Dhaka , Friday, 29 March 2024

জীবনে সফলতা বয়ে আনে সালাত

  • Robiul Islam
  • আপডেট টাইম : 08:02:02 am, Wednesday, 24 May 2023
  • 42 বার

ইসলাম ডেস্ক: সফলতা মানবহৃদয়ের কাক্সিক্ষত অনুষঙ্গ। আমরা সবাই সফল হতে চাই। সফলতার সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠতে চাই। জীবনকে ফুলে ফলে সাজিয়ে তুলতে চাই। জীবন হোক কর্মের দীপ্তিতে সমুজ্জ্বল, সফলতার সৌরভে সুরভিত- এ কামনা প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে।

জীবনজুড়ে আমাদের অনিঃশেষ ছুটে চলাও সেই একই উদ্দেশ্যে- সফলতার স্নিগ্ধ ফল্গুধারার স্পর্শ পাওয়া। কাক্সিক্ষত পরম আরাধ্য সেই সফলতার দেখা মিলবে কীভাবে? কোন সে পথ যেখানে চললে সফলতার মানজিলে পৌঁছে যাওয়া সহজ হবে? সর্বোপরি দুনিয়ার জীবন হবে প্রশান্তিময় আর আখিরাতে মিলবে চূড়ান্ত সফলতা তথা জান্নাতুল ফিরদাউসের হৃদয়কাড়া অকল্পনীয় নেয়ামতরাজি? আসুন মানব জাতির সফলতার মূলমন্ত্র কোরআন মাজিদের কাছ থেকে জেনে নিই সফলতা লাভের অব্যর্থ সেই পাথেয়র গল্প। সালাত বা নামাজ। হ্যাঁ, মানব জীবনে সফলতার অনন্য পাথেয় এ সালাত।

সালাত মানুষের জীবন সুন্দর করে। আলোকিত করে। যাপিত জীবনে মনোমুগ্ধকর সুরভী ছড়ায় এ সালাত। সালাত ব্যক্তিকে সফলতার কাক্সিক্ষত মানজিলে পৌঁছে দেয়। সালাত সফল মুমিনের প্রধান গুণ। ইরশাদ হয়েছে- “নিশ্চয়ই সফলতা লাভ করেছে মুমিনগণ, যারা তাদের সালাতে আন্তরিকভাবে বিনীত” (সুরা মুমিনুন- ২৩ : ১-২)। আয়াতে সফল মুমিনের অনন্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে সালাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

সালাত মুমিনের জীবনকে সফল ও অর্থবহ করে তুলে। সালাত ব্যক্তিকে পাক-পবিত্র জীবন বোধে উদ্দীপ্ত করে। আল্লাহর অবাধ্যতা ও নাফরমানির অনিঃশেষ অন্ধকার থেকে পুণ্যের আলোকময় রাজপথে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায়। যথার্থভাবে সালাত আদায়ে অভ্যস্ত ব্যক্তির মনন মানসে অনির্বচনীয় সুখানুভূতি ও পবিত্র আমেজ বিরাজ করে।

ফলে তার জন্য অন্যায় অশ্লীল গর্হিত কাজ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়ে যায়। এভাবে সালাত ব্যক্তিকে অশ্লীল ও গুনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগায়। ইরশাদ হয়েছে- “নিশ্চয়ই নামাজ ব্যক্তিকে অশ্লীল ও গুনাহের কাজ থেকে বিরত রাখে” (সুরাতুল আনকাবুত- ২৯ : ৪৫)

আমরা সবাই আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী। আল্লাহর রহমত পেতে চাতক পাখির মতো সবাই অপেক্ষমাণ থাকি। আর এই রহমতপ্রাপ্তির অনন্য একটি উপায় হচ্ছে- একাগ্রচিত্তে সালাত আদায়ের চেষ্টা করে যাওয়া। ইরশাদ হয়েছে- “তোমরা সালাত কায়েম কর, জাকাত দাও এবং রসুলের আনুগত্য কর। এতে তোমাদের ওপর রহমত বর্ষণ করা হবে”। (সুরাতুন নূর- ২৪:৫৬)

সালাত ব্যক্তির জীবনকে গোনাহ থেকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে তুলে। আর গুনাহমুক্ত স্বচ্ছ জীবনযাপন করা আমাদের সবারই পরম আকাক্সক্ষার। এই আকাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে একাগ্রচিত্তে সালাত আদায়ের বিকল্প নেই। আবু হুরায়রাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত : রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- “তোমাদের কারও বাড়ির দরজার সামনেই যদি একটি নদী থাকে আর সে ওই নদীতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে তাহলে কি তার শরীরে কোনো ময়লা থাকতে পারে? এ ব্যাপারে তোমরা কী বল? সবাই বলল; না, তার শরীরে কোনো প্রকার ময়লা থাকবে না। তখন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- এটিই পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের দৃষ্টান্ত। এর দ্বারা আল্লাহ তায়ালা সব পাপ মুছে নিঃশেষ করে দেন। (সহিহ মুসলিম- ১৪০৮)

শীতকালে গাছের পাতা ঝরে যায়। এটা প্রকৃতির সাধারণ নিয়ম। একজন মানুষ যখন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে তার গোনাহগুলোও গাছের পাতার মতো ঝরে যায়।

হজরত আবু যার গিফারী (রা.) বর্ণনা করেন- শীতকালে একদিন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইরে বের হলেন। আমি তার সঙ্গেই ছিলাম। গাছ থেকে তখন পাতা ঝরছিল। নবীজি গাছের দুটো ডাল হাত দিয়ে ধরলে সেখান থেকে স্বাভাবিকভাবেই পাতা ঝরতে থাকে। তখন নবীজি আমাকে ডাক দিয়ে বলেন- শোন আবু যার! একজন মুসলমান যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে তখন এই গাছের পাতাগুলোর ন্যায় তার গোনাহগুলোও ঝরে যায়। (মুসনাদে আহমাদ- ২১৫৫৬) ।

আমরা সবাই জান্নাতে যেতে চাই। জান্নাতুল ফিরদাউসের মনোমুগ্ধকর নহরের পাশে বসে গল্পে গল্পে কেটে যাবে বেলা, আনন্দের উচ্ছলতায় মেতে উঠব আমরা- আমাদের সবার হৃদয় কোণে এ স্বপ্ন দোলা দিয়ে যায় প্রায়শই। কল্প পাখায় ভর করে যেন উড়তে থাকি জান্নাতের সবুজ প্রান্তরে। মানবহৃদয়ের পরম আরাধ্য এই জান্নাতের দেখা মিলবে কীভাবে? জান্নাতের অকল্পনীয় সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে মেতে উঠতে আমাদের করণীয় বা কী? আপনি সালাতে নিয়মিত হোন। একাগ্রচিত্তে ধীরস্থিরভাবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করুন।

আপনার রব আপনাকে আপনার পরম আকাক্সিক্ষত জান্নাতে পৌঁছে দিবেন। হজরত উবাদা ইবনে সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- আল্লাহ বান্দার ওপর যে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আবশ্যক করে দিয়েছেন যে ব্যক্তি তা গুরুত্বপূর্ণ সহকারে আদায় করবে কোনোরূপ অবহেলা ছাড়া আল্লাহ সে ব্যক্তির জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিবেন। (সুনানে আবু দাউদ-১৪২০)

এভাবে সালাত ব্যক্তির জীবনকে সৌন্দর্যমন্ডিত করে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে তুলে, জীবনে রহমতের ফল্গুধারা বয়ে আনে এবং জীবনের চূড়ান্ত সফলতা জান্নাতের নয়নাভিরাম উদ্যানে পৌঁছে দেয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Robiul Islam

জনপ্রিয় সংবাদ

জীবনে সফলতা বয়ে আনে সালাত

আপডেট টাইম : 08:02:02 am, Wednesday, 24 May 2023

ইসলাম ডেস্ক: সফলতা মানবহৃদয়ের কাক্সিক্ষত অনুষঙ্গ। আমরা সবাই সফল হতে চাই। সফলতার সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠতে চাই। জীবনকে ফুলে ফলে সাজিয়ে তুলতে চাই। জীবন হোক কর্মের দীপ্তিতে সমুজ্জ্বল, সফলতার সৌরভে সুরভিত- এ কামনা প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে।

জীবনজুড়ে আমাদের অনিঃশেষ ছুটে চলাও সেই একই উদ্দেশ্যে- সফলতার স্নিগ্ধ ফল্গুধারার স্পর্শ পাওয়া। কাক্সিক্ষত পরম আরাধ্য সেই সফলতার দেখা মিলবে কীভাবে? কোন সে পথ যেখানে চললে সফলতার মানজিলে পৌঁছে যাওয়া সহজ হবে? সর্বোপরি দুনিয়ার জীবন হবে প্রশান্তিময় আর আখিরাতে মিলবে চূড়ান্ত সফলতা তথা জান্নাতুল ফিরদাউসের হৃদয়কাড়া অকল্পনীয় নেয়ামতরাজি? আসুন মানব জাতির সফলতার মূলমন্ত্র কোরআন মাজিদের কাছ থেকে জেনে নিই সফলতা লাভের অব্যর্থ সেই পাথেয়র গল্প। সালাত বা নামাজ। হ্যাঁ, মানব জীবনে সফলতার অনন্য পাথেয় এ সালাত।

সালাত মানুষের জীবন সুন্দর করে। আলোকিত করে। যাপিত জীবনে মনোমুগ্ধকর সুরভী ছড়ায় এ সালাত। সালাত ব্যক্তিকে সফলতার কাক্সিক্ষত মানজিলে পৌঁছে দেয়। সালাত সফল মুমিনের প্রধান গুণ। ইরশাদ হয়েছে- “নিশ্চয়ই সফলতা লাভ করেছে মুমিনগণ, যারা তাদের সালাতে আন্তরিকভাবে বিনীত” (সুরা মুমিনুন- ২৩ : ১-২)। আয়াতে সফল মুমিনের অনন্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে সালাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

সালাত মুমিনের জীবনকে সফল ও অর্থবহ করে তুলে। সালাত ব্যক্তিকে পাক-পবিত্র জীবন বোধে উদ্দীপ্ত করে। আল্লাহর অবাধ্যতা ও নাফরমানির অনিঃশেষ অন্ধকার থেকে পুণ্যের আলোকময় রাজপথে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায়। যথার্থভাবে সালাত আদায়ে অভ্যস্ত ব্যক্তির মনন মানসে অনির্বচনীয় সুখানুভূতি ও পবিত্র আমেজ বিরাজ করে।

ফলে তার জন্য অন্যায় অশ্লীল গর্হিত কাজ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়ে যায়। এভাবে সালাত ব্যক্তিকে অশ্লীল ও গুনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগায়। ইরশাদ হয়েছে- “নিশ্চয়ই নামাজ ব্যক্তিকে অশ্লীল ও গুনাহের কাজ থেকে বিরত রাখে” (সুরাতুল আনকাবুত- ২৯ : ৪৫)

আমরা সবাই আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী। আল্লাহর রহমত পেতে চাতক পাখির মতো সবাই অপেক্ষমাণ থাকি। আর এই রহমতপ্রাপ্তির অনন্য একটি উপায় হচ্ছে- একাগ্রচিত্তে সালাত আদায়ের চেষ্টা করে যাওয়া। ইরশাদ হয়েছে- “তোমরা সালাত কায়েম কর, জাকাত দাও এবং রসুলের আনুগত্য কর। এতে তোমাদের ওপর রহমত বর্ষণ করা হবে”। (সুরাতুন নূর- ২৪:৫৬)

সালাত ব্যক্তির জীবনকে গোনাহ থেকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে তুলে। আর গুনাহমুক্ত স্বচ্ছ জীবনযাপন করা আমাদের সবারই পরম আকাক্সক্ষার। এই আকাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে একাগ্রচিত্তে সালাত আদায়ের বিকল্প নেই। আবু হুরায়রাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত : রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- “তোমাদের কারও বাড়ির দরজার সামনেই যদি একটি নদী থাকে আর সে ওই নদীতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে তাহলে কি তার শরীরে কোনো ময়লা থাকতে পারে? এ ব্যাপারে তোমরা কী বল? সবাই বলল; না, তার শরীরে কোনো প্রকার ময়লা থাকবে না। তখন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- এটিই পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের দৃষ্টান্ত। এর দ্বারা আল্লাহ তায়ালা সব পাপ মুছে নিঃশেষ করে দেন। (সহিহ মুসলিম- ১৪০৮)

শীতকালে গাছের পাতা ঝরে যায়। এটা প্রকৃতির সাধারণ নিয়ম। একজন মানুষ যখন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে তার গোনাহগুলোও গাছের পাতার মতো ঝরে যায়।

হজরত আবু যার গিফারী (রা.) বর্ণনা করেন- শীতকালে একদিন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইরে বের হলেন। আমি তার সঙ্গেই ছিলাম। গাছ থেকে তখন পাতা ঝরছিল। নবীজি গাছের দুটো ডাল হাত দিয়ে ধরলে সেখান থেকে স্বাভাবিকভাবেই পাতা ঝরতে থাকে। তখন নবীজি আমাকে ডাক দিয়ে বলেন- শোন আবু যার! একজন মুসলমান যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে তখন এই গাছের পাতাগুলোর ন্যায় তার গোনাহগুলোও ঝরে যায়। (মুসনাদে আহমাদ- ২১৫৫৬) ।

আমরা সবাই জান্নাতে যেতে চাই। জান্নাতুল ফিরদাউসের মনোমুগ্ধকর নহরের পাশে বসে গল্পে গল্পে কেটে যাবে বেলা, আনন্দের উচ্ছলতায় মেতে উঠব আমরা- আমাদের সবার হৃদয় কোণে এ স্বপ্ন দোলা দিয়ে যায় প্রায়শই। কল্প পাখায় ভর করে যেন উড়তে থাকি জান্নাতের সবুজ প্রান্তরে। মানবহৃদয়ের পরম আরাধ্য এই জান্নাতের দেখা মিলবে কীভাবে? জান্নাতের অকল্পনীয় সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে মেতে উঠতে আমাদের করণীয় বা কী? আপনি সালাতে নিয়মিত হোন। একাগ্রচিত্তে ধীরস্থিরভাবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করুন।

আপনার রব আপনাকে আপনার পরম আকাক্সিক্ষত জান্নাতে পৌঁছে দিবেন। হজরত উবাদা ইবনে সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- আল্লাহ বান্দার ওপর যে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আবশ্যক করে দিয়েছেন যে ব্যক্তি তা গুরুত্বপূর্ণ সহকারে আদায় করবে কোনোরূপ অবহেলা ছাড়া আল্লাহ সে ব্যক্তির জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিবেন। (সুনানে আবু দাউদ-১৪২০)

এভাবে সালাত ব্যক্তির জীবনকে সৌন্দর্যমন্ডিত করে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে তুলে, জীবনে রহমতের ফল্গুধারা বয়ে আনে এবং জীবনের চূড়ান্ত সফলতা জান্নাতের নয়নাভিরাম উদ্যানে পৌঁছে দেয়।