Dhaka , Tuesday, 16 April 2024

মক্কাতুল মুকাররমার সম্মান ও আদব

  • Robiul Islam
  • আপডেট টাইম : 08:29:44 am, Tuesday, 6 June 2023
  • 43 বার

ইসলাম ডেস্ক: মুমিনের অন্তরে পবিত্র মক্কা নগরীর প্রতি যে শ্রদ্ধাবোধ, তা আবহমানকাল থেকেই চলে আসছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে। যার ফলে এ নগরীর নাম উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে শ্রদ্ধাপূর্ণ বিশেষণ। মহান আল্লাহ এ ঘরকে নগরগুলোর মাতা বলে উল্লেখ করেছেন। ‘আর এভাবে আমি আপনার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ করেছি আরবি ভাষায়, যাতে আপনি সতর্ক করতে পারেন নগরগুলোর মাতা মক্কা ও তার চারদিকের লোকজনকে।’ (সুরা শুরা-৭)

‘ত্বিন, জাইতুন, সিনাই পর্বত এবং এ নিরাপদ নগরীর শপথ।’ (সুরা ত্বিন) ‘শপথ এ নগরীর, আর আপনি এ নগরীর অধিকারী।’ (সুরা বালাদ) ‘নিশ্চয়ই মানব জাতির জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা তো বাক্কায় (মক্কায়) এটা বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারি।’ (সুরা আলে ইমরান) এ নগরীকে নবী করিম (সা.) প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন।

তাই হিজরতের সময় মক্কা ত্যাগকালে তিনি আফসোস করে বলেছিলেন, ‘তুমি কতই না উত্তম নগরী এবং আমার কাছে কতই না প্রিয় নগরী, আমার সম্প্রদায় যদি আমাকে বের করে না দিত, তাহলে তোমাকে ছেড়ে অন্য কোথাও আমি বসবাস করতাম না।’ (বোখারি) হজরত ইবরাহিম (আ.) বলেছিলেন, ‘হে আমার পরওয়ারদেগার! একে তুমি নিরাপদ নগরী কর এবং এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখেরাতে ইমান আনে, তাদের ফলমূল থেকে জীবিকা দান কর।’ (সুরা বাকারা) এ সেই নগরী, যেখানে মহানবী (সা.) জন্মগ্রহণ করেছেন, তার বাল্যকাল, কৈশোর ও যৌবন অতিবাহিত করে বার্ধক্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছেন। জীবনের ৫৩ বছর এ নগরীতেই কাটিয়েছেন, এখানেই তিনি ওহি ও নবুয়ত লাভ করেছেন।

এখান থেকেই তিনি মেরাজে গমন করেছেন। আল্লাহর পবিত্র ঘর কাবা শরিফ এ পবিত্র মক্কা নগরীতেই অবস্থিত। যাকে আল্লাহ তাঁর নিজের ঘর বলে অভিহিত করেছেন। ‘তোমরা আমার পবিত্র ঘরকে তাওয়াফকারী, এতেকাফকারী, রুকু ও সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র কর।’ (সুরা বাকারা) ‘আল্লাহ পবিত্র কাবাকে সম্মানিত ঘর এবং মানুষের কল্যাণের জন্য নির্ধারণ করেছেন।’ (সুরা মায়িদা) ‘আমি আদিষ্ট সেই ঘরের প্রভুর ইবাদত করতে, যাকে তিনি হারাম (সম্মানিত) সাব্যস্ত করেছেন।’ (সুরা নামল) নবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমার উম্মত ততদিন পর্যন্ত নিরাপদে থাকবে, যতদিন পর্যন্ত তারা মক্কার যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করবে। যখন তারা এর অন্যথা করবে তখন তারা ধ্বংস হয়ে যাবে।’ (মিশকাত)

মক্কা শরিফ ও কাবাঘরের সম্মান করা এবং অত্যন্ত বিনয় ও আদবের সঙ্গে সব আচার-আচরণ অবলম্বন করা মুসলমানমাত্রই কর্তব্য। তাই ইমাম বোখারি তাঁর সহি গ্রন্থে ‘মক্কা প্রবেশের আগে গোসল’ শিরোনামে হাদিস বর্ণনা করেছেন। হজরত ইবনে ওমর (রা.) যখন মক্কা শরিফে আসতেন তখন জি-তুওয়া নামক স্থানে রাতযাপন করতেন। ভোরে গোসল করতেন এবং সেখানে ফজরের নামাজ আদায় করতেন, পরে মক্কায় প্রবেশ করতেন এবং এই মর্মে হাদিস বর্ণনা করতেন যে, নবী করিম (সা.) এরূপই করতেন (বোখারি, মুসলিম)।

হারাম সীমানায় শিকার করা, এমনকি শিকারিকে শিকারের ব্যাপারে পথপ্রদর্শন ও সাহায্য-সহযোগিতা করাও যে হারাম, তা এই হারাম শরিফের সম্মানের কারণেই। আবহমানকাল থেকেই হারাম শরিফ নিরাপদ ও সম্মানিত স্থান বলেই গণ্য হয়ে আসছে। যুদ্ধরত আরব গোত্রগুলো সেই জাহেলিয়ার যুগেও শত্রুকে হাতের মুঠোয় পেয়েও হারাম সীমানায় বধ করত না বা তার বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করত না। আর এই সম্মান কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে। নবী (সা.) ইরশাদ করেন, কেয়ামত অবধি এটা আল্লাহ-প্রদত্ত সম্মানের ভিত্তিতে সম্মানিত। সুতরাং হারাম এলাকায় কাঁটাযুক্ত গাছও কাটা যাবে না এবং তার শিকার জন্তুকে হাঁকানো যাবে না (বোখারি, মুসলিম)। কেননা আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, যে হারাম শরিফে প্রবেশ করবে সে সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ। কেননা হারাম শরিফে অবস্থানরত সবাই আল্লাহর সম্মানিত মেহমান।

চিরশত্রুর সঙ্গেও সেখানে কোনোরূপ অসদাচরণ করা যাবে না। কোনোরূপ আঘাত করা ও কষ্ট দেওয়া যাবে না। তাই হারাম শরিফে প্রবেশের আগেই উত্তমরূপে গোসল করে শরীর পাক, কাপড় পাক, মানসিক ও মানবিক পবিত্রতা অর্জন করে প্রবেশ করা সুন্নত। যখন মহা বরকতময় আল্লাহর ঘর বায়তুল্লাহ শরিফ নজরে আসবে, তখন আল্লাহু আকবার এবং লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ উচ্চারণ করবে। হজরত ইবনে ওমর ওই সময় বলতেন বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার।

বাবুস সালাম দিয়ে মসজিদে হারামে প্রবেশ করা উত্তম। নবী কারিম (সা.) মসজিদুল হারামে বায়তুল্লাহ দর্শনকালে দুই হাত ঊর্ধ্বে তুলে এরূপ দোয়া করতেন- হে আল্লাহ! এ ঘরের মানসম্মান, মর্যাদা বৃদ্ধি করুন এবং যারা এ ঘরে হজ বা ওমরাহ করে তাদেরও মানমর্যাদা, সম্ভ্রম বৃদ্ধি করুন। বায়তুল্লাহ শরিফ প্রথম দর্শনকালে দুই হাত তুলে যত দোয়া করা হয়, সমস্ত দোয়া আল্লাহ কবুল করে নেন। তাই পথ থেকে সরে, ভিড় থেকে দূরে নিরাপদ স্থানে দাঁড়িয়ে একিন ও বিশ্বাসের সঙ্গে মনপ্রাণ উজাড় করে আল্লাহর কাছে দোয়া করা। এরপর কাবাচত্বরে সর্বপ্রথম তওয়াফ করা, তারপর মাকামে ইবরাহিমে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা, এরপর জমজম পানি পান করা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Robiul Islam

মক্কাতুল মুকাররমার সম্মান ও আদব

আপডেট টাইম : 08:29:44 am, Tuesday, 6 June 2023

ইসলাম ডেস্ক: মুমিনের অন্তরে পবিত্র মক্কা নগরীর প্রতি যে শ্রদ্ধাবোধ, তা আবহমানকাল থেকেই চলে আসছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে। যার ফলে এ নগরীর নাম উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে শ্রদ্ধাপূর্ণ বিশেষণ। মহান আল্লাহ এ ঘরকে নগরগুলোর মাতা বলে উল্লেখ করেছেন। ‘আর এভাবে আমি আপনার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ করেছি আরবি ভাষায়, যাতে আপনি সতর্ক করতে পারেন নগরগুলোর মাতা মক্কা ও তার চারদিকের লোকজনকে।’ (সুরা শুরা-৭)

‘ত্বিন, জাইতুন, সিনাই পর্বত এবং এ নিরাপদ নগরীর শপথ।’ (সুরা ত্বিন) ‘শপথ এ নগরীর, আর আপনি এ নগরীর অধিকারী।’ (সুরা বালাদ) ‘নিশ্চয়ই মানব জাতির জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা তো বাক্কায় (মক্কায়) এটা বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারি।’ (সুরা আলে ইমরান) এ নগরীকে নবী করিম (সা.) প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন।

তাই হিজরতের সময় মক্কা ত্যাগকালে তিনি আফসোস করে বলেছিলেন, ‘তুমি কতই না উত্তম নগরী এবং আমার কাছে কতই না প্রিয় নগরী, আমার সম্প্রদায় যদি আমাকে বের করে না দিত, তাহলে তোমাকে ছেড়ে অন্য কোথাও আমি বসবাস করতাম না।’ (বোখারি) হজরত ইবরাহিম (আ.) বলেছিলেন, ‘হে আমার পরওয়ারদেগার! একে তুমি নিরাপদ নগরী কর এবং এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখেরাতে ইমান আনে, তাদের ফলমূল থেকে জীবিকা দান কর।’ (সুরা বাকারা) এ সেই নগরী, যেখানে মহানবী (সা.) জন্মগ্রহণ করেছেন, তার বাল্যকাল, কৈশোর ও যৌবন অতিবাহিত করে বার্ধক্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছেন। জীবনের ৫৩ বছর এ নগরীতেই কাটিয়েছেন, এখানেই তিনি ওহি ও নবুয়ত লাভ করেছেন।

এখান থেকেই তিনি মেরাজে গমন করেছেন। আল্লাহর পবিত্র ঘর কাবা শরিফ এ পবিত্র মক্কা নগরীতেই অবস্থিত। যাকে আল্লাহ তাঁর নিজের ঘর বলে অভিহিত করেছেন। ‘তোমরা আমার পবিত্র ঘরকে তাওয়াফকারী, এতেকাফকারী, রুকু ও সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র কর।’ (সুরা বাকারা) ‘আল্লাহ পবিত্র কাবাকে সম্মানিত ঘর এবং মানুষের কল্যাণের জন্য নির্ধারণ করেছেন।’ (সুরা মায়িদা) ‘আমি আদিষ্ট সেই ঘরের প্রভুর ইবাদত করতে, যাকে তিনি হারাম (সম্মানিত) সাব্যস্ত করেছেন।’ (সুরা নামল) নবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমার উম্মত ততদিন পর্যন্ত নিরাপদে থাকবে, যতদিন পর্যন্ত তারা মক্কার যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করবে। যখন তারা এর অন্যথা করবে তখন তারা ধ্বংস হয়ে যাবে।’ (মিশকাত)

মক্কা শরিফ ও কাবাঘরের সম্মান করা এবং অত্যন্ত বিনয় ও আদবের সঙ্গে সব আচার-আচরণ অবলম্বন করা মুসলমানমাত্রই কর্তব্য। তাই ইমাম বোখারি তাঁর সহি গ্রন্থে ‘মক্কা প্রবেশের আগে গোসল’ শিরোনামে হাদিস বর্ণনা করেছেন। হজরত ইবনে ওমর (রা.) যখন মক্কা শরিফে আসতেন তখন জি-তুওয়া নামক স্থানে রাতযাপন করতেন। ভোরে গোসল করতেন এবং সেখানে ফজরের নামাজ আদায় করতেন, পরে মক্কায় প্রবেশ করতেন এবং এই মর্মে হাদিস বর্ণনা করতেন যে, নবী করিম (সা.) এরূপই করতেন (বোখারি, মুসলিম)।

হারাম সীমানায় শিকার করা, এমনকি শিকারিকে শিকারের ব্যাপারে পথপ্রদর্শন ও সাহায্য-সহযোগিতা করাও যে হারাম, তা এই হারাম শরিফের সম্মানের কারণেই। আবহমানকাল থেকেই হারাম শরিফ নিরাপদ ও সম্মানিত স্থান বলেই গণ্য হয়ে আসছে। যুদ্ধরত আরব গোত্রগুলো সেই জাহেলিয়ার যুগেও শত্রুকে হাতের মুঠোয় পেয়েও হারাম সীমানায় বধ করত না বা তার বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করত না। আর এই সম্মান কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে। নবী (সা.) ইরশাদ করেন, কেয়ামত অবধি এটা আল্লাহ-প্রদত্ত সম্মানের ভিত্তিতে সম্মানিত। সুতরাং হারাম এলাকায় কাঁটাযুক্ত গাছও কাটা যাবে না এবং তার শিকার জন্তুকে হাঁকানো যাবে না (বোখারি, মুসলিম)। কেননা আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, যে হারাম শরিফে প্রবেশ করবে সে সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ। কেননা হারাম শরিফে অবস্থানরত সবাই আল্লাহর সম্মানিত মেহমান।

চিরশত্রুর সঙ্গেও সেখানে কোনোরূপ অসদাচরণ করা যাবে না। কোনোরূপ আঘাত করা ও কষ্ট দেওয়া যাবে না। তাই হারাম শরিফে প্রবেশের আগেই উত্তমরূপে গোসল করে শরীর পাক, কাপড় পাক, মানসিক ও মানবিক পবিত্রতা অর্জন করে প্রবেশ করা সুন্নত। যখন মহা বরকতময় আল্লাহর ঘর বায়তুল্লাহ শরিফ নজরে আসবে, তখন আল্লাহু আকবার এবং লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ উচ্চারণ করবে। হজরত ইবনে ওমর ওই সময় বলতেন বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার।

বাবুস সালাম দিয়ে মসজিদে হারামে প্রবেশ করা উত্তম। নবী কারিম (সা.) মসজিদুল হারামে বায়তুল্লাহ দর্শনকালে দুই হাত ঊর্ধ্বে তুলে এরূপ দোয়া করতেন- হে আল্লাহ! এ ঘরের মানসম্মান, মর্যাদা বৃদ্ধি করুন এবং যারা এ ঘরে হজ বা ওমরাহ করে তাদেরও মানমর্যাদা, সম্ভ্রম বৃদ্ধি করুন। বায়তুল্লাহ শরিফ প্রথম দর্শনকালে দুই হাত তুলে যত দোয়া করা হয়, সমস্ত দোয়া আল্লাহ কবুল করে নেন। তাই পথ থেকে সরে, ভিড় থেকে দূরে নিরাপদ স্থানে দাঁড়িয়ে একিন ও বিশ্বাসের সঙ্গে মনপ্রাণ উজাড় করে আল্লাহর কাছে দোয়া করা। এরপর কাবাচত্বরে সর্বপ্রথম তওয়াফ করা, তারপর মাকামে ইবরাহিমে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা, এরপর জমজম পানি পান করা।