► ভালো নেই আইনজীবীরা
► করোনার কারণে বন্ধ নিয়মিত আদালত
► অনেকেই চেম্বার ছেড়ে দিয়েছেন, বিদায় করে দিয়েছেন কর্মচারীদের
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য কুমার দেবুল দে তাঁর ফেসবুক পেজে গত শুক্রবার (১৯ জুন) লিখেছেন, ‘চার মাস ধরে আমার আয় নেই। আরো দুই মাস যদি উচ্চ আদালত পূর্ণাঙ্গভাবে চালু না হয়, তবে নবীন আইনজীবীদের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ উচ্চ আদালতে ওকালতি করার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। শুধু তা-ই নয়, তাঁরা ঢাকা ছাড়তেও বাধ্য হবেন।’
একই দিন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল হালিমের চেম্বার ছেড়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন কালের কণ্ঠকে। দীর্ঘদিন রাজধানীর বাংলামোটরে থাকা তাঁর ওই চেম্বারে কম্পিউটার অপারেটর, ক্লার্কসহ স্টাফ ছিলেন আটজন। এরই মধ্যে আর্থিক অনটনের কারণে সবাই গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন। শেষ পর্যন্ত চেম্বারও ছাড়তে হলো।
আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট এরশাদ হোসেন রাশেদ লিখেছেন, ‘এরই মধ্যে আমার পরিচিত কয়েকজন বাসাসহ ঢাকা ছেড়ে গেছেন।’
এই তিন আইনজীবীর কথায় দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের দুর্দশার চিত্র উঠে এসেছে। জানা গেছে, বেশির ভাগ আইনজীবীর আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকার হয়েছে কয়েক লাখ মানুষ। নিজেদের আয় বন্ধ হওয়ায় অনেক আইনজীবীই চেম্বার ভাড়া ও তাঁদের কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছেন না। তাই এরই মধ্যে কর্মচারীদের ছাঁটাই করতে হয়েছে। এতে আইনজীবীদের ক্লার্ক, কম্পিউটার অপারেটরসহ সহায়ক কর্মচারীদের অবস্থা আরো খারাপ। চাকরি হারিয়ে তাঁরা গ্রামে চলে গেছেন বলে আইনজীবী সূত্রে জানা যায়।
ব্যারিস্টার হালিম বলছিলেন, ‘তিন মাস ধরে আদালত বন্ধ। আর পারছি না। প্রতি মাসে নিজেরটা ছাড়াই চেম্বার ভাড়া, স্টাফদের বেতনসহ খরচ কমপক্ষে দুই লাখ ৪৫ হাজার টাকা।’
অ্যাডভোকেট কুমার দেবুল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার তিনজন স্টাফ। তাঁদের বেতন দিতে পারছি না। এখন আমার স্টাফরা গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন। চেম্বার চালাতে পারছি না।’ স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিয়মিত আদালত চালু করার জন্য প্রধান বিচারপতির প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের প্রায় ১০ হাজার আইনজীবীসহ সারা দেশের প্রায় ৬০ হাজার আইনজীবীর একই অবস্থা। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে দেশের সব নিয়মিত আদালত বন্ধ। এ পরিস্থিতিতে গত ১১ মে থেকে শুরু হয়েছে ভার্চুয়াল আদালত। ৩০ মে পর্যন্ত সারা দেশে নিম্ন আদালতগুলোতে শুধু জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হচ্ছে। আর উচ্চ আদালতে মাত্র চারটি বেঞ্চ বসে। এ পরিস্থিতিতে ৩১ মের পর থেকে আদালতের সংখ্যা ও এখতিয়ার সামান্য বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সারা দেশের বিচারালয়ে যেসব মামলা বিচারাধীন সেগুলোর বিচারকাজ বন্ধ।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, সারা দেশে আদালতগুলোতে প্রায় ৩৭ লাখ মামলা বিচারাধীন। ভার্চুয়াল আদালতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মূলত জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হচ্ছে। এ ব্যবস্থা শুধু করোনাকালের জন্য। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে ১০ শতাংশ আইনজীবী যুক্ত বলে জানা যায়। পুরনো কোনো মামলার বিচার হচ্ছে না। ফলে প্রতিষ্ঠিত অল্পসংখ্যক আইনজীবী ছাড়া শতকরা ৮০ ভাগ আইনজীবীই সমস্যায় পড়েছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও ঢাকা আইনজীবী সমিতি তাদের সদস্যদের সুদমুক্ত ঋণ দিয়েছে।
সারা দেশে আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন গত ৮ জুন নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি আইনজীবীদের দুর্দশার কথা তুলে ধরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিয়মিত আদালত চালু করার জন্য প্রধান বিচারপতির প্রতি অনুরোধ করেছেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ড. মমতাজ উদ্দিন মেহেদী একাধিকবার ফেসবুকের মাধ্যমে নিয়মিত আদালত চালু করার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানিয়েছেন। গতকাল রবিবার প্রধান বিচারপতির কাছে তিনি এ ব্যাপারে লিখিত আবেদনও দিয়েছেন।