প্রবাস ডেস্ক: বিয়ে-পালা-পার্বন কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠানে এক সময়ে জনপ্রিয় ছিল ধামাইল গান। সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং ভিডিও কনটেন্টে ইউটিউবে ভিউ বাড়াতে ধামাইলের চরম বিকৃতি হচ্ছে।
কথাগুলো বলছিলেন, প্যারিসে ধামাইল গান নিয়ে নিরলস কাজ করে যাওয়া লেখক-গীতিকার রুবেল চন্দ্র দাস।
যেখানে ইউরোপের চাকচিক্যময় জীবনের গতিতে পড়ে অনেকেই নিজেকে হারিয়ে দেন, সেখানে প্যারিসের মতো একটি শহরে বসে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে ধামাইল গানের এক অপরূপ সমাহার ঘটিয়েছেন রুবেল। তার গান এপার-ওপার দুই বাংলাতেই গাওয়া হচ্ছে। ধামাইলের পাশাপাশি গানের অন্যান্য শাখায়ও রয়েছে তার অবাধ বিচরণ।
লিখছেন কবিতাও। দুই বাংলাতেই প্রকাশিত হচ্ছে কবিতা-গান সমানতালে। এর মাঝে ভাষা কবিতাটি বেশ উল্লেখযোগ্য। ঝুমুর গানের মাঝে লাউ ফুলের ঘরলো, গেন্দা ফুলের মালা গানটিও বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। দুটি গানই রেকর্ড হয়েছে কলকাতায়।
এখন পর্যন্ত সঠিক পরিসংখ্যান দিতে না পারলেও তার ধারণা, ১৫ থেকে ২০ হাজার ধামাইল গান তিনি লিখেছেন। তিন থেকে পাঁচ হাজার কবিতা লিখেছেন। এগুলোর সিংহভাগই একাধিক ব্লগ ও ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে প্রকাশিত হয়েছে। এখন তিনি সেগুলো একত্র করে সংরক্ষণের কাজ করছেন।
তার উল্লেখযোগ্য ধামাইল গানের মধ্যে রয়েছে- ‘আজ কানাইর ফান্দে’, ‘মিলন হইল কদমতলে’, ‘তোরে দেখলে ভালা লাগে’, ‘যমুনা পাড়ের মেয়ে রাধা’, ‘পিরিত চাই’, ‘আর কত কলঙ্কী হইবি’, ‘তুমি মৌমাছি মৌমাছি’, ‘আর পড়িস না কালার সামনেগো’, ‘জ্বলে জ্বলে জ্বলেগো সই’, ‘কও গো সখী কে বাজায়গো বাশরী’, ‘শ্যাম ইশারায় রাই যখন’, ‘মন ভরিয়া হলুদ মাখো’, ‘ও শ্যাম যাইও নারে ছাড়ি বন্দের পন্থে কড়ই গাছ’ ইত্যাদি।
রুবেল বলেন, হাজার বছরের আবহমান গ্রাম বাংলার সংস্কৃতি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। ধামাইল গান হলো বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম। বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলসহ এপার-ওপার বাংলার গ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এখনো ধামাইল জনপ্রিয়।
রুবেল চন্দ্র দাস হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার সুনারু গ্রামে ১৯৮৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। বড় হয়েছেন একই জেলার লাখাই থানায়। পাঠশালা ও নিম্ন মাধ্যমিক ভবানীপুর গ্রামে সম্পন্ন করার পর চলে যান নিজ পিত্রালয়ে। ভর্তি হন হবিগঞ্জ হাই স্কুলে। সেখান থেকে বোর্ড বৃত্তি সহকারে ২০০১ সালে উত্তীর্ণ হন এসএসসি পরীক্ষায়।
পরে একই জেলার বৃন্দাবন সরকারি কলেজ থেকে ২০০৩ এইচএসসি পাশ করার পর ২০০৩-০৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। সেখান থেকেই মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন ২০০৯ সালে।
এক পুত্র, এক কন্যা এবং স্ত্রীকে নিয়ে ফ্রান্সের প্যারিসে বসবাস করছেন কয়েক বছর ধরে।