Dhaka , Saturday, 20 April 2024

কেমন হবে এ বছরের স্বর্ণের বাজার?

  • Robiul Islam
  • আপডেট টাইম : 02:15:50 pm, Thursday, 19 January 2023
  • 45 বার

অর্থনীতি ডেস্ক: বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। তাহলে ভল্টে যে স্বর্ণ আছে সেটা কি এখন বিক্রি করবেন না কি বছরের শেষে? কারণ বাংলাদেশ তো বটেই বিশ্বজুড়েই বছরের শেষ নাগাদ স্বর্ণের দাম আকাশচুম্বী হবে বলে বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন।

বাংলাদেশে সবশেষ ১৪ জানুয়ারি বেড়েছে স্বর্ণের দাম। ভালো মানের সোনায় ভরিতে ২৬শ’ টাকার বেশি বেড়ে এখন প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম গিয়ে ঠেকেছে ৯৩ হাজার ৪২৯ টাকায়। বলা হচ্ছে, দেশে স্বর্ণের দাম এতো বেশি এর আগে আর কখনওই হয়নি।

এর আগে গত ৭ জানুয়ারি আরেক দফা বেড়েছিল দেশীয় বাজারে স্বর্ণের দাম।
এ নিয়ে গত সপ্তাহখানেকের মধ্যেই দুই দফায় স্বর্ণের দাম বেড়েছে পাঁচ হাজার টাকার বেশি।

বিশ্ব বাজারে স্বর্ণের কী অবস্থা হবে?

২০২২ এর শেষের দিকে স্বর্ণের ভবিষ্যত চকচক করতে শুরু করে। অর্থাৎ এর দাম বাড়তে শুরু করে। এর কারণ হিসেবে ফোর্বসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সময়ে মার্কিন ডলারের মূল্য কিছুটা নমনীয় হয়ে আসার কারণে এমনটা হয়েছে। উত্থান-পতন থাকলেও বলা হচ্ছে, ২০২৩ সালে স্বর্ণের বাজার গরমই থাকবে।

ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে স্বর্ণের দাম আউন্স প্রতি ৩,০০০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ স্টিন জ্যাকবসনের উদ্ধৃতি দিয়ে স্বর্ণের দামের এই পূর্বাভাস দিয়েছে ব্লুমবার্গ।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সুইস এশিয়া ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা ইয়ুয়ের্গ কিয়েনার এর উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদমাধ্যম ‘সিএনবিসি’ তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ২০২৩ সালে স্বর্ণের দাম আউন্স প্রতি ৪,০০০ ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে। ক্রমবর্ধমান সুদের হার এবং মন্দার আশঙ্কা বিশ্ব বাজারকে অনিশ্চিত করার কারণে স্বর্ণের দাম বাড়বে বলে ধারণা করছেন তিনি।

সিএনবিসিকে তিনি বলেছেন, স্বর্ণের বাজারে এবার বড় পরিবর্তন আসবে। এটা শুধু ‘১০% বা ২০% বাড়বে এমনটা নয়’ বরং এই পরিবর্তন হবে “সত্যিকার অর্থে নতুন উচ্চতা স্পর্শ করবে।”

তিনি বলেন, বছরের শুরুর দিকে অনেক অর্থনীতি “কিছুটা মন্দার মুখে পড়তে পারে”। যার কারণে ব্যাংকগুলো তাদের সুদের হার বাড়াতে কিছুটা সময় নেবে। আর এই সুযোগে স্বর্ণের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হবে বলে ধারণা করছেন তিনি। কিয়েনার বলেন, স্বর্ণই হচ্ছে একমাত্র বস্তু যা সব কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রয়েছে।

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ৪০০ টন স্বর্ণ কিনেছে, যা ২০১৮ সালের একই সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। সেবছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ২৪১ টন স্বর্ণ কিনেছিল।

কিয়েনার বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে মুদ্রাস্ফীতি চরম থাকায় ব্যাংকগুলো বিনিয়োগের জন্য স্বর্ণের দিকেই ঝুঁকছে।

কোনও পূর্বাভাস নিয়েই অবশ্য গ্যারান্টি দেওয়া যায় না, কারণ স্বল্প মেয়াদে পণ্যের বাজার অত্যন্ত অস্থির থাকে।

এছাড়া অন্য সব ফ্যাক্টরের সাথে সাথে মার্কিন ডলারের মূল্যও যদি কমতির দিকে থাকে তাহলে স্বর্ণের বাজার দর বেশি থাকবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তবে যদি মার্কিন ডলারের মূল্য বাড়তে থাকে, তাহলে স্বর্ণের দাম বাড়াটা থেমে যাবে।

এদিকে ডলারের মূল্য বাড়লেও স্বর্ণের জন্য আন্তর্জাতিক বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ চীনে কোভিড-১৯ এর জন্য নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কারণে সেখানে স্বর্ণের চাহিদা আবার বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

যদিও গত ডিসেম্বরে কোভিডের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হলেও বেইজিংয়ের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষণা করে যে, তারা ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ৩২ টন স্বর্ণ তাদের রিজার্ভে যোগ করেছে।

সব মিলিয়ে চীনে ১৯৮০ টন স্বর্ণ রয়েছে যার মূল্য প্রায় ১১২ বিলিয়ন ডলার।

অন্য সব পণ্যের মতো স্বর্ণের দামও স্বল্পমেয়াদে অনেক বেশি ওঠানামা করতে পারে।

তবে দীর্ঘমেয়াদে স্বর্ণের উপর বিনিয়োগ খুবই স্থিতিশীল হয়ে থাকে।

কমোডিটি এক্সচেঞ্জে স্বর্ণের দাম উঠানামা করলেও দীর্ঘমেয়াদে আসলে এর দামে খুব বেশি বড় পার্থক্য দেখা যায় না।

বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম কেমন হবে?

বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য এবং সংগঠনটির সাবেক প্রেসিডেন্ট এনামুল হক খান বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে স্বর্ণের দাম ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে।

তিনি বলেন, বিশ্বে ডলারের দাম যে হারে কমছে তা অব্যাহত থাকলে আন্তর্জাতিক বাজারে যেমন স্বর্ণের দাম বাড়বে, তেমনি স্থানীয় বাজারেও স্বর্ণের দাম বাড়বে।

“ইউরোর এগেইনস্টে (বিপরীতে) ডলার যে পরিমাণ উইক (দুর্বল), সেটা যদি কন্টিনিউ (চলতে) করতে থাকে, গোল্ডের (স্বর্ণের) বাজার বাড়বেই।”

স্বর্ণের দাম বাড়ার পেছনে নানাবিধ কারণ রয়েছে বলে জানান তিনি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ডলারের দাম কমা, আন্তর্জাতিক সংঘাত, চীনের অর্থনীতির ধীর গতি ইত্যাদি।

তবে যদি ডলারের মূল্য বাড়ে তাহলে স্বর্ণের বাজার স্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

বৈশ্বিক পরিবর্তন যেমন, ইউক্রেনের সাথে রাশিয়ার যুদ্ধ থেমে গেলে, ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সম্পর্ক উন্নয়ন হলে, রাশিয়া বা চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের পরিবর্তন আসলেও তা সরাসরি স্বর্ণের বাজারের উপর প্রভাব বিস্তার করবে বলে মনে করেন বাজুসের এই সদস্য।

“যেকোনও ধরনের বৈশ্বিক টেনশন, যেকোনও ধরনের অব্যবস্থাপনা, সেটা গোল্ডের উপর অ্যাফেক্ট (প্রভাব) পড়ে,” বলেন তিনি।

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যেকোনও পরিস্থিতিতে মানুষ স্বর্ণকে বিনিয়োগের নিরাপদ উপায় বলে মনে করে। গত এক শতাব্দীতে স্বর্ণই অন্য সব বিনিয়োগের মাধ্যমের মধ্যে সবচেয়ে স্থিতিশীল হিসেবে টিকে আছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে ভরি প্রতি স্বর্ণের যে দাম থাকে, বাংলাদেশে তার তুলনায় অন্তত আড়াই থেকে ৩,০০০ টাকা বেশি থাকে বলে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সাবেক প্রেসিডেন্ট এনামুল হক খান বলেন।

তিনি জানান, বাংলাদেশে ভরি প্রতি দুই হাজার টাকা করে কর দেওয়াটাই এর একটি বড় কারণ। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের চার্জ ও ব্যবসায়ীর মুনাফা যোগ হওয়ার কারণেও আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় দেশীয় বাজারে স্বর্ণের দাম বেশি থাকে।

এ কারণে ২০২৩ সালে যদি আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকে, তাহলে দেশীয় বাজারে দাম আরও বাড়বে বলেই ধারণা করা যায়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Robiul Islam

কেমন হবে এ বছরের স্বর্ণের বাজার?

আপডেট টাইম : 02:15:50 pm, Thursday, 19 January 2023

অর্থনীতি ডেস্ক: বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। তাহলে ভল্টে যে স্বর্ণ আছে সেটা কি এখন বিক্রি করবেন না কি বছরের শেষে? কারণ বাংলাদেশ তো বটেই বিশ্বজুড়েই বছরের শেষ নাগাদ স্বর্ণের দাম আকাশচুম্বী হবে বলে বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন।

বাংলাদেশে সবশেষ ১৪ জানুয়ারি বেড়েছে স্বর্ণের দাম। ভালো মানের সোনায় ভরিতে ২৬শ’ টাকার বেশি বেড়ে এখন প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম গিয়ে ঠেকেছে ৯৩ হাজার ৪২৯ টাকায়। বলা হচ্ছে, দেশে স্বর্ণের দাম এতো বেশি এর আগে আর কখনওই হয়নি।

এর আগে গত ৭ জানুয়ারি আরেক দফা বেড়েছিল দেশীয় বাজারে স্বর্ণের দাম।
এ নিয়ে গত সপ্তাহখানেকের মধ্যেই দুই দফায় স্বর্ণের দাম বেড়েছে পাঁচ হাজার টাকার বেশি।

বিশ্ব বাজারে স্বর্ণের কী অবস্থা হবে?

২০২২ এর শেষের দিকে স্বর্ণের ভবিষ্যত চকচক করতে শুরু করে। অর্থাৎ এর দাম বাড়তে শুরু করে। এর কারণ হিসেবে ফোর্বসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সময়ে মার্কিন ডলারের মূল্য কিছুটা নমনীয় হয়ে আসার কারণে এমনটা হয়েছে। উত্থান-পতন থাকলেও বলা হচ্ছে, ২০২৩ সালে স্বর্ণের বাজার গরমই থাকবে।

ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে স্বর্ণের দাম আউন্স প্রতি ৩,০০০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ স্টিন জ্যাকবসনের উদ্ধৃতি দিয়ে স্বর্ণের দামের এই পূর্বাভাস দিয়েছে ব্লুমবার্গ।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সুইস এশিয়া ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা ইয়ুয়ের্গ কিয়েনার এর উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদমাধ্যম ‘সিএনবিসি’ তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ২০২৩ সালে স্বর্ণের দাম আউন্স প্রতি ৪,০০০ ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে। ক্রমবর্ধমান সুদের হার এবং মন্দার আশঙ্কা বিশ্ব বাজারকে অনিশ্চিত করার কারণে স্বর্ণের দাম বাড়বে বলে ধারণা করছেন তিনি।

সিএনবিসিকে তিনি বলেছেন, স্বর্ণের বাজারে এবার বড় পরিবর্তন আসবে। এটা শুধু ‘১০% বা ২০% বাড়বে এমনটা নয়’ বরং এই পরিবর্তন হবে “সত্যিকার অর্থে নতুন উচ্চতা স্পর্শ করবে।”

তিনি বলেন, বছরের শুরুর দিকে অনেক অর্থনীতি “কিছুটা মন্দার মুখে পড়তে পারে”। যার কারণে ব্যাংকগুলো তাদের সুদের হার বাড়াতে কিছুটা সময় নেবে। আর এই সুযোগে স্বর্ণের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হবে বলে ধারণা করছেন তিনি। কিয়েনার বলেন, স্বর্ণই হচ্ছে একমাত্র বস্তু যা সব কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রয়েছে।

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ৪০০ টন স্বর্ণ কিনেছে, যা ২০১৮ সালের একই সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। সেবছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ২৪১ টন স্বর্ণ কিনেছিল।

কিয়েনার বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে মুদ্রাস্ফীতি চরম থাকায় ব্যাংকগুলো বিনিয়োগের জন্য স্বর্ণের দিকেই ঝুঁকছে।

কোনও পূর্বাভাস নিয়েই অবশ্য গ্যারান্টি দেওয়া যায় না, কারণ স্বল্প মেয়াদে পণ্যের বাজার অত্যন্ত অস্থির থাকে।

এছাড়া অন্য সব ফ্যাক্টরের সাথে সাথে মার্কিন ডলারের মূল্যও যদি কমতির দিকে থাকে তাহলে স্বর্ণের বাজার দর বেশি থাকবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তবে যদি মার্কিন ডলারের মূল্য বাড়তে থাকে, তাহলে স্বর্ণের দাম বাড়াটা থেমে যাবে।

এদিকে ডলারের মূল্য বাড়লেও স্বর্ণের জন্য আন্তর্জাতিক বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ চীনে কোভিড-১৯ এর জন্য নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কারণে সেখানে স্বর্ণের চাহিদা আবার বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

যদিও গত ডিসেম্বরে কোভিডের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হলেও বেইজিংয়ের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষণা করে যে, তারা ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ৩২ টন স্বর্ণ তাদের রিজার্ভে যোগ করেছে।

সব মিলিয়ে চীনে ১৯৮০ টন স্বর্ণ রয়েছে যার মূল্য প্রায় ১১২ বিলিয়ন ডলার।

অন্য সব পণ্যের মতো স্বর্ণের দামও স্বল্পমেয়াদে অনেক বেশি ওঠানামা করতে পারে।

তবে দীর্ঘমেয়াদে স্বর্ণের উপর বিনিয়োগ খুবই স্থিতিশীল হয়ে থাকে।

কমোডিটি এক্সচেঞ্জে স্বর্ণের দাম উঠানামা করলেও দীর্ঘমেয়াদে আসলে এর দামে খুব বেশি বড় পার্থক্য দেখা যায় না।

বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম কেমন হবে?

বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য এবং সংগঠনটির সাবেক প্রেসিডেন্ট এনামুল হক খান বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে স্বর্ণের দাম ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে।

তিনি বলেন, বিশ্বে ডলারের দাম যে হারে কমছে তা অব্যাহত থাকলে আন্তর্জাতিক বাজারে যেমন স্বর্ণের দাম বাড়বে, তেমনি স্থানীয় বাজারেও স্বর্ণের দাম বাড়বে।

“ইউরোর এগেইনস্টে (বিপরীতে) ডলার যে পরিমাণ উইক (দুর্বল), সেটা যদি কন্টিনিউ (চলতে) করতে থাকে, গোল্ডের (স্বর্ণের) বাজার বাড়বেই।”

স্বর্ণের দাম বাড়ার পেছনে নানাবিধ কারণ রয়েছে বলে জানান তিনি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ডলারের দাম কমা, আন্তর্জাতিক সংঘাত, চীনের অর্থনীতির ধীর গতি ইত্যাদি।

তবে যদি ডলারের মূল্য বাড়ে তাহলে স্বর্ণের বাজার স্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

বৈশ্বিক পরিবর্তন যেমন, ইউক্রেনের সাথে রাশিয়ার যুদ্ধ থেমে গেলে, ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সম্পর্ক উন্নয়ন হলে, রাশিয়া বা চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের পরিবর্তন আসলেও তা সরাসরি স্বর্ণের বাজারের উপর প্রভাব বিস্তার করবে বলে মনে করেন বাজুসের এই সদস্য।

“যেকোনও ধরনের বৈশ্বিক টেনশন, যেকোনও ধরনের অব্যবস্থাপনা, সেটা গোল্ডের উপর অ্যাফেক্ট (প্রভাব) পড়ে,” বলেন তিনি।

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যেকোনও পরিস্থিতিতে মানুষ স্বর্ণকে বিনিয়োগের নিরাপদ উপায় বলে মনে করে। গত এক শতাব্দীতে স্বর্ণই অন্য সব বিনিয়োগের মাধ্যমের মধ্যে সবচেয়ে স্থিতিশীল হিসেবে টিকে আছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে ভরি প্রতি স্বর্ণের যে দাম থাকে, বাংলাদেশে তার তুলনায় অন্তত আড়াই থেকে ৩,০০০ টাকা বেশি থাকে বলে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সাবেক প্রেসিডেন্ট এনামুল হক খান বলেন।

তিনি জানান, বাংলাদেশে ভরি প্রতি দুই হাজার টাকা করে কর দেওয়াটাই এর একটি বড় কারণ। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের চার্জ ও ব্যবসায়ীর মুনাফা যোগ হওয়ার কারণেও আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় দেশীয় বাজারে স্বর্ণের দাম বেশি থাকে।

এ কারণে ২০২৩ সালে যদি আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকে, তাহলে দেশীয় বাজারে দাম আরও বাড়বে বলেই ধারণা করা যায়।