Dhaka , Saturday, 3 June 2023

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে হাইকমিশনের জরুরি নোটিশ

  • Robiul Islam
  • আপডেট টাইম : 08:21:42 am, Monday, 17 April 2023
  • 16 বার

মালয়েশিয়া ডেস্ক: বাংলাদেশ সরকারের সব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের নিবিড় কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে গত ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে নতুন কর্মী নিয়োগের ওপর চার বছর আগে জারিকৃত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়।

পরবর্তীতে, ২ জুন ২০২২ ঢাকায় অনুষ্ঠিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পর দুই দেশের সংশ্লিস্ট অফিসসমূহে প্রয়োজনীয় নেটওয়ার্কিং হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার স্থাপন পূর্বক আনুমানিক আগস্ট ২০২২ মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশি নতুন কর্মী নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত লেবার ডিপার্টমেন্ট ৮৭২৭টি নিয়োগের ডিমান্ডের বিপরীতে ৩,৫৮,৮৯২ জন বাংলাদেশি নতুন কর্মী নিয়োগের অনুমোদন প্রদান করেছে এবং ইতোমধ্যে ১,৩৪,৫৯৫ জন নতুন কর্মী মালয়েশিয়ায় এসে পৌঁছেছে। বাকি প্রায় ২,২৫,০০০ বাংলাদেশি কর্মীর আগমন প্রক্রিয়াধীন আছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ২/৩ বছরে মধ্যে মালয়েশিয়ায় আনুমানিক মোট ৫ লাখ নতুন বাংলাদেশি কর্মীর কর্মসংস্থান হবে বলে বাংলাদেশ হাইকমিশন আশাবাদী।

এদিকে, মালয়েশিয়ায় আসার পর কিছুসংখ্যক বিদেশি কর্মী সঠিক কাজ পাচ্ছে না বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়া ও ব্যক্তিগত সোর্স থেকে জানা গেছে। তার মধ্যে কিছুসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মীও সমস্যায় পড়েছে বলে বাংলাদেশ হাইকমিশন অবহিত হয়েছে।

এ বিষয়ে হাইকমিশন নিজস্ব উদ্যোগে এবং মালয়েশিয় কর্তৃপক্ষের সহায়তায় তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করে সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ নিয়েছে এবং কিছু সংখ্যক কর্মীদের কাজ প্রদানে নিয়োগকর্তাকে বাধ্য করতে সমর্থ হয়েছে, বাকি কর্মীদের নতুন নিয়োগকর্তার অধীনে নিয়োগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়াটির বিষয়ে সর্বসাধারনের জ্ঞাতার্থে কিছুটা আলোকপাত করা প্রয়োজন বলে বাংলাদেশ হাইকমিশন মনে করে। মালয়েশিয়া সরকারের বিদেশি কর্মী নিয়োগের অনুমোদন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হলে একজন কর্মীও কর্মহীন হবার কথা নহে।

কারণ, মালয়েশিয়ায় সারা দেশব্যাপী লেবার ডিপার্টমেন্টের শাখা-প্রশাখা রয়েছে। একমাত্র তারা যদি সঠিক যাচাই-বাছাই করে বিদেশি কর্মী নিয়োগের আবেদন অনুমোদন করেন তাহলেই বিদেশি কর্মীদের সঠিক চাকরি, কর্মপরিবেশ, আবাসন ও মজুরি নিশ্চিত হবে। তাছাড়াও, মালয়েশিয়ার আইন অনুযায়ী দেশি-বিদেশি সব কর্মীর আইনগত সব অধিকার নিশ্চিতের দায়িত্ব লেবার ডিপার্টমেন্টের ওপর এবং সে লক্ষ্যে উক্ত প্রতিষ্ঠানকে সাংগঠনিক ও আইনগত ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। কোন দেশের দূতাবাসের পক্ষেই শতভাগ যাচাই-বাছাই করে কর্মী নিয়োগের ডিমান্ড সত্যায়ন করা সম্ভব নয়।

এক্ষেত্রে, দূতাবাসকে আবশ্যিকভাবে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের ওপর নির্ভর করতে হবে। এটা বাংলাদেশসহ সব সোর্সিং কান্ট্রির দূতাবাসের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বাংলাদেশ দূতাবাস আনুমানিক ৯৫% ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সঠিক আছে কি-না সে সংক্রান্ত কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে ডিমান্ড সত্যায়ন করে থাকে। বাকি আনুমানিক ৫% ডিমান্ডের বিপরীতে দূতাবাস নিয়োগকর্তার অফিস/প্রজেক্ট সাইট ইত্যাদি ভিজিট করে সত্যায়ন করে থাকে।

শতভাগ প্রজেক্ট/ফ্যাক্টরি তথা হাজার হাজার নিয়োগ প্রতিষ্ঠান সরেজমিনে ভিজিট করা দূতাবাসের পক্ষে বাস্তবিকভাবেই অসম্ভব। এটা মালয়েশিয়ার লেবার ডিপার্টমেন্টের পক্ষেই একমাত্র সম্ভব। তাই মালয়েশিয়ার লেবার ডিপার্টমেন্টের ছাড়পত্রের ওপর আস্থা রেখে শ্রমিক প্রেরণ করাটাই যুক্তিসঙ্গত এবং অন্যান্য সব শ্রমিক প্রেরণকারী দেশ এটাই করছে। তাছাড়া, শতভাগ প্রজেক্ট দূতাবাস কর্তৃক ভিজিট করে ডিমান্ড সত্যায়ন করতে হলে কর্মী আগমনের গতি এতই ধীর হবে যে, যেটা কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে না।

অপরদিকে, প্রতিযোগী দেশসমূহ সেই সুযোগ গ্রহণের কারণে বাংলাদেশ তার যথাযথ সুফল থেকে বঞ্চিত হবে। তবে, এক্ষেত্রে ডিমান্ড সংগ্রহকারী বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সিসমূহ তাদের মালয়েশিয়ার সহযোগী এজেন্সির মাধ্যমে নিয়োগকর্তার সঠিকতা এবং বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের সক্ষমতা যথাযথভাবে যাচাই করার পর শ্রমিক প্রেরণের কার্যক্রম গ্রহণ করলে শ্রমিকদের কর্মহীনতার ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পাবে।

আরেকটা বিষয় এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, মালয়েশিয় সরকার বাংলাদেশ দূতাবাসকে কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে সতর্ক করেছে যাতে দূতাবাস কোন প্রজেক্ট সাইট/কোম্পানি সরেজমিনে যাচাই করতে না যায়। উক্ত কূটনৈতিক পত্রে তারা জানিয়েছে যে, মালয়েশিয়ার যে কোন কোম্পানি পরিদর্শনের একমাত্র এখতিয়ার মালয়েশিয়ার লেবার ডিপার্টমেন্টের।

এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময়ে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক সভায় বিষয়টি বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে এবং কর্মী নিয়োগের ডিমান্ডের যথার্থতা নিশ্চিতের দায়িত্ব মালয়েশিয়ার সরকারের বলে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উচ্চতর প্রতিনিধি কর্তৃক বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ হাইকমিশনকে কোম্পানি ভিজিট থেকে বিরত থাকার জন্য পুনরায় বলা হয়েছে।

মালয়েশিয়ায় আসার পর কাজ না পাওয়া কর্মীর সংখ্যা মোট আগত কর্মীর তুলনায় খুবই নগন্য এবং এটি এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণযোগ্য সীমার মধ্যে রয়েছে। এটা শুধু বাংলাদেশি কর্মীদের ক্ষেত্রেই হচ্ছে না-নেপাল, মিয়ানমারসহ অন্যান্য অনেক দেশের শ্রমিকও এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছে। উক্ত শ্রেণির বাংলাদেশি কর্মীদের নতুন নিয়োগকর্তার অধীনে নিয়োগ প্রদানের জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ভবিষ্যতে যাতে এই পরিস্থিতির অবনতি না হয় সে বিষয়ে মালয়েশিয়ার সরকারের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে যাতে করে বৈধভাবে আগত একজন বাংলাদেশি কর্মীও মালয়েশিয়াতে বিড়ম্বনার শিকার না হয়।

মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী নিয়োগ এবং ব্যবস্থাপনার বাস্তবতার বিষয়টি সব সচেতন মহল সম্যক অবহিত আছেন। মালয়েশিয়ার নতুন সরকার এ সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের সভায় বাংলাদেশকে অবহিত করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের দীর্ঘদিনের পুরানো ব্যবস্থাপানার উন্নয়ন ও অধিকতর স্বচ্ছতা নিশ্চিতে মালয়েশিয়ার বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর প্রচেষ্টা ও পরিকল্পনাকে বাংলাদেশ হাইকমিশন সাধুবাদ জানাচ্ছে।

বাংলাদেশ হাইকমিশন এই বিশাল কর্মযজ্ঞ পূর্ণ আন্তরিকতা ও সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সাথে সম্পন্ন করতে বদ্ধপরিকর, যাতে করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মীর নিরাপদ অভিবাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে। এক্ষেত্রে, কর্মীদের স্বার্থ সংরক্ষনের লক্ষ্যে সব প্রকার চ্যালেঞ্জকে বিবেচনায় রেখে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন শ্রমিক নিয়োগের ডিমান্ড সমূহের অনুমোদনের সত্যতা এবং নিয়োগকারীর সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য ক্ষেত্র বিশেষে কিছু কিছু কোম্পানি সরেজমিনে তদন্তের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এ কার্যক্রম পরিচালনায় হাইকমিশনের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় কোন প্রকার শিথিলতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে না।

এই মহৎ কার্যক্রমে বাংলাদেশ হাইকমিশন সকল সচেতন মহল এবং সকল অংশীজনের যথাযথ দায়িত্ববোধ, পূর্ণ আন্তরিকতা ও সহায়তা প্রত্যাশা করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Robiul Islam

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে হাইকমিশনের জরুরি নোটিশ

আপডেট টাইম : 08:21:42 am, Monday, 17 April 2023

মালয়েশিয়া ডেস্ক: বাংলাদেশ সরকারের সব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের নিবিড় কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে গত ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে নতুন কর্মী নিয়োগের ওপর চার বছর আগে জারিকৃত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়।

পরবর্তীতে, ২ জুন ২০২২ ঢাকায় অনুষ্ঠিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পর দুই দেশের সংশ্লিস্ট অফিসসমূহে প্রয়োজনীয় নেটওয়ার্কিং হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার স্থাপন পূর্বক আনুমানিক আগস্ট ২০২২ মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশি নতুন কর্মী নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত লেবার ডিপার্টমেন্ট ৮৭২৭টি নিয়োগের ডিমান্ডের বিপরীতে ৩,৫৮,৮৯২ জন বাংলাদেশি নতুন কর্মী নিয়োগের অনুমোদন প্রদান করেছে এবং ইতোমধ্যে ১,৩৪,৫৯৫ জন নতুন কর্মী মালয়েশিয়ায় এসে পৌঁছেছে। বাকি প্রায় ২,২৫,০০০ বাংলাদেশি কর্মীর আগমন প্রক্রিয়াধীন আছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ২/৩ বছরে মধ্যে মালয়েশিয়ায় আনুমানিক মোট ৫ লাখ নতুন বাংলাদেশি কর্মীর কর্মসংস্থান হবে বলে বাংলাদেশ হাইকমিশন আশাবাদী।

এদিকে, মালয়েশিয়ায় আসার পর কিছুসংখ্যক বিদেশি কর্মী সঠিক কাজ পাচ্ছে না বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়া ও ব্যক্তিগত সোর্স থেকে জানা গেছে। তার মধ্যে কিছুসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মীও সমস্যায় পড়েছে বলে বাংলাদেশ হাইকমিশন অবহিত হয়েছে।

এ বিষয়ে হাইকমিশন নিজস্ব উদ্যোগে এবং মালয়েশিয় কর্তৃপক্ষের সহায়তায় তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করে সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ নিয়েছে এবং কিছু সংখ্যক কর্মীদের কাজ প্রদানে নিয়োগকর্তাকে বাধ্য করতে সমর্থ হয়েছে, বাকি কর্মীদের নতুন নিয়োগকর্তার অধীনে নিয়োগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়াটির বিষয়ে সর্বসাধারনের জ্ঞাতার্থে কিছুটা আলোকপাত করা প্রয়োজন বলে বাংলাদেশ হাইকমিশন মনে করে। মালয়েশিয়া সরকারের বিদেশি কর্মী নিয়োগের অনুমোদন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হলে একজন কর্মীও কর্মহীন হবার কথা নহে।

কারণ, মালয়েশিয়ায় সারা দেশব্যাপী লেবার ডিপার্টমেন্টের শাখা-প্রশাখা রয়েছে। একমাত্র তারা যদি সঠিক যাচাই-বাছাই করে বিদেশি কর্মী নিয়োগের আবেদন অনুমোদন করেন তাহলেই বিদেশি কর্মীদের সঠিক চাকরি, কর্মপরিবেশ, আবাসন ও মজুরি নিশ্চিত হবে। তাছাড়াও, মালয়েশিয়ার আইন অনুযায়ী দেশি-বিদেশি সব কর্মীর আইনগত সব অধিকার নিশ্চিতের দায়িত্ব লেবার ডিপার্টমেন্টের ওপর এবং সে লক্ষ্যে উক্ত প্রতিষ্ঠানকে সাংগঠনিক ও আইনগত ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। কোন দেশের দূতাবাসের পক্ষেই শতভাগ যাচাই-বাছাই করে কর্মী নিয়োগের ডিমান্ড সত্যায়ন করা সম্ভব নয়।

এক্ষেত্রে, দূতাবাসকে আবশ্যিকভাবে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের ওপর নির্ভর করতে হবে। এটা বাংলাদেশসহ সব সোর্সিং কান্ট্রির দূতাবাসের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বাংলাদেশ দূতাবাস আনুমানিক ৯৫% ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সঠিক আছে কি-না সে সংক্রান্ত কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে ডিমান্ড সত্যায়ন করে থাকে। বাকি আনুমানিক ৫% ডিমান্ডের বিপরীতে দূতাবাস নিয়োগকর্তার অফিস/প্রজেক্ট সাইট ইত্যাদি ভিজিট করে সত্যায়ন করে থাকে।

শতভাগ প্রজেক্ট/ফ্যাক্টরি তথা হাজার হাজার নিয়োগ প্রতিষ্ঠান সরেজমিনে ভিজিট করা দূতাবাসের পক্ষে বাস্তবিকভাবেই অসম্ভব। এটা মালয়েশিয়ার লেবার ডিপার্টমেন্টের পক্ষেই একমাত্র সম্ভব। তাই মালয়েশিয়ার লেবার ডিপার্টমেন্টের ছাড়পত্রের ওপর আস্থা রেখে শ্রমিক প্রেরণ করাটাই যুক্তিসঙ্গত এবং অন্যান্য সব শ্রমিক প্রেরণকারী দেশ এটাই করছে। তাছাড়া, শতভাগ প্রজেক্ট দূতাবাস কর্তৃক ভিজিট করে ডিমান্ড সত্যায়ন করতে হলে কর্মী আগমনের গতি এতই ধীর হবে যে, যেটা কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে না।

অপরদিকে, প্রতিযোগী দেশসমূহ সেই সুযোগ গ্রহণের কারণে বাংলাদেশ তার যথাযথ সুফল থেকে বঞ্চিত হবে। তবে, এক্ষেত্রে ডিমান্ড সংগ্রহকারী বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সিসমূহ তাদের মালয়েশিয়ার সহযোগী এজেন্সির মাধ্যমে নিয়োগকর্তার সঠিকতা এবং বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের সক্ষমতা যথাযথভাবে যাচাই করার পর শ্রমিক প্রেরণের কার্যক্রম গ্রহণ করলে শ্রমিকদের কর্মহীনতার ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পাবে।

আরেকটা বিষয় এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, মালয়েশিয় সরকার বাংলাদেশ দূতাবাসকে কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে সতর্ক করেছে যাতে দূতাবাস কোন প্রজেক্ট সাইট/কোম্পানি সরেজমিনে যাচাই করতে না যায়। উক্ত কূটনৈতিক পত্রে তারা জানিয়েছে যে, মালয়েশিয়ার যে কোন কোম্পানি পরিদর্শনের একমাত্র এখতিয়ার মালয়েশিয়ার লেবার ডিপার্টমেন্টের।

এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময়ে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক সভায় বিষয়টি বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে এবং কর্মী নিয়োগের ডিমান্ডের যথার্থতা নিশ্চিতের দায়িত্ব মালয়েশিয়ার সরকারের বলে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উচ্চতর প্রতিনিধি কর্তৃক বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ হাইকমিশনকে কোম্পানি ভিজিট থেকে বিরত থাকার জন্য পুনরায় বলা হয়েছে।

মালয়েশিয়ায় আসার পর কাজ না পাওয়া কর্মীর সংখ্যা মোট আগত কর্মীর তুলনায় খুবই নগন্য এবং এটি এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণযোগ্য সীমার মধ্যে রয়েছে। এটা শুধু বাংলাদেশি কর্মীদের ক্ষেত্রেই হচ্ছে না-নেপাল, মিয়ানমারসহ অন্যান্য অনেক দেশের শ্রমিকও এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছে। উক্ত শ্রেণির বাংলাদেশি কর্মীদের নতুন নিয়োগকর্তার অধীনে নিয়োগ প্রদানের জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ভবিষ্যতে যাতে এই পরিস্থিতির অবনতি না হয় সে বিষয়ে মালয়েশিয়ার সরকারের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে যাতে করে বৈধভাবে আগত একজন বাংলাদেশি কর্মীও মালয়েশিয়াতে বিড়ম্বনার শিকার না হয়।

মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী নিয়োগ এবং ব্যবস্থাপনার বাস্তবতার বিষয়টি সব সচেতন মহল সম্যক অবহিত আছেন। মালয়েশিয়ার নতুন সরকার এ সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের সভায় বাংলাদেশকে অবহিত করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের দীর্ঘদিনের পুরানো ব্যবস্থাপানার উন্নয়ন ও অধিকতর স্বচ্ছতা নিশ্চিতে মালয়েশিয়ার বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর প্রচেষ্টা ও পরিকল্পনাকে বাংলাদেশ হাইকমিশন সাধুবাদ জানাচ্ছে।

বাংলাদেশ হাইকমিশন এই বিশাল কর্মযজ্ঞ পূর্ণ আন্তরিকতা ও সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সাথে সম্পন্ন করতে বদ্ধপরিকর, যাতে করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মীর নিরাপদ অভিবাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে। এক্ষেত্রে, কর্মীদের স্বার্থ সংরক্ষনের লক্ষ্যে সব প্রকার চ্যালেঞ্জকে বিবেচনায় রেখে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন শ্রমিক নিয়োগের ডিমান্ড সমূহের অনুমোদনের সত্যতা এবং নিয়োগকারীর সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য ক্ষেত্র বিশেষে কিছু কিছু কোম্পানি সরেজমিনে তদন্তের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এ কার্যক্রম পরিচালনায় হাইকমিশনের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় কোন প্রকার শিথিলতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে না।

এই মহৎ কার্যক্রমে বাংলাদেশ হাইকমিশন সকল সচেতন মহল এবং সকল অংশীজনের যথাযথ দায়িত্ববোধ, পূর্ণ আন্তরিকতা ও সহায়তা প্রত্যাশা করেন।