যদি সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলে, তাহলে বিভিন্ন বিষয়বস্তু বাদ দিয়ে সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচিতে (সিলেবাস) এ বছরের পড়াশোনা শেষ করার চিন্তাভাবনা করছে সরকার। এ জন্য প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তিন ধরনের বিকল্প পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করা হচ্ছে। আর পরীক্ষার বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব আলোচনায় থাকলেও তা কবে এবং কীভাবে হবে, নাকি পরীক্ষা হবে না, সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
পাঠ্যসূচি কাটছাঁট করে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং প্রাথমিকের পাঠ্যসূচি করছে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ)। দুটি সংস্থাই জানিয়েছে, শিগগির এই পাঠ্যসূচি শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়।
এনসিটিবির দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনার কারণে বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেপ্টেম্বরে খুললে তুলনামূলক একটু বড় পাঠ্যসূচি হবে। এ ক্ষেত্রে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্লাসের জন্য ৭০ থেকে ৭৩ কার্যদিবস পাওয়া যাবে। আর অক্টোবরে খুললে আরেকটু সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি হবে। এই সময়ে ৫০ কার্যদিবসে ক্লাস করা যাবে। নভেম্বরে খুললে একেবারেই সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি হবে। তখন ক্লাসের জন্য ৩০ কার্যদিবস পাওয়া যাবে।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, করোনায় বন্ধের আগে বছরের প্রথম আড়াই মাসে যতটুকু পাঠ্যসূচি শেষ করা হয়েছিল, সেটি বাদ দিয়ে পরবর্তী পাঠ্যসূচি কাটছাঁট করা হচ্ছে। নভেম্বরে খুললে যে পাঠ্যসূচি হচ্ছে, সেখানে বর্তমান শ্রেণি এবং ওপরের শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে পুনরাবৃত্তি থাকা বিষয়গুলো বাদ দিয়ে সবচেয়ে জরুরি বিষয়বস্তু থাকবে।
জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা প্রস্তাবিত পাঠ্যসূচি তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়।
নবম-দশম শ্রেণি এবং উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যসূচি কাটছাঁট হচ্ছে কি না? জানতে এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমত নবম ও দশম শ্রেণির বই একই। ফলে নবম শ্রেণিতে সব পাঠ্যসূচি শেষ না হলেও দশম শ্রেণিতে গিয়ে তা শেষ করার সুযোগ আছে। আর এই স্তরটি শেষ করে একেবারে নতুন আরেকটি স্তরে (উচ্চমাধ্যমিক) যায় শিক্ষার্থীরা। তাই এখানে হঠাৎ করেই পাঠ্যসূচি কমিয়ে দিলে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা আছে। একই কারণ উচ্চমাধ্যমিকেও। তাই তাঁরা কেবল অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যসূচি সংক্ষিপ্ত করছেন।
প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণির জন্য তিনটি বিকল্প পাঠ্যসূচি হচ্ছে
নবম-দশমের পাঠ্যসূচি বদলাচ্ছে না
এখনো পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়নি
অন্যদিকে প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করছে ময়মনসিংহে অবস্থিত নেপ। প্রাথমিক স্তরের পাঠ পরিকল্পনা ঠিক করে সংস্থাটি। সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. শাহ আলম গত রোববার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরাও তিনটি বিকল্প পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করছেন। সেপ্টেম্বরে খুললে কমবেশি ৮০ শতাংশের মতো পাঠ্যসূচি শেষ করা সম্ভব। আর পয়লা অক্টোবর খুললে ৭০ শতাংশের মতো এবং নভেম্বরে খুললে ৬০ শতাংশের মতো পাঠ্যসূচি শেষ করা যেতে পারে। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই প্রস্তাবিত এই তিন ধরনের পাঠ্যসূচি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ও পরীক্ষার কী হবে
করোনার কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধের এই ঘোষণা আছে। এর মধ্যে দেশের সবকিছু প্রায় স্বাভাবিক হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খুলবে এবং পরীক্ষাগুলোর কী হবে, তা জানার প্রবল আগ্রহ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেছেন, এ বছরের এইচএসসি এবং জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
আর এইচএসসি পরীক্ষা যখনই নেওয়া হবে, দুই সপ্তাহের নোটিশ দিয়ে নেওয়া হবে। এ বিষয়ে গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ করেন মো. মাহবুব হোসেন। বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে কি না, তা জানানো হবে ২৫ আগস্টের পর।
প্রাথমিক সমাপনী না নিতে প্রস্তাব যাচ্ছে
পঞ্চম শ্রেণি শেষে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার বিষয়ে একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাতে যাচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাতে কেবল এ বছর এই পরীক্ষা না নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন।