গাইবান্ধায় তৃতীয় দফায় নদ-নদীর পানি বেড়ে গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নের দুই
লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন।
শুক্রবার (২৪ জুলাই) দুপুরে গাইবান্ধা সদরের কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট গ্রামের প্রাচীন দূর্গামন্দিরটি ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়ে গেছে। গত কয়েকদিনের ভাঙনে গ্রামটির প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি ও আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে স্লুইস গেট, উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, বন্দর, কামারজানি মার্চেন্ট হাইস্কুলসহ অন্তত পাঁচশ’ পরিবারের বাড়িঘর ও ফসলি জমি।
স্থানীয়রা জানান, গোঘাট গ্রামে প্রায় দেড় সহস্রাধিক পরিবারের বসবাস ছিল। চার বছর আগে ২০১৬ সালে গ্রামটি ভাঙনের কবলে পড়ে। ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দু’টি মসজিদসহ এ গ্রামের প্রায় সহস্রাধিক পরিবারের বসতবাড়ি ও শত শত একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এবারও ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গ্রামের প্রাচীন দূর্গামন্দিরটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার আগেই শুক্রবার দুপুরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড সময়মতো পদক্ষেপ নিলে ভাঙন হতো না।
এদিকে, বন্য কবলিত এলাকার বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গবাদিপশু নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। অনেকে কোমর কিংবা হাঁটু পানিতে তলিয়ে যাওয়া বসতবাড়িতেই খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের মধ্যে কেউ বাড়ির আঙ্গিনায় তাঁবুর নিচে মাচা করে আবার কেউ নৌকা বা কলা গাছের ভেলায় গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির সঙ্গে বসবাস করছেন।
একদিকে নিজেদের খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট, অন্যদিকে গবাদিপশুর খাদ্য সংকট, সব মিলিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এসব এলাকার জনগণ।
যে পানিতে পয়ঃনিষ্কাশন, সে পানিতেই গোসল, সেই পানিই পান করতে হচ্ছে বানভাসিদের। ফলে পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। তাদের যে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে, তাও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানান বন্যা দুর্গতরা।
অন্যদিকে, বন্যায় তলিয়ে আছে কয়েক হাজার হেক্টর জমির আমন বীজতলা, পাটক্ষেত, আউশ, চীনা বাদাম, মরিচ ও ঢেঁড়সসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি ক্ষেত।
পানিতে ভেসে গেছে শত-শত পুকুরের মাছ। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক ও মাছচাষিরা।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক আব্দুল মতিন জানান, বন্যা দুর্গত মানুষের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য সামগ্রী মজুদ রয়েছে। পর্যায়ক্রমে এসব ত্রাণ তাদের কাছে সুষ্ঠুভাবে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বন্যা পরবর্তী সময়ে ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় সব ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।