Dhaka , Friday, 29 March 2024

আইএমএফ’র ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ, আরও দরকষাকষি করবে সরকার

  • Robiul Islam
  • আপডেট টাইম : 08:23:24 am, Saturday, 7 January 2023
  • 40 বার

অর্থনীতি ডেস্ক: আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে আরোপিত শর্ত নিয়ে শেষ মুহূর্তে আরও দরকষাকষি করবে সরকার। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এই দরকষাকষি হবে। এর মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশের ক্ষেত্রে আরও সময় চাওয়া হবে।

একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দেশের বাজারে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কাঠামো তৈরির বিষয়েও সময় চাওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, আইএমএফ’র সঙ্গে ঋণ চুক্তি হওয়ার আগে শেষ মুহূর্তে আরও কোন কোন বিষয়ে দরকষাকষি করা যায় তা নিয়ে কাজ করছে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকেও প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো এখন পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এর ভিত্তিতে সরকার সুবিধামতো কিছু ইস্যু নিয়ে দরকষাকষি করবে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকির বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে জানা গেছে।

অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় আইএমএফ বাংলাদেশের অনুকূলে ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদনের আগে সরকারের কাছে শর্ত বাস্তবায়নের রাজনৈতিক অঙ্গীকার চায়। সরকারের কাছ থেকে এ ধরনের প্রতিশ্রুতির বিষয়ে নিশ্চিত হতে আইএমএফ’র উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মিসেস অ্যান্তইনেত সায়েহ ১৪ জানুয়ারি ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। তিনি ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত অবস্থান করবেন। ওই সময়ে তিনি আইএমএফ’র ঋণের বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

এ লক্ষ্যে ১৫ জানুয়ারি বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আইএমএফ’র ডিএমডির একটি বৈঠক হবে বলে জানা গেছে। ওই বৈঠকে ঋণের শর্ত বাস্তবায়নের বিষয়টি আলোচনা হবে। এছাড়া তিনি অর্থমন্ত্রী ও সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। ওই বৈঠকে ঋণের শর্ত নিয়ে শেষ পর্যায়ের দরকষাকষি হবে।

সূত্র জানায়, আইএমএফ বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ দিতে ইতোমধ্যে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। ২৬ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত আইএমএফ’র একটি মিশন বাংলাদেশে এসে ঋণের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে গেছে। ওই সময়ে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফ বেশকিছু শর্ত আরোপ করেছে।

ওইসব শর্ত বাস্তবায়নের ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে বেশকিছু প্রতিশ্রুতিও পেয়েছে। এর ভিত্তিতে আইএমএফ মিশন একটি প্রতিবেদন তৈরি করে তাদের প্রধান কার্যালয়ের উচ্চপর্যায়ে জমা দিয়েছে। সেটি তারা পর্যালোচনা করে ঋণের শর্ত বাস্তবায়নের ব্যাপারে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে রাজনৈতিক অঙ্গীকার চায়। যেটি গত মিশনের পক্ষে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আদায় করা সম্ভব ছিল না। এজন্যই আইএমএফ’র ডিএমডি ঢাকায় আসছেন।

সূত্র জানায়, আইএমএফ এবার ঋণের জন্য কঠিণ কোনো শর্ত আরোপ করেনি। তাদের প্রধান শর্তগুলো ইতোমধ্যে সরকার বাস্তবায়ন করেছে। তাদের প্রধান শর্ত হচ্ছে-অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে, কমাতে হবে ভর্তুকি। ভর্তুকি কমাতে ইতোমধ্যেই সরকার জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। গ্যাসের দামও আরও বাড়তে পারে নতুন বছরে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন-গ্যাস, বিদ্যুতে সরকার আর কত ভর্তুকি দেবে?

এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ নিয়েও প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর কথা বলেছেন। বলা হয়েছে, রিজার্ভ থেকে বিভিন্ন তহবিলে বিনিয়োগ করা ৮০০ কোটি ডলার বাদ দিলে নিট রিজার্ভ থাকবে ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। তখন রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার।

আইএমএফ’র শর্ত অনুযায়ী রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশ করতে হবে। এটি প্রকাশ করলে রিজার্ভ থেকে বিভিন্ন তহবিলে বিনিয়োগ করা অর্থ বাদ দিতে হবে। এটি দিলে রিজার্ভ ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে আসবে। কেননা রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবেই কমে যাচ্ছে। আকুর দেনা শোধ হলে সোমবার রিজার্ভ ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলারে নেমে আসবে। সামনে আরও কমবে। এ কারণে এখনই রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশ না করে আরও একটু সময় নিতে চায় সরকার।

জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতেও সময় চায়। কেননা, সে কাঠামো এখনো তৈরি হয়নি। নীতিমালাও নেই। এক্ষেত্রে ভারতের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করছে সরকার। এগুলোর কত বাড়লে বা কমলে অর্থনীতির কোন খাতে কি প্রভাব পড়বে সেটি এখন দেখা হচ্ছে।

এ বছরেই সরকার ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করবে। এ কারণে বিদ্যতের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় চায় আইএমএফ। জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমে প্রতি ব্যারেলের দাম ৮০ ডলারের নিচে নামলেও দেশে কমানো হচ্ছে না। এ ব্যাপারে আইএমএফ’র কোনো চাপ নেই। গ্যাসের দাম এখনো আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে কম। এর দাম বাড়াতে আইএমএফ’র চাপ রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Robiul Islam

জনপ্রিয় সংবাদ

আইএমএফ’র ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ, আরও দরকষাকষি করবে সরকার

আপডেট টাইম : 08:23:24 am, Saturday, 7 January 2023

অর্থনীতি ডেস্ক: আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে আরোপিত শর্ত নিয়ে শেষ মুহূর্তে আরও দরকষাকষি করবে সরকার। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এই দরকষাকষি হবে। এর মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশের ক্ষেত্রে আরও সময় চাওয়া হবে।

একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দেশের বাজারে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কাঠামো তৈরির বিষয়েও সময় চাওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, আইএমএফ’র সঙ্গে ঋণ চুক্তি হওয়ার আগে শেষ মুহূর্তে আরও কোন কোন বিষয়ে দরকষাকষি করা যায় তা নিয়ে কাজ করছে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকেও প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো এখন পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এর ভিত্তিতে সরকার সুবিধামতো কিছু ইস্যু নিয়ে দরকষাকষি করবে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকির বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে জানা গেছে।

অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় আইএমএফ বাংলাদেশের অনুকূলে ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদনের আগে সরকারের কাছে শর্ত বাস্তবায়নের রাজনৈতিক অঙ্গীকার চায়। সরকারের কাছ থেকে এ ধরনের প্রতিশ্রুতির বিষয়ে নিশ্চিত হতে আইএমএফ’র উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মিসেস অ্যান্তইনেত সায়েহ ১৪ জানুয়ারি ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। তিনি ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত অবস্থান করবেন। ওই সময়ে তিনি আইএমএফ’র ঋণের বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

এ লক্ষ্যে ১৫ জানুয়ারি বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আইএমএফ’র ডিএমডির একটি বৈঠক হবে বলে জানা গেছে। ওই বৈঠকে ঋণের শর্ত বাস্তবায়নের বিষয়টি আলোচনা হবে। এছাড়া তিনি অর্থমন্ত্রী ও সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। ওই বৈঠকে ঋণের শর্ত নিয়ে শেষ পর্যায়ের দরকষাকষি হবে।

সূত্র জানায়, আইএমএফ বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ দিতে ইতোমধ্যে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। ২৬ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত আইএমএফ’র একটি মিশন বাংলাদেশে এসে ঋণের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে গেছে। ওই সময়ে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফ বেশকিছু শর্ত আরোপ করেছে।

ওইসব শর্ত বাস্তবায়নের ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে বেশকিছু প্রতিশ্রুতিও পেয়েছে। এর ভিত্তিতে আইএমএফ মিশন একটি প্রতিবেদন তৈরি করে তাদের প্রধান কার্যালয়ের উচ্চপর্যায়ে জমা দিয়েছে। সেটি তারা পর্যালোচনা করে ঋণের শর্ত বাস্তবায়নের ব্যাপারে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে রাজনৈতিক অঙ্গীকার চায়। যেটি গত মিশনের পক্ষে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আদায় করা সম্ভব ছিল না। এজন্যই আইএমএফ’র ডিএমডি ঢাকায় আসছেন।

সূত্র জানায়, আইএমএফ এবার ঋণের জন্য কঠিণ কোনো শর্ত আরোপ করেনি। তাদের প্রধান শর্তগুলো ইতোমধ্যে সরকার বাস্তবায়ন করেছে। তাদের প্রধান শর্ত হচ্ছে-অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে, কমাতে হবে ভর্তুকি। ভর্তুকি কমাতে ইতোমধ্যেই সরকার জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। গ্যাসের দামও আরও বাড়তে পারে নতুন বছরে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন-গ্যাস, বিদ্যুতে সরকার আর কত ভর্তুকি দেবে?

এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ নিয়েও প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর কথা বলেছেন। বলা হয়েছে, রিজার্ভ থেকে বিভিন্ন তহবিলে বিনিয়োগ করা ৮০০ কোটি ডলার বাদ দিলে নিট রিজার্ভ থাকবে ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। তখন রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার।

আইএমএফ’র শর্ত অনুযায়ী রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশ করতে হবে। এটি প্রকাশ করলে রিজার্ভ থেকে বিভিন্ন তহবিলে বিনিয়োগ করা অর্থ বাদ দিতে হবে। এটি দিলে রিজার্ভ ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে আসবে। কেননা রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবেই কমে যাচ্ছে। আকুর দেনা শোধ হলে সোমবার রিজার্ভ ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলারে নেমে আসবে। সামনে আরও কমবে। এ কারণে এখনই রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশ না করে আরও একটু সময় নিতে চায় সরকার।

জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতেও সময় চায়। কেননা, সে কাঠামো এখনো তৈরি হয়নি। নীতিমালাও নেই। এক্ষেত্রে ভারতের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করছে সরকার। এগুলোর কত বাড়লে বা কমলে অর্থনীতির কোন খাতে কি প্রভাব পড়বে সেটি এখন দেখা হচ্ছে।

এ বছরেই সরকার ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করবে। এ কারণে বিদ্যতের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় চায় আইএমএফ। জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমে প্রতি ব্যারেলের দাম ৮০ ডলারের নিচে নামলেও দেশে কমানো হচ্ছে না। এ ব্যাপারে আইএমএফ’র কোনো চাপ নেই। গ্যাসের দাম এখনো আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে কম। এর দাম বাড়াতে আইএমএফ’র চাপ রয়েছে।