Dhaka , Thursday, 16 January 2025

অকারণে ওজন কমে যাওয়া বিপজ্জনক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : 09:19:38 am, Monday, 22 June 2020
  • 546 বার

পৃথিবীতে প্রাণঘাতী সমস্যা বলে চিহ্নিত বিষয়গুলোর মধ্যে একটি স্থূলতা। ডায়াবেটিসের মতো বহুরোগের হেতু হয়ে ওঠে এটা। এ কারণে ওজন কমানোর দৌড়ে সামিল হচ্ছেন স্বাস্থ্যসচেতনরা। কিন্তু ওজন নিয়ন্ত্রণে অনেক কিছুই করতে হয়। খাবার-দাবারে কাটছাঁট ছাড়াও নিয়মিত ব্যায়ামের তাগাদা তো আছেই। তবুও ওজন সামলে নেয়ার মতো কঠিন কাজ যেন আর দ্বিতীয়টি নেই। কিন্তু কিছু মানুষের ওজন কোনো চেষ্টা-তদবির ছাড়াই কমতে থাকে। এটা কিন্তু অশনিসংকেত বহন করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন বা শরীরচর্চা ছাড়াই যদি আপনার দেহের ওজন ছয় মাসের মধ্যে ৫ শতাংশ কমে যায় তবে বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। গুটিকয়েক সমস্যায় এ ঘটনা ঘটতে পারে। এদের সম্পর্কে জেনে নিন।

ডায়াবেটিস
এই ভয়াবহ রোগের কারণে আপনার ওজন কমতে থাকবে। অতিমাত্রায় মূত্রত্যাগ এবং তৃষ্ণার্তবোধ প্রাথমিক অবস্থায় এ রোগের অন্যতম লক্ষণ। এ সময় দেহ গ্লুকোজ শোষণ করতে পারে না। ফলে তা মূত্র আকারে বের করে দিতে হয়। ডায়াবেটিস হলে দেহযন্ত্র তার কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে পেশি থেকে শক্তি সঞ্চয় করে। ফলে ওজন কমতে থাকে। তাই রহস্যময় কারণে ওজন কমার ঘটনা ঘটলে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে।

থাইরয়েড 
অতিমাত্রায় ক্রিয়াশীল থাইরয়েডকে বলে ‘হাইপারথাইরডিজম’। এতে এমনভাবে ওজন কমবে যার কোনো ব্যাখ্যা মেলেনা। এই রোগ কোনো দৃশ্যমান লক্ষণ প্রকাশ করে না। ফলে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে ক্রমবর্ধমান ক্ষুধা, উচ্চ রক্তচাপ এবং সবসময় গরম বোধ করা লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পেতে পারে। আচমকা রাতের ঘুম উধাও হয়ে গেলে একই রোগের সম্ভাবনা প্রকাশ পায়। এসব লক্ষণের একটি বা একাধিক দেখা দিলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। এগুলো অযথাই ওজন করার কারণ হলে আপনি ঝুঁকির মুখে রয়েছেন।

পেটের সমস্যা 
সেলিয়াক এমন এক রোগ যা অটোইমিউন সমস্যায় দেখা দেয়। এ অবস্থায় দেহের শ্বেত রক্তকণিকা জীবাণুর বিরুদ্ধে না গিয়ে ভুল করে স্বাস্থ্যকর কোষে আক্রমণ চালায়। ডায়রিয়া ছাড়া বোঝা যায় এমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না সেলিয়াক ডিজিসে। এটা পেটের বড় ধরনের সমস্যা। এ রোগ হজমের জন্যে পাচক রস উৎপন্নকারী অগ্ন্যাশয়ে বিরূপ প্রভাব ফেলে। এ সময় মলের রং অস্বাভাবিক হয়, চর্বিপূর্ণ খাবার খেলে অবসাদ ভর করে এবং পাকস্থলীতে অস্বস্তিবোধ সেলিয়াক রোগের লক্ষণ নির্দেশ করে। এ সময় নাটকীয়ভাবে ওজন কমতে পারে আপনার, যা মোটেও খুশি হওয়ার কারণ নয়।

বিষণ্নতা 
এটা বড় ধরনের মানসিক রোগ। মন ভালো না থাকলে শরীরও ঠিকমতো কাজ করে না। বিষণ্নতার মতো ভয়াবহ রোগে কিন্তু ওজন কমতে থাকে হঠাৎ করেই। আবার অনেক সময় বিষণ্নতার কারণে ওজন বাড়তেও পারে। তবে যদি পতনের দিকেই যায়, তবে চিকিৎসা জরুরি।

ক্যান্সার 
বেশ কয়েক ধরনের ক্যান্সার বা পাকস্থলীর টিউমার বা আলসারের কারণে ওজন হ্রাসের ঘটনা ঘটে। এদের কারণে দেখা দেয় ইনফ্লামেশন। দেহ ভুল উপায়ে পুষ্টউপাদান গ্রহণ করে। ফলে তা আর কোনো কাজে লাগে না। এতে স্বাভাবিকভাবেই ওজন কমতে থাকে। এ ছাড়া পেচে টিউমার বা ইনফ্লামেশন এবং অয়েসোফাগাসের কারণেও ওজন ব্যাপক হারে কমতে পারে।

রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস 
এটাও এক ধরনের ইনফ্লামাটরি অবস্থা যা আক্রান্তের ক্ষুধা নষ্ট করে দেয়। ফলে কোনো ধরনের খাবার খেতে ইচ্ছে হয় না। আর এতে ওজন কমে যাওয়া বিচিত্র নয়। এতে কিন্তু পেটেও ইনফ্লামেশনের মতো সমস্যা দেখা দেয়। এতে দেহ সঠিকভাবে পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে না। ফলে ওজন মাপা যন্ত্রের কাঁটা নিম্নগতির হতে থাকে। কাজেই অকারণে ওজন কমা সুখকর নয়। বরং বড় ধরনের বিপদের বার্তা দেয়।
টাইমস অব ইন্ডিয়া

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার বিষয়ক রেজুলেশন গৃহীত

অকারণে ওজন কমে যাওয়া বিপজ্জনক

আপডেট টাইম : 09:19:38 am, Monday, 22 June 2020

পৃথিবীতে প্রাণঘাতী সমস্যা বলে চিহ্নিত বিষয়গুলোর মধ্যে একটি স্থূলতা। ডায়াবেটিসের মতো বহুরোগের হেতু হয়ে ওঠে এটা। এ কারণে ওজন কমানোর দৌড়ে সামিল হচ্ছেন স্বাস্থ্যসচেতনরা। কিন্তু ওজন নিয়ন্ত্রণে অনেক কিছুই করতে হয়। খাবার-দাবারে কাটছাঁট ছাড়াও নিয়মিত ব্যায়ামের তাগাদা তো আছেই। তবুও ওজন সামলে নেয়ার মতো কঠিন কাজ যেন আর দ্বিতীয়টি নেই। কিন্তু কিছু মানুষের ওজন কোনো চেষ্টা-তদবির ছাড়াই কমতে থাকে। এটা কিন্তু অশনিসংকেত বহন করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন বা শরীরচর্চা ছাড়াই যদি আপনার দেহের ওজন ছয় মাসের মধ্যে ৫ শতাংশ কমে যায় তবে বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। গুটিকয়েক সমস্যায় এ ঘটনা ঘটতে পারে। এদের সম্পর্কে জেনে নিন।

ডায়াবেটিস
এই ভয়াবহ রোগের কারণে আপনার ওজন কমতে থাকবে। অতিমাত্রায় মূত্রত্যাগ এবং তৃষ্ণার্তবোধ প্রাথমিক অবস্থায় এ রোগের অন্যতম লক্ষণ। এ সময় দেহ গ্লুকোজ শোষণ করতে পারে না। ফলে তা মূত্র আকারে বের করে দিতে হয়। ডায়াবেটিস হলে দেহযন্ত্র তার কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে পেশি থেকে শক্তি সঞ্চয় করে। ফলে ওজন কমতে থাকে। তাই রহস্যময় কারণে ওজন কমার ঘটনা ঘটলে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে।

থাইরয়েড 
অতিমাত্রায় ক্রিয়াশীল থাইরয়েডকে বলে ‘হাইপারথাইরডিজম’। এতে এমনভাবে ওজন কমবে যার কোনো ব্যাখ্যা মেলেনা। এই রোগ কোনো দৃশ্যমান লক্ষণ প্রকাশ করে না। ফলে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে ক্রমবর্ধমান ক্ষুধা, উচ্চ রক্তচাপ এবং সবসময় গরম বোধ করা লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পেতে পারে। আচমকা রাতের ঘুম উধাও হয়ে গেলে একই রোগের সম্ভাবনা প্রকাশ পায়। এসব লক্ষণের একটি বা একাধিক দেখা দিলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। এগুলো অযথাই ওজন করার কারণ হলে আপনি ঝুঁকির মুখে রয়েছেন।

পেটের সমস্যা 
সেলিয়াক এমন এক রোগ যা অটোইমিউন সমস্যায় দেখা দেয়। এ অবস্থায় দেহের শ্বেত রক্তকণিকা জীবাণুর বিরুদ্ধে না গিয়ে ভুল করে স্বাস্থ্যকর কোষে আক্রমণ চালায়। ডায়রিয়া ছাড়া বোঝা যায় এমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না সেলিয়াক ডিজিসে। এটা পেটের বড় ধরনের সমস্যা। এ রোগ হজমের জন্যে পাচক রস উৎপন্নকারী অগ্ন্যাশয়ে বিরূপ প্রভাব ফেলে। এ সময় মলের রং অস্বাভাবিক হয়, চর্বিপূর্ণ খাবার খেলে অবসাদ ভর করে এবং পাকস্থলীতে অস্বস্তিবোধ সেলিয়াক রোগের লক্ষণ নির্দেশ করে। এ সময় নাটকীয়ভাবে ওজন কমতে পারে আপনার, যা মোটেও খুশি হওয়ার কারণ নয়।

বিষণ্নতা 
এটা বড় ধরনের মানসিক রোগ। মন ভালো না থাকলে শরীরও ঠিকমতো কাজ করে না। বিষণ্নতার মতো ভয়াবহ রোগে কিন্তু ওজন কমতে থাকে হঠাৎ করেই। আবার অনেক সময় বিষণ্নতার কারণে ওজন বাড়তেও পারে। তবে যদি পতনের দিকেই যায়, তবে চিকিৎসা জরুরি।

ক্যান্সার 
বেশ কয়েক ধরনের ক্যান্সার বা পাকস্থলীর টিউমার বা আলসারের কারণে ওজন হ্রাসের ঘটনা ঘটে। এদের কারণে দেখা দেয় ইনফ্লামেশন। দেহ ভুল উপায়ে পুষ্টউপাদান গ্রহণ করে। ফলে তা আর কোনো কাজে লাগে না। এতে স্বাভাবিকভাবেই ওজন কমতে থাকে। এ ছাড়া পেচে টিউমার বা ইনফ্লামেশন এবং অয়েসোফাগাসের কারণেও ওজন ব্যাপক হারে কমতে পারে।

রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস 
এটাও এক ধরনের ইনফ্লামাটরি অবস্থা যা আক্রান্তের ক্ষুধা নষ্ট করে দেয়। ফলে কোনো ধরনের খাবার খেতে ইচ্ছে হয় না। আর এতে ওজন কমে যাওয়া বিচিত্র নয়। এতে কিন্তু পেটেও ইনফ্লামেশনের মতো সমস্যা দেখা দেয়। এতে দেহ সঠিকভাবে পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে না। ফলে ওজন মাপা যন্ত্রের কাঁটা নিম্নগতির হতে থাকে। কাজেই অকারণে ওজন কমা সুখকর নয়। বরং বড় ধরনের বিপদের বার্তা দেয়।
টাইমস অব ইন্ডিয়া