দর্পণ ডেস্কঃ ১০ জুন ২০২০ বুুুধবার
চলমান করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন আজ বুধবার থেকে শুরু হয়েছে।স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিকাল ৫টায় অধিবেশন বসেে।
পরদিন বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় আগামী ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। করোনার এই মহামারী এবং প্রতিকূলতার মধ্যেই চূড়ান্ত করা হয়েছে আগামী ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট। এবারের বাজেটে মোট ব্যয়ের আকার হচ্ছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। আর মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৬ কোটি টাকা। ঘাটতি ধরা হচ্ছে জিডিপি’র ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। যা আগের যে কোনো বছরের তুলনায় সবচেয়ে বড় ঘাটতির বাজেট।
পাশাপাশি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে মন্দা অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও নিম্ন আয়ের মানুষের পুনর্বাসন। করোনাভাইরাসের কারণে নেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। একের পর এক সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী আক্রান্ত হওয়ায় করোনার ঝুঁকি ও আতঙ্কের মধ্যেই অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনকে সামনে রেখে স্বাস্থ্য সুরক্ষা জোরদার করা হয়েছে। প্রবীণ ও অসুস্থ এমপিদের অধিবেশনে না আসার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনা সতর্কতার অংশ হিসেবে সংসদের অষ্টম (বাজেট) অধিবেশন সংক্ষিপ্ত করার কথা জানানো হয়েছে। রেওয়াজ অনুযায়ী চলতি সংসদের সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শেষে অধিবেশন মুলতবি করা হবে।
পরদিন ১১ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করবেন। প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর মাত্র ৫ দিন আলোচনা হবে। আর পুরো বাজেট পাসের প্রক্রিয়া ব্যয় হবে ১০ দিন। সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা বাজেট আলোচনা হতে পারে। গত বছর প্রায় ৬০ ঘণ্টা আলোচনা হয়েছিল। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত এই আলোচনা চলবে। আগামী ২৯ জুন অর্থবিল ও ৩০ জুন মূল বাজেট পাস হবে। মাত্র ১২ কার্যদিবসে আগামী ৯ জুলাই শেষ হতে পারে দেশের ইতিহাসের সংক্ষিপ্ততম বাজেট অধিবেশন।
বৃহস্পতিবার বাজেট পেশের পর ১২ ও ১৩ জুন সংসদের বৈঠক মুলতবি রাখা হবে। ১৪ জুন রোববার সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা। এদিন থেকে প্রতিটি কার্যদিবস সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চলবে। ১৫ জুন সোমবার সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা, নির্দিষ্টকরণ সম্পূরক বিল পাস। ১৬ জুন মঙ্গলবার ও ১৭ জুন বুধবার মূল বাজেটের ওপর আলোচনা। ১৮ থেকে ২১ জুন পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি। ২২, ২৩ ও ২৪ জুন বাজেটের ওপর আলোচনা। ২৫ থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি। ২৯ জুন বাজেটের ওপর সমাপনী আলোচনা এবং অর্থবিল পাস। ৩০ জুন মূল বাজেট ও নির্দিষ্টকরণ বিল পাস। ৮ অথবা ৯ জুলাই অধিবেশন সমাপ্তি।
সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারও অধিবেশনের আগে সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক হচ্ছে না। এর আগে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে ১৮ এপ্রিল একদিনের জন্য বসা সংসদের সপ্তম অধিবেশনের আগেও কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক হয়নি। আর সংসদ অধিবেশনে উপস্থিতি ৯০ জনের মধ্যে রাখতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
অধিবেশনকে সামনে রেখে কঠোর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। প্রতি বছরই বাজেট উত্থাপনের দিন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকলেও এবার কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার স্থগিত করা হয়েছে।
তাছাড়া অধিবেশন পরিচালনার জন্য সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসাও সীমিত করা হয়েছে। শুধু যাদের প্রয়োজন হবে তারাই আসবেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা সংক্রমণ রোধে সংসদে আসন বিন্যাসেও পরিবর্তন এসেছে। সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর আশপাশের বেশ কয়েকটি আসন ফাঁকা রাখা হবে। তারই অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর ঠিক পেছনের আসনে বসা সংসদের প্রধান হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরীকে এক সারি পেছনে বসতে হবে। অন্যদের আসনও ফাঁকা রেখে বিন্যাস করা হয়েছে। সংসদে যোগদানকারী সংসদ সদস্যদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করতে হবে। প্রত্যেকের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া টানেলের ভেতরে স্থাপন করা জীবাণুমুক্তকরণ চেম্বারের ভেতর দিয়ে সবাইকে প্রবেশ করতে হচ্ছে।
প্রতি বছর বাজেট অধিবেশনকে ঘিরে সংসদে উৎসবের আমেজ থাকলেও এবার তেমনটি নেই। উল্টো সংসদ এলাকায় উদ্বেগ ও আতঙ্ক দেখা গেছে। কারণ ইতোমধ্যে ৮ জন সংসদ সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।