মালয়েশিয়া ডেস্ক: মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের দক্ষতা ও চাহিদা রয়েছে অনেক। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের পদ্ধতি যেন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মূলে রয়েছে উভয় দেশের সরকার নির্ধারিত পদ্ধতি, আর্থিক খরচের বাইরে কিছু অলিখিত পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া। তাহলে কী বাংলাদেশ সরকার অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় দুই ধরনের নীতি অনুসরণ করছে কি না এমন প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসে।
সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় প্রাইভেট রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে দেশটিতে যেতে কর্মীকে ধারদেনা করে দিতে হচ্ছে ৪/৫ লাখ টাকা। এটিও সরকারের অধীনেই হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি বোয়েসেলের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় যেতে কর্মীকে খরচ করতে হচ্ছে না।
কর্মী সরকারি-বেসরকারি যে এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় যাক না কেন তাকে অবশ্যই প্রবাসীকল্যাণ বোর্ড, বিএমইটি এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়েই যেতে হচ্ছে। প্রত্যেক আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ যেতে ঋণের জালে আবদ্ধ হওয়া, বিদেশে গিয়ে প্রতারিত হওয়া বিষয়গুলো নিজেই তুলে ধরে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বানও জানান তিনি, কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রতিফল দেখা যায় না।
মালয়েশিয়া শ্রমবাজারের সুবিধা নিতে ব্যর্থতা এবং পারস্পরিক কাদা ছোঁড়াছুঁড়িতে সর্বনাশ হচ্ছে। আশির দশক থেকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিকর্মী গেলেও দেশটির সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার আইনি ভিত্তি পায় ২০১৬ সালে। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের পর মালয়েশিয়া সরকার লেবার সোর্স কান্ট্রি হিসেবে স্বীকৃতি দেয় অর্থাৎ কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অগ্রাধিকার পাবে এবং পারস্পরিক সহযোগিতা করবে, হঠাৎ করে শ্রম নিয়োগ বন্ধ করতে পারবে না।
আগে যখন তখন কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দিত, ফলে কর্মী প্রেরণকারী সংস্থা, এজেন্ট, সাব এজেন্ট সবাই যেনতেনভাবে ইচ্ছামতো অর্থ নিয়ে কর্মী পাঠায়। এসব এজেন্সির বিরুদ্ধে কোনো কঠোর অবস্থান না থাকায় প্রকৃত এজেন্সি বঞ্চিত হয় এবং অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা রয়ে যায় বলে সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন সময় তুলে ধরে।
বাংলাদেশ সরকারের অভিবাসন নীতি, আইন, বিধি, আদেশ, নির্দেশ সবই আছে, এসব বাস্তবায়ন করার জন্য সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, দপ্তর, লোকবল, ম্যাজিস্ট্রেট সবই আছে, আরো আছে একটি পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রণালয়। কর্মীদের দেশে-বিদেশে কল্যাণ দেখবার জন্য মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব লোকবল আছে। রিক্রুটিং এজেন্সির অনুমোদন, নবায়ন, বাতিল, শাস্তি আরোপ এসব মন্ত্রণালয় করে। তবে কর্মী অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার অভাব এবং এ সুযোগে অনিয়ম দাপটের সঙ্গে রয়ে গেছে।
কর্মী অভিবাসন এক পক্ষের বিষয় নয় প্রেরক ও গ্রহণকারী উভয় দেশের বিষয় তাই এসব বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে দক্ষ ও অভিজ্ঞ করে না তুললে সমস্যার গভীরে দেখবার কেউই থাকবে না। বাস্তবে তেমনি দেখা যাচ্ছে যে, মিশনে কর্মী নিয়ে যারা কাজ করে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করে দেশে এনে মন্ত্রণালয় বিদায় দিয়ে দেয়। এমন কি অনেককে অপমান করে তাড়ানোর নজির রয়েছে। বিপরীতে অনভিজ্ঞদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। মন্ত্রণালয় যাদের তৈরি করছে তাদের বাদ দেওয়ার ট্র্যাডিশন এসেছে এজেন্সিগুলোর অপতৎপরতা থেকে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
ধারণা করা হয় কোনো কোনো রিক্রুটিং এজেন্সি দূতাবাস থেকে অনৈতিক সুবিধা (অ্যাটেস্টেশন) না পেলে এবং বিদেশে কর্মীদের প্রতারিত করতে না পেলে, কর্মীদের জিম্মি করে অর্থ আয় করতে না পারলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার ওপর রুষ্ট হয় এবং মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন দপ্তরে বেনামে পত্র দিয়ে থাকে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের কাছে তদবির করে ফলে এদের কথায় গুরুত্ব দেয় এবং এমন অবস্থা গ্রহণ করে যে মন্ত্রণালয় নিজেই ঠকে।
দেখা গেছে, বিদেশে কর্মী পাঠানো এজেন্সির হাল হকিকত জানা কর্মকর্তা অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় দায়িত্ব পেলে সে এজেন্সি আর সাহস পায় না। মালয়েশিয়া শ্রমবাজার বাংলাদেশের অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় কিছু বাস্তবতা উন্মোচন করেছে অনেক আগেই। মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতাকে অনুধাবন না করার ফলে সমস্যার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে, সেখান থেকে বের হওয়ার কোনো জোর প্রচেষ্টা দেখা যায় না।
মালয়েশিয়ায় আশির ও নব্বই দশকের পদ্ধতি থেকে বের হয়েছে এবং বাংলাদেশের জন্য আউট সোর্সিং বন্ধ করেছে। কিন্তু কর্মী প্রেরণে বাংলাদেশি এজেন্সি, তাদের এজেন্ট, সাব এজেন্ট সবই আগের নিয়ম অব্যাহত রাখতে কসরত করে যাচ্ছে।
ফলে বাংলাদেশ সরকার মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করলেও পুরনো ঘূর্ণি থেকে বের হতে পারছে না কারণ এজেন্সি কর্মী পাঠাবে।
অন্যদিকে জি-টু-জি পদ্ধতিতে সরকার কর্মী প্রেরণ করলে খরচ খুব কম হয় কিন্তু এরই মধ্যে মালয়েশিয়ার শ্রম বাজারে অর্থ বিনিয়োগকারী এজেন্সিগুলোর ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায় এবং ক্ষতির শিকার হয়। ফলে তারা সবসময় সরকারকে এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে অতিরিক্ত কর্মী নিয়ে মালয়েশিয়ায় সমস্যা সৃষ্টি করায় এবং ফলে আন্তর্জাতিকভাবে ক্ষতির শিকার হওয়ায় মালয়েশিয়া এজেন্ট নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বাংলাদেশকে বললেও কোনো ফল না পাওয়া মালয়েশিয়া নিজেই এজেন্ট নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া চালু করে।
এতে আগের অভ্যাসে মালয়েশিয়ায় ভিসা ক্রয় করা বাংলাদেশি এজেন্সি ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এ এজেন্সিগুলোর নানান যুক্তি তুলে ধরে মালয়েশিয়ায় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে তদবির করে এবং অতিষ্ঠ হয়ে মালয়েশিয়ার নতুন সরকার (মাহাথির সরকার) বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে।
তখন বেশি অভিবাসন খরচের যুক্তি তুলে ধরা হলেও বর্তমানে তার থেকে বেশি অভিবাসন খরচ হচ্ছে! যারা তদবির করে মার্কেট বন্ধ করে তারাই আবার তদবির করে মার্কেট খোলার! মালয়েশিয়া সরকার উপায় খুঁজে কোনো পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগ করবে। বাংলাদেশে বৈঠকের জন্য মানবসম্পদ মন্ত্রীসহ টিম অপেক্ষমান অবস্থায় মাহাথির সরকার পদত্যাগ করলে মিটিং না করেই ফেরত যায়। এরপর মালয়েশিয়া সরকারের অবস্থা এবং করোনা পরিস্থিতে অনলাইন মিটিং হয়।
এভাবে দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটি বাংলাদেশের জন্য উন্মুক্ত হয় ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর। কিন্তু চমৎকার সুযোগটি নেওয়া যাচ্ছে না শুধু সেই পুরোনো দুর্বৃত্তায়নের কারণে। সরকার কর্মী পাঠাতে ব্যর্থ হচ্ছে। কর্মী না পাঠাতে পারার অন্যতম কারণ এজেন্সিগুলোর নিজেদের মধ্যে অনৈক্য এবং অতিরিক্ত অর্থলাভ করার প্রবণতা।
জি-টু-জি প্লাসের সময় মালয়েশিয়া সরকার ১০টি বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ করলেও বিএমইটির তথ্যমতে, ৩১০টির বেশি বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী প্রেরণ করেছে। মালয়েশিয়ার পদ্ধতি অনুযায়ী দশটি এজেন্সি নিয়োগকর্তার কাছ থেকে ডিমান্ড লেটার, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি পেয়েছে কিন্তু ওপর তিনশ রিক্রুটিং এজেন্সি আগে থেকেই মালয়েশিয়ায় সরাসরি নিয়োগকর্তা বা মালয়েশিয়ান এজেন্সি বা সাব এজেন্সির কাছ থেকে ভিসা ক্রয় করে।
ফলে তাদের কর্মী পাঠিয়ে দিতে হয়েছে মালয়েশিয়া সরকার নির্ধারিত দশটি এজেন্সির মাধ্যমে। সেই ভিসা ক্রয়ের পুরনো পদ্ধতি এখনও মালয়েশিয়ার শ্রম বাজারে চালু আছে। এই বিষয়টি অনুধাবন করে এবার বাংলাদেশ মালয়েশিয়া সরকারকে অনুরোধ করে ২৫০টি বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সির অনুমোদন দিতে। কিন্তু ২০০৬/০৭ সালের বাজে অভিজ্ঞতা এবং জি টু জি প্লাসের সময় সুন্দর কর্মী নিয়োগ অভিজ্ঞতা মালয়েশিয়াকে তাড়িত করে ফলে জি টু জি প্লাসের ফর্মুলায় বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করতে শুরু করে।
২০০৬/০৭ সালে অতিরিক্ত কর্মী পাঠিয়ে মালয়েশিয়ায় যে অমানবিক পরিস্থিতি তৈরি করেছিল এবং সমাধানের জন্য কোনো বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সির দেখা না পাওয়ার বাজে অভিজ্ঞতা মালয়েশিয়া মনে রেখেছে। অন্যদিকে জি-টু জি-প্লাসের সময় কাজ না পাওয়া বা নিয়োগকর্তা ছাড়া অন্য কোথাও কর্মী জিম্মি করে রাখা বা আউট সোর্সিং করার কোনো ঘটনা ঘটেনি সবাই সঠিক কর্মসংস্থান হয়, কোনো অমানবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
বরং কর্মীর কোনো সমস্যায় ওই দশটি এজেন্সির এগিয়ে আসা ও দায়িত্ব নেওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। এই দুটি প্রতিষ্ঠিত দৃষ্টান্ত থেকে মালয়েশিয়া সীমিত বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি ফর্মুলায় স্থির থাকে। অন্যদিকে বাংলাদেশ প্রথম জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে সব বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সিকে কাজ করার সুযোগ দিতে দাবি করলে মালয়েশিয়া প্রশ্ন করে এজেন্সিগুলোকে কিভাবে কন্ট্রোল করা হবে।
বাংলাদেশের বিদ্যমান এজেন্সি কন্ট্রোলের পদ্ধতিতে তারা সন্তুষ্ট নয়। তারা দেখতে চেয়েছিল বাংলাদেশ কীভাবে কন্ট্রোল করবে। সে প্রেক্ষিতে তখন বুয়েটের তৈরি করা ডিজিটাল সিস্টেমে কর্মী নিবন্ধন করবে যেখান থেকে কর্মী নির্বাচন করবে, কর্মী ফি ব্যাংকিং চ্যানেলে দেবে এবং বাংলাদেশ রিক্রুটিং এজেন্সির দক্ষতা ও সুনামের ভিত্তিতে নিয়োগ দেবে।
রিক্রুটিং এজেন্সির এবিসিডি গ্রেডেশান বিধি করেছে মন্ত্রণালয় কিন্তু এর বাস্তবতা নেই। এমন কি মিডিয়া সূত্রে জানা যায়, যে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রীকে পত্র দিয়ে অনুরোধ করে ২৫ টি রিক্রুটিং এজেন্সি ঠিক করে নিতে।
যদিও মালয়েশিয়া বাংলাদেশের মন্ত্রীকে বলেছিলেন এজেন্সি ঠিক করে দিতে। বাংলাদেশের এজেন্সির ওপর বিরাগ-ভাজন না হতে এজেন্সি শ্রেণিকরণ এবং ২৫টি এজেন্সি বাছাই করেনি। আবারও বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সি ও মন্ত্রণালয়ের ওপর আস্থা না রেখে শেষ পর্যন্ত মালয়েশিয়া এজেন্সি ঠিক করে। জি-টু-জি প্লাসের সময় মালয়েশিয়া সরকার অনলাইন পদ্ধতি দিয়েছে যেটা বাংলাদেশ সরকারের দূতাবাস, বিএমইটি ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ব্যবহার করেছে।
এবার বাংলাদেশের পক্ষে এ ধরনের কোনো ডিজিটাল সিস্টেম দেওয়ার সুযোগ ছিল কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষে কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। ফলে সুযোগ একতরফা মালয়েশিয়ার পক্ষে গেছে। বাংলাদেশের মন্ত্রণালয় ও রিক্রুটিং এজেন্সির চাওয়া ছিল শুধু মার্কেট খুলে যাক এরপর দেখা যাবে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় রিক্রুটিং এজেন্সির প্রভাব লক্ষণীয়। জি-টু-জি প্লাসের দশ এজেন্সির বিরুদ্ধে অন্যান্য এজেন্সি অবস্থান নেয়, হাইকোর্টে মামলা করে, মালয়েশিয়ায় তদবির করে বন্ধ করে আবার নতুনভাবে মার্কেট খোলার সময় সিন্ডিকেট ভুক্ত হওয়ার জন্য এজেন্সিগুলোর মধ্যে নানা গ্রুপ দেখা গেছে কিন্তু সবাইকে দেখা গেছে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে!
একই এজেন্সির দুই ধরনের তৎপরতা রয়েছে। এজেন্সিগুলোর অতিরিক্ত অভিবাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে দেখা গেছে কিন্তু কম খরচে কর্মী প্রেরণের অঙ্গীকার করে সরকারকে আশ্বস্ত করার মতো কোনো এজেন্সি দেখা যায়নি। অর্থাৎ সবাই সীমিত এজেন্সি মেনে নেয় এবং নাম অন্তর্ভুক্ত করতে আন্দোলন করে। ফলে অভিবাসন খরচ কমেনি।
অন্যদিকে এজেন্সিগুলোর কর্মী প্রেরণ ব্যবসা যেন সাবলীলভাবে সুন্দর প্রতিযোগিতার মধ্যে চলতে পারে এমন কোনো উদ্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে না নেওয়ায় এজেন্সির আস্থাহীনতা সংকটে আছে মন্ত্রণালয়। ফলে তারা কর্মী গ্রহণকারী দেশের ওপর বেশি নির্ভর করে।
মালয়েশিয়ায় যেমন আগাম ভিসা কিনে নেয় বাংলাদেশের এজেন্সিগুলোর তেমনি দেশেও অভিবাসনপ্রত্যাশী যুবকদের কাছে থেকে এক দেড় লাখ টাকায় মালয়েশিয়ায় পাঠানোর অঙ্গীকার করে পাসপোর্ট নিয়ে নেয়। পাসপোর্ট নেয় কোনো দালাল বা সাব এজেন্ট।
জানা গেছে, এবার মালয়েশিয়ার মার্কেট খোলার আগেই সাব এজেন্ট বিভিন্ন যুবকের কাছে থেকে কম খরচে মালয়েশিয়া পাঠানোর জন্য পাসপোর্ট নিয়েছে। এখন মার্কেট খোলার পর এসব সাব এজেন্ট যখন নির্ধারিত ২৫/৩০/৫০টি রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে পাসপোর্ট নিয়ে যাচ্ছে তখন খরচ খুব বেশি দিতে হচ্ছে। একদিকে অল্প খরচে অঙ্গীকার করে পাসপোর্ট নিয়েছে অন্যদিকে নির্ধারিত এজেন্সি বেশি টাকা চাচ্ছে তখন অতিরিক্ত অর্থ কে দেবে এমন একটি সমস্যায় পড়েছে ফলে কর্মী পাঠানো গতি পাচ্ছে না।
অনেকে বলেছেন, এখন অতিরিক্ত অর্থ চাইতে গেলে কর্মী পাসপোর্ট ফেরত নিয়ে যাচ্ছে এবং অনেকে পাসপোর্ট দিচ্ছেই না। অন্যদিকে মন্ত্রণালয় বলেছে শুধু রেজিস্ট্রিকৃত যুবক মালয়েশিয়ায় যেতে পারবে। এই রেজিস্ট্রি হচ্ছে মূলত সাব এজেন্ট বা দালালের সঙ্গে বনিবনা হওয়ার পর।
অর্থাৎ মাঠ পর্যায়ে কর্মী মন্ত্রণালয় নয় দালাল বা সাব এজেন্টের অধীনে গেছে। ফলে পুরো প্রক্রিয়া নানান সংকটে পড়েছে।
যদিও মন্ত্রণালয় থেকে নানান বিধিনিষেধ খরচের পরিমাণ ইত্যাদি ইত্যাদি বলে দেওয়া হয়েছে। তবে সবই যেন নিয়ম রক্ষার এবং বাংলাদেশ সুবর্ণ সুযোগ হারাচ্ছে।
মালয়েশিয়ায় নতুন করে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমা পড়ে ১ লাখ ৭৫ হাজার চাহিদাপত্রের আবেদন। এসব চাহিদার মধ্যে উপযুক্ত বিবেচনায় ১ লাখ ৫০ হাজার জনের ছাড়পত্র দেয় হাইকমিশন। এর বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪০ হাজার কর্মী মালয়েশিয়ায় কর্মে নিয়োজিত হতে পেরেছে। বাকি সংখ্যা অপূর্ণ রয়েছে।
অথচ একই সময়ে মালয়েশিয়ায় প্রায় লক্ষাধিক কর্মী পাঠিয়েছে নেপাল। কর্মী পাঠানোর দিক থেকে কম হলেও খরচের দিক থেকে নেপালের তুলনায় এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কর্মীদের অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় এখন আন্তর্জাতিক ইস্যু হয়েছে। এজন্য মালয়েশিয়াকে আমেরিকা ও ইউরোপের মার্কেট নিষিদ্ধ হতে হয়েছে এবং অন্যান্য সংস্থায় জবাব দিতে হচ্ছে। কেননা অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় মানবপাচার ও জোরজবরদস্তি শ্রম হিসেবে অপরাধ।
এর মাঝেও একটু আশা দেখিয়েছে বিকল্প পথে ১০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের নতুন প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় কর্মীদের কোনো টাকা দিতে হবে না। বলা যায় শূন্য অভিবাসন খরচে এসব কর্মী নেবে মালয়েশিয়া। এ প্রকল্পে ৭৯৫ জন কর্মীর চাহিদাপত্র সত্যায়ন করে বাংলাদেশ হাইকমিশন।
গত ২৯ নভেম্বর সরকারি রিক্রুটিং সংস্থা বোয়েসেল মালয়েশিয়ায় ৩০ বাংলাদেশি কর্মী পাঠিয়েছে। অর্থাৎ শূন্য অভিবাসন খরচে কর্মী পাঠানোর সুযোগ আছে। সে অনুযায়ী অগ্রগতি শ্লথ হওয়া সন্দেহজনক। এ প্রকল্প বেসরকারি রিক্রুটিং ব্যবসায়ীদের জন্য সুখের নয় তবে যারা কেবল সার্ভিস চার্জ নিয়ে খুশি সেসব রিক্রুটিং এজেন্সিকে কর্মী পাঠাতে বোয়েসেলের সাথে জড়িত করলে দীর্ঘকাল সুফল দেবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
তবে বাংলাদেশ প্রান্তের শ্লথ গতি মালয়েশিয়ান নিয়োগকর্তাদের বাংলাদেশের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে অন্যকোনো দেশের দিকে কর্মী নিতে ধাবিত করতে প্রলুব্ধ করবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর বাংলাদেশের জনশক্তি খাতের ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত ছিলেন লাভের হিসাব নিয়ে। কিন্তু সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিরবচ্ছিন্ন ব্যবসা করার কোনো মানসিকতা দেখাতে পারেনি।
মন্ত্রণালয়ও এক্ষেত্রে ফ্যাসিলিটি নিশ্চিত করতে পারেনি, শুধু মালয়েশিয়ার ওপর ছেড়ে না দিয়ে নিজেদের দায় দায়িত্ব নেওয়ার সময় এখন। মালয়েশিয়া সুযোগ দিয়েছে সেটাকে নষ্ট হতে না দেওয়ার সঠিক নেতৃত্ব ও ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় দেবে এবং সংশ্লিষ্ট সবাই মিলে স্মুথ অভিবাসন করবে বলে প্রত্যাশা সবার।