প্রবাস ডেস্ক: তিউনিশিয়ার উপকূল থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে ছেড়ে আসা নৌকাডুবির সাতদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ১৫ জন।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে তিউনিশিয়ার উপকূলরক্ষীরা। ১২ এপ্রিল দেশটির স্ফ্যাক্স শহরের উপকূল থেকে ১১০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী নিয়ে ইতালির দিকে রওনা হওয়ার পর ডুবে যায় কাঠের নৌকাটি। এ ঘটনায় মারা গেছেন অন্তত ৩২ জন। আর ৭৬ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
ঘটনার দিন ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করে উপকূলরক্ষীরা। পরদিন আরও ১৫ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সবমিলিয়ে ৩২ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী মারা গেছেন।
সম্প্রতি তিউনিশিয়ার উপকূল থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে ইতালিমুখী নৌকার সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে দুর্ঘটনাও৷ এর মধ্যে অনেকেই মারা গেছেন, নিখোঁজ হয়েছেন অনেকেই।
১৩ এপ্রিল তিউনিশ ন্যাশনাল গার্ড কর্মকর্তা হোসেম জেবালি জানিয়েছেন, টিউনিশিয়ার উপকূলরক্ষীরা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ছয় নারীসহ মোট ১৪ অভিবাসীর মরদেহ উদ্ধার করেছেন। আর অপর ব্যক্তিটি হলেন তিউনিশিয়ার নাগরিক। তিনি নৌকাটির চালকের ভূমিকায় ছিলেন।
ইউরোপে পৌঁছাতে পারলেই উন্নত জীবন—এমন আশা নিয়ে আফ্রিকা আর মধ্যপ্রাচ্যের দারিদ্র্য ও সংঘাত থেকে পালিয়ে আসা মানুষেরা ভিড় করেন লিবিয়া ও তিউনিশিয়ায়। কারণ দেশ দুইটির উপকূল অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ইউরোপমুখী যাত্রার কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে।
ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপমুখী অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য এ বছরে প্রথম তিন মাসকে সবচেয়ে বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘ। বিশ্ব সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০১৭ সাল থেকে হিসাবে নিলে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ ছিল সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সময়। কারণ এই সময়ে মারা গেছে অন্তত ৪৪১ জন মানুষ।
তিউনিশিয়ার উপকূলরক্ষীরা জানিয়েছেন, এ মাসে সাব-সাহারা আফ্রিকা থেকে আসা ১৪ হাজারের বেশি অভিবাসীকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার সময় আটক বা উদ্ধার করা হয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি।
ইতালির উপকূলজুড়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ভিড় সামাল দিতে গত ১১ এপ্রিল ছয় মাসের জন্য দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে ডানপন্থি জর্জা মেলোনি সরকার। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে, দেশটিতে বসবাসের অযোগ্য বিবেচিত অভিবাসীদের আরও দ্রুত ফেরত পাঠানোর সুযোগ পাবে রোম কর্তৃপক্ষ।
ইতালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছর এখন পর্যন্ত নৌকা নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি পৌঁছেছেন অন্তত ৩২ হাজার ৭০০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী। গত বছর ঠিক এই সময়ে সংখ্যাটি ছিল মাত্র আট হাজার ৪০০। উপকূলে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আশ্রয় দিতে গিয়েও হিমশিম খেতে হচ্ছে ইতালিকে।
অভিবাসীদের বেশিরভাগই এসেছেন আইভরি কোস্ট থেকে। এছাড়াও আছেন গিনি, পাকিস্তান, তিউনিশিয়া, মিশর এবং বাংলাদেশের নাগরিকেরা।