স্পোর্টস ডেস্ক: জায়গাটা তার স্থায়ী হয়ে ছিল। নিজেকে এমনভাবে মানিয়ে নিয়েছিলেন সঙ্গে এমন কিছু করেছিলেন যে তাকে নড়ানো স্রেফ নিজেদের বিপদ ডেকে আনার মতোই। কিন্তু সময়-অসময়ে বিশেষ প্রয়োজনে তাকেও ছেড়ে দিতে হয়েছিল স্থান।
এবার যেমনটা হলো! ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিব আল হাসান নেই তার পছন্দের পজিশনে। তামিম ইকবাল একাদশে ফেরায় ফিরেছেন ওপেনিংয়ে। ওয়ানডে অধিনায়কের সঙ্গী লিটন দাশ। তিনে নাজমুল ইসলাম শান্ত। চারে মুশফিকুর রহিম। পাঁচ নম্বরে সাকিব। পাঁচ বছর আর ২৯ ইনিংস পর সাকিব এতোটা নিচে ব্যাটিংয়ে নামলেন। ১২ বলে ১ চারে ৮ রান করে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ড্রেসিংরুমে ফিরেন।
সাকিবের ব্যাটিং পজিশন কেন নাড়াচাড়া হলো তা জানা থাকলেও বলতে চাইলেন না নির্বাচকরা। টিম ম্যানেজমেন্টর সিদ্ধান্তর কথা বললেন নির্বাচক কমিটির প্রধান মিনহাজুল আবেদীন নান্নু।
ভারতের বিপক্ষে সবশেষ সিরিজের প্রথম দুই ওয়ানডেতে সাকিব চার নম্বরে এবং শেষটায় তিনে নেমেছিলেন। তামিম না থাকায় মধ্যভাগে নির্ভরযোগ্য কাউকে রাখতেই সাকিবকে চারে পাঠানো হয়েছিল। সঙ্গে ঢাকা লিগে দুর্দান্ত পারফর্ম করে ফেরা এনামুল হক বিজয়কেও বাজিয়ে দেখা হয়েছিল। কিন্তু গোটা সিরিজেই এনামুল নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন। ভালো করেননি ক্রমাগত সুযোগ পাওয়া শান্তও। তাইতো সাকিবই ছিল ভরসা। প্রথম ওয়ানডেতে ২৯ ও শেষটায় করেছিলেন ৪৩ রান।
চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সময়ে উপরে ব্যাটিংয়ের সুযোগ একাধিকবার চেয়েও পাননি সাকিব। হাথুরুসিংহে ফিরেই সাকিবকে আবার পাঠালেন পাঁচে? এর পেছনে বড় কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা তা সময়ই হয়তো বলে দেবে।
কিন্তু বিশ্বকাপের বছরে দলের অন্যতম সফলত ব্যাটসম্যানকে নিজের পজিশন থেকে নাড়ানো কতটা যুক্তিসঙ্গত হচ্ছে? এ সময়ে দলগুলো নির্দিষ্ট পজিশনে নির্দিষ্ট খেলোয়াড়কে থিতু করেন। বারবার সুযোগ দিয়ে বাজিয়ে দেখেন। বড় মঞ্চে যাওয়ার আগে খুঁজে নেয় সঠিক কম্বিনেশন। কিন্তু বিশ্বকাপের বছরে নতুন কোচের অধীনে নতুন কিছুর পথেই হাঁটছে বাংলাদেশ।
জুয়ারির প্রস্তাব গোপন করায় এক বছর ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হওয়ার আগে সাকিব নিয়মিত তিনে ব্যাটিং করে আসছিলেন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে তাকে দেখা গেছে চার নম্বর পজিশনে। তৎকালিন কোচ রাসেল ডমিঙ্গো ও অধিনায়ক তামিমের ইচ্ছায় সাকিব চারে নেমে যান। দীর্ঘদিন পর ক্রিকেটে ফেরায় সাকিবও তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করার পথে পজিশন পাল্টালেও বেশ সাবলীল ছিলেন সাকিব। প্রথম ম্যাচে ১৯ রান করলেও পরের দুটিতে আসে ৪৩ ও ৫১ রান। তার জায়গায় ওই সিরিজে তিন নম্বরে খেলা নাজমুল হোসেন শান্ত ছিলেন ব্যর্থ। ঠিক তার পরের সিরিজেই সাকিবকে আবার ফেরানো হয় তিনে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের আগে সাকিবের ব্যাটিং পজিশন নিয়ে তামিম বলেছিলেন, ‘অবশ্যই সে তিন নম্বরে ব্যাটিং করবে। প্রত্যাশা অবশ্যই বেশি থাকবে। তবে মনে রাখতে হবে, সাকিব বিশ্বকাপে যা করেছে, সেটা ব্যতিক্রমী। আমি তো চাইবো, প্রতি ম্যাচেই অমন হোক, সেও চাইবে। তবে এটা তো প্রতি ম্যাচে সম্ভব না।’
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে চার কিংবা পাঁচ নম্বরে বেশি ব্যাটিং করেছেন সাকিব। প্রথম ১৭০ ইনিংসের মধ্যে তিন নম্বরে নেমেছিলেন মাত্র দুবার। ২০১৮ সালে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ত্রিদেশীয় সিরিজে তাকে তিনে নামানো হয়। টানা ১০ ইনিংস তিনে ব্যাটিং করে ফিফটি করেছিলেন চারটি। তামিম ইকবালের সঙ্গে গড়েছেন একাধিক বড় জুটিও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সিরিজ জিততে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন ব্যাটসম্যান সাকিব।
ওই বছরের ডিসেম্বরে তিন ইনিংসে পাঁচ নম্বরে নেমে যেতে হয়েছিল বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে। সেখানেও করেন একটি ফিফটি। বিশ্বকাপের ঠিক আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে আবার তিনে ফেরানো হয়েছিল সাকিবকে। সেই ধারাবাহিকতা ছিল ২০১৯ বিশ্বকাপে। তিনে ব্যাটিং করে ৮ ম্যাচে সাকিব করেছিলেন ৬০৬ রান। দুই সেঞ্চুরি ও পাঁচ ফিফটিতে তিনি নিজেকে নিয়ে যান অন্য উচ্চতায়।
তিনে ব্যাটিংয়ে সিদ্ধান্তটা ছিল সাকিবের নিজের। তখনকার কোচ কোচ স্টিভ রোডস শুরুতে তার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেননি। সতীর্থরাও ছিলেন উদ্বিগ্ন। তবে ওই প্রতিকূলতার মধ্যেও অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা শুরু থেকেই ছিলেন সাকিবের পক্ষে। সেই প্রতিদান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান দেন ভালোভাবেই। ৩৬ ওয়ানডেতে তিন নম্বরে ব্যাট করেছেন সাকিব, ৪৯.৬৪ গড়ে মোট রান ১৫২৯। যেখানে তার ক্যারিয়ারে মোট রান ৬৮৪৩।
হাথুরুসিংহে ফিরেছেন পুরোনো আসনে। সাকিব ফিরেছেন পুরোনো পজিশনে। তামিম-হাথুরুসিংহে জুটির সিদ্ধান্ত কতটা ফলপ্রসূ হয় সেটাই দেখার।