পঁচাত্তরের পনের অগাস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পেছনে যারা ছিলেন, সেই সব কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচনে একটি জাতীয় কমিশন গঠন করা হবে বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন।
সোমবার রাতে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির আয়োজনে বিশেষ ওয়েবিনার ‘জাতির পিতার হত্যার বিচার: জাতির প্রত্যাশা এবং রাষ্ট্রের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে এ দাবি তোলেন সাবেক আইনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল মতিন খসরু।
তাতে সায় দিয়ে বর্তমান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, “এই কমিশন গঠনের উদ্যোগ অনেকটাই এগিয়ে গেছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সামলে নিয়ে এই কমিশনের রূপরেখা প্রণয়নের কাজও এগিয়ে নেওয়া হবে।”
সাবেক আইনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল মতিন খসরু
আবদুল মতিন খসরু বলেন, “বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ‘মাস্টার মাইন্ডদের’ চিহ্নিত করতে হবে। পনের অগাস্টের চক্রান্ত তো একদিনে হয়নি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। মাস্টারমাইন্ড হিসেবে শাহ মোয়াজ্জেম, ওবায়দুর রহমানসহ আরও নাম আসবে…জাতির অধিকার আছে তাদের ব্যাপারে জানার।
“হাই পাওয়ারের একটা জাতীয় কমিশন গঠন করে শ্বেতপত্রও প্রকাশ করতে হবে।”
তার আগে আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু বলেন, “বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর ও পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ের ঘটনাবলী লিপিবদ্ধ করার জন্য একটি কমিশন হওয়া দরকার। যাতে করে তরুণ প্রজন্ম জানতে পারে, বঙ্গবন্ধু কী সোনার বাংলা চেয়েছিলেন।”
আবদুল মতিন খসরুর কথায় সায় দেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাবেক প্রধান কৌঁসুলি সিরাজুল হকের ছেলে বর্তমান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেন, “এখানে একটা দাবি উঠেছে কমিশনের। আমি অনেক জায়গায় বলেছি, একটা কমিশন অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের এবং জাতীয় পর্যায়ের অত্যন্ত দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের দিয়ে একটা কমিশন গঠন করা প্রয়োজন।”
কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা যদি আজকে তাদেরকে চিহ্নিত করতে না পারি, আমরা যদি তাদের মুখোশ উন্মোচিত করে দিতে না পারি এবং তাদের বংশধর তাদের যদি চিহ্নিত করে দিতে না পারি তাহলে পরে আমাদের এখনকার নতুন প্রজন্ম এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আবারও হুমকির সম্মুখীন হবে। হুমকির মধ্যে রেখে যাওয়া আমাদের জন্য দায়িত্বশীল কাজ হবে না। সে কারণে আমাদের কমিশন করা প্রয়োজন।”
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এই কমিশন গঠনের কাজে একটু শ্লথগতি এসেছে জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, “এটার যে কর্মপরিধি, এটা কী করবে, এটা কতটা সময় এটাকে দেওয়া হবে- এটাকে ফিক্স করে আমরা অনেক আগেই করতে পারতাম। জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেওয়ার পরে আমরা জানতাম না যে, করোনাভাইরাস প্যান্ডেমিক আমাদের আক্রমণ করবে। এটা সামলিয়ে নিয়ে উঠে কাজটা শুরু হবে।
“কমিশন কী করবে, তা নিয়ে আমি আলাপ-আলোচনা শুরু করেছি। একটা রূপরেখা তৈরি করা… তাহলে ভবিষ্যতে যখন হবে তখন কাজটা অনেকটা এগিয়ে যেতে পারে।”
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানই বঙ্গবন্থু হত্যাকাণ্ডের ‘সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী’ ছিলেন বলে মনে করেন আইনমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে খুব যে অনেক লোক ছিল তা নয়, গুটিকয়েক লোক করেছে। তাদের মুখোশ উন্মোচিত হওয়া স্বাভাবিক, কারণ তারা হত্যাকাণ্ড করেছে। জিয়াউর রহমান কিন্তু সেই মুখোশ উন্মোচিতদের মধ্যে একজন।
“জিয়াউর রহমানের মুখোশ কিন্তু আর উন্মোচনের কোনো প্রয়োজন নাই। সেই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বেনিফিসিয়ারি এবং আপনি দেখবেন তার যদি একটা পরিকল্পনা না থাকত তাহলে ধাপে ধাপে তার এভাবে উন্নতিটা হত না।”
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, “জিয়া ছিলেন সেদিনের ব্লু প্রিন্টের খলনায়ক।”
আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদের সঞ্চালনায় আলোচনায় যুক্ত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সভাপতি সাইদুর রহমান খান।