আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের মধ্যে ইউক্রেনে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতির অভিযোগে বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন প্রেসিডেন্টের শীর্ষস্থানীয় এক উপদেষ্টা, চারজন সহকারী মন্ত্রী ও পাঁচজন আঞ্চলিক গভর্নর।
ইতিমধ্যে অভিযোগ খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তার নির্দেশের পরই শুরু হয়েছে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান।
একাধিক মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি ঘুষ, খাদ্যদ্রব্য মজুত করে রেখে উচ্চ মূল্যে বিক্রি ও একজনের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থে বিলাসবহুল জীবনযাপনের অভিযোগ ওঠে। এরপরই প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নির্দেশ দেন। প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক বলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনতে জনগণের মধ্য থেকে দাবি উঠেছে। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট এমন ব্যবস্থা নিয়েছেন।
দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের প্রথম ধাপেই সরকারের অনুমতি ছাড়া জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাদের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।
মঙ্গলবার প্রথম বরখাস্ত করা হয় প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের সহকারী প্রধান কিরিলো টিমোশেঙ্কোকে। তিনি আঞ্চলিক নীতিনির্ধারণের বিষয়টি দেখতেন। এর আগে তিনি প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির নির্বাচনী প্রচারণা দলেও কাজ করেছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার বাহিনী ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর জেলেনস্কি সরকারের মুখপাত্রের ভূমিকায় আসেন টিমোশেঙ্কো। তার বিরুদ্ধে সরকারি অর্থে বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। যদিও তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভিয়াশ্চেস্লাভ শাপোভালভকেও বরখাস্ত করা হয়। শাপোভালভ সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে খাদ্য সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, অজানা প্রতিষ্ঠান থেকে বেশি দামে খাদ্যদ্রব্য কিনতেন। খাদ্যদ্রব্য মজুত রেখে উচ্চ মূল্যে বিক্রির জন্য চুক্তি করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। মন্ত্রণালয় অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে একে ‘কারিগরি ত্রুটি বলেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেস্কি রেজনিকভের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ উঠেছে।
এ ছাড়া সহকারী প্রসিকিউটর জেনারেল ওলেস্কি সিমোনেঙ্কো, কমিউনিটি ও আঞ্চলিক উন্নয়নবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ইভান লুকারিউ ও ভিয়াচেশ্লেভ নেগোদা, সামাজিক নীতিনির্ধারণবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ভিতালি মুজিশেঙ্কো এবং নিপ্রোপেত্রোভস্ক, জাপোরিঝঝিয়া, কিয়েভ, সুমি ও খেরসনের গভর্নররা পদত্যাগ করেছেন।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির দল ক্ষমতাসীন সারভেন্ট অব দ্য পিপল পার্টির প্রধান ডেভিপ আরাখামিয়া বলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের কারাগারে যেতে হতে পারে।
দুর্নীতির দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে ইউক্রেনের। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবছর একটি তালিকা প্রকাশ করে। সংস্থাটির ২০২১ সালের তালিকায় দেখা যায়, দুর্নীতির ক্ষেত্রে ১৮০টি দেশের মধ্যে ওই বছর ইউক্রেনের অবস্থান ছিল ১২২তম। এদিকে ইউক্রেন যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য হওয়ার আবেদন করেছে, সেখানে আবেদন গ্রহণের শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান।
সরকারের উচ্চ মহলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও সোচ্চার। গত রোববার তিনি বলেন, আগে সরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে অনেকে দুর্নীতির মাধ্যমে নিজের কার্যসিদ্ধি করেছেন। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দুর্নীতি করার অতীতের সে চর্চা এখন থেকে মেনে নেওয়া হবে না।
জেলেনস্কির এই ঘোষণার এক দিন আগে গত শনিবার দেশটির অবকাঠামো উন্নয়নবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ভাসিল লোজিনস্কিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিদ্যুৎ উৎপাদনকাজে ব্যবহৃত জেনারেটর সরবরাহের জন্য তিনি সাড়ে তিন লাখ ডলারের বেশি ঘুষ নেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।