যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি সেন্টারের (এনসিএসসি) পরিচালক উইলিয়াম ইভানিনা হুঁশিয়ার করেছেন, নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে বিদেশি কয়েকটি রাষ্ট্র তৎপরতা শুরু করেছে।
মার্কিন কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্স বিভাগের প্রধান বিশেষ করে তিনটি দেশের নাম করেছেন – চীন, রাশিয়া এবং ইরান।
এক বিবৃতিতে মি ইভানিনা বলেন, এরা ‘গোপনে এবং প্রকাশ্যে’ আমেরিকান ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।
ঐ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চীন চাইছে না ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার জিতে হোয়াইট হাউজে থেকে যান, অন্যদিকে রাশিয়া সম্ভাব্য ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনেরে ক্ষতি করতে চাইছে।
মার্কিন গোয়েন্দারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, ২০১৬ সারের নির্বাচনে রাশিয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনে কাজ করেছে।
মি. ইভানিনার বিবৃতি অনুযায়ী – এবারও মস্কো চায় ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন ক্ষমতায় থেকে যান। অবশ্য রাশিয়া সবসময় বলে এসেছে তারা মার্কিন নির্বাচনে বা যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কখনই মাথা গলায়নি।
কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্স বিভাগের এই রিপোর্ট সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, তার প্রশাসন এই রিপোর্ট খুঁটিয়ে দেখবে।
বিদেশি হস্তক্ষেপ নিয়ে গোয়েন্দা এই রিপোর্টটি এমন সময় প্রকাশ করা হলো যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, তার ভাষায়, ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কারচুপি ঠেকাতে‘ নভেম্বরের নির্বাচন পেছানোর প্রস্তাব করেছেন। তার এই প্রস্তাব নিয়ে নিয়ে তার নিজের দলের ভেতরে থেকেই আপত্তি উঠেছে।
কোন্ দেশ কী চায়?
এনসিএসসির পরিচালক উইলিয়াম ইভানিনা তার বিবৃতিটি প্রকাশ করেন গতকাল (শুক্রবার)।
তাতে বলা হয় – বিদেশি কিছু রাষ্ট্র ভোটারদের পছন্দ প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে, মার্কিন নীতি পরিবর্তনের উস্কানি দিচ্ছে, দেশের ভেতর ‘মতভেদ তৈরি করছে‘ এবং ‘যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে মানুষের আস্থা নষ্ট করার চেষ্টা করছে’।
তবে মার্কিন কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্স প্রধান একই সাথে বলেন, “ভোটের ফলাফল নির্ধারণে আমাদের শত্রুরা খুব বেশি কিছু করতে পারবে না।“
তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে কে জিতবে তা নিয়ে বিশ্বের অনেক দেশেরই নিজ নিজ পছন্দ রয়েছে। তবে চীন, রাশিয়া এবং ইরানকে নিয়ে তারা সবচেয়ে বেশি চিন্তিত।”
“চীন চায়না প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবার জয়ী হন, কারণ তারা মনে করে তাকে বোঝা মুশকিল। অন্যদিকে, রাশিয়া মি. বাইডেন এবং মস্কোর ধারণামতে ‘রুশ সরকার-বিরোধী’ রাজনীতিকদের ‘ছোট’ করতে তৎপর।“
মি. ইভানিনা বলেন, মস্কোর সাথে সম্পর্কিত কিছু ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান সোশাল মিডিয়ায় এবং টিভিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরার কাজ শুরু করেছে।
ইরানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “ইরান যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে খাটো করার চেষ্টা করছে, নানা প্রচারণা চালিয়ে আমেরিকান জনমত বিভক্ত করতে তৎপর হয়েছে।“
তিনি বলেন, ইরান মনে করছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পুনঃ-নির্বাচিত হলে তিনি ইরানে সরকার পরিবর্তনের জন্য চাপ অব্যাহত রাখবেন।
চীন ও রাশিয়া নিয়ে ট্রাম্প
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, রাশিয়া নির্বাচনে মাথা গলানোর চেষ্টা হয়তো করতে পারে, কিন্তু মস্কো তার পক্ষে কাজ করবে এই দাবি তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি সর্বশেষ যে মানুষটিকে রাশিয়া জয়ী দেখতে চায়, তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমি রাশিয়ার ব্যাপারে যতটা শক্ত, আগে কোনো প্রেসিডেন্ট এতটা ছিলেন না।“
চীন সম্পর্কে মি. ট্রাম্প বলেন, তিনি হারলে যে চীন যে খুশি হবে তা নিয়ে তার কোনো সন্দেহ নেই।
তিনি মন্তব্য করেন, জো বাইডেন জিতলে “চীন আমেরিকায় কর্তৃত্ব করবে।”
ডেমোক্র্যাটরা সম্প্রতি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ওপর চাপ তৈরি করেছে যে নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপ নিয়ে তারা মানুষকে অন্ধকারে রাখছে।
মি. ইভানিনা অবশ্য তার বিবৃতিতে বলেছেন, নির্বাচন সম্পর্কিত কোনো ধরণের হুমকির গোপন তথ্য তার প্রতিষ্ঠান প্রার্থী এবং রাজনীতিকদের আগেও জানিয়েছে, ভবিষ্যতেও জানাবে।
“নির্বাচনের বিরুদ্ধে কোনো হুমকির তথ্য জনগণ এবং সংশ্লিষ্টদের জানাতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এখন যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তা নজিরবিহীন।“