ইংল্যান্ডের লোকদের বলা হয় ‘ইংলিশ’, ফিনল্যান্ডের লোকদের বলা হয় ‘ফিনিশ’, তাহলে নেদারল্যান্ডসের লোকদের কি ‘নেদারিশ’ বলা ঠিক শোনাতো না!
কখনও কি ভেবে দেখেছো, নেদারল্যান্ডসের লোকদের ‘নেদারল্যান্ডিয়ান’, ‘নেদারিশ’ বা ‘নেথেরিস’ বলা হয় না কেন? আচ্ছা, আর ভাবনা-চিন্তার প্রয়োজন নেই। চলো, নেদারল্যান্ডসের লোকেরা ‘ডাচ’ হিসেবে কেন পরিচিত তা জেনে নেওয়া যাক।
তুমি যদি নেদারল্যান্ডসের রাস্তায় কোনও ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করো যে নেদারল্যান্ডসের লোকদের ‘ডাচ’ বলা হয় কেন, সম্ভবত তারা তোমাকে উত্তর দিতে পারবে না। যতদূর কেউ মনে করতে পারে, এটা সবসময়ই এরকম ছিলো এবং এরকমই আছে।
এ ঘটনাটির পেছনের কারণটি অবশ্য বেশ সাধারণ। সারা পৃথিবীতে ব্যাপকভাবে নেদারল্যান্ডস নামে পরিচিত এ দেশটির নাম নিয়ে এটিই একমাত্র বিভ্রান্তি নয়। আরও কিছুটা বিভ্রান্তি আছে হল্যান্ড নামটি নিয়েও। খুব সহজভাবে ব্যাখ্যা করলে, গোটা নেদারল্যান্ডসকে হল্যান্ড বলা যায়। কিন্তু হল্যান্ডকে নেদারল্যান্ডস বলা যায় না।
নেদারল্যান্ডসের বারোটি প্রভিন্স বা প্রদেশের মধ্যে নর্থ হল্যান্ড মানে রাজধানী আমস্টার্ডাম আর সাউথ হল্যান্ড মানে ডেনহাগে। নেদারল্যান্ডসের জাতীয় আকর্ষণ উইন্ডমিল, ক্যানাল, টিউলিপের রাজত্ব। আর এ কারণে দর্শনাথীদের কাছে এ স্থানগুলো প্রচণ্ড জনপ্রিয় হয়, আর তাই একসময় নেদারল্যান্ডস হয়ে যায় হল্যান্ড।
ওপরের অংশটি অবশ্য আমাদের প্রশ্নের উত্তর নয়। ডাচ নামটি কোথা থেকে এলো তার জবাব সেখানে নেই। ভূ-প্রকৃতি নিয়ে অবশ্য খানিকটা উত্তর লুকিয়ে আছে দেশটির নামের মধ্যে। ‘নেদার’ মানে হলো নিচু, আর নেদারল্যান্ডস মানে হলো ‘নিচু জমি’। এক তৃতীয়াংশ দেশই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নিচে, যার কারণে দেশটি সবসময় বন্যা কবলিত ছিলো।
দেশটি যাতে উত্তর সমুদ্রে বিলীন হয়ে না যায় তার জন্য তারা যথেষ্ঠ বিনিয়োগ করে নিজেদের রক্ষা করেছে। তাহলে হল্যান্ড কোথা থেকে এলো? এটি এসেছে পুরনো ডাচ শব্দ ‘হট ল্যান্ট’ থেকে যার ইংরেজি হলো ‘উড ল্যান্ড’। তখন এ দেশের অর্ধেকের বেশি ছিলো বনাঞ্চল। হল্যান্ডের পুরনো বাসিন্দা হল্যান্ডারসদের ‘ডাচ’ বলা হতো যেটা নেদারল্যান্ডস কিংবা হল্যান্ডের কাছাকাছি শোনায় না।
নামের ইতিহাস জানতে আমাদেরকে পাশের দেশ জার্মানিতে হানা দিতে হবে। জার্মানরা তাদের দেশকে বলে ‘ডয়েচল্যান্ড’, ফ্রেঞ্চরা জার্মানিকে বলে ‘আলামাঞ্জ’, ফিনিশরা বলে ‘সাশকা’ আর সুইডিশরা বলে ‘টুইস্কল্যান্ড’। জার্মানের আদিবাসীরা যারা নিজেদেরকে আদিবাসী নয় বরং সাধারণ নাগরিক হিসেবেই দেখতো তারা জার্মানকে বলতো ‘থিউডিস্ক’, যার মানে জনসাধারণ। সময়ের সঙ্গে যা পরিবর্তিত হয়ে দাঁড়ায় ‘ডয়েচ’।
ইংলিশরা ডয়েচল্যান্ডের পাশে নেদারল্যান্ডসকে বানায় ডাচ। ভাষা বুঝতে পারতো না বলে এটি ছিলো ইংলিশদের খানিকটা অজ্ঞতা আর ভুল। তবে এরও কিছু কারণ ছিলো। পনেরশ শতাব্দীতে জার্মান-নেদারল্যান্ডস একই দেশ ছিলো। যারা জার্মানের পাহাড়ের ওপর থাকতো তাদেরকে ইংলিশরা বলতো ‘হাই ডাচ’ আর যারা নেদারল্যান্ডসের নিচু জমিতে থাকতো তাদের বলতো ‘লো ডাচ’।
নেদারল্যান্ডসে বসবাসকারী অনেক জার্মান তাদের নিজেদের ভাষায় কথা বলতো যাদেরকে ইংলিশরা ডাচ ভাবতো। নেদারল্যান্ডসবাসীরা নিজেদেরকে ‘নেদারল্যান্ডসে’ বলে পরিচয় দেয় আর ইংলিশরা বলে ‘ডাচ’। নেদারল্যান্ডসবাসীর ‘ডাচ’ নামটি হলো ইংলিশদের অজ্ঞতা, সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা হিসেবে আপাতত এটিকেই গ্রহণ করা হয়েছে।
মূল লেখক: উইলাম নেহরা, ভাষান্তর: তানবীরা তালুকদার