Dhaka , Friday, 29 March 2024

যেভাবে জুমার নামাজের সূচনা

  • Robiul Islam
  • আপডেট টাইম : 10:32:53 am, Friday, 17 March 2023
  • 33 বার

ইসলাম ডেস্ক: জুমা ইসলামের অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ঐতিহাসিকভাবে এ দিনের অসংখ্য ফজিলত রয়েছে। তবে এটি মুমিন মুসলমানের জন্য সাপ্তাহিক ইবাদত হিসেবে নির্ধারিত।

জুমার ব্যাখ্যা ও শাব্দিক অর্থ

আরবি শব্দ ‘জুমআহ/জুমুআহ’র ব্যাপারে একাধিক মতামত পাওয়া যায়।

জমহুর উলামায়ে কেরামের মতে শব্দটি হবে ‘জুমুআহ’। আর ইমাম আ’মাশ (রহ.)-এর মতে, শব্দটি হবে ‘জুমআহ’। (রুহুল মাআনি: ১৪/৯৯ দরসে তিরমিজি:২/১৯২- এর সূত্রে)

আমাদের বাংলাদেশের রীতি অনুযায়ী একে ‘জুমা’ বলা হয়।

জুমার অর্থ হলো একত্র হওয়া, সংঘবদ্ধ হওয়া। যেহেতু এই দিনে মানুষ একত্র হয়, তাই এ দিনকে ইয়াওমুল জুমা বা জুমার দিনও বলা হয়।

জুমার দিনের নামকরণ

মূর্খতাযুগে শুক্রবারকে ‘ইয়াওমে আরুবা’ বলা হতো। আরবে কাআব ইবনে লুয়াই সর্বপ্রথম এর নাম ‘ইয়াওমুল জুমুআ’ বা জুমার দিন রাখেন। এই দিনে কোরাইশদের সমাবেশ হতো এবং কাআব ইবনে লুয়াই ভাষণ দিতেন। এটা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আবির্ভাবের পাঁচ শ ষাট বছর পূর্বের ঘটনা। কাআব ইবনে লুয়াই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পূর্বপুরুষদের অন্যতম। (তাফসিরে মারেফুল কোরআন বাংলা, পৃ: ১৩৭১)

ইসলাম-পরবর্তী সময়ে এ দিনে মুসলিম উম্মাহ আল্লাহর নির্দেশ পালনের উদ্দেশ্যে মসজিদে একত্র হয় বলে দিনটিকে ইয়াওমুল জুমুআ বা জুমার দিন বলা হয়। কোরআনেও সে কথাটি ওঠে এসেছে। ইরশাদ হয়েছে— ‘হে মুমিনগণ, জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত মসজিদের দিকে ধাবিত হও। আর বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পারো।’ (সুরা : জুমা, আয়াত : ৯)

যেভাবে জুমার সূচনা

প্রথম হিজরি থেকে। প্রিয় নবী (সা.) পবিত্র নগরী মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনার কুবায় গিয়ে অবস্থান করেন। সেখান থেকে জুমার দিন মদিনায় যাওয়ার পথে বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় পৌঁছলে জোহরের সময় হয়ে যায়। তিনি সেখানেই জুমা আদায় করেন। ইসলামের ইতিহাসে এটাই ছিল প্রথম জুমা।

তবে হিজরতের পর জুমার নামাজ ফরজ হওয়ার আগে বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়তের ১২তম বর্ষে মদিনায় নাকিউল খাজিমাতে দুই রাকাত জুমা পড়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। সেখানে হজরত আসআদ বিন জুরারাহ (রা.)-এর ইমামতিতে শুক্রবার সে নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। আর সেটি ছিল নফল নামাজ।

এ প্রসঙ্গে মুহাম্মদ ইবনে সিরিন থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) মদিনায় আগমনের পর এবং জুমার নামাজ ফরজ হওয়ার আগে একবার মদিনার আনসারগণ একত্র হয়ে আলোচনা করলেন যে ইহুদিদের জন্য সপ্তাহে একটা দিন নির্দিষ্ট আছে, যে দিন তারা সবাই একত্র হয়। আর নাসারাদেরও সপ্তাহে সবার একত্র হওয়ার জন্য এক দিন নির্ধারিত আছে। সুতরাং আমাদের জন্য সপ্তাহে একটা দিন নির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন, যে দিন আমরা সবাই সমবেত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করব, নামাজ আদায় করব। অতঃপর তারা আলোচনাকালে বললেন, শনিবার ইহুদিদের আর রবিবার নাসারাদের জন্য নির্ধারিত। অবশেষে তাঁরা ‘ইয়াওমুল আরুবা’ (শুক্রবার)-কে গ্রহণ করলেন এবং তাঁরাই এদিনকে ‘জুমার দিন’ নামকরণ করলেন। (দরসে তিরমিজি : ২/১৯২-এর সূত্রে মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক : ৩/১৫৯, হাদিস : ৫১৪৪)

তবে বিশ্বনবী (সা.) কুবা নামক স্থান থেকে মদিনায় পৌঁছার পথে বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় সবাইকে নিয়ে যে জুমা আদায় করেন, এটিকে ইসলামের প্রথম জুমা ধরা হয়। আর সেদিন থেকেই মুমিন মুসলমানদের জুমা আদায় শুরু হয়।

সুতরাং জুমা হলো, মুমিন মুসলমানের জন্য বিশেষ ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। যা প্রিয় নবী (সা.) মদিনায় হিজরত করে আনুষ্ঠানিকভাবে বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় আদায়ের মাধ্যমে শুরু করেছিলেন। আজও মুমিন-মুসলমানের জন্য তা বিশেষ ইবাদত হিসেবে জারি আছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Robiul Islam

জনপ্রিয় সংবাদ

যেভাবে জুমার নামাজের সূচনা

আপডেট টাইম : 10:32:53 am, Friday, 17 March 2023

ইসলাম ডেস্ক: জুমা ইসলামের অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ঐতিহাসিকভাবে এ দিনের অসংখ্য ফজিলত রয়েছে। তবে এটি মুমিন মুসলমানের জন্য সাপ্তাহিক ইবাদত হিসেবে নির্ধারিত।

জুমার ব্যাখ্যা ও শাব্দিক অর্থ

আরবি শব্দ ‘জুমআহ/জুমুআহ’র ব্যাপারে একাধিক মতামত পাওয়া যায়।

জমহুর উলামায়ে কেরামের মতে শব্দটি হবে ‘জুমুআহ’। আর ইমাম আ’মাশ (রহ.)-এর মতে, শব্দটি হবে ‘জুমআহ’। (রুহুল মাআনি: ১৪/৯৯ দরসে তিরমিজি:২/১৯২- এর সূত্রে)

আমাদের বাংলাদেশের রীতি অনুযায়ী একে ‘জুমা’ বলা হয়।

জুমার অর্থ হলো একত্র হওয়া, সংঘবদ্ধ হওয়া। যেহেতু এই দিনে মানুষ একত্র হয়, তাই এ দিনকে ইয়াওমুল জুমা বা জুমার দিনও বলা হয়।

জুমার দিনের নামকরণ

মূর্খতাযুগে শুক্রবারকে ‘ইয়াওমে আরুবা’ বলা হতো। আরবে কাআব ইবনে লুয়াই সর্বপ্রথম এর নাম ‘ইয়াওমুল জুমুআ’ বা জুমার দিন রাখেন। এই দিনে কোরাইশদের সমাবেশ হতো এবং কাআব ইবনে লুয়াই ভাষণ দিতেন। এটা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আবির্ভাবের পাঁচ শ ষাট বছর পূর্বের ঘটনা। কাআব ইবনে লুয়াই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পূর্বপুরুষদের অন্যতম। (তাফসিরে মারেফুল কোরআন বাংলা, পৃ: ১৩৭১)

ইসলাম-পরবর্তী সময়ে এ দিনে মুসলিম উম্মাহ আল্লাহর নির্দেশ পালনের উদ্দেশ্যে মসজিদে একত্র হয় বলে দিনটিকে ইয়াওমুল জুমুআ বা জুমার দিন বলা হয়। কোরআনেও সে কথাটি ওঠে এসেছে। ইরশাদ হয়েছে— ‘হে মুমিনগণ, জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত মসজিদের দিকে ধাবিত হও। আর বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পারো।’ (সুরা : জুমা, আয়াত : ৯)

যেভাবে জুমার সূচনা

প্রথম হিজরি থেকে। প্রিয় নবী (সা.) পবিত্র নগরী মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনার কুবায় গিয়ে অবস্থান করেন। সেখান থেকে জুমার দিন মদিনায় যাওয়ার পথে বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় পৌঁছলে জোহরের সময় হয়ে যায়। তিনি সেখানেই জুমা আদায় করেন। ইসলামের ইতিহাসে এটাই ছিল প্রথম জুমা।

তবে হিজরতের পর জুমার নামাজ ফরজ হওয়ার আগে বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়তের ১২তম বর্ষে মদিনায় নাকিউল খাজিমাতে দুই রাকাত জুমা পড়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। সেখানে হজরত আসআদ বিন জুরারাহ (রা.)-এর ইমামতিতে শুক্রবার সে নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। আর সেটি ছিল নফল নামাজ।

এ প্রসঙ্গে মুহাম্মদ ইবনে সিরিন থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) মদিনায় আগমনের পর এবং জুমার নামাজ ফরজ হওয়ার আগে একবার মদিনার আনসারগণ একত্র হয়ে আলোচনা করলেন যে ইহুদিদের জন্য সপ্তাহে একটা দিন নির্দিষ্ট আছে, যে দিন তারা সবাই একত্র হয়। আর নাসারাদেরও সপ্তাহে সবার একত্র হওয়ার জন্য এক দিন নির্ধারিত আছে। সুতরাং আমাদের জন্য সপ্তাহে একটা দিন নির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন, যে দিন আমরা সবাই সমবেত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করব, নামাজ আদায় করব। অতঃপর তারা আলোচনাকালে বললেন, শনিবার ইহুদিদের আর রবিবার নাসারাদের জন্য নির্ধারিত। অবশেষে তাঁরা ‘ইয়াওমুল আরুবা’ (শুক্রবার)-কে গ্রহণ করলেন এবং তাঁরাই এদিনকে ‘জুমার দিন’ নামকরণ করলেন। (দরসে তিরমিজি : ২/১৯২-এর সূত্রে মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক : ৩/১৫৯, হাদিস : ৫১৪৪)

তবে বিশ্বনবী (সা.) কুবা নামক স্থান থেকে মদিনায় পৌঁছার পথে বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় সবাইকে নিয়ে যে জুমা আদায় করেন, এটিকে ইসলামের প্রথম জুমা ধরা হয়। আর সেদিন থেকেই মুমিন মুসলমানদের জুমা আদায় শুরু হয়।

সুতরাং জুমা হলো, মুমিন মুসলমানের জন্য বিশেষ ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। যা প্রিয় নবী (সা.) মদিনায় হিজরত করে আনুষ্ঠানিকভাবে বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় আদায়ের মাধ্যমে শুরু করেছিলেন। আজও মুমিন-মুসলমানের জন্য তা বিশেষ ইবাদত হিসেবে জারি আছে।