Dhaka , Monday, 2 December 2024

করোনা ভাইরাসের কারণে চার মাস বন্ধ থেকে ঈদুল আযহার পরে খুলছে বাংলাদেশের আদালত: আইনমন্ত্রী

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : 12:41:10 pm, Wednesday, 29 July 2020
  • 661 বার

চার মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর, ঈদুল আযহার পরে বাংলাদেশের আদালতগুলো পুনরায় খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ”আমরা এই ধারণায় উপনীত হয়েছি যে, আমাদের করোনাভাইরাস, কোভিড-১৯ এর সাথে বসবাস করতে হবে। সেজন্য আমি যদ্দুর জানি, মাননীয় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আমার শেষ যে আলাপ হয়েছে, সেটা হচ্ছে ঈদের পরে স্বাভাবিক আদালতগুলো (নিম্ন আদালত) খুলে দেয়া হবে।”

তবে ফৌজদারি মামলার বিচারিক কাজে বা সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়ায় কিছু বাধ্যবাধকতা থাকতে পারে বলে তিনি জানান। কিন্তু দেওয়ানি মামলায় সেটা নাও থাকতে পারে।

আইনমন্ত্রী বলছেন, ”এর কারণ হচ্ছে, যেসব আসামী কারাগারে আছেন, এখন পর্যন্ত আমাদের কারাগারগুলোয় কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয় নাই। এবং আমরা সেই অবস্থায় রাখতে চাই। আদালতের সেই কাজটা কীভাবে করবো, আইনের কী পরিবর্তন লাগবে, সেদিকে আমরা এগিয়ে যাবো। ”

”কিন্তু অন্যান্য কাজের সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে, সাধারণ আদালতের যেভাবে কাজ হচ্ছিল, সেই ভাবেই হবে। সেটা ঈদের পরেপরেই খুলে দেয়া হবে।” বলছেন মি. হক।

হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্ট কবে খুলবে বা কীভাবে চলবে, সেই ব্যাপারে প্রধান বিচারপতি সিদ্ধান্ত নেবেন বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশে গত মার্চ মাসে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার প্রেক্ষাপটে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলে উচ্চ ও নিম্ন আদালতের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

তবে ৩১শে মে থেকে ভার্চুয়াল আদালতের মাধ্যমে বিচারিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়। কিন্তু নিম্ন আদালতে শুধুমাত্র জামিন শুনানি এবং নতুন মামলার আবেদন গ্রহণের মধ্যেই এই আদালতের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রয়েছে। তবে উচ্চ আদালতে বিভিন্ন বিষয়ে শুনানি হয়েছে।

বিচার প্রত্যাশী ও আইনজীবীদের সংকট

বাংলাদেশে চারমাস ধরে আদালতের নিয়মিত কার্যক্রম বন্ধ থাকায় একদিকে সংকটে পড়েছেন সাধারণ বিচার প্রত্যাশী মানুষ, অন্যদিকে এই পেশার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা।

চট্টগ্রামের বাসিন্দা মোঃ রোকন বিবিসিকে বলছেন, পারিবারিক বিষয় ঘিরে আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, কিন্তু আমি নিশ্চিত, বিচার শুরু হলেই এটা মিথ্যা বলে প্রমাণিত হবে। তদন্ত রিপোর্টও দিয়েছে. কিন্তু আদালতের সিদ্ধান্তের আগেই বন্ধ হয়ে গেছে।”

“এখন আমি জানিনা আদালত কি এটাকে মামলা হিসাবে গ্রহণ করবেন নাকি খারিজ করে দেবেন। ফলে একদিকে আমি উদ্বেগে ভুগছি, সামাজিকভাবে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি।

অন্যদিকে বরিশালের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান বিবিসিকে বলছেন, ”আমাদের জমির রেকর্ডে ভুল করেছে। সেটা সংশোধনের জন্য মামলা করেছি। কিন্তু আদালত বন্ধ, কোন কাজ হচ্ছে না। কবে হবে তাও জানি না।”

শুধু এই রকম বিচার প্রত্যাশীরাই নয়, সংকটে পড়েছেন আইনজীবী, তাদের সহকারী থেকে শুরু করে আইনি পেশার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাও। বাংলাদেশে ৫০ হাজারের বেশি আইনজীবী রয়েছেন।

আদালতের নিয়মিত কার্যক্রম না থাকায় আইনজীবীদের আয়-রোজগার প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে।

যদিও সংগঠনের পক্ষ থেকে কিছুটা সহায়তা করা হচ্ছে, কিন্তু তাও পর্যাপ্ত নয়।

বিবিসির সঙ্গে আলাপে কয়েকজন আইনজীবী জানিয়েছেন, তাদের বাড়িভাড়াও বকেয়া পড়ে গেছে।

ঢাকার জজ আদালতের আইনজীবী তানিয়া পারভীন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”আমাদের পুরোপুরি কাজের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু এই সময় সব মামলা থেমে আছে। আগে মামলা থেকে, হাজিরা থেকে, শুনানি থেকে আমরা যে টাকাটা পেতাম, সেটা একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে।”

”আইনজীবী মানে অনেকে অনেক কিছু মনে করেন। কিন্তু আমরা কাউকে বলতে পারছি না যে, আমাদের বাসায় খাবার নেই, আমাদের অফিস চলছে না, বাড়িওয়ালাকে বলতে পারছি না। শুধু আমি নই, আমার মতো হাজার অনেক আইনজীবী রয়েছেন, যারা এই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন।”

মামলা জটের আশঙ্কা?

করোনাভাইরাসে টানা দুইমাসের বেশি সময় দেশের সব আদালত বন্ধ থাকার পর, অধ্যাদেশ জারি ও আইন সংশোধনের পর মে মাসের ৩১ তারিখ থেকে বাংলাদেশে ভার্চুয়াল আদালত শুরু হয়।

কিন্তু সেখানে শুধুমাত্র মামলার আবেদন গ্রহণ আর জামিন আবেদনের শুনানি করা হচ্ছে। সাক্ষ্যপ্রমাণ গ্রহণের মাধ্যমে নিয়মিত বিচার কার্যক্রম বা ট্রায়াল বন্ধ রয়েছে। ফলে একদিকে যেমন পুরনো মামলার কাজ বন্ধ, তেমনি নতুন নতুন মামলাও যোগ হচ্ছে। ফলে মামলা জট তৈরি হওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের হিসাবেই দেশে অন্তত ৩১ লাখ মামলা ঝুলে রয়েছে। এই সংকট সামলাতে কী ভাবছে দেশটির সরকার?

বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলছেন, ”চিন্তাভাবনা আছে বলেই এই পরিস্থিতিতে প্রথমে অধ্যাদেশ জারি, পরে আইনটা পাশ করেছি। যাতে আদালত বন্ধ থাকার কারণে ইমেডিয়েট যে প্রেশার তৈরি হয়েছে, সেটাকে কমিয়ে আনা যায়। আমার মনে হয়, আমরা সেই ব্যাপারে সার্থক হয়েছি।”

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার বিষয়ক রেজুলেশন গৃহীত

করোনা ভাইরাসের কারণে চার মাস বন্ধ থেকে ঈদুল আযহার পরে খুলছে বাংলাদেশের আদালত: আইনমন্ত্রী

আপডেট টাইম : 12:41:10 pm, Wednesday, 29 July 2020

চার মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর, ঈদুল আযহার পরে বাংলাদেশের আদালতগুলো পুনরায় খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ”আমরা এই ধারণায় উপনীত হয়েছি যে, আমাদের করোনাভাইরাস, কোভিড-১৯ এর সাথে বসবাস করতে হবে। সেজন্য আমি যদ্দুর জানি, মাননীয় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আমার শেষ যে আলাপ হয়েছে, সেটা হচ্ছে ঈদের পরে স্বাভাবিক আদালতগুলো (নিম্ন আদালত) খুলে দেয়া হবে।”

তবে ফৌজদারি মামলার বিচারিক কাজে বা সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়ায় কিছু বাধ্যবাধকতা থাকতে পারে বলে তিনি জানান। কিন্তু দেওয়ানি মামলায় সেটা নাও থাকতে পারে।

আইনমন্ত্রী বলছেন, ”এর কারণ হচ্ছে, যেসব আসামী কারাগারে আছেন, এখন পর্যন্ত আমাদের কারাগারগুলোয় কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয় নাই। এবং আমরা সেই অবস্থায় রাখতে চাই। আদালতের সেই কাজটা কীভাবে করবো, আইনের কী পরিবর্তন লাগবে, সেদিকে আমরা এগিয়ে যাবো। ”

”কিন্তু অন্যান্য কাজের সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে, সাধারণ আদালতের যেভাবে কাজ হচ্ছিল, সেই ভাবেই হবে। সেটা ঈদের পরেপরেই খুলে দেয়া হবে।” বলছেন মি. হক।

হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্ট কবে খুলবে বা কীভাবে চলবে, সেই ব্যাপারে প্রধান বিচারপতি সিদ্ধান্ত নেবেন বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশে গত মার্চ মাসে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার প্রেক্ষাপটে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলে উচ্চ ও নিম্ন আদালতের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

তবে ৩১শে মে থেকে ভার্চুয়াল আদালতের মাধ্যমে বিচারিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়। কিন্তু নিম্ন আদালতে শুধুমাত্র জামিন শুনানি এবং নতুন মামলার আবেদন গ্রহণের মধ্যেই এই আদালতের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রয়েছে। তবে উচ্চ আদালতে বিভিন্ন বিষয়ে শুনানি হয়েছে।

বিচার প্রত্যাশী ও আইনজীবীদের সংকট

বাংলাদেশে চারমাস ধরে আদালতের নিয়মিত কার্যক্রম বন্ধ থাকায় একদিকে সংকটে পড়েছেন সাধারণ বিচার প্রত্যাশী মানুষ, অন্যদিকে এই পেশার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা।

চট্টগ্রামের বাসিন্দা মোঃ রোকন বিবিসিকে বলছেন, পারিবারিক বিষয় ঘিরে আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, কিন্তু আমি নিশ্চিত, বিচার শুরু হলেই এটা মিথ্যা বলে প্রমাণিত হবে। তদন্ত রিপোর্টও দিয়েছে. কিন্তু আদালতের সিদ্ধান্তের আগেই বন্ধ হয়ে গেছে।”

“এখন আমি জানিনা আদালত কি এটাকে মামলা হিসাবে গ্রহণ করবেন নাকি খারিজ করে দেবেন। ফলে একদিকে আমি উদ্বেগে ভুগছি, সামাজিকভাবে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি।

অন্যদিকে বরিশালের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান বিবিসিকে বলছেন, ”আমাদের জমির রেকর্ডে ভুল করেছে। সেটা সংশোধনের জন্য মামলা করেছি। কিন্তু আদালত বন্ধ, কোন কাজ হচ্ছে না। কবে হবে তাও জানি না।”

শুধু এই রকম বিচার প্রত্যাশীরাই নয়, সংকটে পড়েছেন আইনজীবী, তাদের সহকারী থেকে শুরু করে আইনি পেশার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাও। বাংলাদেশে ৫০ হাজারের বেশি আইনজীবী রয়েছেন।

আদালতের নিয়মিত কার্যক্রম না থাকায় আইনজীবীদের আয়-রোজগার প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে।

যদিও সংগঠনের পক্ষ থেকে কিছুটা সহায়তা করা হচ্ছে, কিন্তু তাও পর্যাপ্ত নয়।

বিবিসির সঙ্গে আলাপে কয়েকজন আইনজীবী জানিয়েছেন, তাদের বাড়িভাড়াও বকেয়া পড়ে গেছে।

ঢাকার জজ আদালতের আইনজীবী তানিয়া পারভীন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”আমাদের পুরোপুরি কাজের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু এই সময় সব মামলা থেমে আছে। আগে মামলা থেকে, হাজিরা থেকে, শুনানি থেকে আমরা যে টাকাটা পেতাম, সেটা একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে।”

”আইনজীবী মানে অনেকে অনেক কিছু মনে করেন। কিন্তু আমরা কাউকে বলতে পারছি না যে, আমাদের বাসায় খাবার নেই, আমাদের অফিস চলছে না, বাড়িওয়ালাকে বলতে পারছি না। শুধু আমি নই, আমার মতো হাজার অনেক আইনজীবী রয়েছেন, যারা এই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন।”

মামলা জটের আশঙ্কা?

করোনাভাইরাসে টানা দুইমাসের বেশি সময় দেশের সব আদালত বন্ধ থাকার পর, অধ্যাদেশ জারি ও আইন সংশোধনের পর মে মাসের ৩১ তারিখ থেকে বাংলাদেশে ভার্চুয়াল আদালত শুরু হয়।

কিন্তু সেখানে শুধুমাত্র মামলার আবেদন গ্রহণ আর জামিন আবেদনের শুনানি করা হচ্ছে। সাক্ষ্যপ্রমাণ গ্রহণের মাধ্যমে নিয়মিত বিচার কার্যক্রম বা ট্রায়াল বন্ধ রয়েছে। ফলে একদিকে যেমন পুরনো মামলার কাজ বন্ধ, তেমনি নতুন নতুন মামলাও যোগ হচ্ছে। ফলে মামলা জট তৈরি হওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের হিসাবেই দেশে অন্তত ৩১ লাখ মামলা ঝুলে রয়েছে। এই সংকট সামলাতে কী ভাবছে দেশটির সরকার?

বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলছেন, ”চিন্তাভাবনা আছে বলেই এই পরিস্থিতিতে প্রথমে অধ্যাদেশ জারি, পরে আইনটা পাশ করেছি। যাতে আদালত বন্ধ থাকার কারণে ইমেডিয়েট যে প্রেশার তৈরি হয়েছে, সেটাকে কমিয়ে আনা যায়। আমার মনে হয়, আমরা সেই ব্যাপারে সার্থক হয়েছি।”