Dhaka , Sunday, 15 December 2024

করোনায় সংসার ভাঙছে, বাড়ছে বিচ্ছেদের আবেদন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : 03:05:50 pm, Saturday, 29 August 2020
  • 540 বার

করোনাকালে শুধু অসুস্থ, মৃত্যু আর মানুষের অসহায়ত্বই বাড়েনি, ছিন্ন পরিবারের সংখ্যাও বেড়েছে। ঢাকায় জুলাই মাসে প্রতিদিন গড়ে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন এসেছে ৪৮টি পরিবার থেকে।

চাকুরী না থাকা, সন্তানের শিক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা, ঘরবন্দী থাকা এমনি নানা কারণে মানসিক কষ্ট বাড়ায় কলহ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন সমাধান আছে।

করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ২৬ শে মার্চ থেকে ৩১ শে মে পর্যন্ত দেশজুড়ে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। স্বেচ্ছায় ঘরবন্দী হন অগনিত মানুষ।

বদ্ধ জায়গায় দীর্ঘ দিন থাকায় অনেক পরিবারে শুরু হয় কলহ। এরই মধ্যে অনেকে চাকুরী হারান। ব্যবসায় হন ক্ষতির শিকার। অর্থনৈতিক সংকটে বাড়ে মানসিক চাপ। যার প্রভাব পরে পারিবারিক সম্পর্কে।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক ডা. আজিজুল ইসলাম বলেছেন, আর্থিক ক্ষতি বা চাকরির অনিশ্চয়তার কারণে হতাশা তৈরি হয়। কারো কারো ভেতরে রাগ তৈরি হয়। এই হতাশা ও রাগ থেকে মুক্তি পেতে অনেকে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। অনেকে হতাশা থেকে রাগারাগি করে মারামারি করে।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ঢাকায় ১ হাজার ১৪৬ জন বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করেন। ফেব্রুয়ারিতে ৮৮৩ জন এবং মার্চে ৯৪৭ জন আবেদন করেন। এপ্রিলে বন্ধ ছিল অফিস।

মে মাসে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেন ১৬৭ জন এবং জুন মাসে একলাফে ১ হাজার ৭৩ জন। জুলাই মাসে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে জমা পড়ে দেড় হাজারের বেশি বিচ্ছেদের আবেদন।

দিনে যার গড় বিবাহবিচ্ছেদের আবেদনের সংখ্যা দাড়ায় ৪৮। আবেদনকারীর ৩৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৭০ শতাংশ নারী।

এই সময়ে সুখে থাকার ও ভালো থাকার বেশ কিছু উপায় জানিয়েছেন মনোবিজ্ঞানী ফরিদা আক্তার। তিনি মনে করেন এখন দিনটাকে ভাগ করে নেওয়া উচিত।

একটা সময়ে সবার সঙ্গে একসাথে থাকতে হবে, একইসঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত সময় রাখতে হবে। এই নিজস্ব সময়টা গান শোনে, বই পড়ে, টিভি দেখে কাটানো যায়।

মেডিটেশন করে বা ধর্মীয় আমল করেও বেশ ভালো নিজস্ব সময় কাটবে। একসঙ্গে কাটানো সময়ের মধ্যে একসঙ্গে কাজ ভাগাভাগি করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

২০১৯ সালে প্রথম ছয় মাসে গড়ে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করেছেন ৭৫৯ জন। আর ২০২০ সালে প্রথম সাত মাসে গড়ে আবেদন করেছেন ৮৩২ জন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব বলছে, দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে রাজশাহীর বিবাহ বিচ্ছেদের হার চোখে পরার মত। রাজশাহীতে বিচ্ছেদ আবেদনের হার প্রতি হাজারে ১ দশমিক ৭ ভাগ।

সব কিছু মন খুলে বলার পক্ষে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ  অধ্যাপক ডা: মোহিত কামাল। তিনি বলেছেন, ’মনে মনে রেখে দিলাম বউ বলবে, আমি বলবো না, এটা হবে না । সংসারে সঙ্কট থাকেই । সেই সঙ্কট সমাধানে উভয়কেই উদ্যোগ নিতে হবে। কথা বলতে হবে। তাহলে হতাশা কাটিয়ে ওঠার উপায় বের হয়ে আসবে।’

তবে করোনার সময়ে অনেক পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বন্ধন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও জানান মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার বিষয়ক রেজুলেশন গৃহীত

করোনায় সংসার ভাঙছে, বাড়ছে বিচ্ছেদের আবেদন

আপডেট টাইম : 03:05:50 pm, Saturday, 29 August 2020

করোনাকালে শুধু অসুস্থ, মৃত্যু আর মানুষের অসহায়ত্বই বাড়েনি, ছিন্ন পরিবারের সংখ্যাও বেড়েছে। ঢাকায় জুলাই মাসে প্রতিদিন গড়ে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন এসেছে ৪৮টি পরিবার থেকে।

চাকুরী না থাকা, সন্তানের শিক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা, ঘরবন্দী থাকা এমনি নানা কারণে মানসিক কষ্ট বাড়ায় কলহ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন সমাধান আছে।

করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ২৬ শে মার্চ থেকে ৩১ শে মে পর্যন্ত দেশজুড়ে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। স্বেচ্ছায় ঘরবন্দী হন অগনিত মানুষ।

বদ্ধ জায়গায় দীর্ঘ দিন থাকায় অনেক পরিবারে শুরু হয় কলহ। এরই মধ্যে অনেকে চাকুরী হারান। ব্যবসায় হন ক্ষতির শিকার। অর্থনৈতিক সংকটে বাড়ে মানসিক চাপ। যার প্রভাব পরে পারিবারিক সম্পর্কে।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক ডা. আজিজুল ইসলাম বলেছেন, আর্থিক ক্ষতি বা চাকরির অনিশ্চয়তার কারণে হতাশা তৈরি হয়। কারো কারো ভেতরে রাগ তৈরি হয়। এই হতাশা ও রাগ থেকে মুক্তি পেতে অনেকে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। অনেকে হতাশা থেকে রাগারাগি করে মারামারি করে।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ঢাকায় ১ হাজার ১৪৬ জন বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করেন। ফেব্রুয়ারিতে ৮৮৩ জন এবং মার্চে ৯৪৭ জন আবেদন করেন। এপ্রিলে বন্ধ ছিল অফিস।

মে মাসে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেন ১৬৭ জন এবং জুন মাসে একলাফে ১ হাজার ৭৩ জন। জুলাই মাসে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে জমা পড়ে দেড় হাজারের বেশি বিচ্ছেদের আবেদন।

দিনে যার গড় বিবাহবিচ্ছেদের আবেদনের সংখ্যা দাড়ায় ৪৮। আবেদনকারীর ৩৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৭০ শতাংশ নারী।

এই সময়ে সুখে থাকার ও ভালো থাকার বেশ কিছু উপায় জানিয়েছেন মনোবিজ্ঞানী ফরিদা আক্তার। তিনি মনে করেন এখন দিনটাকে ভাগ করে নেওয়া উচিত।

একটা সময়ে সবার সঙ্গে একসাথে থাকতে হবে, একইসঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত সময় রাখতে হবে। এই নিজস্ব সময়টা গান শোনে, বই পড়ে, টিভি দেখে কাটানো যায়।

মেডিটেশন করে বা ধর্মীয় আমল করেও বেশ ভালো নিজস্ব সময় কাটবে। একসঙ্গে কাটানো সময়ের মধ্যে একসঙ্গে কাজ ভাগাভাগি করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

২০১৯ সালে প্রথম ছয় মাসে গড়ে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করেছেন ৭৫৯ জন। আর ২০২০ সালে প্রথম সাত মাসে গড়ে আবেদন করেছেন ৮৩২ জন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব বলছে, দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে রাজশাহীর বিবাহ বিচ্ছেদের হার চোখে পরার মত। রাজশাহীতে বিচ্ছেদ আবেদনের হার প্রতি হাজারে ১ দশমিক ৭ ভাগ।

সব কিছু মন খুলে বলার পক্ষে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ  অধ্যাপক ডা: মোহিত কামাল। তিনি বলেছেন, ’মনে মনে রেখে দিলাম বউ বলবে, আমি বলবো না, এটা হবে না । সংসারে সঙ্কট থাকেই । সেই সঙ্কট সমাধানে উভয়কেই উদ্যোগ নিতে হবে। কথা বলতে হবে। তাহলে হতাশা কাটিয়ে ওঠার উপায় বের হয়ে আসবে।’

তবে করোনার সময়ে অনেক পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বন্ধন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও জানান মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা।