Dhaka , Sunday, 15 December 2024

বাংলাদেশের বরগুনায় বাঁশের সাঁকোকে ব্রিজ দেখিয়ে টেন্ডার: ফাঁসের পর বাতিল, তদন্ত শুরু

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : 09:24:45 am, Saturday, 5 September 2020
  • 615 বার

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে আয়রন ব্রিজ (লোহার সেতু) পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় অন্তত ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বরগুনা জেলার আমতলী ও তালতলী উপজেলার ৩৩টি লোহার ব্রিজ সংস্কারের জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়েছিলো জুলাই মাসের শেষ দিকে।

মোট আটটি প্যাকেজে আহবান করা এসব দরপত্রে সব উপকরণের মূল্য উল্লেখ না থাকায় কার্যত কোন ব্রিজের জন্য প্রকৃত বরাদ্দ কত তাা নির্ণয় করা কঠিন বলে বলছেন স্থানীয় ঠিকাদাররা।

তবে এ দরপত্র তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে জেলাজুড়ে কারণ যে ব্রিজগুলো সংস্কারের জন্য এতো টাকা ব্যয় করার চেষ্টা হচ্ছিলো সেখানে অন্তত তেরটি জায়গায় ব্রিজের কোনো অস্তিত্ব নেই।

বরগুনার ঠিকাদার মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল বলছেন, “আমি নিজে ঘুরে এসব জায়গার অনেকগুলোতে বাঁশের সাকো দেখেছি। ভৌতিক ব্রিজকে সংস্কারের প্রস্তাব ছিলো টেন্ডারটিতে যা আমাদেরকেই অবাক করেছে”।

উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলছেন, “আমার আগের প্রকৌশলীরা এগুলো এস্টিমেট (ব্যয় প্রাক্কলন) করেছে। আমি এসব সম্পর্কে জানিনা। তবে জানাজানির পর এলজিইডি কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এগুলো বাতিল করা হয়েছে”।

তিনি বলেন, “ঢাকা থেকে টিম এসেছে। তারা এখন তদন্ত করছে। এর পর পুন:প্রাক্কলন হয়ে নতুন করে টেন্ডার হবে”।

রামজি বাজার সাঁকো

ছবির ক্যাপশান, রামজি বাজার সাঁকো ব্রিজ হিসেবে দেখানো হয়েছিলো দরপত্রে

কিন্তু কারা এ ধরণর ভৌতিক সেতু দেখিয়ে টেন্ডার করানোর চেষ্টা করছিলো তা নিয়ে কোনো তদন্ত হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ” এ বিষয়ে আর কিছু তার জানা নেই”।

বরগুনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর মো: হোসেন আলী মীরের কাছে জানতে চাইলে তিনি শুধু বলেন, “টেন্ডারটি বাতিল করা হয়েছে”।

এ বিষয়ে আর কোনো তথ্য তার জানা নেই বলে জানান তিনি।

স্থানীয় সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম মিরাজ বলছেন দরপত্রটি প্রকাশের পর তিনি কয়েকটি লোহার সেতুর যেসব জায়গা উল্লেখ করা হয়েছিলো সে রকম অন্তত চারটি ব্রিজের জায়গা নিজে পরিদর্শন করেছেন।

“নাশবুনিয়া নামে একটি খালের ওপর থাকা ব্রিজের সংস্কাররে জন্য চার কোটি টাকা রাখা হয়েছিলো। অথচ এই নামে কোনো খালেরই অস্তিত্ব নেই। অথচ এই ব্রিজের জন্যও সাড়ে তিন কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ করা হয়েছিলো,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

আমতলীর ঠিকাদার মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন আটটি প্যাকেজের প্রতিটিতে হয় ব্রিজের দৈর্ঘ্য অনেক বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে, কোথাও অতিরিক্ত কাজ দেখানো হয়েছে আবার তেরটির মতো জায়গায় বাঁশের সাকোকে ব্রিজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

“অথচ প্রকল্পটি হলো ব্রিজ সংস্কার প্রকল্প। থাকলে সংস্কার হবে বা নষ্ট হয়ে গেলে পুনর্নির্মাণ হবে। কিন্তু স্থাপনা অবশ্যই থাকতে হবে। অথচ এখানে অনেকগুলোই ভৌতিক,” বলছিলেন তিনি।

তুজির বাজার সাঁকো

ছবির ক্যাপশান, তুজির বাজার সাঁকো ব্রিজ হিসেবে দেখানো হয়েছিলো দরপত্রে

জানা গেছে ওই দরপত্রে আমতলীয় উপজেলায় ২৬ টি আর তালতলী উপজেলায় সাতটি ব্রিজ সংস্কারের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছিলো। দরপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ছিলো ৬ই সেপ্টেম্বর যা পড়ে ১৪ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিলো।

কিন্তু এর মধ্যেই ঘটনাটি তুমুল ক্ষোভের জন্ম দেয় এলাকাবাসীর মধ্যে এবং পালিত হয় নানা প্রতিবাদ কর্মসূচিও।

শেষ পর্যন্ত টেন্ডারটি বাতিল করে তদন্তের কাজ শুরু করেছে এলজিইডি কিন্তু কারা এমন ভৌতিক ব্রিজের বিপরীতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দের প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত তা নিয়ে মুখ খুলতে রাজী হননি এলজিইডির বরগুনা কিংবা আমতলী কার্যালয়ের কোনো কর্মকর্তাই।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার বিষয়ক রেজুলেশন গৃহীত

বাংলাদেশের বরগুনায় বাঁশের সাঁকোকে ব্রিজ দেখিয়ে টেন্ডার: ফাঁসের পর বাতিল, তদন্ত শুরু

আপডেট টাইম : 09:24:45 am, Saturday, 5 September 2020

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে আয়রন ব্রিজ (লোহার সেতু) পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় অন্তত ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বরগুনা জেলার আমতলী ও তালতলী উপজেলার ৩৩টি লোহার ব্রিজ সংস্কারের জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়েছিলো জুলাই মাসের শেষ দিকে।

মোট আটটি প্যাকেজে আহবান করা এসব দরপত্রে সব উপকরণের মূল্য উল্লেখ না থাকায় কার্যত কোন ব্রিজের জন্য প্রকৃত বরাদ্দ কত তাা নির্ণয় করা কঠিন বলে বলছেন স্থানীয় ঠিকাদাররা।

তবে এ দরপত্র তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে জেলাজুড়ে কারণ যে ব্রিজগুলো সংস্কারের জন্য এতো টাকা ব্যয় করার চেষ্টা হচ্ছিলো সেখানে অন্তত তেরটি জায়গায় ব্রিজের কোনো অস্তিত্ব নেই।

বরগুনার ঠিকাদার মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল বলছেন, “আমি নিজে ঘুরে এসব জায়গার অনেকগুলোতে বাঁশের সাকো দেখেছি। ভৌতিক ব্রিজকে সংস্কারের প্রস্তাব ছিলো টেন্ডারটিতে যা আমাদেরকেই অবাক করেছে”।

উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলছেন, “আমার আগের প্রকৌশলীরা এগুলো এস্টিমেট (ব্যয় প্রাক্কলন) করেছে। আমি এসব সম্পর্কে জানিনা। তবে জানাজানির পর এলজিইডি কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এগুলো বাতিল করা হয়েছে”।

তিনি বলেন, “ঢাকা থেকে টিম এসেছে। তারা এখন তদন্ত করছে। এর পর পুন:প্রাক্কলন হয়ে নতুন করে টেন্ডার হবে”।

রামজি বাজার সাঁকো

ছবির ক্যাপশান, রামজি বাজার সাঁকো ব্রিজ হিসেবে দেখানো হয়েছিলো দরপত্রে

কিন্তু কারা এ ধরণর ভৌতিক সেতু দেখিয়ে টেন্ডার করানোর চেষ্টা করছিলো তা নিয়ে কোনো তদন্ত হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ” এ বিষয়ে আর কিছু তার জানা নেই”।

বরগুনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর মো: হোসেন আলী মীরের কাছে জানতে চাইলে তিনি শুধু বলেন, “টেন্ডারটি বাতিল করা হয়েছে”।

এ বিষয়ে আর কোনো তথ্য তার জানা নেই বলে জানান তিনি।

স্থানীয় সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম মিরাজ বলছেন দরপত্রটি প্রকাশের পর তিনি কয়েকটি লোহার সেতুর যেসব জায়গা উল্লেখ করা হয়েছিলো সে রকম অন্তত চারটি ব্রিজের জায়গা নিজে পরিদর্শন করেছেন।

“নাশবুনিয়া নামে একটি খালের ওপর থাকা ব্রিজের সংস্কাররে জন্য চার কোটি টাকা রাখা হয়েছিলো। অথচ এই নামে কোনো খালেরই অস্তিত্ব নেই। অথচ এই ব্রিজের জন্যও সাড়ে তিন কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ করা হয়েছিলো,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

আমতলীর ঠিকাদার মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন আটটি প্যাকেজের প্রতিটিতে হয় ব্রিজের দৈর্ঘ্য অনেক বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে, কোথাও অতিরিক্ত কাজ দেখানো হয়েছে আবার তেরটির মতো জায়গায় বাঁশের সাকোকে ব্রিজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

“অথচ প্রকল্পটি হলো ব্রিজ সংস্কার প্রকল্প। থাকলে সংস্কার হবে বা নষ্ট হয়ে গেলে পুনর্নির্মাণ হবে। কিন্তু স্থাপনা অবশ্যই থাকতে হবে। অথচ এখানে অনেকগুলোই ভৌতিক,” বলছিলেন তিনি।

তুজির বাজার সাঁকো

ছবির ক্যাপশান, তুজির বাজার সাঁকো ব্রিজ হিসেবে দেখানো হয়েছিলো দরপত্রে

জানা গেছে ওই দরপত্রে আমতলীয় উপজেলায় ২৬ টি আর তালতলী উপজেলায় সাতটি ব্রিজ সংস্কারের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছিলো। দরপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ছিলো ৬ই সেপ্টেম্বর যা পড়ে ১৪ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিলো।

কিন্তু এর মধ্যেই ঘটনাটি তুমুল ক্ষোভের জন্ম দেয় এলাকাবাসীর মধ্যে এবং পালিত হয় নানা প্রতিবাদ কর্মসূচিও।

শেষ পর্যন্ত টেন্ডারটি বাতিল করে তদন্তের কাজ শুরু করেছে এলজিইডি কিন্তু কারা এমন ভৌতিক ব্রিজের বিপরীতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দের প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত তা নিয়ে মুখ খুলতে রাজী হননি এলজিইডির বরগুনা কিংবা আমতলী কার্যালয়ের কোনো কর্মকর্তাই।