Dhaka , Saturday, 3 June 2023

শবে কদর চেনার উপায়

  • Robiul Islam
  • আপডেট টাইম : 08:23:42 am, Monday, 17 April 2023
  • 17 বার

ইসলাম ডেস্ক: লাইলাতুল কদর অনির্দিষ্ট থাকলেও হাদিসের মধ্যে এর কিছু আলামত বর্ণিত হয়েছে, যা দ্বারা লাইলাতুল কদর চেনা যায়।

এক. যে রাতে লাইলাতুল কদর হবে আসমান স্বচ্ছ থাকবে। বাতাস স্বাভাবিক থাকবে। নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশ থাকবে। সকালবেলা সূর্যের উদয় হবে তার কিরণ নিষ্প্রভ থাকবে।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সারা বছর রাত জেগে নামাজ আদায় করবে সে কদরের রাত প্রাপ্ত হবে। এ কথা শুনে উবাই ইবনে কাব বললেন, যিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই সে মহান আল্লাহর কসম! নিশ্চিতভাবে লাইলাতুল কদর রমজান মাসে। এ কথা বলতে তিনি কসম করলেন কিন্তু ইন-শা-আল্লাহ বললেন না (অর্থাৎ তিনি নিশ্চিতভাবেই বুঝলেন যে, রমজান মাসের মধ্যেই ‘লাইলাতুল কদর’ আছে)। এরপর তিনি (সা.) আবার বললেন, আল্লাহর কসম! কোন রাতটি কদরের রাত তা-ও আমি জানি। সেটি হলো এ রাত, যে রাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের নামাজ আদায় করতে আদেশ করেছেন। ২৭ রমজান সকালের আগের রাতটিই সে রাত। আর ওই রাতের আলামত বা লক্ষণ হলো, সে রাত শেষে সকালে সূর্য উদিত হবে তা উজ্জ্বল হবে কিন্তু সে সময় (উদয়ের সময়) তার কোনো তীব্র আলোকরশ্মি থাকবে না (অর্থাত্ দিনের তুলনায় কিছুটা নিষ্প্রভ হবে)। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৬৭০)

দুই. চাঁদ পূর্ণরূপে দেখা যাবে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে কদরের রাত সম্পর্কে আলাপ আলোচনা করছিলাম। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে সে (রাত) স্মরণ রাখবে, যখন চাঁদ উদিত হবে থালার একটি টুকরার ন্যায়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬৬৯)

তিন. কদর রাতে এক ধরনের শান্তি আর ধীরতা সবার মাঝে বিরাজ করবে। তেমনি অন্তরে অন্যান্য রাতের তুলনায় এক ধরনের অপার্থিব সুখ, ইবাদতের জন্য উদ্যমতা ও আনন্দ অনুভব হবে। কারণ, কোরআনে এসেছে সে রাত্রে দলে দলে ফেরেশতাদের আগমন ঘটে। তাদের এই আগমনে জমিনের মাঝে এক ধরনের প্রশান্তি বিরাজ করে। আর তারা শান্তি ও নিরাপত্তার প্রার্থনা করতে থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে অবতীর্ণ হয়। সে রাত (আদ্যোপান্ত) শান্তি ফজরের আবির্ভাব পর্যন্ত।’ (সুরা : কদর, আয়াত : ৪, ৫)

চার. কদরের রজনিতে কখনো কখনো বৃষ্টিও হতে পারে। একটি দীর্ঘ হাদিস থেকে এমনটি বোঝা যায়। আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী (সা.)-এর সঙ্গে রমজানের মধ্যম দশকে ইতিকাফ করি। তিনি বিশ তারিখের সকালে বের হয়ে আমাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, আমাকে লাইলাতুল কদর (এর সঠিক তারিখ) দেখানো হয়েছিল পরে আমাকে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতে তার সন্ধান করো। আমি দেখতে পেয়েছি যে, আমি (ওই রাতে) কাদা-পানিতে সিজদা করছি।

অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ইতিকাফ করেছে সে যেন ফিরে আসে (মসজিদ থেকে বের হয়ে না যায়)। আমরা সকলে ফিরে আসলাম (থেকে গেলাম)। আমরা আকাশে হালকা মেঘখণ্ডও দেখতে পাইনি। পরে মেঘ দেখা দিল ও এমন জোরে বৃষ্টি হলো যে খেজুরের শাখায় তৈরি মসজিদের ছাদ দিয়ে পানি ঝরতে লাগল। সালাত শুরু করা হলে আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে কাদা-পানিতে সিজদা করতে দেখলাম। পরে তাঁর কপালে আমি কাদার চিহ্ন দেখতে পাই। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০১৬)

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Robiul Islam

শবে কদর চেনার উপায়

আপডেট টাইম : 08:23:42 am, Monday, 17 April 2023

ইসলাম ডেস্ক: লাইলাতুল কদর অনির্দিষ্ট থাকলেও হাদিসের মধ্যে এর কিছু আলামত বর্ণিত হয়েছে, যা দ্বারা লাইলাতুল কদর চেনা যায়।

এক. যে রাতে লাইলাতুল কদর হবে আসমান স্বচ্ছ থাকবে। বাতাস স্বাভাবিক থাকবে। নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশ থাকবে। সকালবেলা সূর্যের উদয় হবে তার কিরণ নিষ্প্রভ থাকবে।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সারা বছর রাত জেগে নামাজ আদায় করবে সে কদরের রাত প্রাপ্ত হবে। এ কথা শুনে উবাই ইবনে কাব বললেন, যিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই সে মহান আল্লাহর কসম! নিশ্চিতভাবে লাইলাতুল কদর রমজান মাসে। এ কথা বলতে তিনি কসম করলেন কিন্তু ইন-শা-আল্লাহ বললেন না (অর্থাৎ তিনি নিশ্চিতভাবেই বুঝলেন যে, রমজান মাসের মধ্যেই ‘লাইলাতুল কদর’ আছে)। এরপর তিনি (সা.) আবার বললেন, আল্লাহর কসম! কোন রাতটি কদরের রাত তা-ও আমি জানি। সেটি হলো এ রাত, যে রাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের নামাজ আদায় করতে আদেশ করেছেন। ২৭ রমজান সকালের আগের রাতটিই সে রাত। আর ওই রাতের আলামত বা লক্ষণ হলো, সে রাত শেষে সকালে সূর্য উদিত হবে তা উজ্জ্বল হবে কিন্তু সে সময় (উদয়ের সময়) তার কোনো তীব্র আলোকরশ্মি থাকবে না (অর্থাত্ দিনের তুলনায় কিছুটা নিষ্প্রভ হবে)। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৬৭০)

দুই. চাঁদ পূর্ণরূপে দেখা যাবে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে কদরের রাত সম্পর্কে আলাপ আলোচনা করছিলাম। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে সে (রাত) স্মরণ রাখবে, যখন চাঁদ উদিত হবে থালার একটি টুকরার ন্যায়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬৬৯)

তিন. কদর রাতে এক ধরনের শান্তি আর ধীরতা সবার মাঝে বিরাজ করবে। তেমনি অন্তরে অন্যান্য রাতের তুলনায় এক ধরনের অপার্থিব সুখ, ইবাদতের জন্য উদ্যমতা ও আনন্দ অনুভব হবে। কারণ, কোরআনে এসেছে সে রাত্রে দলে দলে ফেরেশতাদের আগমন ঘটে। তাদের এই আগমনে জমিনের মাঝে এক ধরনের প্রশান্তি বিরাজ করে। আর তারা শান্তি ও নিরাপত্তার প্রার্থনা করতে থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে অবতীর্ণ হয়। সে রাত (আদ্যোপান্ত) শান্তি ফজরের আবির্ভাব পর্যন্ত।’ (সুরা : কদর, আয়াত : ৪, ৫)

চার. কদরের রজনিতে কখনো কখনো বৃষ্টিও হতে পারে। একটি দীর্ঘ হাদিস থেকে এমনটি বোঝা যায়। আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী (সা.)-এর সঙ্গে রমজানের মধ্যম দশকে ইতিকাফ করি। তিনি বিশ তারিখের সকালে বের হয়ে আমাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, আমাকে লাইলাতুল কদর (এর সঠিক তারিখ) দেখানো হয়েছিল পরে আমাকে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতে তার সন্ধান করো। আমি দেখতে পেয়েছি যে, আমি (ওই রাতে) কাদা-পানিতে সিজদা করছি।

অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ইতিকাফ করেছে সে যেন ফিরে আসে (মসজিদ থেকে বের হয়ে না যায়)। আমরা সকলে ফিরে আসলাম (থেকে গেলাম)। আমরা আকাশে হালকা মেঘখণ্ডও দেখতে পাইনি। পরে মেঘ দেখা দিল ও এমন জোরে বৃষ্টি হলো যে খেজুরের শাখায় তৈরি মসজিদের ছাদ দিয়ে পানি ঝরতে লাগল। সালাত শুরু করা হলে আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে কাদা-পানিতে সিজদা করতে দেখলাম। পরে তাঁর কপালে আমি কাদার চিহ্ন দেখতে পাই। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০১৬)