প্রবাস ডেস্ক: বিনম্র শ্রদ্ধা ও যথাযথ মর্যাদায় জাপানের টোকিওস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে মঙ্গলবার মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা- কর্মচারী ভাষা শহিদদের স্মরণে দূতাবাসের অস্থায়ী শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে সকালে অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়। টোকিও-তে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি ও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশের জাপানী বন্ধুগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের পরবর্তী অংশে দূতাবাস প্রাঙ্গনে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় সঙ্গীত এর মূর্ছনায় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন রাষ্ট্রদূত। এরপর ভাষা শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। বঙ্গবন্ধু ও সকল ভাষা শহিদদের আত্মার মাগফেরাত, প্রবাসী বাংলাদেশি, দেশ ও দেশের জনগণের সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
শহিদ দিবসে পাঠানো মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ও ইউনেস্কোর মহাপরিচালকের দেওয়া বাণীসমূহ পাঠ করা হয়।
আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতে রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমদ শহিদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ সকল ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন এবং মহান ভাষা আন্দোলনসহ ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত তার দীর্ঘ সংগ্রাম, দেশ ও বাঙালি জাতিসত্তা গঠনে তার অতুলনীয় ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। বাংলা ভাষার মর্যাদা বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠা করতে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে তার প্রথম উপস্থিতিতেই বাংলায় বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন এবং ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা ও স্বীকৃতি জানিয়ে, ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করে। ফলে ‘একুশ’ এখন সার্বজনীন, ‘একুশ’ এখন পুরো বিশ্বের। ‘একুশ’-এর প্রেরণায় ১৯৭১ আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা, যা আজও বিশ্বের মানুষের কাছে সংগ্রাম ও মর্যাদার প্রতীক। ‘একুশ’ আমাদের শিক্ষা দেয় অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করার। রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন বলেন, ইউনেস্কো কর্তৃক গৃহীত এ বছরের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস যথার্থভাবেই বহুভাষায় শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে।
আলোচনা পর্বে অংশ নেন জাপান বাংলাদেশ সোসাইটির (জেবিএস) প্রেসিডেন্ট ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবেসহ জাপান প্রবাসী বাংলাদেশি কমিনিউটির নেতৃবৃন্দ। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা, বিলুপ্তপ্রায় ভাষা সংরক্ষণ ও তাদের মর্যাদা রক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ, তথ্যপ্রযুক্তিসহ সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করণ এবং নৃ-গোষ্ঠীদের ভাষা ও বর্ণমালাকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষায় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বক্তাগণ বাংলাদেশ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকাকে প্রশংসা করেন ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলন এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ওপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সাপ্তাহিক কাজের দিনেও জাপানি নাগরিক ও প্রবাসী বাংলাদেশিসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অতিথি এবং দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীগনের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি বিশেষভাবে উদযাপিত হয়।