মালয়েশিয়া ডেস্ক: মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটির দায়রা আদালতে দুটি আইনে মোট ছয়টি অভিযোগ আনা হয়েছে। দায়ের করা অভিযোগের প্রথম চারটিতে পৃথক পৃথক সংস্থার কাছ থেকে ২৩ কোটি ২০ লাখ রিঙ্গিত ঘুষ চাওয়া ও দ্বিতীয় দুটিতে ১৯ কোটি ৫০ লাখ রিঙ্গিত ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ নিয়ে দেশটির উচ্চ পর্যায়ের দুই প্রবীণ রাজনীতিবিদকে দুর্নীতির অভিযোগে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হলো। এর আগে ২০২০ সালে রাষ্ট্রীয় তহবিল ওয়ানএমডিবি দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। আর ২০২৩ সালে এসে একই কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হলো দেশটির আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিনকে।
মূলত দুটি আইনের অধীনে মোট ছয়টি অভিযোগ আনা হয়েছে মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের বিরুদ্ধে। প্রথম আইনটি হলো, মালয়েশিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৩ (১) ধারা আর দ্বিতীয় আইনটি হলো মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন ও অবৈধ কার্যকলাপবিরোধী আইন ২০০১ এর ৪ (১) (বি) ধারা।
প্রথম আইনের অধীনে দায়ের করা প্রথম চারটি অভিযোগে মুহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে চারটি পৃথক সংস্থার কাছ থেকে ২৩ কোটি ২০ লাখ রিঙ্গিত ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রথম অভিযোগ: মুহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে বারসাতু পার্টির পক্ষে বুখারি ইক্যুইটি এসডিএন বিএইচডি থেকে ২০ কোটি রিঙ্গিত ঘুষ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির ৮ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে পুত্রজায়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
দ্বিতীয় অভিযোগ: মুহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে বারসাতু পার্টির হয়ে নেপটুরিস এসডিএন বিএইচডির কাছ থেকে ১০ লাখ রিঙ্গিত ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ২০২১ সালের ২০ মার্চ থেকে ২০ আগস্টের মধ্যে পুত্রজায়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
তৃতীয় অভিযোগ: মুহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে মামফর এসডিএন বিএইচডি’র কাছ থেকে ১ কোটি ৯৫ লাখ রিঙ্গিত ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ২০২১ সালের ২০ মার্চ থেকে ২০ আগস্টের মধ্যে পুত্রজায়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
চতুর্থ অভিযোগ: দেশটির বুমিপুত্র ঠিকাদার সমিতির প্রেসিডেন্ট আজমান ইউসুফের কাছ থেকে ১ কোটি ২০ লাখ রিঙ্গিত ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ রয়েছে মুহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে। ২০২১ সালের ২০ মার্চ থেকে ২০ আগস্টের মধ্যে পুত্রজায়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
দ্বিতীয় আইনের দুটি অভিযোগ হলো:
প্রথম অভিযোগ: মুহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে তার দলের পক্ষে বুখারি ইক্যুইটি এসডিএন বিএইচডি থেকে ১২ কোটি রিঙ্গিত গ্রহণ এবং সেই অর্থ সিআইএমবি অ্যাকাউন্টে জমা দেয়ার অভিযোগ আনা হয়। ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ জুলাইয়ের মধ্যে ব্যাংকের মেনারা কেএল স্টেসেন সেন্ট্রাল শাখায় এই অপরাধ সংঘটিত হয়।
দ্বিতীয় অভিযোগ: মুহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে একই কোম্পানির কাছ থেকে ৭ কোটি ৫০ লাখ রিঙ্গিত ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ আনা হয়। ২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ জুলাইয়ের মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগে বলা হয়।
প্রথম আইনের অধীনে দোষী সাব্যস্ত হলে মুহিউদ্দিনের সর্বোচ্চ ২০ বছরের কারাদণ্ড ও উক্ত অপরাধের অধীনে প্রাপ্ত মূল্যের কমপক্ষে পাঁচগুণ অর্থদণ্ড বা প্রতিটি অভিযোগের জন্য ১০ হাজার রিঙ্গিতের বেশি অর্থ জরিমানা হতে পারে।
দ্বিতীয় আইনে দোষী সাব্যস্ত হলে প্রতিটি অভিযোগের জন্য ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময় কোনো বেআইনি কার্যকলাপ বা অপরাধের উপকরণ থেকে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ বা মূল্যের কমপক্ষে পাঁচ গুণ বা ৫০ লাখ রিঙ্গিত জরিমানা করা হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে মুহিউদ্দিন ইয়াসিন ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠলে বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) সকাল ১১টার দিকে তাকে তলব করে দেশটির দুর্নীতি দমন কমিশন। এরপর দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে জিজ্ঞাসবাদ। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার দেখানো হয় তাকে।
এরপর এদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে মুহিউদ্দিন ইয়াসিনকে ২০ লাখ রিঙ্গিতে জামিনে মুক্তি দেয়া হলেও শুক্রবার (১০ মার্চ) তাকে আদালতে হাজির করার কথা জানায় মালয়েশিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশন। এরপর শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে কুয়ালালামপুর হাইকোর্টে পৌঁছান মুহিউদ্দিন ইয়াসিন। সেখানে তার বিরুদ্ধে এ ছয়টি অভিযোগ আনা হয়।