Dhaka , Friday, 19 April 2024

বিএনপি: সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার হাতিয়ার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : 01:06:46 am, Saturday, 15 August 2020
  • 586 বার

‘এ পর্যন্ত মোট ১০৮টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় মোট আসামি ২০৪ জন। তাদের মধ্যে সাংবাদিক ৪৪ জন আর অন্যান্য পেশায় কর্মরত ও সাধারণ মানুষ ১৬০ জন’

ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ আইনের আওতায় থাকা সব মামলা বাতিলের দাবি করেছেন।

শুক্রবার (১৪ আগস্ট) রাজধানীর উত্তরার বাসভবন থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বিএনপি শুরু থেকেই এ আইন বাতিলের দাবি তুলে আসছে।

তিনি বলেন, “২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১৫৩ জন মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করে হয়রানি করা হয়েছে। এসব অভিযোগগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাবেন, সরকারি দলের লুটেরাদের বিরুদ্ধে কথা বললে, রাজনৈতিক মত প্রকাশ করলে, সরকারের সমালোচনা করলে মামলা করা হয়েছে।”

ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া বা প্রিন্ট মিডিয়াতে সাংবাদিক বা যারা ক্ষমতাসীন দলের লোকদের দুর্নীতি ও নির্লজ্জ আচরণ সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ করেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

“ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার ভয়ে আজ জাতির কণ্ঠ রুদ্ধ। বিবেকের স্বাধীনতা শৃঙ্খলিত যা সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল। বিএনপি শুরু থেকেই বলে এসেছে এ আইন কালো আইন। এ আইন সংবিধান বিরোধী এবং জনগণের কণ্ঠ রোধ করার জন্য সরকারের হাতিয়ার। সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এ আইন করেছে। আমরা মনে করি আইনটি অবিলম্বে বাতিল করা উচিত এবং মানুষের চিন্তা-চেতনা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা উচিত,” বলেন বিএনপির এ নেতা।

ফখরুল বলেন, সাংবাদিক এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৫৭ ধারা বাতিলের দাবি তুললেও ৯৪ ভাগ মামলাই এ আইনের বির্তকিত ৫৭ ধারায় দায়ের করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, “মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেয়া জন্য সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৫৭ অনুচ্ছেদের অপব্যবহার করছে। যখনই কোনো সরকার কর্তৃত্ববাদী, স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী হয়ে ওঠে, তখন প্রথমে তারা মত প্রকাশ, বাকস্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে নিতে চায় এবং সামাজিক মাধ্যমগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। বর্তমান সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতবাবে সচেতন ও আন্তরিকতার সাথে তা করছে।”

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে এবং দেশের বর্তমান পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপির এ নেতা।

বিভিন্ন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পরিসংখ্যান তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “এ পর্যন্ত মোট ১০৮টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় মোট আসামি ২০৪ জন। তাদের মধ্যে সাংবাদিক ৪৪ জন আর অন্যান্য পেশায় কর্মরত ও সাধারণ মানুষ ১৬০ জন।”

২০১৯ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে ৬৩টি এবং ২০১৮ সালে মামলা হয়েছে ৭১টি। তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৯ সালে এক বছরে মোট মামলা হয়েছে ৬৩টি। আর সেখানে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই মামলা হয়েছে তার চেয়ে বেশি ১০৮টি। বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ। কারণ অনেক মামলার খবরই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয় না, যোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ১২ জন সাংবাদিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হয়েছেন উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, “ইতোমধ্যেই সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের জন্য সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে লিখতে পারছেন না। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ কালো আইন বাতিলের দাবি তুলেছে।”

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তাদের দল সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় ফিরে আসলে, জনগণের অধিকার, বাকস্বাধীনতা এবং চিন্তার স্বাধীনতা খর্ব করে এমন সব আইন বাতিল করবে।

তিনি আরও বলেন, তাদের দল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করার আহ্বান জানিয়ে সরকারের কাছে একটি চিঠি দেবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

বিএনপি: সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার হাতিয়ার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

আপডেট টাইম : 01:06:46 am, Saturday, 15 August 2020

‘এ পর্যন্ত মোট ১০৮টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় মোট আসামি ২০৪ জন। তাদের মধ্যে সাংবাদিক ৪৪ জন আর অন্যান্য পেশায় কর্মরত ও সাধারণ মানুষ ১৬০ জন’

ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ আইনের আওতায় থাকা সব মামলা বাতিলের দাবি করেছেন।

শুক্রবার (১৪ আগস্ট) রাজধানীর উত্তরার বাসভবন থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বিএনপি শুরু থেকেই এ আইন বাতিলের দাবি তুলে আসছে।

তিনি বলেন, “২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১৫৩ জন মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করে হয়রানি করা হয়েছে। এসব অভিযোগগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাবেন, সরকারি দলের লুটেরাদের বিরুদ্ধে কথা বললে, রাজনৈতিক মত প্রকাশ করলে, সরকারের সমালোচনা করলে মামলা করা হয়েছে।”

ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া বা প্রিন্ট মিডিয়াতে সাংবাদিক বা যারা ক্ষমতাসীন দলের লোকদের দুর্নীতি ও নির্লজ্জ আচরণ সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ করেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

“ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার ভয়ে আজ জাতির কণ্ঠ রুদ্ধ। বিবেকের স্বাধীনতা শৃঙ্খলিত যা সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল। বিএনপি শুরু থেকেই বলে এসেছে এ আইন কালো আইন। এ আইন সংবিধান বিরোধী এবং জনগণের কণ্ঠ রোধ করার জন্য সরকারের হাতিয়ার। সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এ আইন করেছে। আমরা মনে করি আইনটি অবিলম্বে বাতিল করা উচিত এবং মানুষের চিন্তা-চেতনা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা উচিত,” বলেন বিএনপির এ নেতা।

ফখরুল বলেন, সাংবাদিক এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৫৭ ধারা বাতিলের দাবি তুললেও ৯৪ ভাগ মামলাই এ আইনের বির্তকিত ৫৭ ধারায় দায়ের করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, “মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেয়া জন্য সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৫৭ অনুচ্ছেদের অপব্যবহার করছে। যখনই কোনো সরকার কর্তৃত্ববাদী, স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী হয়ে ওঠে, তখন প্রথমে তারা মত প্রকাশ, বাকস্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে নিতে চায় এবং সামাজিক মাধ্যমগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। বর্তমান সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতবাবে সচেতন ও আন্তরিকতার সাথে তা করছে।”

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে এবং দেশের বর্তমান পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপির এ নেতা।

বিভিন্ন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পরিসংখ্যান তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “এ পর্যন্ত মোট ১০৮টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় মোট আসামি ২০৪ জন। তাদের মধ্যে সাংবাদিক ৪৪ জন আর অন্যান্য পেশায় কর্মরত ও সাধারণ মানুষ ১৬০ জন।”

২০১৯ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে ৬৩টি এবং ২০১৮ সালে মামলা হয়েছে ৭১টি। তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৯ সালে এক বছরে মোট মামলা হয়েছে ৬৩টি। আর সেখানে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই মামলা হয়েছে তার চেয়ে বেশি ১০৮টি। বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ। কারণ অনেক মামলার খবরই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয় না, যোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ১২ জন সাংবাদিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হয়েছেন উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, “ইতোমধ্যেই সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের জন্য সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে লিখতে পারছেন না। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ কালো আইন বাতিলের দাবি তুলেছে।”

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তাদের দল সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় ফিরে আসলে, জনগণের অধিকার, বাকস্বাধীনতা এবং চিন্তার স্বাধীনতা খর্ব করে এমন সব আইন বাতিল করবে।

তিনি আরও বলেন, তাদের দল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করার আহ্বান জানিয়ে সরকারের কাছে একটি চিঠি দেবে।