Dhaka , Friday, 29 March 2024

কাজাখস্তান থেকে তেল কিনেও যেভাবে রাশিয়ার উপকার করছে জার্মানি

  • Robiul Islam
  • আপডেট টাইম : 02:29:31 pm, Thursday, 2 March 2023
  • 44 বার

নিউজ ডেস্ক: ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার তেল আর কিনছে না জার্মানি। তারা এখন তেল নিচ্ছে বর্তমান মধ্য এশিয়া ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশ কাজাখস্তান থেকে। চলতি সপ্তাহেই দ্রুঝবা পাইপলাইন দিয়ে জার্মানিতে তেল পাঠিয়েছে কাজাখস্তান। তাতেও কি রাশিয়ার উপকার হবে?

এই তেল যাচ্ছে পূর্ব জার্মানির একটি প্রধান তেল শোধনাগারে। এই বছরের আগে পর্যন্ত যে শোধনাগারে শুধু রাশিয়ার থেকে আসা অপরিশোধিত তেলই পরিশোধন করা হতো।

কাজাখস্তান থেকে ২০ হাজার টন বা এক লাখ ৪৫ হাজার ব্যারেল তেল পৌঁছেছে জার্মানিতে। এভাবেই কাজাখস্তান থেকে তেল নিয়ে রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করছে জার্মানি। কিন্তু বাস্তবে কি সেটা হচ্ছে?

রাশিয়া থেকে পাইপলাইনে তেল আনার ক্ষেত্রে ইইউ’র কোনও নিষেধাজ্ঞা ছিল না। তা সত্ত্বেও জার্মানি সিদ্ধান্ত নেয়, তারা রাশিয়ার থেকে তেল কিনবে না। কাজাখস্তান এ বছর জার্মানিকে ১২ লাখ টন তেল দেবে। কাজাখস্তান আবার রাশিয়ারও বন্ধু দেশ। তাদের পাইপলাইন অপারেটর কাজট্রানসঅয়েল ইতোমধ্যেই আগামী তিন মাসে তিন লাখ টন তেল পাঠানোর জন্য রাশিয়ার সংস্থা ট্রানসনেফট-এর অনুমোদন পেয়ে গেছে।

কেন কাজাখস্তান থেকে তেল কিনছে জার্মানি?

কাজাখস্তান থেকে তেল আসছে বার্লিনের ১২০ কিলোমটার উত্তরপূর্বে পিসিকে শোধনাগারে। এই শোধনাগারটি তুলনামূলকভাবে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া এলাকায় এবং প্রচুর মানুষ এখানে কাজ করেন। বার্লিনের প্রয়োজনের ৯০ শতাংশ জ্বালানি এখান থেকে যায়। রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করে দেওয়ার পর এই শোধনাগারের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।

ইউক্রেন যুদ্ধের আগে জার্মানির এক-তৃতীয়াংশ তেল আসত রাশিয়া থেকে। ২০২১ সালের নভেম্বরে প্রতিদিন ছয় লাখ ৮৭ হাজার ব্যারেল তেল রাশিয়া থেকে এসেছে। যে শোধনাগারে রাশিয়া থেকে তেল আসত বা এখন কাজাখস্তান থেকে আসবে, তা পশ্চিম জার্মানির পাইপলাইনের সঙ্গে যুক্ত নয়। তাই এই শোধনাগারটি তার ক্ষমতার তুলনায় মাত্র ৬০ শতাংশ কাজ করতে পারছিল।

কাজাখস্তানের তেল আসার পর এই শোধনাগার পুরো ক্ষমতা নিয়ে কাজ করতে পারবে এবং লাভজনকও হবে।

যেভাবে সুবিধা পাচ্ছে রাশিয়া

যে পাইপলাইন দিয়ে কাজাখস্তান থেকে তেল আসবে তা রাশিয়ার মধ্যে দিয়ে গেছে। ফলে এখান থেকে তেল আনা হলে রাশিয়াও অর্থ পাবে। পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়া থেকে তেল কেনার ওপর প্রচুর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। দামের সীমাও বেঁধে দিয়েছে। এই অবস্থায় অর্থ তাদের কাছে খুবই জরুরি।

এই তেল রাশিয়ার মধ্যে থাকা কয়েক হাজার কিলোমিটার পাইপলাইনের মধ্যে দিয়ে আসবে। ফলে বলা যায়, রাশিয়ার সম্মতি ও ইচ্ছার ওপর এই তেলের জার্মানিতে আসা নির্ভর করছে। কিন্তু তার থেকেও বড় কথা, কাজাখস্তান থেকে তেল প্রথমে রাশিয়ায় আসবে। সেখানে রাশিয়ার তেলও তার সঙ্গে মিশবে। তারপর তা জার্মানিতে আসবে। এই ব্লেন্ডিং বন্ধ করা সম্ভব নয়।

জার্মানির অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়ার কিছু তেলও জার্মানিতে এসে পৌঁছাবে। সেটা ঠেকানো যাবে না। কিন্তু বড় কথা হলো, কোনও অর্থ সরাসরি রাশিয়াকে দেওয়া হচ্ছে না। তেল কাজাখস্তান থেকে কেনা হচ্ছে, অর্থও তারাই পাচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Robiul Islam

জনপ্রিয় সংবাদ

কাজাখস্তান থেকে তেল কিনেও যেভাবে রাশিয়ার উপকার করছে জার্মানি

আপডেট টাইম : 02:29:31 pm, Thursday, 2 March 2023

নিউজ ডেস্ক: ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার তেল আর কিনছে না জার্মানি। তারা এখন তেল নিচ্ছে বর্তমান মধ্য এশিয়া ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশ কাজাখস্তান থেকে। চলতি সপ্তাহেই দ্রুঝবা পাইপলাইন দিয়ে জার্মানিতে তেল পাঠিয়েছে কাজাখস্তান। তাতেও কি রাশিয়ার উপকার হবে?

এই তেল যাচ্ছে পূর্ব জার্মানির একটি প্রধান তেল শোধনাগারে। এই বছরের আগে পর্যন্ত যে শোধনাগারে শুধু রাশিয়ার থেকে আসা অপরিশোধিত তেলই পরিশোধন করা হতো।

কাজাখস্তান থেকে ২০ হাজার টন বা এক লাখ ৪৫ হাজার ব্যারেল তেল পৌঁছেছে জার্মানিতে। এভাবেই কাজাখস্তান থেকে তেল নিয়ে রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করছে জার্মানি। কিন্তু বাস্তবে কি সেটা হচ্ছে?

রাশিয়া থেকে পাইপলাইনে তেল আনার ক্ষেত্রে ইইউ’র কোনও নিষেধাজ্ঞা ছিল না। তা সত্ত্বেও জার্মানি সিদ্ধান্ত নেয়, তারা রাশিয়ার থেকে তেল কিনবে না। কাজাখস্তান এ বছর জার্মানিকে ১২ লাখ টন তেল দেবে। কাজাখস্তান আবার রাশিয়ারও বন্ধু দেশ। তাদের পাইপলাইন অপারেটর কাজট্রানসঅয়েল ইতোমধ্যেই আগামী তিন মাসে তিন লাখ টন তেল পাঠানোর জন্য রাশিয়ার সংস্থা ট্রানসনেফট-এর অনুমোদন পেয়ে গেছে।

কেন কাজাখস্তান থেকে তেল কিনছে জার্মানি?

কাজাখস্তান থেকে তেল আসছে বার্লিনের ১২০ কিলোমটার উত্তরপূর্বে পিসিকে শোধনাগারে। এই শোধনাগারটি তুলনামূলকভাবে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া এলাকায় এবং প্রচুর মানুষ এখানে কাজ করেন। বার্লিনের প্রয়োজনের ৯০ শতাংশ জ্বালানি এখান থেকে যায়। রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করে দেওয়ার পর এই শোধনাগারের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।

ইউক্রেন যুদ্ধের আগে জার্মানির এক-তৃতীয়াংশ তেল আসত রাশিয়া থেকে। ২০২১ সালের নভেম্বরে প্রতিদিন ছয় লাখ ৮৭ হাজার ব্যারেল তেল রাশিয়া থেকে এসেছে। যে শোধনাগারে রাশিয়া থেকে তেল আসত বা এখন কাজাখস্তান থেকে আসবে, তা পশ্চিম জার্মানির পাইপলাইনের সঙ্গে যুক্ত নয়। তাই এই শোধনাগারটি তার ক্ষমতার তুলনায় মাত্র ৬০ শতাংশ কাজ করতে পারছিল।

কাজাখস্তানের তেল আসার পর এই শোধনাগার পুরো ক্ষমতা নিয়ে কাজ করতে পারবে এবং লাভজনকও হবে।

যেভাবে সুবিধা পাচ্ছে রাশিয়া

যে পাইপলাইন দিয়ে কাজাখস্তান থেকে তেল আসবে তা রাশিয়ার মধ্যে দিয়ে গেছে। ফলে এখান থেকে তেল আনা হলে রাশিয়াও অর্থ পাবে। পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়া থেকে তেল কেনার ওপর প্রচুর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। দামের সীমাও বেঁধে দিয়েছে। এই অবস্থায় অর্থ তাদের কাছে খুবই জরুরি।

এই তেল রাশিয়ার মধ্যে থাকা কয়েক হাজার কিলোমিটার পাইপলাইনের মধ্যে দিয়ে আসবে। ফলে বলা যায়, রাশিয়ার সম্মতি ও ইচ্ছার ওপর এই তেলের জার্মানিতে আসা নির্ভর করছে। কিন্তু তার থেকেও বড় কথা, কাজাখস্তান থেকে তেল প্রথমে রাশিয়ায় আসবে। সেখানে রাশিয়ার তেলও তার সঙ্গে মিশবে। তারপর তা জার্মানিতে আসবে। এই ব্লেন্ডিং বন্ধ করা সম্ভব নয়।

জার্মানির অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়ার কিছু তেলও জার্মানিতে এসে পৌঁছাবে। সেটা ঠেকানো যাবে না। কিন্তু বড় কথা হলো, কোনও অর্থ সরাসরি রাশিয়াকে দেওয়া হচ্ছে না। তেল কাজাখস্তান থেকে কেনা হচ্ছে, অর্থও তারাই পাচ্ছে।