Dhaka , Friday, 19 April 2024

বিদ্যুতের প্রভাব পানিতে, বিপাকে নগরবাসী

  • Robiul Islam
  • আপডেট টাইম : 08:34:43 am, Tuesday, 6 June 2023
  • 37 বার

নিউজ ডেস্ক: তাপপ্রবাহের এই মৌসুমে রাজধানীতে পানির চাহিদা থাকে প্রায় ২৬৫ কোটি লিটার। বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণে গভীর নলকূপ থেকে উঠছে না পানি, তীব্র সংকটে মানুষ। তৃষ্ণায় বুকের ছাতি ফাটলেও নল ঘুরালে দেখা নেই এক ফোঁটা পানির। বেশ কিছু এলাকায় সারা দিন গেলেও মেলে না পানি।

পানির জন্য রাজধানীর মানুষের অবস্থা চাতক পাখির মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, আবাসিক এলাকা উত্তরা, বনশ্রী থেকে শুরু করে মহাখালীর মধ্যপাড়, হাজারীবাড়ি, দক্ষিণখান, কুড়িল, নূরের চালা, উত্তর বাড্ডা, মধ্য বাড্ডা, রামপুরা, মধুবাগ, খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, মিরপুর, মোহাম্মদপুর এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র পানি সংকট।

মধুবাগ এলাকার বাসিন্দা সোয়েব আলী বলেন, তিন দিন ধরে গোসল করতে পারছি না। এর আগে অন্য এলাকায় বন্ধুদের বাসায় গিয়ে গোসল করে এসেছি। কিন্তু কতদিন আর মানুষের বাসায় গিয়ে গোসল, টয়লেট করে আসা যায়। আমাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে গেছে। ভাড়াটিয়া হলে এলাকা পাল্টানো যায় কিন্তু বাড়িওয়ালার তো সে উপায় নেই। তাই এর মধ্যেই থাকতে হচ্ছে।

তীব্র গরম, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মধ্যে রাজধানীবাসীর ওপর মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে পানি সংকট। কোনো জায়গায় দিনের নির্দিষ্ট কিছু সময় পানি আসছে অনেক জায়গায় তাও আসছে না। রান্না, গোসল থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ এবং খাবার পানির জন্য ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।

উত্তরা এলাকার বাসিন্দারা জানান, দোকান থেকে পানি কিনে পান করতে হচ্ছে। এ গরমে পানি ছাড়া দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জীবন-যাপন। গোসল, কাপড় ধোয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। পানি কিনে আর কতদিন চলা সম্ভব। ওয়াসার কার্যালয়ে ধরনা দিয়েও মেলেনি সমাধান।

হাজারীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা পাপিয়া আক্তার বলেন, ট্যাপে একফোঁটা পানি নেই। লাইনে পানির চাপ নেই, কলেও পানি উঠছে না। আগে মাঝে মাঝে পানির সমস্যা হতো। এখন প্রতিদিনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতকাল পাশের বাড়িতে অল্প পানি আসছিল। ওই পানিও ঘোলা, ব্যবহার করার উপযুক্ত না। পানির সমস্যায় আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি। অন্য এলাকা থেকে বালতি, কলসিতে পানি টেনে নিয়ে আসছি।

যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, পাঁচজনের সংসারে রান্না, খাবার পানি কিনে আনছি। কিন্তু গোসল, টয়লেটের দুরবস্থার কথা কাউকে বলে বোঝানোর মতো না। এই দুর্মূল্যের বাজারে কতদিন আর পানি কিনে খাওয়া সম্ভব। লোডশেডিং শুরু হওয়ার পরে সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।

ঢাকা ওয়াসার উপপ্রধান জনতথ্য কর্মকর্তা এ এম মোস্তফা তারেক বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে পানি উত্তোলন এবং সরবরাহে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটর চালু করে পানি তোলা হচ্ছে। কিন্তু পানির চাপ তৈরি হতে ২০-২৫ মিনিট লেগে যায়। গরমের সময় পানির চাহিদা ২৬০-২৬৫ কোটি লিটার থাকে। ঢাকা ওয়াসার পানি উৎপাদন ক্ষমতা ২৭৫-২৮৫ কোটি লিটার। এর মধ্যে ৬৬ শতাংশ ভূ-গর্ভস্থ বাকিটা ভূ-উপরিস্থ। ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনে কোনো সমস্যা নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভূ-গর্ভস্থ পানি তোলায় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের পাম্পগুলোতে বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটর চালু করে পানি তোলা হয়। যেসব পাম্পে জেনারেটর নেই সেগুলোতে মোবাইল জেনারেটর পাঠিয়ে পানি তোলা হয়। এসব সময়ক্ষেপণের ফলে পানির লাইনে চাপ কম থাকে। আশাকরি এ সংকট দ্রুতই সমাধান হবে।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Robiul Islam

বিদ্যুতের প্রভাব পানিতে, বিপাকে নগরবাসী

আপডেট টাইম : 08:34:43 am, Tuesday, 6 June 2023

নিউজ ডেস্ক: তাপপ্রবাহের এই মৌসুমে রাজধানীতে পানির চাহিদা থাকে প্রায় ২৬৫ কোটি লিটার। বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণে গভীর নলকূপ থেকে উঠছে না পানি, তীব্র সংকটে মানুষ। তৃষ্ণায় বুকের ছাতি ফাটলেও নল ঘুরালে দেখা নেই এক ফোঁটা পানির। বেশ কিছু এলাকায় সারা দিন গেলেও মেলে না পানি।

পানির জন্য রাজধানীর মানুষের অবস্থা চাতক পাখির মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, আবাসিক এলাকা উত্তরা, বনশ্রী থেকে শুরু করে মহাখালীর মধ্যপাড়, হাজারীবাড়ি, দক্ষিণখান, কুড়িল, নূরের চালা, উত্তর বাড্ডা, মধ্য বাড্ডা, রামপুরা, মধুবাগ, খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, মিরপুর, মোহাম্মদপুর এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র পানি সংকট।

মধুবাগ এলাকার বাসিন্দা সোয়েব আলী বলেন, তিন দিন ধরে গোসল করতে পারছি না। এর আগে অন্য এলাকায় বন্ধুদের বাসায় গিয়ে গোসল করে এসেছি। কিন্তু কতদিন আর মানুষের বাসায় গিয়ে গোসল, টয়লেট করে আসা যায়। আমাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে গেছে। ভাড়াটিয়া হলে এলাকা পাল্টানো যায় কিন্তু বাড়িওয়ালার তো সে উপায় নেই। তাই এর মধ্যেই থাকতে হচ্ছে।

তীব্র গরম, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মধ্যে রাজধানীবাসীর ওপর মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে পানি সংকট। কোনো জায়গায় দিনের নির্দিষ্ট কিছু সময় পানি আসছে অনেক জায়গায় তাও আসছে না। রান্না, গোসল থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ এবং খাবার পানির জন্য ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।

উত্তরা এলাকার বাসিন্দারা জানান, দোকান থেকে পানি কিনে পান করতে হচ্ছে। এ গরমে পানি ছাড়া দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জীবন-যাপন। গোসল, কাপড় ধোয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। পানি কিনে আর কতদিন চলা সম্ভব। ওয়াসার কার্যালয়ে ধরনা দিয়েও মেলেনি সমাধান।

হাজারীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা পাপিয়া আক্তার বলেন, ট্যাপে একফোঁটা পানি নেই। লাইনে পানির চাপ নেই, কলেও পানি উঠছে না। আগে মাঝে মাঝে পানির সমস্যা হতো। এখন প্রতিদিনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতকাল পাশের বাড়িতে অল্প পানি আসছিল। ওই পানিও ঘোলা, ব্যবহার করার উপযুক্ত না। পানির সমস্যায় আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি। অন্য এলাকা থেকে বালতি, কলসিতে পানি টেনে নিয়ে আসছি।

যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, পাঁচজনের সংসারে রান্না, খাবার পানি কিনে আনছি। কিন্তু গোসল, টয়লেটের দুরবস্থার কথা কাউকে বলে বোঝানোর মতো না। এই দুর্মূল্যের বাজারে কতদিন আর পানি কিনে খাওয়া সম্ভব। লোডশেডিং শুরু হওয়ার পরে সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।

ঢাকা ওয়াসার উপপ্রধান জনতথ্য কর্মকর্তা এ এম মোস্তফা তারেক বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে পানি উত্তোলন এবং সরবরাহে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটর চালু করে পানি তোলা হচ্ছে। কিন্তু পানির চাপ তৈরি হতে ২০-২৫ মিনিট লেগে যায়। গরমের সময় পানির চাহিদা ২৬০-২৬৫ কোটি লিটার থাকে। ঢাকা ওয়াসার পানি উৎপাদন ক্ষমতা ২৭৫-২৮৫ কোটি লিটার। এর মধ্যে ৬৬ শতাংশ ভূ-গর্ভস্থ বাকিটা ভূ-উপরিস্থ। ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনে কোনো সমস্যা নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভূ-গর্ভস্থ পানি তোলায় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের পাম্পগুলোতে বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটর চালু করে পানি তোলা হয়। যেসব পাম্পে জেনারেটর নেই সেগুলোতে মোবাইল জেনারেটর পাঠিয়ে পানি তোলা হয়। এসব সময়ক্ষেপণের ফলে পানির লাইনে চাপ কম থাকে। আশাকরি এ সংকট দ্রুতই সমাধান হবে।’