Dhaka , Friday, 19 April 2024

ফিতনা থেকে বাঁচার উপায়

  • Robiul Islam
  • আপডেট টাইম : 08:12:57 am, Friday, 27 January 2023
  • 41 বার

ইসলাম ডেস্ক: ‘ফিতনা’ শব্দটি আরবি। এর অর্থ নৈরাজ্য, অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, অন্তর্ঘাত, চক্রান্ত, বিপর্যয়, পরীক্ষা, সংশয়, দ্বন্দ্ব প্রভৃতি।

অসংখ্য হাদিস থেকে জানা যায়, শেষ জামানায় ভয়াবহ ফিতনা দেখা দেবে। মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ফিতনা বিপর্যয়ের আকারে দেখা দেবে। এই ফিতনা থেকে বেঁচে থাকার জন্য ইসলামে বিভিন্নভাবে সতর্ক করা হয়েছে। বিভিন্ন হাদিসে ফিতনা আসার বিভিন্ন রূপ বর্ণিত হয়েছে। কোনো হাদিসে এসেছে, ফিতনা আসবে নিকষ কালো অন্ধকার রাতের মতো, আবার কোনো হাদিসে এসেছে, গ্রীষ্মের ঝঞ্ঝাবায়ুর মতো দ্রুত বেগে ফিতনা ছুটে আসবে, আবার কোনো হাদিসে এসেছে, সাগরের ঢেউয়ের মতো প্রবল বেগে ফিতনা ধেয়ে আসবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন কিয়ামত সন্নিকট হবে, আমল কমে যাবে, অন্তরে কৃপণতা ঢেলে দেওয়া হবে এবং হারজ বেড়ে যাবে। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হারজ কী? তিনি বললেন, হত্যা, হত্যা। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০৩৭)

কেন এই ফিতনা

আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ফিতনা দেওয়ার হিকমত হচ্ছে, বান্দাকে পরীক্ষা করা। এর মাধ্যমে বান্দার সততা, তার ঈমান, ধৈর্য ইত্যাদি প্রকাশ পেয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষ কি মনে করে আমরা ঈমান এনেছি, এ কথা বললেই তাদের পরীক্ষা না করে ছেড়ে দেওয়া হবে? অথচ তাদের আগে যারা গত হয়েছে তাদেরও আমি পরীক্ষা করেছি। সুতরাং আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন কারা সত্যনিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছে এবং তিনি অবশ্যই জেনে নেবেন কারা মিথ্যাবাদী।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ২-৩)

যেসব কারণে ফিতনায় পতিত হবে অজ্ঞতা প্রকৃত দ্বিন সম্পর্কে না জানার কারণে অনেক মানুষ ফিতনায় পতিত হয়। আমাদের পূর্বসূরিরা যেভাবে দ্বিনকে বুঝেছেন, সত্যকে যেভাবে অনুধাবন করেছেন, সেভাবে অনুভব না করা এবং না বোঝার কারণে।

প্রবৃত্তির অনুসরণ : প্রবৃত্তির অনুসরণ মানুষকে জাহান্নাম পর্যন্ত নিয়ে যায়। কারণ তার সামনে কোনো আদর্শ থাকে না। মন যা চায় তা-ই সে করতে থাকে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কি দেখেছ তাকে, যে তার খেয়াল-খুশিকে নিজ মাবুদ বানিয়ে নিয়েছে এবং জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ তাকে গোমরাহিতে নিক্ষেপ করেছেন এবং তার কান ও অন্তরে মোহর করে দিয়েছেন, আর তার চোখের ওপর পর্দা ফেলে দিয়েছেন? অতএব, আল্লাহর পর এমন কে আছে, যে তাকে সুপথে নিয়ে আসবে? তবু কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?’ (সুরা : জাসিয়া, আয়াত : ২৩)

দ্বিনের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করা : দ্বিনের ক্ষেত্রে অতিরঞ্জন ও সীমা লঙ্ঘন করা অনেক সময় ফিতনার দিকে নিয়ে যায়। ইসলাম মানুষকে ভারসাম্য, মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে বলেছে। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই দ্বিন সহজ। দ্বিন নিয়ে যে বাড়াবাড়ি করে দ্বিন তার ওপর জয়ী হয়। কাজেই তোমরা মধ্যপন্থা অবলম্বন করো এবং (মধ্যপন্থার) নিকটে থাকো, আশান্বিত থাকো এবং সকাল-সন্ধ্যায় ও রাতের কিছু অংশে (ইবাদত সহযোগে) সাহায্য চাও। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৯)

ফিতনা থেকে বাঁচতে করণীয়

কিতাব ও সুন্নাহ আঁকড়ে ধরা : কোরআন ও সুন্নাহকে যথাযথভাবে আঁকড়ে ধরা এবং প্রকৃত কোরআনের যারা ধারক-বাহক তাদের থেকে জ্ঞান অর্জন করা। এ ক্ষেত্রে যোগ্য ও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বের সন্ধান করে জেনে নেওয়া অপরিহার্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর রশিকে (অর্থাৎ তাঁর দ্বিন ও কিতাবকে) দৃঢ়ভাবে ধরে রাখো এবং পরস্পরে বিভেদ কোরো না। আল্লাহ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন তা স্মরণ রাখো। (সুরা : আলে-ইমরান, আয়াত : ১০৩)

আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যা অবলম্বন করলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো আল্লাহর কিতাব এবং আমার সুন্নাহ।’ (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস : ৩১৯)

আল্লাহওয়ালাদের সাহচর্য : যাদের ভিতর-বাহির দেখে মনে হয় যে তারা আল্লাহ ও রাসুলের পূর্ণ অনুসরণ করে তাদের সাহায্য গ্রহণ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি এ বিষয়ে তোমাদের জানা না থাকে, তবে জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস করে নাও।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৪৩)

সত্য দলের সঙ্গে থাকা : যেকোনো বিষয়ে দলের সঙ্গে থাকা, দল থেকে বিচ্ছিন্ন না হওয়া। আবু হুরাইরা (রা.)-এর সূত্রে নবী (সা.) হতে বর্ণিত, যে ব্যক্তি (আমিরের) আনুগত্য থেকে বেরিয়ে গেল এবং জামাত (সংঘবদ্ধ দল) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল সে জাহিলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল। আর যে ব্যক্তি লক্ষ্যহীন নেতৃত্বের পতাকাতলে যুদ্ধ করে, গোত্রপ্রীতির জন্য ক্রুদ্ধ হয় অথবা গোত্রপ্রীতির দিকে আহ্বান করে অথবা গোত্রের সাহায্যার্থে যুদ্ধ করে (আল্লাহর সন্তুষ্টির কোনো ব্যাপার না থাকে) আর তাতে নিহত হয়, সে জাহিলিয়াতের মৃত্যুবরণ করে…। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৬৮০)

তাকওয়ার পথে চলা : আল্লাহকে ভয় করা এবং যেকোনো কাজে পূর্ণ তাকওয়ার ওপর চলা, এটি অন্যতম মাধ্যম ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা যদি আল্লাহর সঙ্গে তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করো, তবে তিনি তোমাদের (সত্য ও মিথ্যার মধ্যে) পার্থক্য করার শক্তি দেবেন, তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন। আল্লাহ মহা অনুগ্রহের মালিক। (সুরা : আল-আনফাল, আয়াত : ২৯)

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Robiul Islam

ফিতনা থেকে বাঁচার উপায়

আপডেট টাইম : 08:12:57 am, Friday, 27 January 2023

ইসলাম ডেস্ক: ‘ফিতনা’ শব্দটি আরবি। এর অর্থ নৈরাজ্য, অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, অন্তর্ঘাত, চক্রান্ত, বিপর্যয়, পরীক্ষা, সংশয়, দ্বন্দ্ব প্রভৃতি।

অসংখ্য হাদিস থেকে জানা যায়, শেষ জামানায় ভয়াবহ ফিতনা দেখা দেবে। মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ফিতনা বিপর্যয়ের আকারে দেখা দেবে। এই ফিতনা থেকে বেঁচে থাকার জন্য ইসলামে বিভিন্নভাবে সতর্ক করা হয়েছে। বিভিন্ন হাদিসে ফিতনা আসার বিভিন্ন রূপ বর্ণিত হয়েছে। কোনো হাদিসে এসেছে, ফিতনা আসবে নিকষ কালো অন্ধকার রাতের মতো, আবার কোনো হাদিসে এসেছে, গ্রীষ্মের ঝঞ্ঝাবায়ুর মতো দ্রুত বেগে ফিতনা ছুটে আসবে, আবার কোনো হাদিসে এসেছে, সাগরের ঢেউয়ের মতো প্রবল বেগে ফিতনা ধেয়ে আসবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন কিয়ামত সন্নিকট হবে, আমল কমে যাবে, অন্তরে কৃপণতা ঢেলে দেওয়া হবে এবং হারজ বেড়ে যাবে। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হারজ কী? তিনি বললেন, হত্যা, হত্যা। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০৩৭)

কেন এই ফিতনা

আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ফিতনা দেওয়ার হিকমত হচ্ছে, বান্দাকে পরীক্ষা করা। এর মাধ্যমে বান্দার সততা, তার ঈমান, ধৈর্য ইত্যাদি প্রকাশ পেয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষ কি মনে করে আমরা ঈমান এনেছি, এ কথা বললেই তাদের পরীক্ষা না করে ছেড়ে দেওয়া হবে? অথচ তাদের আগে যারা গত হয়েছে তাদেরও আমি পরীক্ষা করেছি। সুতরাং আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন কারা সত্যনিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছে এবং তিনি অবশ্যই জেনে নেবেন কারা মিথ্যাবাদী।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ২-৩)

যেসব কারণে ফিতনায় পতিত হবে অজ্ঞতা প্রকৃত দ্বিন সম্পর্কে না জানার কারণে অনেক মানুষ ফিতনায় পতিত হয়। আমাদের পূর্বসূরিরা যেভাবে দ্বিনকে বুঝেছেন, সত্যকে যেভাবে অনুধাবন করেছেন, সেভাবে অনুভব না করা এবং না বোঝার কারণে।

প্রবৃত্তির অনুসরণ : প্রবৃত্তির অনুসরণ মানুষকে জাহান্নাম পর্যন্ত নিয়ে যায়। কারণ তার সামনে কোনো আদর্শ থাকে না। মন যা চায় তা-ই সে করতে থাকে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কি দেখেছ তাকে, যে তার খেয়াল-খুশিকে নিজ মাবুদ বানিয়ে নিয়েছে এবং জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ তাকে গোমরাহিতে নিক্ষেপ করেছেন এবং তার কান ও অন্তরে মোহর করে দিয়েছেন, আর তার চোখের ওপর পর্দা ফেলে দিয়েছেন? অতএব, আল্লাহর পর এমন কে আছে, যে তাকে সুপথে নিয়ে আসবে? তবু কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?’ (সুরা : জাসিয়া, আয়াত : ২৩)

দ্বিনের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করা : দ্বিনের ক্ষেত্রে অতিরঞ্জন ও সীমা লঙ্ঘন করা অনেক সময় ফিতনার দিকে নিয়ে যায়। ইসলাম মানুষকে ভারসাম্য, মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে বলেছে। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই দ্বিন সহজ। দ্বিন নিয়ে যে বাড়াবাড়ি করে দ্বিন তার ওপর জয়ী হয়। কাজেই তোমরা মধ্যপন্থা অবলম্বন করো এবং (মধ্যপন্থার) নিকটে থাকো, আশান্বিত থাকো এবং সকাল-সন্ধ্যায় ও রাতের কিছু অংশে (ইবাদত সহযোগে) সাহায্য চাও। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৯)

ফিতনা থেকে বাঁচতে করণীয়

কিতাব ও সুন্নাহ আঁকড়ে ধরা : কোরআন ও সুন্নাহকে যথাযথভাবে আঁকড়ে ধরা এবং প্রকৃত কোরআনের যারা ধারক-বাহক তাদের থেকে জ্ঞান অর্জন করা। এ ক্ষেত্রে যোগ্য ও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বের সন্ধান করে জেনে নেওয়া অপরিহার্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর রশিকে (অর্থাৎ তাঁর দ্বিন ও কিতাবকে) দৃঢ়ভাবে ধরে রাখো এবং পরস্পরে বিভেদ কোরো না। আল্লাহ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন তা স্মরণ রাখো। (সুরা : আলে-ইমরান, আয়াত : ১০৩)

আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যা অবলম্বন করলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো আল্লাহর কিতাব এবং আমার সুন্নাহ।’ (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস : ৩১৯)

আল্লাহওয়ালাদের সাহচর্য : যাদের ভিতর-বাহির দেখে মনে হয় যে তারা আল্লাহ ও রাসুলের পূর্ণ অনুসরণ করে তাদের সাহায্য গ্রহণ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি এ বিষয়ে তোমাদের জানা না থাকে, তবে জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস করে নাও।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৪৩)

সত্য দলের সঙ্গে থাকা : যেকোনো বিষয়ে দলের সঙ্গে থাকা, দল থেকে বিচ্ছিন্ন না হওয়া। আবু হুরাইরা (রা.)-এর সূত্রে নবী (সা.) হতে বর্ণিত, যে ব্যক্তি (আমিরের) আনুগত্য থেকে বেরিয়ে গেল এবং জামাত (সংঘবদ্ধ দল) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল সে জাহিলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল। আর যে ব্যক্তি লক্ষ্যহীন নেতৃত্বের পতাকাতলে যুদ্ধ করে, গোত্রপ্রীতির জন্য ক্রুদ্ধ হয় অথবা গোত্রপ্রীতির দিকে আহ্বান করে অথবা গোত্রের সাহায্যার্থে যুদ্ধ করে (আল্লাহর সন্তুষ্টির কোনো ব্যাপার না থাকে) আর তাতে নিহত হয়, সে জাহিলিয়াতের মৃত্যুবরণ করে…। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৬৮০)

তাকওয়ার পথে চলা : আল্লাহকে ভয় করা এবং যেকোনো কাজে পূর্ণ তাকওয়ার ওপর চলা, এটি অন্যতম মাধ্যম ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা যদি আল্লাহর সঙ্গে তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করো, তবে তিনি তোমাদের (সত্য ও মিথ্যার মধ্যে) পার্থক্য করার শক্তি দেবেন, তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন। আল্লাহ মহা অনুগ্রহের মালিক। (সুরা : আল-আনফাল, আয়াত : ২৯)