কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপের পাশে বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা ভাসানচরে পরিদর্শনে যাচ্ছে একদল রোহিঙ্গা। ৪০ সদস্য বিশিষ্ট এই রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলটি আজ শনিবার ভোরে কক্সবাজার থেকে রওনা দেয়। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের তত্ত্বাবধানে সড়কপথে চট্টগ্রামে এবং নৌবাহিনীর একটি জাহাজে ভাসানচরে তাঁদের নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার যুগ্মসচিব মাহবুব আলম তালুকদার রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলের ভাসানচরে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর তারা ফিরে আসবে
মাহবুব আলম তালুকদার জানিয়েছেন, প্রতিনিধি দলে ক্যাম্পের ব্লক মাঝি, সাব মাঝি, হেড মাঝি, লিডার, শিক্ষক ও ইমামদের নাম রয়েছে। এ ছাড়া, সম্প্রতি সাগর পথে মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা ৩০৪ জন রোহিঙ্গাকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে এরই মধ্যে দুই কিস্তিতে ভাসানচরে নিয়ে রেখেছে সরকার। আগে থেকেই ভাসানচরে যাওয়ার জন্য সেখানকার ভিডিওচিত্র দেখিয়ে সাধারণ রোহিঙ্গাদের উৎসাহিত করে আসছে সরকার।
মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, ‘আমরা উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত ৩৪টি ক্যাম্পের ৪০ জন রোহিঙ্গাকে বাছাই করে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের কাছে নাম দিয়েছি। রোহিঙ্গারা ভাসানচরে গিয়ে দ্বীপের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেখবেন এবং কক্সবাজারে ক্যাম্পে ফিরে এসে অন্য রোহিঙ্গাদের বোঝাবেন। এটি একটি মোটিভেশনাল কার্যক্রম। রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় যেতে চাইলেই তাঁদের নিয়ে যাওয়া হবে।’
মাহবুব আলম উল্লেখ করেন, সরকার ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গার বসবাসের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ করে রেখেছে। এক লাখ রোহিঙ্গাকেই ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য যেসব সুযোগ সুবিধা গড়ে তোলা হয়েছে, সেসব সরেজমিনে গিয়ে দেখলে রোহিঙ্গারা ওই দ্বীপে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এ উদ্যোগকে ইতিবাচক উল্লেখ করেছেন তালিকায় থাকা টেকনাফের জাদিমুরা রোহিঙ্গা শিবিরের হেড মাঝি মো. নুর বলেন, ‘ভাসানচর যদি বসবাসের উপযুক্ত হয়, তবে অবশ্যই রোহিঙ্গারা সেখানে যাবে। আমরা স্বচক্ষে দেখে এলে সবাইকে বোঝাতে পারব।’
উখিয়ার কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়া ক্যাম্পের মাঝি মোহাম্মদ রফিক বলেন, ‘সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে, সেটি মানতে আমরা বাধ্য। তবে রোহিঙ্গাদের কষ্ট হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ নেবে না বলেই প্রত্যাশা করি।’
মোহাম্মদ রফিক আরো বলেন, ‘ভাসানচর পরিদর্শনের বিষয়টি নিয়ে সরকারি কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে আলাপ করেছেন। স্বেচ্ছায় ভাসানচর পরিদর্শনে ইচ্ছুক, এমন রোহিঙ্গাদেরও নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছি আমরা।’
রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলের সদস্য কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ওয়েস্টের হেড মাঝি মোহাম্মদ হামিদ বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে ক্যাম্পের মাঝিরা প্রত্যেকের ঘরে ঘরে গিয়ে ভাসানচরে যাওয়ার জন্য বোঝাচ্ছেন। যদি কোনো পরিবার স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে রাজি থাকে, তবে তা বলার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে। তবে কাউকে জোর করা হচ্ছে না। আমরা ভাসানচর পরিদর্শন করে এসে রোহিঙ্গাদের বোঝাব, জানাব যে সেখানে সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য কী কী সুবিধা দেবে।’
বর্তমানে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ও জাতিসংঘের সম্মতি না থাকায় রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে ভাসানচর স্থানান্তর স্থগিত রাখা হয়েছে।
রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে আশ্রয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস থেকে সেখানকার ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ এবং এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের এক সভায় ভাসানচরের জন্য নেওয়া প্রকল্পের খরচ ৭৮৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে তিন হাজার ৯৫ কোটি টাকা করা হয়।
এ ছাড়া ভাসানচরে প্রয়োজনীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসাকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। দ্বীপের চারদিকে বাঁধের উচ্চতা ১০ ফুট থেকে বাড়িয়ে ১৯ ফুট করা, আনুষঙ্গিক সুবিধা বৃদ্ধিসহ জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের জন্য ভবন ও জেটি নির্মাণ করা হচ্ছে।