব। যেন শত্রুপক্ষ দূর থেকে দেখে বুঝতে পারে সংখ্যায় আমরা অনেক বেশি।

একদিকে রাসূল (সা.) কান্নায় বিগলিত হয়ে মোনাজাত করেছেন, অন্যদিকে সমসাময়িক সব ধরনের যুদ্ধ কৌশলও তিনি (সা.) প্রয়োগ করেছেন। আফসোস! আজ একদল মুসলমান শুধু মোনাজাত করে বিশ্ব বদলাতে চায়। আরেক দল মুসলমান মোনাজাত ছাড়া পৃথিবীতে নেতৃত্ব করতে চায়। ফলে কেউই সফলতার মুখ দেখছে না। মুসলমান যদি আবার তাদের হারানো বিজয় ফিরিয়ে আনতে চায়, তাহলে দোয়া এবং কৌশল দুটোই সঙ্গে করে এগোতে হবে।

হে আল্লাহ, বদরের চেতনায় মুসলমান যেভাবে বিজয়ী হয়েছিল আজকের মুসলমানদেরও সেভাবে করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করার তাওফিক দিন।