Dhaka , Sunday, 15 December 2024

কর্মহীনদের নগদ সহায়তা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : 05:41:17 am, Monday, 1 June 2020
  • 488 বার

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে কর্মহীন জনগণকে ঈদুল ফিতরের আগেই নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদানের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার রংপুর বিভাগের আট জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও করফারেন্সে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে যাদের আয়-উপার্জনের পথ নেই, তাদের কিছু নগদ আর্থিক সহায়তা আমরা ঈদের আগেই দিতে চাই, যাতে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্ত সময়োচিত।

বস্তুত করোভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশে সাধারণ ছুটি বা ‘লকডাউনের’ কারণে সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শ্রমিক, গৃহকর্মী, রিকশাওয়ালা, দিনমজুরসহ খেটে খাওয়া মানুষের আয়-রোজগারের পথ হয়ে পড়েছে রুদ্ধ। অগণিত শ্রমজীবী মানুষ এখন কর্মহীন ও ক্ষুধার্ত। পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছেন। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য কর্ম হারানো এসব শ্রমজীবী মানুষের জন্য স্বস্তির বার্তা বয়ে এনেছে।

আমাদের শ্রমশক্তির বেশির ভাগই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের এবং এ কারণে তারা শ্রম অধিকার থেকেও বঞ্চিত হয় নানাভাবে। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করা শ্রমশক্তির কোনো নিয়োগপত্র থাকে না বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। ফলে অধিকার লাভের কোনো বৈধ ডকুমেন্ট তাদের থাকে না। বর্তমান পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে সবচেয়ে বেশি বঞ্চনার শিকার হতে হবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের এসব শ্রমিককে। কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়তে হবে প্রান্তিক এ জনগোষ্ঠীকে।

এমনকি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও অনেকেই আবার কাজ ফিরে পাবেন কিনা, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এরই মধ্যে তারা কাজ হারিয়েছেন ধরে নিতে হবে। এ অবস্থায় সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসা উচিত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক, দুস্থ ও নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। পাশাপাশি যেসব মালিকের আওতায় অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক কাজ করেন, সেসব মালিককেও এগিয়ে আসতে হবে শ্রমিকের সুরক্ষায়।

মানবিক বিবেচনা থেকেই এ শ্রমিকদের কল্যাণে এগিয়ে আসা উচিত। অন্যথায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে এবং সমাজে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই আমরা মনে করি, দেশে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধের সময় খেটে খাওয়া মানুষ, অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক ও প্রান্তিক কর্মীদের কথা ভুলে গেলে চলবে না। সরকারের বিশেষ তহবিল ও নগদ সহায়তার পাশাপাশি প্রতিটি ক্ষেত্রের সামর্থ্যবানদের এগিয়ে আসতে হবে সহায়তার হাত নিয়ে।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টোমো পটিআইনেন বলেছেন, জনসংখ্যার বিভিন্ন অংশ যেমন- নারী, যুবক, বয়স্ক, শ্রমিক, অভিবাসী ও চাকরিজীবী ব্যক্তিরা কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এমনিতেই বেকারত্বের হার উচ্চ, তারা জীবিকা হারাতে বসেছেন। বয়স্ক কর্মীরা কর্মঘণ্টা কমে যাওয়ায় বেকারত্বের ঝুঁকিতে আছেন।

নারীরা সামাজিক সুরক্ষার অভাবে রয়েছেন। স্ব-কর্মসংস্থানের কর্মীরা প্রচলিত সামাজিক সুরক্ষা প্রক্রিয়া দ্বারা সুরক্ষিত নন। বিকল্প আয়ের উৎস ছাড়া এই শ্রমিক এবং তাদের পরিবারগুলোর টিকে থাকার কোনো উপায় থাকবে না। এ অবস্থায় কর্মহীনদের সহায়তা দিতে জরুরি ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আইএলও।

এ পরিপ্রেক্ষিতে করোনার সংক্রমণ থেকে মানুষকে সুরক্ষা দেয়ার পাশাপাশি তাদের জীবিকার প্রয়োজনে অর্থনীতির চাকা সচল রাখাও জরুরি। বস্তুত করোনার প্রভাবে মানুষের জীবন-জীবিকার যে ক্ষতি হচ্ছে, সে কথা ভেবেই সরকার ঈদ সামনে রেখে ১০ মে থেকে সীমিত আকারে শপিংমল-দোকানপাট খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সবার সম্মিলিত প্রয়াসেই করোনাজনিত দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে পারে মানুষ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার বিষয়ক রেজুলেশন গৃহীত

কর্মহীনদের নগদ সহায়তা

আপডেট টাইম : 05:41:17 am, Monday, 1 June 2020

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে কর্মহীন জনগণকে ঈদুল ফিতরের আগেই নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদানের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার রংপুর বিভাগের আট জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও করফারেন্সে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে যাদের আয়-উপার্জনের পথ নেই, তাদের কিছু নগদ আর্থিক সহায়তা আমরা ঈদের আগেই দিতে চাই, যাতে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্ত সময়োচিত।

বস্তুত করোভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশে সাধারণ ছুটি বা ‘লকডাউনের’ কারণে সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শ্রমিক, গৃহকর্মী, রিকশাওয়ালা, দিনমজুরসহ খেটে খাওয়া মানুষের আয়-রোজগারের পথ হয়ে পড়েছে রুদ্ধ। অগণিত শ্রমজীবী মানুষ এখন কর্মহীন ও ক্ষুধার্ত। পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছেন। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য কর্ম হারানো এসব শ্রমজীবী মানুষের জন্য স্বস্তির বার্তা বয়ে এনেছে।

আমাদের শ্রমশক্তির বেশির ভাগই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের এবং এ কারণে তারা শ্রম অধিকার থেকেও বঞ্চিত হয় নানাভাবে। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করা শ্রমশক্তির কোনো নিয়োগপত্র থাকে না বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। ফলে অধিকার লাভের কোনো বৈধ ডকুমেন্ট তাদের থাকে না। বর্তমান পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে সবচেয়ে বেশি বঞ্চনার শিকার হতে হবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের এসব শ্রমিককে। কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়তে হবে প্রান্তিক এ জনগোষ্ঠীকে।

এমনকি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও অনেকেই আবার কাজ ফিরে পাবেন কিনা, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এরই মধ্যে তারা কাজ হারিয়েছেন ধরে নিতে হবে। এ অবস্থায় সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসা উচিত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক, দুস্থ ও নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। পাশাপাশি যেসব মালিকের আওতায় অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক কাজ করেন, সেসব মালিককেও এগিয়ে আসতে হবে শ্রমিকের সুরক্ষায়।

মানবিক বিবেচনা থেকেই এ শ্রমিকদের কল্যাণে এগিয়ে আসা উচিত। অন্যথায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে এবং সমাজে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই আমরা মনে করি, দেশে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধের সময় খেটে খাওয়া মানুষ, অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক ও প্রান্তিক কর্মীদের কথা ভুলে গেলে চলবে না। সরকারের বিশেষ তহবিল ও নগদ সহায়তার পাশাপাশি প্রতিটি ক্ষেত্রের সামর্থ্যবানদের এগিয়ে আসতে হবে সহায়তার হাত নিয়ে।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টোমো পটিআইনেন বলেছেন, জনসংখ্যার বিভিন্ন অংশ যেমন- নারী, যুবক, বয়স্ক, শ্রমিক, অভিবাসী ও চাকরিজীবী ব্যক্তিরা কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এমনিতেই বেকারত্বের হার উচ্চ, তারা জীবিকা হারাতে বসেছেন। বয়স্ক কর্মীরা কর্মঘণ্টা কমে যাওয়ায় বেকারত্বের ঝুঁকিতে আছেন।

নারীরা সামাজিক সুরক্ষার অভাবে রয়েছেন। স্ব-কর্মসংস্থানের কর্মীরা প্রচলিত সামাজিক সুরক্ষা প্রক্রিয়া দ্বারা সুরক্ষিত নন। বিকল্প আয়ের উৎস ছাড়া এই শ্রমিক এবং তাদের পরিবারগুলোর টিকে থাকার কোনো উপায় থাকবে না। এ অবস্থায় কর্মহীনদের সহায়তা দিতে জরুরি ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আইএলও।

এ পরিপ্রেক্ষিতে করোনার সংক্রমণ থেকে মানুষকে সুরক্ষা দেয়ার পাশাপাশি তাদের জীবিকার প্রয়োজনে অর্থনীতির চাকা সচল রাখাও জরুরি। বস্তুত করোনার প্রভাবে মানুষের জীবন-জীবিকার যে ক্ষতি হচ্ছে, সে কথা ভেবেই সরকার ঈদ সামনে রেখে ১০ মে থেকে সীমিত আকারে শপিংমল-দোকানপাট খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সবার সম্মিলিত প্রয়াসেই করোনাজনিত দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে পারে মানুষ।