গত বছরের জুলাই থেকে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার।
অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার স্বজন ১০২ টাকা পাচ্ছেন।
তবে গত রোজা ও কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে যে সব প্রবাসী অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন, তাদের স্বজনরা বাড়তি ১ শতাংশ প্রণোদনা পেয়েছেন। অর্থাৎ ১০০ টাকা পাঠানোর বিপরীতে ১০৩ টাকা তুলতে পেরেছেন।
এ ‘অভিনব উদ্যোগ’ ব্যাপক সাড়া পাওয়ার পর এখন থেকে বছরের বড় তিন উৎসব রোজার ঈদ, কোরবানির ঈদ এবং বড়দিনকে সামনে রেখে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে বাড়তি ১ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি।
দেশে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতেই এ উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম।
তিনি সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মহামারী করোনাভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতিকে তছনছ করে দিয়েছে। সবাই আশঙ্কা করেছিল, এই মহামারীর মধ্যে দেশে রেমিটেন্স প্রবাহ একেবারে কমে যাবে।
“সে শঙ্কা থেকেই আমরা রমজান মাস থেকে শুরু করে গত ১৩ অগাস্ট পর্যন্ত সরকারের ২ শতাংশ প্রণোদনার সঙ্গে বাড়তি আরও ১ শতাংশ প্রণোদনা দিয়েছি।”
এর ফলে অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স অনেক বেড়েছে জানিয়ে শামস বলেন, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারি ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে যে রেমিটেন্স এসেছে তার ৪০ শতাংশই এসেছে অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে।
“তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন থেকে বছরের বড় তিন উৎসবকে সামনে রেখে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে বাড়তি ১ শতাংশ প্রণোদনা দেবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকও এ বিষয়ে অনুমতি দিয়েছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া জতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীকে স্মরণীয় করে রাখতে অগ্রণী ব্যাংকের সিঙ্গাপুরের একচেঞ্জ অফিস একটি অ্যাপ তৈরি করেছে।
সিঙ্গাপুরের প্রবাসীরা ব্যাংকে না এসেই ওই অ্যাপের মাধ্যমে দেশে রেমিটেন্স পাঠাতে পারছেন বলে জানান অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী।
দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্স। দেশের জিডিপিতে এই রেমিটেন্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।
এবার করোনাভাইরাস মহামারীতে মার্চ থেকে বৈশ্বিক পরিস্থিতি ওলটপালট হয়ে যাওয়ায় রেমিটেন্সও কমে গিয়েছিল। কিন্তু এপ্রিল থেকে রেমিটেন্সে ঊর্ধ্বগতির ধারা চলছে।
রেমিটেন্সের গতি ধরে রাখতে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল সরকার। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরেও একই হারে প্রণোদনা অব্যাহত রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট এক হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ (১৮.২০ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ছিল আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি।
এই রেমিটেন্সের মধ্যে ১৭৬ কোটি ২৮ লাখ ডলার এসেছিল অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে। শতাংশ হিসাবে গত অর্থবছরের মোট রেমিটেন্সের প্রায় ১০ শতাংশই এসেছিল অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে।
গত অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে ৪৩৫ কোটি ৪৬ লাখ ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরের মতো এত বেশি রেমিটেন্স এর আগে কখনই দেশে আসেনি। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেমিটেন্স এসেছিল ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার।
গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরেও রেমিটেন্স বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে।
অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে নতুন অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২৬০ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এর আগে এক মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছিল গত জুনে, ১৮৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
আর চলতি অগাস্ট মাসের ২৭ দিনে (১ অগাস্ট থেকে ২৭ অগাস্ট) ১৭২ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত বছরের পুরো অগাস্ট মাসে ১৪৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “মহামারীর মধ্যেও রেমিটেন্সের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। মাসের পুরো হিসাব পাওয়া গেলে অগাস্টে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স আসবে। যা হবে এক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স।”