প্রবাস ডেস্ক: ফ্রান্সে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তান এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কটূক্তি করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ও প্রতিবাদ সভা করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ ফ্রান্স।
রাজধানী প্যারিসের লা-কর্নোভের ফ্রান্স-বাংলা স্কুলের হলরুমে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ ফ্রান্সের সভাপতি ও ফ্রেঞ্চ বাংলা স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ জামিরুল ইসলাম মিয়া জামিল।
তিনি বলেন, সম্প্রতি ফ্রান্স প্রবাসী ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা তার নিজস্ব ফেসবুক আইডি থেকে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে কূরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রথম সারির একটি টেলিভিশনের ফ্রান্স প্রতিনিধি তার ফেসবুকেও একইভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের হেয় করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। প্যারিসে বসবাসরত ক্ষমতাসীন দলের আরেক নেতা এই সাংবাদিকের পোস্ট শেয়ার করে মুক্তিযোদ্ধাদের কটূক্তি করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব কটূক্তির তীব্র প্রতিবাদ, নিন্দা এবং ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করে বলেন, তাদের এসব স্ট্যাটাসের পরপরই একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম উল্লেখ করে মিথ্যা কথা প্রচার করলেও ওইসব রাজনৈতিক নেতা বা সাংবাদিক তার কোনো প্রতিবাদ করেননি।
যেহেতু ক্ষমতাসীন দলের ওই নেতা এবং সাংবাদিক এই ধরনের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের কোনো প্রতিবাদ করেননি সেক্ষেত্রে প্রতিয়মাণ হয় যে, এসবের পেছনে তাদের ইন্ধন রয়েছে।
এমনকি গত ১৯ ডিসেম্বর ফ্রান্স প্রবাসী আশরাফ ইসলাম মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে মারাত্মকভাবে বাজে মন্তব্য করেন। জামিরুল ইসলাম মিয়া জামিল আশরাফ ইসলামের এ ধরনের কুরুচিপূর্ণ পোস্টের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, যদি তারা ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হবেন এবং দূতাবাসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বিচার দাবি করবেন।
তিনি বলেন, গত বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান বানচাল করার উদ্দেশ্যে মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুনির হোসেনের একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা ভাইরাল করে তাকে দেশদ্রোহী ও জামায়াত বিএনপি বানানোর হীন প্রচেষ্টা করেছে তাদের এহেন কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই।
আমার জানামতে মোহাম্মদ মুনির হোসেন একজন প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং তিনি কখনো জামায়াত ও রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না। তিনি স্বাধীনতার স্বপক্ষের দল আওয়ামী লীগের একজন কর্মী।
অনুষ্ঠানে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বক্তব্য দেন, মুক্তিযোদ্ধা ফরহাদ হোসেন এবং ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করে নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানান, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শেখ মোহাম্মদ আলী, মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান, জার্মানি থেকে সর্ব ইউরোপীয়ান মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আমিনুর রহমান খসরু, সুইজারল্যান্ড থেকে সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ থেকে মুক্তিযোদ্ধা মো. সোহরাব হোসেন ও ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের’ সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষার।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা সন্তান মোহাম্মদ মুনির হোসেন, রাশেদুল হাসান ও সাহেদ বিন সুলতান।
মুনির হোসেন তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, যারা মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তান এবং রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কূরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন, তারা দেশদ্রোহী, স্বাধীনতার শত্রু, জাতির শত্রু, বাংলাদেশের শত্রু।
তিনি বলেন, যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি গ্রুপ ছবি থেকে অন্যান্যদের ছবি কাট করে শুধু আমার ছবি দিয়ে আমাকে রাষ্ট্রদ্রোহী এবং জামায়াত, বিএনপির সাথে সম্পৃক্ত বলে দূতাবাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন তারা নিজেরাই নিজেদের অতীত কুকর্ম ঢাকতে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ ফ্রান্সের কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি ও ফ্রান্স -বাংলা স্কুলের পরিচালক ফাতেমা খাতুন, কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য ও ফ্রান্স আওয়ামী লীগ নেতা জয়নুল আবেদীন, সহ-সভাপতি তারিকুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম রনি, দপ্তর সম্পাদক অরুন্দ বড়ুয়া (রবিন), ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ইয়াছিন হক, সাংস্কৃতিক ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক মো. মতিউর রহমান, মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা নুরুন নাহার নিপা, সদস্য সরদার নাজমুল নিন্দা জানান।