Dhaka , Friday, 19 April 2024

ফরজ সালাত শেষে জিকিরের ফজিলত

  • Robiul Islam
  • আপডেট টাইম : 08:06:20 am, Saturday, 3 June 2023
  • 57 বার

ইসলাম ডেস্ক: সব প্রশংসা একমাত্র আল্লাহপাকের। অগণিত দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর। মহানবী (সা.) তাঁর উম্মতের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের জন্য সালাত শেষে যেসব জিকির বা দোয়া শিখিয়েছেন তার কিছু অংশ মুসলিম ভাইদের উদ্দেশে বিনয়ের সঙ্গে তুলে ধরছি : প্রথমেই মহান আল্লাহপাকের আদেশ তুলে ধরছি।

তিনি বলেন, “যখন তোমার সালাত সমাপ্ত করবে তখন দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ অর্থাৎ তাঁর জিকির করবে (সুরা নিসা আয়াত-১০৩)। তাই রসুল (সা.) ফরজ সালাত শেষে জিকির করতেন এবং কী কী জিকির করতে হবে তা সুস্পষ্টভাবে তাঁর উম্মতকে শিখিয়ে গেছেন। একমাত্র বৃষ্টির জন্য দোয়া করা ব্যতীত রসুল (সা.) ফরজ সালত শেষে কোনো সময়েই সম্মিলিত মোনাজাত করেননি। রসুল (সা.) ফরজ সালাত শেষে যেসব জিকির ও দোয়া করতেন সহিহ হাদিসের আলোকে কতিপয় জিকির/দোয়া এবং এর ফজিলত নিচে তুলে ধরা হলো :

ফরজ সালাতের সালাম ফেরানোর পর তিনি বলতেন,

১। আল্লাহু আকবার (একবার) সহিহ মুসলিম। সহিহ আল বুখারিতে এসেছে তিনি বলতেন আস্তাগফিরুল্লাহ (তিনবার) দুটো অনুসরণযোগ্য।
২। আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম তাবারাকতা ইয়া জালজালালিওয়াল ইকরাম (একবার) (বুখারি ও মুসলিম)। এ দোয়াতে আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা বর্ণনাসহ তার কাছে রহমত ও বরকত কামনা করা হচ্ছে।

৩। আল্লাহপাকের একত্মবাদের ঘোষণা : আশহাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওহ দাহু লা-শারিকালাহু লাহুল মূলক ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লে শাইয়িন কাদির (সহিহ মুসলিম) একবার অতঃপর।

৪। সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার আল্লাহু আকবার ৩৩ বার অর্থাৎ এতে আল্লাহর পবিত্রতা, সব প্রশংসা একমাত্র তাঁর জন্য এবং তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ ঘোষণা করা হচ্ছে। যা ওজনে সবচেয়ে ভারী। অতঃপর উপরোক্ত শাহাদাতের বাণী একবার পাঠ করে ১০০ পূর্ণ করা। এ দোয়া যে পাঠ করবে আল্লাহতায়ালা তার সগিরা গুনাহ আসমান জমিনের সমান হলেও তা মাফ করে দেবেন (সহিহ মুসলিম)। সহিহ মুসলিমে আরও বলা হয়েছে- উপরোক্ত বাক্যগুলোর প্রত্যেক বাক্য একবার জিকির করা একবার আল্লাহর ওয়াস্তে দান করার সমতুল্য ১/৪৯৮ হাদিস নং-৭২০।

৫। সুরা-ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস ফজর ও মাগরিবের সালাত শেষে প্রতিটি সুরা তিনবার করে পাঠ এবং অন্যান্য ওয়াক্তে প্রতি সুরা একবার করে পাঠ করা। ফজিলত: যে ব্যক্তি নিয়মিত উল্লিখিত সুরাগুলো পাঠ করবে আল্লাহ সুবহানুতায়ালা তাকে এক সালাত/নামাজ থেকে পরবর্তী সালাতের সময়কাল পর্যন্ত নিরাপদে রাখবেন। ৬। আয়াতুল কুরসি অর্থাৎ সুরা বাকারার ২২৫ নম্বর আয়াত। (একবার পাঠ) এ আয়াতে মহান আল্লাহর একত্মবাদের ঘোষণাসহ কুরসির কথা বলা হয়েছে। সকালে পাঠ করলে সন্ধ্যা পর্যন্ত এবং রাতে পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত সে আল্লাহর জিম্মায় থাকবে। (সহিহ আল বুখারি)। প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর পাঠ করলে মৃত্যু ছাড়া তার জান্নাতে প্রবেশে কোনো বাধা থাকবে না। শিরকমুক্ত ইমানদারদের জন্য এটা সবচেয়ে বড় নেয়ামত। এর চেয়ে বড় নেয়ামত আর কী হতে পারে।

৭। সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার : ফজরের সালাতের পর একবার এবং মাগরিবের ফরজ সালাতের পর একবার পাঠ করতে হবে। এ দোয়া হচ্ছে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার শ্রেষ্ঠ দোয়া। (সহিহ বুখারি ৫৮৬৪)।

৮। আল্লাহুম্মা সাল্লি ওয়া সাল্লাম আলা নাবীয়্যানা মুহাম্মাদ দশবার অথবা দরুদে ইব্রাহীম পাঠ। প্রতিবার পাঠকারীর ওপর আল্লাহ দশবার রহমত বর্ষণ, ১০টি গুনাহ মাফ এবং দশটি নেকি প্রদান করবেন।

৯। সুবহানল্লাহি ওয়া বিহামদিহি আ’দাদা খলকিহি ওয়া রিদা নাফছিহি ওয়াজিনাতা আরশিহি ওয়ামিদা-দাকালিমাতিহি (তিনবার), এখানে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণার কথা বলা হচ্ছে, তার সৃষ্টিকুলের সংখ্যার পরিমাণ, তিনি যতক্ষণ সন্তুষ্ট না হবেন ততক্ষণ পর্যন্ত, তাঁর আরশের ওজনের পরিমাণ, পৃথিবীর সব নদী, সমুদ্রের পানি দ্বারা কালি করা হলে এর দ্বারা তার প্রশংসা লেখার সংখ্যার পরিমাণ জিকির করার কথা বলা হয়েছে। এরূপ প্রশংসা করা হলে আল্লাহ অবশ্যই সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Robiul Islam

ফরজ সালাত শেষে জিকিরের ফজিলত

আপডেট টাইম : 08:06:20 am, Saturday, 3 June 2023

ইসলাম ডেস্ক: সব প্রশংসা একমাত্র আল্লাহপাকের। অগণিত দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর। মহানবী (সা.) তাঁর উম্মতের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের জন্য সালাত শেষে যেসব জিকির বা দোয়া শিখিয়েছেন তার কিছু অংশ মুসলিম ভাইদের উদ্দেশে বিনয়ের সঙ্গে তুলে ধরছি : প্রথমেই মহান আল্লাহপাকের আদেশ তুলে ধরছি।

তিনি বলেন, “যখন তোমার সালাত সমাপ্ত করবে তখন দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ অর্থাৎ তাঁর জিকির করবে (সুরা নিসা আয়াত-১০৩)। তাই রসুল (সা.) ফরজ সালাত শেষে জিকির করতেন এবং কী কী জিকির করতে হবে তা সুস্পষ্টভাবে তাঁর উম্মতকে শিখিয়ে গেছেন। একমাত্র বৃষ্টির জন্য দোয়া করা ব্যতীত রসুল (সা.) ফরজ সালত শেষে কোনো সময়েই সম্মিলিত মোনাজাত করেননি। রসুল (সা.) ফরজ সালাত শেষে যেসব জিকির ও দোয়া করতেন সহিহ হাদিসের আলোকে কতিপয় জিকির/দোয়া এবং এর ফজিলত নিচে তুলে ধরা হলো :

ফরজ সালাতের সালাম ফেরানোর পর তিনি বলতেন,

১। আল্লাহু আকবার (একবার) সহিহ মুসলিম। সহিহ আল বুখারিতে এসেছে তিনি বলতেন আস্তাগফিরুল্লাহ (তিনবার) দুটো অনুসরণযোগ্য।
২। আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম তাবারাকতা ইয়া জালজালালিওয়াল ইকরাম (একবার) (বুখারি ও মুসলিম)। এ দোয়াতে আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা বর্ণনাসহ তার কাছে রহমত ও বরকত কামনা করা হচ্ছে।

৩। আল্লাহপাকের একত্মবাদের ঘোষণা : আশহাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওহ দাহু লা-শারিকালাহু লাহুল মূলক ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লে শাইয়িন কাদির (সহিহ মুসলিম) একবার অতঃপর।

৪। সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার আল্লাহু আকবার ৩৩ বার অর্থাৎ এতে আল্লাহর পবিত্রতা, সব প্রশংসা একমাত্র তাঁর জন্য এবং তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ ঘোষণা করা হচ্ছে। যা ওজনে সবচেয়ে ভারী। অতঃপর উপরোক্ত শাহাদাতের বাণী একবার পাঠ করে ১০০ পূর্ণ করা। এ দোয়া যে পাঠ করবে আল্লাহতায়ালা তার সগিরা গুনাহ আসমান জমিনের সমান হলেও তা মাফ করে দেবেন (সহিহ মুসলিম)। সহিহ মুসলিমে আরও বলা হয়েছে- উপরোক্ত বাক্যগুলোর প্রত্যেক বাক্য একবার জিকির করা একবার আল্লাহর ওয়াস্তে দান করার সমতুল্য ১/৪৯৮ হাদিস নং-৭২০।

৫। সুরা-ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস ফজর ও মাগরিবের সালাত শেষে প্রতিটি সুরা তিনবার করে পাঠ এবং অন্যান্য ওয়াক্তে প্রতি সুরা একবার করে পাঠ করা। ফজিলত: যে ব্যক্তি নিয়মিত উল্লিখিত সুরাগুলো পাঠ করবে আল্লাহ সুবহানুতায়ালা তাকে এক সালাত/নামাজ থেকে পরবর্তী সালাতের সময়কাল পর্যন্ত নিরাপদে রাখবেন। ৬। আয়াতুল কুরসি অর্থাৎ সুরা বাকারার ২২৫ নম্বর আয়াত। (একবার পাঠ) এ আয়াতে মহান আল্লাহর একত্মবাদের ঘোষণাসহ কুরসির কথা বলা হয়েছে। সকালে পাঠ করলে সন্ধ্যা পর্যন্ত এবং রাতে পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত সে আল্লাহর জিম্মায় থাকবে। (সহিহ আল বুখারি)। প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর পাঠ করলে মৃত্যু ছাড়া তার জান্নাতে প্রবেশে কোনো বাধা থাকবে না। শিরকমুক্ত ইমানদারদের জন্য এটা সবচেয়ে বড় নেয়ামত। এর চেয়ে বড় নেয়ামত আর কী হতে পারে।

৭। সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার : ফজরের সালাতের পর একবার এবং মাগরিবের ফরজ সালাতের পর একবার পাঠ করতে হবে। এ দোয়া হচ্ছে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার শ্রেষ্ঠ দোয়া। (সহিহ বুখারি ৫৮৬৪)।

৮। আল্লাহুম্মা সাল্লি ওয়া সাল্লাম আলা নাবীয়্যানা মুহাম্মাদ দশবার অথবা দরুদে ইব্রাহীম পাঠ। প্রতিবার পাঠকারীর ওপর আল্লাহ দশবার রহমত বর্ষণ, ১০টি গুনাহ মাফ এবং দশটি নেকি প্রদান করবেন।

৯। সুবহানল্লাহি ওয়া বিহামদিহি আ’দাদা খলকিহি ওয়া রিদা নাফছিহি ওয়াজিনাতা আরশিহি ওয়ামিদা-দাকালিমাতিহি (তিনবার), এখানে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণার কথা বলা হচ্ছে, তার সৃষ্টিকুলের সংখ্যার পরিমাণ, তিনি যতক্ষণ সন্তুষ্ট না হবেন ততক্ষণ পর্যন্ত, তাঁর আরশের ওজনের পরিমাণ, পৃথিবীর সব নদী, সমুদ্রের পানি দ্বারা কালি করা হলে এর দ্বারা তার প্রশংসা লেখার সংখ্যার পরিমাণ জিকির করার কথা বলা হয়েছে। এরূপ প্রশংসা করা হলে আল্লাহ অবশ্যই সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন।