Dhaka , Monday, 2 December 2024

চালের বাজার অস্থির

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : 08:48:05 am, Thursday, 20 August 2020
  • 531 বার

সরকারের সংগ্রহ অভিযানে ঠিকমতো সাড়া না দিয়ে করোনা দুর্যোগের এ সময়ে বাজারে চালের দাম আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন মিল মালিকরা। এর প্রভাবে পাইকারি ও খুচরা বাজারে সরু, মাঝারি ও মোটা- সব চালের দাম কেজিতে দুই থেকে চার টাকা বেড়েছে। করোনার মধ্যে এমনিতেই অনেকের আয় কমেছে। এ অবস্থায় প্রধান খাদ্যশস্য চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেশি চাপে পড়েছেন দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ।

মিল মালিকরা বলছেন, ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে চালের দাম বেড়েছে। তাই খরচ বেশি হওয়ায় সরকারকে চুক্তি অনুযায়ী চাল দেওয়া সম্ভব হয়নি। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মিল মালিকদের কারণে চালের দাম বেড়েছে। এখন মিলগুলোতে ধান ও চালের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। মৌসুমের সময়ে কম দামে কেনা ধান থেকে তৈরি চাল এখন তারা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। আর এখন ধানের দাম বৃদ্ধির অজুহাত দিচ্ছেন। এদিকে মিলগুলো চুক্তি অনুযায়ী সরকারকে চাল সরবরাহ না করায় মজুদ বাড়াতে আমদানির পরিকল্পনা করছে সরকার। পাশাপাশি সংকটের এ সময়ে খোলাবাজারে চাল বিক্রি অব্যাহত রয়েছে।

গত এক সপ্তাহ ধরে মিল মালিকরা চালের দাম কেজিতে দু-চার টাকা বাড়িয়েছেন বলে জানান আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। মিরপুর-১ নং বাজারের চাল ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন বলেন, মিলাররা ধানের দাম বৃদ্ধির কথা বলে চালের দাম বাড়িয়েছেন। কিন্তু তাদের কম দামে কেনা ধানের চাল এখন বাজারে। যদিও বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির কারণে এখন ধানের দাম একটু বাড়ছে। ঈদের পর থেকে সরবরাহ সমস্যার কথা বলে মিল মালিকরা এক দফা দাম বাড়ান। কারওয়ান বাজারের চাল ব্যবসায়ী মাইনুদ্দিন মানিক বলেন, মিলগুলোর কারণে চালের দাম বাড়ছে।

ধান ও চালের বাজার তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে। বড় অটো রাইস মিলে হাজার হাজার টন ধান কিনে মজুদ রাখতে হয়। মৌসুমের সময় মিলগুলো প্রয়োজন মতো ধান কিনে রেখেছে। দু-চারদিন ধরে ধানের দাম বাড়লে তাতে চালের দাম বাড়ার কথা নয়।

গতকাল বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরায় প্রতি কেজি গুটি বা স্বর্ণা চালের খুচরা মূল্য এখন ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও এই মোটা চাল ৪০ থেকে ৪২ টাকা ছিল। মাঝারি মানের বিআর-২৮ ও পাইজাম ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা ছিল। আর সরু চাল মিনিকেটের দামও একই হারে বেড়ে এখন ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে মোটা চালের দর গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে ২২ শতাংশ। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট বেড়েছে।

লক্ষ্যমাত্রার তিন ভাগের এক ভাগ ধান-চাল সংগ্রহ :চুক্তি অনুযায়ী সরবরাহ না করায় বোরো মৌসুমে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ ধান ও চাল সংগ্রহ হয়েছে। চলতি বছর সরকার সাড়ে ১৯ লাখ টন বোরো ধান-চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। ৩৬ টাকা কেজি দরে মিলারদের কাছ থেকে ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল ও ৩৫ টাকা কেজিতে দেড় লাখ টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু মিল মালিকরা চুক্তিমূল্যে সরকারকে চাল সরবরাহ না করে গড়িমসি করছেন। তারা সরকারের চাল কেনার দর বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছেন। এ দাবি নাকচ করে প্রয়োজনে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ১৫ আগস্টের হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সারাদেশে মোট ছয় লাখ ৫৯ হাজার ১৮৬ টন ধান ও চাল সংগ্রহ হয়েছে। এর মধ্যে ধানের পরিমাণ মাত্র এক লাখ ৮৩ হাজার ৮৪৩ টন। সিদ্ধ চাল সংগ্রহ হয়েছে চার লাখ ৭৪ হাজার ৭৬৬ টন। আতপ চাল সংগ্রহের পরিমাণ ৬৪ হাজার ৯২২ টন। গুদামে ধান-চাল না আসায় সরকারের বোরো সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। কারণ আগামী ৩১ আগস্ট সংগ্রহ অভিযান শেষ হচ্ছে। বর্তমানে প্রায় সাড়ে দশ লাখ টন চাল সরকারি গুদামে মজুদ আছে।

পর্যাপ্ত উৎপাদন ও সরবরাহ থাকার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২২ মে চালের শুল্ক্ক দ্বিগুণ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। বর্তমানে চাল আমদানিতে মোট ৫৫ শতাংশ শুল্ক্ক রয়েছে। এর মধ্যে আমদানি শুল্ক্ক ২৫ শতাংশ, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক্ক ২৫ শতাংশ এবং অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশ। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ইতোমধ্যে বলেছেন, চালের বাজার অস্থিতিশীল করলে শুল্ক্ক কমিয়ে বেসরকারিভাবে আমদানি উন্মুক্ত করা হতে পারে। এখন কেস টু কেস ভিত্তিতে বেসরকারি খাতে চাল আমদানির জন্য অনুমতি দেওয়া হয়।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম সমকালকে বলেন, চলতি মাসের মধ্যে কোন কোন দেশ থেকে কী পরিমাণ চাল আমদানি করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এখন সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করা হচ্ছে। মিল ও বাজার পর্যায়ে পর্যাপ্ত চাল মজুদ আছে। আমন ওঠা পর্যন্ত চালের ঘাটতি হবে না। তবে আমনের আবাদে ক্ষতি হলে বাজারে চাল সরবরাহ ঠিক রাখতে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হবে। এখন চালের বাজার স্বাভাবিক রাখতে মনিটরিং জোরদার করা হবে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে সোমবার বৈঠক হয়েছে। তিনি বলেন, মিলগুলো চুক্তি অনুযায়ী চাল সরবরাহ করেনি। তাদের এ মাসের মধ্যে চাল দিতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ জন্য তারা বাজার থেকে কেনা বাড়ানোয় ধানের দাম বাড়তে পারে। তবে চালের বাজার স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ সমকালকে বলেন, করোনা দুর্যোগের এ সময়ে চালের দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়ানো উচিত নয়। মিলগুলো পর্যাপ্ত মজুদ আছে এমন বলে আমদানি না করার দাবি জানালেও সরকারকে চুক্তি অনুযায়ী চাল দিতে চাইছে না। যেসব মিল চাল দেয়নি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, চাল সংগ্রহ পর্যাপ্ত না হওয়ায় সরকারি মজুদ বাড়াতে আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া আছে। এ বিষয়ে প্রক্রিয়া চলছে। বেসরকারিভাবে আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

মোকামে দাম ঊর্ধ্বমুখী :দেশের সব মোকামে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। একসঙ্গে সব মিল একই হারে দাম বাড়িয়েছে। অন্যতম বৃহৎ চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে মিল গেটেই কেজিপ্রতি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকায়, যা ঈদের আগে ছিল ৩৮ থেকে ৩৯ টাকা। আর মিনিকেট (সরু), আঠাশ, পাইজাম, কাজললতা ও বাসমতি চালের দামও বেড়েছে।

কুষ্টিয়ার দাদা রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী ও জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান সমকালকে বলেন, মণপ্রতি ধানের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এ কারণে মিল মালিকরাও দাম বাড়িয়েছেন। তবে চাল আমদানির খবরে সবাই শঙ্কিত। এতে কেনাবেচা কমেছে। মিলে প্রতিদিন চাল মজুদ হচ্ছে। লিয়াকত রাইস মিলের মালিক হাজি লিয়াকত হোসেন বলেন, ধান ও চালের সংকট নেই। নতুন ধান উঠলে সে ক্ষেত্রে বাজার স্বাভাবিক হতে পারে।

কুষ্টিয়ার আইলচারা ধানের হাটে গত সপ্তাহের তুলনায় ধানের দাম মণে আরও মান ভেদে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। শুকনো ধান গড়ে এক হাজার থেকে এক হাজার ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষক আলম মালিথা ও হাসিবুর রহমান জানান, কৃষকদের ঘরে এ মুহূর্তে তেমন ধান নেই। বড় মহাজনদের ঘরে এখনও কিছু ধান আছে। তারা ভালো দাম পাচ্ছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার বিষয়ক রেজুলেশন গৃহীত

চালের বাজার অস্থির

আপডেট টাইম : 08:48:05 am, Thursday, 20 August 2020

সরকারের সংগ্রহ অভিযানে ঠিকমতো সাড়া না দিয়ে করোনা দুর্যোগের এ সময়ে বাজারে চালের দাম আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন মিল মালিকরা। এর প্রভাবে পাইকারি ও খুচরা বাজারে সরু, মাঝারি ও মোটা- সব চালের দাম কেজিতে দুই থেকে চার টাকা বেড়েছে। করোনার মধ্যে এমনিতেই অনেকের আয় কমেছে। এ অবস্থায় প্রধান খাদ্যশস্য চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেশি চাপে পড়েছেন দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ।

মিল মালিকরা বলছেন, ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে চালের দাম বেড়েছে। তাই খরচ বেশি হওয়ায় সরকারকে চুক্তি অনুযায়ী চাল দেওয়া সম্ভব হয়নি। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মিল মালিকদের কারণে চালের দাম বেড়েছে। এখন মিলগুলোতে ধান ও চালের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। মৌসুমের সময়ে কম দামে কেনা ধান থেকে তৈরি চাল এখন তারা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। আর এখন ধানের দাম বৃদ্ধির অজুহাত দিচ্ছেন। এদিকে মিলগুলো চুক্তি অনুযায়ী সরকারকে চাল সরবরাহ না করায় মজুদ বাড়াতে আমদানির পরিকল্পনা করছে সরকার। পাশাপাশি সংকটের এ সময়ে খোলাবাজারে চাল বিক্রি অব্যাহত রয়েছে।

গত এক সপ্তাহ ধরে মিল মালিকরা চালের দাম কেজিতে দু-চার টাকা বাড়িয়েছেন বলে জানান আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। মিরপুর-১ নং বাজারের চাল ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন বলেন, মিলাররা ধানের দাম বৃদ্ধির কথা বলে চালের দাম বাড়িয়েছেন। কিন্তু তাদের কম দামে কেনা ধানের চাল এখন বাজারে। যদিও বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির কারণে এখন ধানের দাম একটু বাড়ছে। ঈদের পর থেকে সরবরাহ সমস্যার কথা বলে মিল মালিকরা এক দফা দাম বাড়ান। কারওয়ান বাজারের চাল ব্যবসায়ী মাইনুদ্দিন মানিক বলেন, মিলগুলোর কারণে চালের দাম বাড়ছে।

ধান ও চালের বাজার তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে। বড় অটো রাইস মিলে হাজার হাজার টন ধান কিনে মজুদ রাখতে হয়। মৌসুমের সময় মিলগুলো প্রয়োজন মতো ধান কিনে রেখেছে। দু-চারদিন ধরে ধানের দাম বাড়লে তাতে চালের দাম বাড়ার কথা নয়।

গতকাল বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরায় প্রতি কেজি গুটি বা স্বর্ণা চালের খুচরা মূল্য এখন ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও এই মোটা চাল ৪০ থেকে ৪২ টাকা ছিল। মাঝারি মানের বিআর-২৮ ও পাইজাম ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা ছিল। আর সরু চাল মিনিকেটের দামও একই হারে বেড়ে এখন ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে মোটা চালের দর গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে ২২ শতাংশ। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট বেড়েছে।

লক্ষ্যমাত্রার তিন ভাগের এক ভাগ ধান-চাল সংগ্রহ :চুক্তি অনুযায়ী সরবরাহ না করায় বোরো মৌসুমে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ ধান ও চাল সংগ্রহ হয়েছে। চলতি বছর সরকার সাড়ে ১৯ লাখ টন বোরো ধান-চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। ৩৬ টাকা কেজি দরে মিলারদের কাছ থেকে ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল ও ৩৫ টাকা কেজিতে দেড় লাখ টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু মিল মালিকরা চুক্তিমূল্যে সরকারকে চাল সরবরাহ না করে গড়িমসি করছেন। তারা সরকারের চাল কেনার দর বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছেন। এ দাবি নাকচ করে প্রয়োজনে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ১৫ আগস্টের হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সারাদেশে মোট ছয় লাখ ৫৯ হাজার ১৮৬ টন ধান ও চাল সংগ্রহ হয়েছে। এর মধ্যে ধানের পরিমাণ মাত্র এক লাখ ৮৩ হাজার ৮৪৩ টন। সিদ্ধ চাল সংগ্রহ হয়েছে চার লাখ ৭৪ হাজার ৭৬৬ টন। আতপ চাল সংগ্রহের পরিমাণ ৬৪ হাজার ৯২২ টন। গুদামে ধান-চাল না আসায় সরকারের বোরো সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। কারণ আগামী ৩১ আগস্ট সংগ্রহ অভিযান শেষ হচ্ছে। বর্তমানে প্রায় সাড়ে দশ লাখ টন চাল সরকারি গুদামে মজুদ আছে।

পর্যাপ্ত উৎপাদন ও সরবরাহ থাকার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২২ মে চালের শুল্ক্ক দ্বিগুণ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। বর্তমানে চাল আমদানিতে মোট ৫৫ শতাংশ শুল্ক্ক রয়েছে। এর মধ্যে আমদানি শুল্ক্ক ২৫ শতাংশ, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক্ক ২৫ শতাংশ এবং অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশ। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ইতোমধ্যে বলেছেন, চালের বাজার অস্থিতিশীল করলে শুল্ক্ক কমিয়ে বেসরকারিভাবে আমদানি উন্মুক্ত করা হতে পারে। এখন কেস টু কেস ভিত্তিতে বেসরকারি খাতে চাল আমদানির জন্য অনুমতি দেওয়া হয়।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম সমকালকে বলেন, চলতি মাসের মধ্যে কোন কোন দেশ থেকে কী পরিমাণ চাল আমদানি করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এখন সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করা হচ্ছে। মিল ও বাজার পর্যায়ে পর্যাপ্ত চাল মজুদ আছে। আমন ওঠা পর্যন্ত চালের ঘাটতি হবে না। তবে আমনের আবাদে ক্ষতি হলে বাজারে চাল সরবরাহ ঠিক রাখতে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হবে। এখন চালের বাজার স্বাভাবিক রাখতে মনিটরিং জোরদার করা হবে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে সোমবার বৈঠক হয়েছে। তিনি বলেন, মিলগুলো চুক্তি অনুযায়ী চাল সরবরাহ করেনি। তাদের এ মাসের মধ্যে চাল দিতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ জন্য তারা বাজার থেকে কেনা বাড়ানোয় ধানের দাম বাড়তে পারে। তবে চালের বাজার স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ সমকালকে বলেন, করোনা দুর্যোগের এ সময়ে চালের দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়ানো উচিত নয়। মিলগুলো পর্যাপ্ত মজুদ আছে এমন বলে আমদানি না করার দাবি জানালেও সরকারকে চুক্তি অনুযায়ী চাল দিতে চাইছে না। যেসব মিল চাল দেয়নি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, চাল সংগ্রহ পর্যাপ্ত না হওয়ায় সরকারি মজুদ বাড়াতে আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া আছে। এ বিষয়ে প্রক্রিয়া চলছে। বেসরকারিভাবে আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

মোকামে দাম ঊর্ধ্বমুখী :দেশের সব মোকামে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। একসঙ্গে সব মিল একই হারে দাম বাড়িয়েছে। অন্যতম বৃহৎ চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে মিল গেটেই কেজিপ্রতি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকায়, যা ঈদের আগে ছিল ৩৮ থেকে ৩৯ টাকা। আর মিনিকেট (সরু), আঠাশ, পাইজাম, কাজললতা ও বাসমতি চালের দামও বেড়েছে।

কুষ্টিয়ার দাদা রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী ও জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান সমকালকে বলেন, মণপ্রতি ধানের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এ কারণে মিল মালিকরাও দাম বাড়িয়েছেন। তবে চাল আমদানির খবরে সবাই শঙ্কিত। এতে কেনাবেচা কমেছে। মিলে প্রতিদিন চাল মজুদ হচ্ছে। লিয়াকত রাইস মিলের মালিক হাজি লিয়াকত হোসেন বলেন, ধান ও চালের সংকট নেই। নতুন ধান উঠলে সে ক্ষেত্রে বাজার স্বাভাবিক হতে পারে।

কুষ্টিয়ার আইলচারা ধানের হাটে গত সপ্তাহের তুলনায় ধানের দাম মণে আরও মান ভেদে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। শুকনো ধান গড়ে এক হাজার থেকে এক হাজার ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষক আলম মালিথা ও হাসিবুর রহমান জানান, কৃষকদের ঘরে এ মুহূর্তে তেমন ধান নেই। বড় মহাজনদের ঘরে এখনও কিছু ধান আছে। তারা ভালো দাম পাচ্ছেন।