Dhaka , Saturday, 20 April 2024

কাল পুরান ঢাকার আকাশ থাকবে ঘুড়িওয়ালাদের দখলে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : 11:35:50 am, Friday, 13 January 2023
  • 47 বার

নিউজ ডেস্ক : পুরান ঢাকার আকাশ ঘুড়িওয়ালাদের দখলে থাকবে আগামীকাল শনিবার। সেখানে শোভা পাবে নানা রং আর বাহারি ঘুড়িদের সাম্যবাদ। বলছি, ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসবের কথা। একে ঘুড়ি উৎসব বা পৌষ সংক্রান্তিও বলা হয়। আগে এ উৎসবটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে পুরান ঢাকায় সাড়ম্বরে পালিত হয় দিনটি। উৎসবে অংশ নেন সব ধর্মের সব বয়সী মানুষ। গত কয়েক বছর ধরে, ঢাকার অন্যান্য এলাকার তরুণ-তরুণীরাও উৎসবে যোগ দিতে ছুটে যান পুরান ঢাকায়।

 

 

মূলত; পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়া, মুরগীটোলা, ধূপখোলা, দয়াগঞ্জ, নারিন্দা, সূত্রাপুর, কাগজিটোলা, বাংলাবাজার, লক্ষ্মীবাজার, কলতাবাজার, ধোলাই খাল, শাঁখারি বাজার, রায়সাহেব বাজার, নবাবপুর, বংশাল, নাজিরাবাজার, তাঁতী বাজার এবং লালবাগ এলাকার মানুষ এ উৎসবে দিনব্যাপী ঘুড়ি উড়ান। আয়োজন করেন নানা খাবারের। বর্তমানে সন্ধ্যায় আতশবাজী ফোটানো এ উৎসবের অন্যতম অঙ্গ।

 

সাকরাইনের দিনে সকাল থেকেই ছাদে ছাদে শুরু হয়ে যায় ঘুড়ি ওড়ানোর উন্মাদনা। ছোট বড় সবার অংশগ্রহণে মুখরিত থাকে প্রতিটি ছাদ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে উৎসবের জৌলুস। আর আকাশে বাড়বে ঘুড়ির সংখ্যা। সকালের তুলনায় বিকালে এ উন্মাদনা পরিপূর্ণতা লাভ করে। ছাদের উপর চলবে গানবাজনা আর খাওয়া-দাওয়া। সে সঙ্গে আনন্দের উত্তাপকে আরও এক ধাপ বাড়িয়ে দেয় ঘুড়ির কাটাকাটি খেলা।

এছাড়া ঘরে ঘরে তৈরি হবে পিঠা বানানোর ধুম। বর্তমানে এ উৎসবে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। অর্থাৎ সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয়ে যায় আতশবাজী। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এসব এলাকায় চলে আতশবাজির খেলা।

সাকরাইনে পুরান ঢাকায় শ্বশুরবাড়ি থেকে জামাইদের নাটাই, বাহারি ঘুড়ি উপহার দেওয়া এবং পিঠার ডালা পাঠানো একটি অবশ্য পালনীয় অঙ্গ। ডালা হিসেবে আসা ঘুড়ি, পিঠা আর অন্যান্য খাবার বিলি করা হয় আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়ার লোকদের মধ্যে।

 

এ উৎসবকে মাথায় রেখে গত এক সপ্তাহ পুরান ঢাকার বায়ান্নো বাজার তেপ্পান্ন গলির অধিকাংশ গলিতে আর খোলা ছাদে হয়েছে সুতা মাঞ্জা দেওয়ার ধুম।

এ উৎসব উপলক্ষে শাঁখারীবাজার, নারিন্দা, ধোলাইখাল, ধূপখোলা, গেন্ডারিয়াসহ অলিগলিতে নানা রঙের ঘুড়ির পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। তবে আগের মতো বেচাকেনা নেই বলে জানান বিক্রেতারা। শেষ মুহূর্তে বেচাকেনার আশায় প্রহর গুনছেন তারা।

সরেজমিন পুরান ঢাকার দোকানগুলোতে নানা ধরনের ঘুড়ি দেখা যায়। আকার ভেদে একেকটা ঘুড়ির সর্বনিম্ন দাম ৫, ১০, ২০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা পর্যন্ত। ঘুড়ির সঙ্গে রয়েছে নাটাই। দাম ১০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা। সুতা ৫০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।

সাকরাইন বাংলাদেশের প্রাচীন উৎসবগুলোর একটি। এটি মূলত ঘুড়ি উৎসব। পৌষ মাসের শেষ দিন জানুয়ারির ১৪ অথবা ১৫ তারিখে এ উৎসব হয়ে থাকে। সাকরাইন মূলত পৌষসংক্রান্তি ঘুড়ি উৎসব। সংস্কৃত শব্দ ‘সংক্রান্তি’ অপভ্রংশে সাকরাইন হয়েছে। এক পর্যায়ে ঢাকাইয়া উৎসবে রূপ নেয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Robiul Islam

কাল পুরান ঢাকার আকাশ থাকবে ঘুড়িওয়ালাদের দখলে

আপডেট টাইম : 11:35:50 am, Friday, 13 January 2023

নিউজ ডেস্ক : পুরান ঢাকার আকাশ ঘুড়িওয়ালাদের দখলে থাকবে আগামীকাল শনিবার। সেখানে শোভা পাবে নানা রং আর বাহারি ঘুড়িদের সাম্যবাদ। বলছি, ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসবের কথা। একে ঘুড়ি উৎসব বা পৌষ সংক্রান্তিও বলা হয়। আগে এ উৎসবটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে পুরান ঢাকায় সাড়ম্বরে পালিত হয় দিনটি। উৎসবে অংশ নেন সব ধর্মের সব বয়সী মানুষ। গত কয়েক বছর ধরে, ঢাকার অন্যান্য এলাকার তরুণ-তরুণীরাও উৎসবে যোগ দিতে ছুটে যান পুরান ঢাকায়।

 

 

মূলত; পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়া, মুরগীটোলা, ধূপখোলা, দয়াগঞ্জ, নারিন্দা, সূত্রাপুর, কাগজিটোলা, বাংলাবাজার, লক্ষ্মীবাজার, কলতাবাজার, ধোলাই খাল, শাঁখারি বাজার, রায়সাহেব বাজার, নবাবপুর, বংশাল, নাজিরাবাজার, তাঁতী বাজার এবং লালবাগ এলাকার মানুষ এ উৎসবে দিনব্যাপী ঘুড়ি উড়ান। আয়োজন করেন নানা খাবারের। বর্তমানে সন্ধ্যায় আতশবাজী ফোটানো এ উৎসবের অন্যতম অঙ্গ।

 

সাকরাইনের দিনে সকাল থেকেই ছাদে ছাদে শুরু হয়ে যায় ঘুড়ি ওড়ানোর উন্মাদনা। ছোট বড় সবার অংশগ্রহণে মুখরিত থাকে প্রতিটি ছাদ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে উৎসবের জৌলুস। আর আকাশে বাড়বে ঘুড়ির সংখ্যা। সকালের তুলনায় বিকালে এ উন্মাদনা পরিপূর্ণতা লাভ করে। ছাদের উপর চলবে গানবাজনা আর খাওয়া-দাওয়া। সে সঙ্গে আনন্দের উত্তাপকে আরও এক ধাপ বাড়িয়ে দেয় ঘুড়ির কাটাকাটি খেলা।

এছাড়া ঘরে ঘরে তৈরি হবে পিঠা বানানোর ধুম। বর্তমানে এ উৎসবে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। অর্থাৎ সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয়ে যায় আতশবাজী। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এসব এলাকায় চলে আতশবাজির খেলা।

সাকরাইনে পুরান ঢাকায় শ্বশুরবাড়ি থেকে জামাইদের নাটাই, বাহারি ঘুড়ি উপহার দেওয়া এবং পিঠার ডালা পাঠানো একটি অবশ্য পালনীয় অঙ্গ। ডালা হিসেবে আসা ঘুড়ি, পিঠা আর অন্যান্য খাবার বিলি করা হয় আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়ার লোকদের মধ্যে।

 

এ উৎসবকে মাথায় রেখে গত এক সপ্তাহ পুরান ঢাকার বায়ান্নো বাজার তেপ্পান্ন গলির অধিকাংশ গলিতে আর খোলা ছাদে হয়েছে সুতা মাঞ্জা দেওয়ার ধুম।

এ উৎসব উপলক্ষে শাঁখারীবাজার, নারিন্দা, ধোলাইখাল, ধূপখোলা, গেন্ডারিয়াসহ অলিগলিতে নানা রঙের ঘুড়ির পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। তবে আগের মতো বেচাকেনা নেই বলে জানান বিক্রেতারা। শেষ মুহূর্তে বেচাকেনার আশায় প্রহর গুনছেন তারা।

সরেজমিন পুরান ঢাকার দোকানগুলোতে নানা ধরনের ঘুড়ি দেখা যায়। আকার ভেদে একেকটা ঘুড়ির সর্বনিম্ন দাম ৫, ১০, ২০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা পর্যন্ত। ঘুড়ির সঙ্গে রয়েছে নাটাই। দাম ১০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা। সুতা ৫০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।

সাকরাইন বাংলাদেশের প্রাচীন উৎসবগুলোর একটি। এটি মূলত ঘুড়ি উৎসব। পৌষ মাসের শেষ দিন জানুয়ারির ১৪ অথবা ১৫ তারিখে এ উৎসব হয়ে থাকে। সাকরাইন মূলত পৌষসংক্রান্তি ঘুড়ি উৎসব। সংস্কৃত শব্দ ‘সংক্রান্তি’ অপভ্রংশে সাকরাইন হয়েছে। এক পর্যায়ে ঢাকাইয়া উৎসবে রূপ নেয়।