আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সুদানের সশস্ত্র বাহিনী (এসএএফ) এবং আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর লড়াই অব্যাহত থাকায় দেশটি ছেড়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা। কিছু কিছু দেশ তাদের কূটনীতিকদেরও সরিয়ে নিচ্ছে।
রোববার (২৩ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ঘোষণা করেছে যে, তারা সুদানের রাজধানী খার্তুম থেকে তাদের কূটনীতিকদের সরিয়ে নিয়েছে। ইতালি, বেলজিয়াম, তুরস্ক, জাপান এবং নেদারল্যান্ডস বলেছে যে, তারা রোববার থেকে তাদের নাগরিক ও কূটনৈতিকদের সুদান থেকে সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে।
এদিকে দূতাবাস ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় ফ্র্যান্সের একটি কনভয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এই হামলার জন্য সুদানের এসএএফ এবং আরএসএফ বাহিনী এই হামলার জন্য একে অপরকে দায়ী করেছে।
ফরাসী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা তাদের দেশের নাগরিকদের পাশাপাশি ইইউ এবং সহযোগী দেশগুলোর নাগরিকদেরও সরিয়ে নিতে কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, সব মার্কিন কর্মী ও তাদের পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। খার্তুমে মার্কিন দূতাবাসের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। ১০০ জনেরও বেশি স্পেশাল অপারেশন ফোর্সের একটি দল তাদের সরিয়ে আনতে সক্ষম হয়।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডগলাস সিমস বলেন, রোববার সকালে মার্কিন বাহিনী ‘ফাস্ট অ্যান্ড ক্লিন’ নামক বিশেষ অভিযান চালিয়ে হেলিকপ্টার দিয়ে প্রায় ১০০ জনকে সরিয়ে আনতে সক্ষম হয়। নেভি সিল এবং আর্মি স্পেশাল ফোর্সের ১০০ জনের বেশি সদস্য এই অভিযানে অংশ নেয় এবং এক ঘণ্টারও কম সময় মাটিতে ছিল।
দেশটিতে আনুষ্ঠানিক কোনো যুদ্ধবিরতি না চললেও, দেখা যাচ্ছে আরএসএফ তাদের মিশনের সময় মার্কিন হেলিকপ্টারগুলোতে গুলি না করতে সম্মত হয়েছিল।
খার্তুমে মার্কিন দূতাবাস এখন বন্ধ রয়েছে। দূতাবসের টুইটারে অ্যাকাউন্টে বলা হয়েছে, সরকারের পক্ষে বেসরকারি মার্কিন নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়া যথেষ্ট নিরাপদ নয়।
যুক্তরাজ্য খার্তুমের বাইরের একটি বিমানঘাঁটি থেকে কিছু শিশুসহ কূটনীতিক এবং তাদের পরিবারকে দেশটির বাইরে নিয়ে এসেছে। সুদানে থাকা যুক্তরাজ্যের বাকি নাগরিকদের অবস্থান জানতেও পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে বলেছে যুক্তরাজ্য সরকার। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লিভারলি বলেন, তাদের সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থাগুলো ‘গুরুতরভাবে সীমিত। তবে ব্রিটিশ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ চলছে।
শনিবার (২২ এপ্রিল) উপসাগরীয় দেশগুলোর পাশাপাশি মিশর, পাকিস্তান এবং কানাডার প্রায় ১৫০ জনকে সমুদ্রপথে সৌদি আরবের জেদ্দা বন্দরে সরিয়ে নেওয়া হয়।
এদিকে, এমন খবর রয়েছে যে সুদানে ইন্টারনেট ব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। এর ফলে খার্তুম এবং অন্যান্য শহরে আটকে পড়াদের সাহায্যের কাজ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
প্রসঙ্গত, সুদানের সামরিক নেতৃত্বের দুই অংশের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কারণে গত সপ্তাহে সহিংসতা শুরু হয়। এক সপ্তাহ ধরে চলা সহিংসতায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৪০০ লোক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি মানুষ।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, দশ হাজার থেকে বিশ হাজার মানুষ সুদান ছেড়ে পালিয়েছে পাশের দেশ চাদে আশ্রয় নেওয়ার জন্য। এদের বেশিরভাগ নারী ও শিশু।