Dhaka , Saturday, 23 September 2023
শিরোনাম :
চোখ লাফানোও হতে পারে মারাত্মক অসুখ মেক্সিকো সিটিতে রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী রাস্তা প্রশস্ত করতে ইরাকে ভাঙা হল তিনশ’ বছরের পুরনো মিনার, চারিদিকে নিন্দা অবৈধ অভিবাসীদের ঠেকাতে তিউনিসিয়া-ইইউ সমঝোতা শস্য চুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা, ইউক্রেন ছাড়ল শেষ শস্যবাহী জাহাজ ফ্রাঙ্কফুর্টে সান বাঁধানো লেকের ধারে জমে উঠেছিল প্রবাসীদের ঈদ উৎসব দশ মাস পর আবারও রাস্তায় ইরানের বিতর্কিত ‘নীতি পুলিশ’ বার্সেলোনায় ঐতিহ্যবাহী ‘বাংলার মেলা’ মার্কিন গুচ্ছ বোমা ব্যবহার করলেই ইউক্রেনের ‘সর্বনাশ’, পুতিনের হুঁশিয়ারি ফ্রাঙ্কফুর্টে বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রবাসীদের কনস্যুলার সেবা প্রদান কর্মসূচি পালিত

‘আমার পরিবারকে বলেন আমি বেঁচে আছি’

  • Robiul Islam
  • আপডেট টাইম : 08:14:22 am, Saturday, 18 March 2023
  • 22 বার

প্রবাস ডেস্ক: ‘নৌকা ডুবির ঘটনা পরিষ্কারই মনে আছে। ওই ঘটনা মনে পড়লে এখন বুক কেঁপে ওঠে। লিবীয় উপকূল থেকে যাত্রা শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর সাগর ক্রমশ ভয়ঙ্কর হতে শুরু করে। অনেকেই সাঁতার কাটতে জানতেন না। তাদের ঢেউয়ের মাঝে হারিয়ে যেতে দেখেছি। ও সময় কেউ কেউ ফিরে যেতে চেয়েছিলেন।’

লিবিয়া উপকূলে নৌকা দুর্ঘটনা থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া এক বাংলাদেশি উদ্ধারকারীদের এভাবেই বলছিলেন। সেই দুর্ঘটনা থেকে উদ্ধার হওয়া ১৭ জনকে ইতালির সিসিলি দ্বীপে নিয়ে আসে ইতালীয় কর্তৃপক্ষ। তাদের সবাই বাংলাদেশের নাগরিক।

৩৩ বছর বয়সী সাইফুল বাবা-মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে সবার বড়। লিবিয়া উপকূলে ভূমধ্যসাগরে নৌকা দুর্ঘটনার ঘটনায় উদ্ধার হওয়া ১৭ জনের একজন তিনি। ইতালির গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, আমি শেষ অবধি তীরে পৌঁছাতে পেরেছি। কিন্তু আমার সঙ্গে যাত্রা করা অনেককেই চোখের সামনে ডুবে যেতে দেখেছি।

অ্যালার্ম ফোন নামের একটি সংস্থা সেই নৌকা দুর্ঘটনার খবর প্রথমে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিল, যেন তাদের উদ্ধার করা হয়। কিন্তু ইতালি কর্তৃপক্ষ সময়মতো তাতে সাড়া দেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। একপর্যায়ে অবশ্য একটি বাণিজ্যিক জাহাজের মাধ্যমে অভিবাসীদের উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ১৭ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও সেখান থেকে ৩০ জন নিখোঁজ হয়েছেন বলে স্বীকার করেছে ইতালি কর্তৃপক্ষ।

উদ্ধার করার পর সাইফুলদের সিসিলির রাগুসা রাজ্যের পোৎসাল্লো দ্বীপে নিয়ে আসা হয়৷ তাদের বহনকারী নৌকাটি উল্টে গেলে তিনি সেটার ওপরে উঠতে গিয়ে ডান পায়ে আঘাত পেয়েছেন। সিসিলিতে পৌঁছানোর পর তাই তাকে একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, নৌকা ডুবির ঘটনা পরিষ্কারই মনে আছে তার। সেই ঘটনার আতঙ্ক সাইফুলের চোখে মুখে স্পষ্ট। লিবীয় উপকূল থেকে যাত্রা শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর সাগর ক্রমশ রুক্ষ হতে শুরু করে। তখন কেউ কেউ ফিরে যেতে চেয়েছিলেন।

তিনি জানান, নৌকায় সবাই একত্রিত হয়ে বসেছিলেন তারা। কিন্তু ঠান্ডা বেশি হওয়ায় এবং ঢেউয়ের কারণে একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ঠান্ডা অসহনীয় ছিল। মানবপাচারকারীরা আমাদের নৌকায় তোলার সময় বলেছিল যে নৌকায় পানীয় জল এবং খাবার আছে। সেটা ছিল মিথ্যা কথা, যোগ করেন তিনি।

সিসিলির হাসপাতালে বসেই ইতালির সংবাদ সংস্থা আনসাকে সাক্ষাৎকার দেন সাইফুল। নৌকাটি দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার কারণ হিসেবে অশান্ত সমুদ্রের কথা জানান তিনি৷

সাইফুল বলেন, প্রত্যেকেই তখন চিৎকার করে সহায়তা চাচ্ছিলেন। আমি মরিয়াভাবে চেষ্টা করে দুর্ঘটনায় পড়া নৌকাটি ধরে থাকতে সক্ষম হয়েছিলাম। কিন্তু অনেকেই সাঁতার কাটতে জানতেন না। তাদের ঢেউয়ের মাঝে হারিয়ে যেতে দেখেছি।

সাইফুলরা দুর্ঘটনায় পড়ার পর মোবাইলে নানাস্থানে অ্যালার্ম পাঠিয়েছিলেন। তাদের আশা ছিল কেউ না কেউ তাদের উদ্ধার করতে আসবে। একপর্যায়ে একটি জাহাজ তাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসে।

ইতালি প্রবেশের আশায় বাংলাদেশ থেকে প্রথমে লিবিয়ায় আসেন তিনি। এজন্য মানবপাচারকারীদের কয়েক লাখ টাকা দিয়েছেন। গত কয়েক বছর ধরে এই টাকা জমিয়েছিলেন সাইফুল।

তিনি বলেন, আমি কাঠমিস্ত্রি ছিলাম। কিন্তু আমি সবসময় ইতালিতে আসার স্বপ্ন দেখেছি। এখন আমার একমাত্র আশা হচ্ছে আবারো পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়া।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Robiul Islam

জনপ্রিয় সংবাদ

চোখ লাফানোও হতে পারে মারাত্মক অসুখ

‘আমার পরিবারকে বলেন আমি বেঁচে আছি’

আপডেট টাইম : 08:14:22 am, Saturday, 18 March 2023

প্রবাস ডেস্ক: ‘নৌকা ডুবির ঘটনা পরিষ্কারই মনে আছে। ওই ঘটনা মনে পড়লে এখন বুক কেঁপে ওঠে। লিবীয় উপকূল থেকে যাত্রা শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর সাগর ক্রমশ ভয়ঙ্কর হতে শুরু করে। অনেকেই সাঁতার কাটতে জানতেন না। তাদের ঢেউয়ের মাঝে হারিয়ে যেতে দেখেছি। ও সময় কেউ কেউ ফিরে যেতে চেয়েছিলেন।’

লিবিয়া উপকূলে নৌকা দুর্ঘটনা থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া এক বাংলাদেশি উদ্ধারকারীদের এভাবেই বলছিলেন। সেই দুর্ঘটনা থেকে উদ্ধার হওয়া ১৭ জনকে ইতালির সিসিলি দ্বীপে নিয়ে আসে ইতালীয় কর্তৃপক্ষ। তাদের সবাই বাংলাদেশের নাগরিক।

৩৩ বছর বয়সী সাইফুল বাবা-মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে সবার বড়। লিবিয়া উপকূলে ভূমধ্যসাগরে নৌকা দুর্ঘটনার ঘটনায় উদ্ধার হওয়া ১৭ জনের একজন তিনি। ইতালির গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, আমি শেষ অবধি তীরে পৌঁছাতে পেরেছি। কিন্তু আমার সঙ্গে যাত্রা করা অনেককেই চোখের সামনে ডুবে যেতে দেখেছি।

অ্যালার্ম ফোন নামের একটি সংস্থা সেই নৌকা দুর্ঘটনার খবর প্রথমে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিল, যেন তাদের উদ্ধার করা হয়। কিন্তু ইতালি কর্তৃপক্ষ সময়মতো তাতে সাড়া দেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। একপর্যায়ে অবশ্য একটি বাণিজ্যিক জাহাজের মাধ্যমে অভিবাসীদের উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ১৭ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও সেখান থেকে ৩০ জন নিখোঁজ হয়েছেন বলে স্বীকার করেছে ইতালি কর্তৃপক্ষ।

উদ্ধার করার পর সাইফুলদের সিসিলির রাগুসা রাজ্যের পোৎসাল্লো দ্বীপে নিয়ে আসা হয়৷ তাদের বহনকারী নৌকাটি উল্টে গেলে তিনি সেটার ওপরে উঠতে গিয়ে ডান পায়ে আঘাত পেয়েছেন। সিসিলিতে পৌঁছানোর পর তাই তাকে একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, নৌকা ডুবির ঘটনা পরিষ্কারই মনে আছে তার। সেই ঘটনার আতঙ্ক সাইফুলের চোখে মুখে স্পষ্ট। লিবীয় উপকূল থেকে যাত্রা শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর সাগর ক্রমশ রুক্ষ হতে শুরু করে। তখন কেউ কেউ ফিরে যেতে চেয়েছিলেন।

তিনি জানান, নৌকায় সবাই একত্রিত হয়ে বসেছিলেন তারা। কিন্তু ঠান্ডা বেশি হওয়ায় এবং ঢেউয়ের কারণে একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ঠান্ডা অসহনীয় ছিল। মানবপাচারকারীরা আমাদের নৌকায় তোলার সময় বলেছিল যে নৌকায় পানীয় জল এবং খাবার আছে। সেটা ছিল মিথ্যা কথা, যোগ করেন তিনি।

সিসিলির হাসপাতালে বসেই ইতালির সংবাদ সংস্থা আনসাকে সাক্ষাৎকার দেন সাইফুল। নৌকাটি দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার কারণ হিসেবে অশান্ত সমুদ্রের কথা জানান তিনি৷

সাইফুল বলেন, প্রত্যেকেই তখন চিৎকার করে সহায়তা চাচ্ছিলেন। আমি মরিয়াভাবে চেষ্টা করে দুর্ঘটনায় পড়া নৌকাটি ধরে থাকতে সক্ষম হয়েছিলাম। কিন্তু অনেকেই সাঁতার কাটতে জানতেন না। তাদের ঢেউয়ের মাঝে হারিয়ে যেতে দেখেছি।

সাইফুলরা দুর্ঘটনায় পড়ার পর মোবাইলে নানাস্থানে অ্যালার্ম পাঠিয়েছিলেন। তাদের আশা ছিল কেউ না কেউ তাদের উদ্ধার করতে আসবে। একপর্যায়ে একটি জাহাজ তাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসে।

ইতালি প্রবেশের আশায় বাংলাদেশ থেকে প্রথমে লিবিয়ায় আসেন তিনি। এজন্য মানবপাচারকারীদের কয়েক লাখ টাকা দিয়েছেন। গত কয়েক বছর ধরে এই টাকা জমিয়েছিলেন সাইফুল।

তিনি বলেন, আমি কাঠমিস্ত্রি ছিলাম। কিন্তু আমি সবসময় ইতালিতে আসার স্বপ্ন দেখেছি। এখন আমার একমাত্র আশা হচ্ছে আবারো পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়া।