ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী এনজিওগুলো ব্যবসা বা উদ্যোগে ঋণ দিলেও তার কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। অন্যদিকে এসব প্রতিষ্ঠান এ খাতে কার্যক্রম কতটুকু বাড়াবে, তা নিয়ে দ্বিধায় ছিল। এ পরিস্থিতিতে ছোট ব্যবসায় ক্ষুদ্রঋণ বিতরণে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা হচ্ছে। নীতিমালার একটি খসড়া তৈরি করে সংশ্লিষ্টদের মতামত চেয়েছে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা এমআরএ।
খসড়া নীতিমালায় একটি ক্ষুদ্র উদ্যোগ বা ব্যবসায় সর্বোচ্চ ৪০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে এমআরএ। এমআরএর এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান অমলেন্দু মুখার্জি বলেন, বর্তমানেও ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ দিচ্ছে। একটি সার্কুলারের মাধ্যমে কিছু নিয়ম-কানুনের মধ্যে এসব ঋণ বিতরণ করা হয়। তবে এতে নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
এ কারণে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা করা হচ্ছে। নীতিমালার খসড়ার ওপর সব পক্ষ ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে এমআরএর পরিচালনা পর্ষদে উপস্থাপন করা হবে। এর পর তা চূড়ান্ত করা হবে। সাধারণত ৫০ হাজার টাকার বেশি কোনো ঋণ বিতরণ করা হলে ‘ক্ষুদ্র ব্যবসা ঋণ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কোনো কোনো এনজিও বর্তমানে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিচ্ছে।
তবে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান একাধিক এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছোট উদ্যোগ বাড়ছে। সে বিবেচনায় এই নীতিমালা করা হচ্ছে। জাতীয় শিল্পনীতিতে উৎপাদন বা ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের যেসব প্রতিষ্ঠানের জমি ও কারখানা ভবন ছাড়া অন্যান্য স্থায়ী সম্পদের পরিমাণ ১ থেকে ৭৫ লাখ টাকার মধ্যে, তাদেরকে ক্ষুদ্র উদ্যোগ প্রতিষ্ঠান বলা হয়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ ৩০ জন পর্যন্ত কর্মী থাকতে পারবে। আর সেবা, ব্যবসা ও কৃষি খাতের ক্ষুদ্র উদ্যোগ প্রতিষ্ঠানের জমি ও কারখানা ভবন ছাড়া স্থায়ী সম্পদের পরিমাণ হবে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা। আর সর্বোচ্চ ১৫ জন কর্মী থাকতে পারবে। একজন উদ্যোক্তার একাধিক ক্ষুদ্র উদ্যোগ থাকতে পারবে।
এমনকি গ্রুপ অব কোম্পানির অধীনে আলাদাভাবে নিবন্ধিত এমন প্রতিষ্ঠান থাকলে সেটিও ক্ষুদ্র উদ্যোগ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হবে। সব খাতের প্রতিষ্ঠানকেই সর্বোচ্চ ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া যাবে। কোনো ক্ষুদ্র উদ্যোগ একটি বা একাধিক ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বোচ্চ ৪০ লাখ টাকা ঋণ নিতে পারবে।
খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, ক্ষুদ্র উদ্যোগে ঋণ দেওয়ার জন্য প্রত্যেক ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানকে আলাদা ব্যবসায়িক কৌশল নিতে হবে। তাদেরকে বাজার বিবেচনায় ভিন্ন ভিন্ন আমানত ও ঋণ স্কিম চালু করতে হবে। একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে খাতভিত্তিক একটি অথবা একাধিক পণ্যে গুরুত্ব দিয়ে এই ঋণ বিতরণ করতে হবে। এই ঋণ প্রচলিত পদ্ধতির পাশাপাশি ডিজিটাল পদ্ধতিতেও লেনদেন করা যাবে।
ঋণের আবেদন হতে হবে বাংলা ভাষায়। ১০ কর্মদিবসের মধ্যে ঋণের আবেদন নিতে হবে ও নিষ্পত্তি করতে হবে। গ্রাহককে লিখিতভাবে অথবা এসএমএস করে তার আবেদন বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিতে হবে। ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে শাখা পর্যায়ে ঋণ অনুমোদনের ক্ষমতা দিতে হবে। ঋণ অনুমোদনের পর দ্রুততম সময়ে তা বিতরণ করতে হবে।
এতে আরও বলা হয়, প্রাথমিকভাবে ঋণ ও মূলধনের অনুপাত হবে ৬০ : ৪০। অর্থাৎ কোনো গ্রাহকের এক লাখ টাকা মূলধন থাকলে তিনি দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। তবে গ্রাহকের জামানত ও অন্যান্য তথ্য বিবেচনা করে এই অনুপাত সমান সমান নির্ধারণ করতে পারবে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান।
তবে গ্রাহকের লেনদেনে সন্তুষ্ট হয়ে এই ঋণ অনুপাত ৭০ : ৩০ করতে পারবে প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ গ্রাহকের নিজস্ব মূলধন এক লাখ টাকা হলে তাকে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৩৩ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া যাবে। তবে সর্বোচ্চ ৪০ লাখ টাকার বেশি দেওয়া যাবে না। এই ঋণের সুদহার হবে এমআরএর নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রাহক-প্রতিষ্ঠান সম্পর্কের ভিত্তিতে। এ ক্ষেত্রে এক মাসের গ্রেস পিরিয়ড দেওয়া যাবে।
তবে মৌসুমি ব্যবসার ঋণসহ প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে গ্রেস পিরিয়ড বাড়াতে পারবেন শাখা কর্মকর্তারা। ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়ার আগে ওই প্রতিষ্ঠানের আইনগত দিক অর্থাৎ লাইসেন্স, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন, অংশীদার থাকলে তাদের মধ্যের সম্পর্ক যাচাই করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের দক্ষতা দেখারও পরামর্শ রয়েছে এতে। তথ্যসূত্র: সমকাল।