Dhaka , Monday, 2 December 2024

যৌনপল্লীর তিন মেয়ের গল্প

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : 08:10:13 am, Monday, 22 June 2020
  • 642 বার

সভ্যতার অন্যতম প্রাচীন পেশা হিসাবে সেমিনারে-বৈঠকে বিস্তর আলোচনা হলেও রেডলাইটের জীবন কি কিছুমাত্র বদলেছে? ভারতের স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে কলকাতার একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যৌনকর্মীদের জীবনযাপনের গল্প। সংবাদে যৌনকর্মীদের ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে।

সোনাগাছির কোহিনুর

কোহিনুর শিক্ষিকা হতে চেয়েছিলেন। বাবা-মা-ভাই আর কোহিনুর মিলে পরিবার। ছোটো বেলায় স্কুল থেকেই শিক্ষিকা হওয়ার বাসনা জাগে মনে। কিন্তু বাচ্চা মেয়েটা জানত, অভাবের সংসারে পরিবারে তার এই ইচ্ছা বিশেষ পাত্তা পাবে না। তবু একদিন কোহিনুর মনের কথা বলে ফেলল বন্ধু শবনমকে। এরপর দেখতে দেখতে মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হল। কোহিনুরের স্বপ্ন সফল করতে শবনম বন্ধুকে নিয়ে এল কলকাতার শোভাবাজারে।

শবনম এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল কোহিনুরকে। কোহিনুরের বাড়ির লোক এসব কিছুই জানত না। কারণ কোহিনুর আর তার বান্ধবী বাড়িতে না বলে পালিয়ে এসেছে। শবনমের পরিচয় করিয়ে দেওয়া মানুষটার হাত ধরে স্বপ্ন সত্য করার স্বপ্ন দেখছিল যে মেয়েটা, তার হঠাৎ চেতনা ফিরল। এ কোথায় এসে পড়েছে সে! এখানে যে সবাই ছুঁতে চায়। শুতে চায়‍! অচিরেই সে জেনে ফেলে, সোনাগাছিতে একবার চলে এলে আর পালাবার পথ নেই।

কিন্তু, যে মেয়ে শুধু পড়বে আর পড়াবে বলে বাবা-মার কোল ছেড়ে এসেছে, তাকে আটকানো কি এতটাই সহজ! বাবু আসে, বাবু যায় দিন বদলায় না। তবে এরমধ্যে হঠাৎ একটা মনের মানুষ (বাবু) খুঁজে পান কোহিনুর। সেই বাবু লাল-নীল স্বপ্ন দেখান। কোহিনুরকে সিনেমা দেখাবে বলে সোনাগছি থেকে বের করে নিয়ে যায়। এরপর সোজা বিহার। বাবু-বিবির লাল-নীল সংসার। অচিরেই গর্ভে আসে সন্তান। কিন্তু সুখ বেশিদিন সইল না।

কোহিনুর অচিরেই জানতে পারেন, তার স্বামীর একাধিক বিয়ে। অন্যত্র সংসারও আছে। তাছাড়া কোহিনুরকে পড়াতেও তার ইচ্ছা ছিল না। প্রতিবাদ করলে প্রতিরাতে রাতে শুরু হলো মারধর। একদিন ছেলেকে নিয়ে স্বামীর ঘর ছেড়ে দিল কোহিনুর। কিন্তু যাবে কোথায়? ঠাঁই না পেয়ে সে ফিরে গেল সোনাগাছিতে। কোহিনুর চাননি ছেলেকে দূরে রেখে মায়ের পরিচয় লুকিয়ে সমাজের দশ জনের একজন করতে। বরং তিনি চেয়েছিলেন, ছেলে দেখুক মায়ের সংগ্রাম।

মাসের পর মাস দরজার কড়া দড়ি দিয়ে আটকিয়ে বাইরে ছেলেকে রেখে ভেতরে খদ্দেরদের সঙ্গে কাজ করতেন কোহিনুর। প্রায়ই ছেলের কান্না, বাবুর মেজাজ মিলেমিশে বালিশ ভেজাত কোহিনুরের। তবু এক রোখা মা ছেলেকে সোনাগাছিতে রেখেই মানুষ করার সিদ্ধান্তে অটল। নিজে শিক্ষক হতে পারেননি, তাই ছেলের মধ্যে দিয়ে স্বপ্ন স্বার্থক করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত কোহিনুরের ছেলে শিক্ষক হয়েছে। মা এরপর ছেলের বিয়ে দিয়েছিল এক যৌনকর্মীর সঙ্গেই। তবে, বিয়ের পর কোহিনুরের পুত্রবধূ কেবল ঘর-সংসারই করছেন, আর পুত্র করছেন উপার্জন। আজ দুই নাতি-নাতনি নিয়ে কোহিনুরের সুখের সংসার।

হাড়কাটার নীলিমা

মুর্শিদাবাদের মেয়েটার তখন সবেমাত্র বিয়ে হয়েছে। সে কোনোদিন কলকাতা দেখেনি। বিয়ের পর স্বামীকে সে কথা জানানোর পরই যাওয়া হলো কলকাতায়। ভিক্টোরিয়া, হাওড়া ব্রিজ, জাদুঘর, গড়ের মাঠ- কত কিছু দেখার ইচ্ছা ছিল নীলিমার। স্বামী বললেন সবই হবে, কিন্তু আপাতত এক ‘বন্ধু’র বাড়িতে তো উঠতে হবে। বন্ধুর বাড়িতেই উঠল নব দম্পতি। এরপর ‘একটু আসছি’ বলে বের হলেন স্বামী। তারপর বেশ কয়েক ঘণ্টা তার আর কোনও খোঁজ নেই। কোথায় গেল লোকটা? দুই দিন কেটে গেল।

এভাবে তো আর ঘরে বসে থাকা যায় না, তাই স্বামীর ‘বন্ধু’ বলল, খুঁজতে বেরতে হবে। এরপর সেই ‘বন্ধু’র হাত ধরে আরেক ‘বন্ধু’র বাড়িতে যান তিনি। হঠাৎ নীলিমা বুঝলেন, ‘বন্ধু’দের সৌজন্যে তার সব রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি এসে পড়েছেন কলকাতার হাড়কাটা গলিতে। সেই থেকেই নতুন বন্ধুদের সঙ্গে নীলিমার ‘নতুন জীবনের’ শুরু। সকাল-বিকাল খদ্দেরদের তুষ্ট করে চলছিল মেয়েটা। আর এরসঙ্গে দুর্বারের সৌজন্যে চলছিল নাচ-গান শিক্ষা। সবকিছুর সঙ্গে বেশ ভালোই মানিয়ে নেয় নীলিমা।

হাড়কাটার হিসাবের খাতা বলছে, নীলিমা এখানে অন্যতম ‘হাই ডিমান্ড’। খদ্দেররা তাকে নিত্য উপহারও দেন। বিয়ের প্রস্তাবও আসছে অহরহ। তবে এসব শুনলেই তার ঠোঁটে ঝিলিক দেয় চিলতে হাসি, পছন্দের টেডি বিয়ারটাকে জাপটে ধরে হাট করে খোলা জানালা দিয়ে আকাশ দেখেন নীলিমা। নীলিমা শুনেছেন, ভিক্টোরিয়ার মাথায় পরীটা আর ঘোরে না, থেমে গিয়েছে।

মাটিয়ার আমিনা

স্বামী-সন্তান নিয়ে আমিনা বিবির বেশ সুখেই কাটছিল দিন। সুখ আরও বাড়বে। কারণ, আমিনা তখন অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু, অচমকা স্বপ্নভঙ্গ! হঠাৎ আমিনার স্বামীর মৃত্যু হল। গর্ভে তখন পাঁচ মাসের সন্তান। শ্বশুরবাড়ি তাকে রাখতে চাইল না। এক সন্তানের হাত ধরে গর্ভবতী আমিনা গেলেন বনগাঁয় বাপেরবাড়ি। কিন্তু সেখানেও অভাবের সংসার। একদিন বাবা জানিয়ে দিলেন, এতগুলো পেট তিনি চালাতে পারবেন না। কিন্তু নিজের মেয়ে-নাতিকে তো আর ফেলে দেওয়া যায় না।

আমিনা তারপর বসিরহাটে এক পরিচিতের কাছে নিয়ে গেলেন কাজের আশায়। সেই পরিচিত কাজ জোগাড়ের আশ্বাসও দিলেন এবং কথাও রাখলেন। কয়েকদিনের মধ্যে আমিনার একটা ‘ব্যবস্থা’ হয়ে গেল। তিনি কাজ পেলেন মাটিয়া যৌনপল্লিতে। এরপর দেখতে দেখতে ২০ বছর কেটে গেছে। লোকনাথ ও কালীভক্ত মুসলিম আমিনার ঘরে ঈশ্বর-আল্লাহ গা ঘেঁষাঘেঁষি করে আছেন। যে গর্ভের সন্তানকে নিয়ে সেদিন বাড়ি ছেড়েছিলেন আমিনা, সেই ছেলে মায়ের পরিচয় জেনে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে।

নিজের থেকে দূরে রেখে বোর্ডিয়ে ভর্তি করে ছেলে-মেয়ে দুটিকে মানুষ করতে চেয়েছিলেন মা। কিন্তু, মায়ের পেশার কথা জানতে পেরে ভেঙে পড়ে ছেলে, মাধ্যমিকের পর ছেড়ে দেয় লেখাপড়া। অন্যদিকে মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগের শর্তে বিয়ে হয়েছে মেয়ের। সেই মেয়ের ঘরে এক মেয়েও হয়েছে। কিন্তু, মেয়ে-নাতনি কাউকেই দেখতে পান না আমিনা। মেয়ের শ্বশুরবাড়ির একটাই শর্ত ছিল, মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা যাবে না। বুকে পাথর রেখে সেই শর্তে ‘হ্যাঁ’ বলেছিলেন মা। কিন্তু, এখন যে আর মন মানে না। মরার আগে একটিবার মেয়ে-নানতিকে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে চান আমিনা।

-সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার বিষয়ক রেজুলেশন গৃহীত

যৌনপল্লীর তিন মেয়ের গল্প

আপডেট টাইম : 08:10:13 am, Monday, 22 June 2020

সভ্যতার অন্যতম প্রাচীন পেশা হিসাবে সেমিনারে-বৈঠকে বিস্তর আলোচনা হলেও রেডলাইটের জীবন কি কিছুমাত্র বদলেছে? ভারতের স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে কলকাতার একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যৌনকর্মীদের জীবনযাপনের গল্প। সংবাদে যৌনকর্মীদের ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে।

সোনাগাছির কোহিনুর

কোহিনুর শিক্ষিকা হতে চেয়েছিলেন। বাবা-মা-ভাই আর কোহিনুর মিলে পরিবার। ছোটো বেলায় স্কুল থেকেই শিক্ষিকা হওয়ার বাসনা জাগে মনে। কিন্তু বাচ্চা মেয়েটা জানত, অভাবের সংসারে পরিবারে তার এই ইচ্ছা বিশেষ পাত্তা পাবে না। তবু একদিন কোহিনুর মনের কথা বলে ফেলল বন্ধু শবনমকে। এরপর দেখতে দেখতে মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হল। কোহিনুরের স্বপ্ন সফল করতে শবনম বন্ধুকে নিয়ে এল কলকাতার শোভাবাজারে।

শবনম এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল কোহিনুরকে। কোহিনুরের বাড়ির লোক এসব কিছুই জানত না। কারণ কোহিনুর আর তার বান্ধবী বাড়িতে না বলে পালিয়ে এসেছে। শবনমের পরিচয় করিয়ে দেওয়া মানুষটার হাত ধরে স্বপ্ন সত্য করার স্বপ্ন দেখছিল যে মেয়েটা, তার হঠাৎ চেতনা ফিরল। এ কোথায় এসে পড়েছে সে! এখানে যে সবাই ছুঁতে চায়। শুতে চায়‍! অচিরেই সে জেনে ফেলে, সোনাগাছিতে একবার চলে এলে আর পালাবার পথ নেই।

কিন্তু, যে মেয়ে শুধু পড়বে আর পড়াবে বলে বাবা-মার কোল ছেড়ে এসেছে, তাকে আটকানো কি এতটাই সহজ! বাবু আসে, বাবু যায় দিন বদলায় না। তবে এরমধ্যে হঠাৎ একটা মনের মানুষ (বাবু) খুঁজে পান কোহিনুর। সেই বাবু লাল-নীল স্বপ্ন দেখান। কোহিনুরকে সিনেমা দেখাবে বলে সোনাগছি থেকে বের করে নিয়ে যায়। এরপর সোজা বিহার। বাবু-বিবির লাল-নীল সংসার। অচিরেই গর্ভে আসে সন্তান। কিন্তু সুখ বেশিদিন সইল না।

কোহিনুর অচিরেই জানতে পারেন, তার স্বামীর একাধিক বিয়ে। অন্যত্র সংসারও আছে। তাছাড়া কোহিনুরকে পড়াতেও তার ইচ্ছা ছিল না। প্রতিবাদ করলে প্রতিরাতে রাতে শুরু হলো মারধর। একদিন ছেলেকে নিয়ে স্বামীর ঘর ছেড়ে দিল কোহিনুর। কিন্তু যাবে কোথায়? ঠাঁই না পেয়ে সে ফিরে গেল সোনাগাছিতে। কোহিনুর চাননি ছেলেকে দূরে রেখে মায়ের পরিচয় লুকিয়ে সমাজের দশ জনের একজন করতে। বরং তিনি চেয়েছিলেন, ছেলে দেখুক মায়ের সংগ্রাম।

মাসের পর মাস দরজার কড়া দড়ি দিয়ে আটকিয়ে বাইরে ছেলেকে রেখে ভেতরে খদ্দেরদের সঙ্গে কাজ করতেন কোহিনুর। প্রায়ই ছেলের কান্না, বাবুর মেজাজ মিলেমিশে বালিশ ভেজাত কোহিনুরের। তবু এক রোখা মা ছেলেকে সোনাগাছিতে রেখেই মানুষ করার সিদ্ধান্তে অটল। নিজে শিক্ষক হতে পারেননি, তাই ছেলের মধ্যে দিয়ে স্বপ্ন স্বার্থক করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত কোহিনুরের ছেলে শিক্ষক হয়েছে। মা এরপর ছেলের বিয়ে দিয়েছিল এক যৌনকর্মীর সঙ্গেই। তবে, বিয়ের পর কোহিনুরের পুত্রবধূ কেবল ঘর-সংসারই করছেন, আর পুত্র করছেন উপার্জন। আজ দুই নাতি-নাতনি নিয়ে কোহিনুরের সুখের সংসার।

হাড়কাটার নীলিমা

মুর্শিদাবাদের মেয়েটার তখন সবেমাত্র বিয়ে হয়েছে। সে কোনোদিন কলকাতা দেখেনি। বিয়ের পর স্বামীকে সে কথা জানানোর পরই যাওয়া হলো কলকাতায়। ভিক্টোরিয়া, হাওড়া ব্রিজ, জাদুঘর, গড়ের মাঠ- কত কিছু দেখার ইচ্ছা ছিল নীলিমার। স্বামী বললেন সবই হবে, কিন্তু আপাতত এক ‘বন্ধু’র বাড়িতে তো উঠতে হবে। বন্ধুর বাড়িতেই উঠল নব দম্পতি। এরপর ‘একটু আসছি’ বলে বের হলেন স্বামী। তারপর বেশ কয়েক ঘণ্টা তার আর কোনও খোঁজ নেই। কোথায় গেল লোকটা? দুই দিন কেটে গেল।

এভাবে তো আর ঘরে বসে থাকা যায় না, তাই স্বামীর ‘বন্ধু’ বলল, খুঁজতে বেরতে হবে। এরপর সেই ‘বন্ধু’র হাত ধরে আরেক ‘বন্ধু’র বাড়িতে যান তিনি। হঠাৎ নীলিমা বুঝলেন, ‘বন্ধু’দের সৌজন্যে তার সব রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি এসে পড়েছেন কলকাতার হাড়কাটা গলিতে। সেই থেকেই নতুন বন্ধুদের সঙ্গে নীলিমার ‘নতুন জীবনের’ শুরু। সকাল-বিকাল খদ্দেরদের তুষ্ট করে চলছিল মেয়েটা। আর এরসঙ্গে দুর্বারের সৌজন্যে চলছিল নাচ-গান শিক্ষা। সবকিছুর সঙ্গে বেশ ভালোই মানিয়ে নেয় নীলিমা।

হাড়কাটার হিসাবের খাতা বলছে, নীলিমা এখানে অন্যতম ‘হাই ডিমান্ড’। খদ্দেররা তাকে নিত্য উপহারও দেন। বিয়ের প্রস্তাবও আসছে অহরহ। তবে এসব শুনলেই তার ঠোঁটে ঝিলিক দেয় চিলতে হাসি, পছন্দের টেডি বিয়ারটাকে জাপটে ধরে হাট করে খোলা জানালা দিয়ে আকাশ দেখেন নীলিমা। নীলিমা শুনেছেন, ভিক্টোরিয়ার মাথায় পরীটা আর ঘোরে না, থেমে গিয়েছে।

মাটিয়ার আমিনা

স্বামী-সন্তান নিয়ে আমিনা বিবির বেশ সুখেই কাটছিল দিন। সুখ আরও বাড়বে। কারণ, আমিনা তখন অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু, অচমকা স্বপ্নভঙ্গ! হঠাৎ আমিনার স্বামীর মৃত্যু হল। গর্ভে তখন পাঁচ মাসের সন্তান। শ্বশুরবাড়ি তাকে রাখতে চাইল না। এক সন্তানের হাত ধরে গর্ভবতী আমিনা গেলেন বনগাঁয় বাপেরবাড়ি। কিন্তু সেখানেও অভাবের সংসার। একদিন বাবা জানিয়ে দিলেন, এতগুলো পেট তিনি চালাতে পারবেন না। কিন্তু নিজের মেয়ে-নাতিকে তো আর ফেলে দেওয়া যায় না।

আমিনা তারপর বসিরহাটে এক পরিচিতের কাছে নিয়ে গেলেন কাজের আশায়। সেই পরিচিত কাজ জোগাড়ের আশ্বাসও দিলেন এবং কথাও রাখলেন। কয়েকদিনের মধ্যে আমিনার একটা ‘ব্যবস্থা’ হয়ে গেল। তিনি কাজ পেলেন মাটিয়া যৌনপল্লিতে। এরপর দেখতে দেখতে ২০ বছর কেটে গেছে। লোকনাথ ও কালীভক্ত মুসলিম আমিনার ঘরে ঈশ্বর-আল্লাহ গা ঘেঁষাঘেঁষি করে আছেন। যে গর্ভের সন্তানকে নিয়ে সেদিন বাড়ি ছেড়েছিলেন আমিনা, সেই ছেলে মায়ের পরিচয় জেনে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে।

নিজের থেকে দূরে রেখে বোর্ডিয়ে ভর্তি করে ছেলে-মেয়ে দুটিকে মানুষ করতে চেয়েছিলেন মা। কিন্তু, মায়ের পেশার কথা জানতে পেরে ভেঙে পড়ে ছেলে, মাধ্যমিকের পর ছেড়ে দেয় লেখাপড়া। অন্যদিকে মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগের শর্তে বিয়ে হয়েছে মেয়ের। সেই মেয়ের ঘরে এক মেয়েও হয়েছে। কিন্তু, মেয়ে-নাতনি কাউকেই দেখতে পান না আমিনা। মেয়ের শ্বশুরবাড়ির একটাই শর্ত ছিল, মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা যাবে না। বুকে পাথর রেখে সেই শর্তে ‘হ্যাঁ’ বলেছিলেন মা। কিন্তু, এখন যে আর মন মানে না। মরার আগে একটিবার মেয়ে-নানতিকে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে চান আমিনা।

-সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস