বিশেষ লেখা : জাষ্টিস ফর ফ্লোয়েড। জর্জ ফ্লোয়েড তোমাকে নিয়ে কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে,তোমার জন্য কিছুটা সময় দেয়া হবে আত্বার তৃপ্তি।তুমি মরে গেলে,মরতে হবে তোমাকে একদিন তবে এ মৃত্যু কামনা করেনি পরিবার,বিশ্ববাসীও না।তোমার যন্ত্রনাকাতর প্রাণ যাওয়াকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিনা।
তুমি কৃষ্ণবর্ণের আমার কি তাতে,নাহ্ সেটা আমি বলছিনা,আমি জানতাম তুমি মানুষ।আমার মত রক্তের প্রবাহ তোমার দেহে,সুখ দুঃখ কষ্ট হাসি সবই তোমার ছিলো কিন্তু শেতাঙ্গ নরপশুটা তোমাকে বাচঁতে দিলোনা,তোমার কষ্টে তাকে ব্যথিত করেনি,ব্যথিত পুরো বিশ্ব।ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে,তোমার যন্ত্রনা কতটা কঠিন ছিলো ভিডিও ক্লিপটা তার সাক্ষি।তোমার চলে যাওয়া বিবেকবান মানুষ মেনে নিতে পারছেনা তাইতো আজ রাজপথ উত্তাল,প্রতিবাদি কণ্ঠ সোচ্চার তবে তুমি আর ফিরে আসবেনা।পরিবার তোমাকে দেখতে পাবেনা,জানিনা তোমার মা বাবা স্ত্রী সন্তান আছেন কি না,থাকলে পরিবার বাকি জীবন বয়ে বেড়াবে কষ্টের ভারী বোঝা,পৃথিবীর সব মানুষ একদিন সত্যি ভুলে যাবে।নতুন কিছু একটা আভির্বাবের সাথে সাথেই স্মৃতির অন্তরালে চলে যাবে তুমি তবে পরিবারের অন্তরটাকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে স্মৃতিটা সরিয়ে নিতে পারবেনা কেউ।
আচ্ছা তুমি কালো তাই বলে কি তোমার বেঁচে থাকার অধিকার নেই,মুক্ত বাতাসে ভয়ভীতির উর্ধে চলার অধিকারটা কেড়ে নিলো কেমনে মানুষরুপী জানোয়ারটা।শুনো ফ্লোয়েড সে দেখতে অবিকল মানুষের মত,চামড়াটাও ধবধবে সাদা কিন্তু সে যে অমানুষ তুমি নিজেও হয়তো ভাবোনি।সে যদি জানতো তোমার মা কত না আদর দিয়েছেন গলায়,পরিবারের কতটা কষ্ট হবে তোমার বেঁচে থাকার আকুতি ও ছটফট করে অবশেষে নিরব হয়ে যাওয়া।সে হয়তো কোন মস্তিষ্কবিকৃত নারী পুরুষের অবৈধ মিলনের ফসল নতুবা কনডম ফেটে অপরিকল্পিত আগমনের কূলাঙ্গার।হৃদয়হীন এই জানুয়ারটার মৃত্যু কেন মায়ের পেটেই হলোনা,মা’য়ের জরায়ু থেকে বের হবার সময় কেন মরে গেলোনা তাহলেতো তোমার এই পাষাণের হাতে মৃত্যু নিশ্চিত হতোনা,তুমি বেঁচে যেতে।তোমার ঈশ্বর সে জবাব তোমাকে দিবেন নিশ্চয়ই।
নরপশুর বুকটা মোটেও কাঁপেনি,তোমার আর্তনাদ কর্ণভেদ করে হৃদয় স্পর্শ করেনি সে তোমার দূর্ভাগ্য।হয়ত সে ভেবেছে তুমি কালো,জানতো না তুমি মানুষ,তুমিও কারো ভাই কারো বোন,সন্তান বা স্বামী,তাদের কলিজা ফেটে যাচ্ছে তোমার এই করুণ যাত্রা।ফ্লোয়েড,সে তোমাকে মানুষ মনে করেনি,যেমনটি মার্টিন লোথার কিংয়ের বেলায় হলো।এই পাপিষ্ঠদের অত্যাচার ঈশ্বর আর সহ্য করতে পারছেন না,সামান্য অদৃশ্য জীবানূ দিয়ে সমস্ত পৃথিবীকে অস্হীর রেখেছেন এবং মাঝেমধ্য কিছু সামর্থবান ব্যক্তিদের মৃত্যু দিয়ে জানিয়ে দিচ্ছেন তোমার ঈশ্বরের ক্ষমতা কতটুকু।
জন্মিলে মরিতে হবে তুমি বেঁচে গেলে ফ্লোয়েড,তোমার মৃত্যুটা হয়েছে মাত্র দু থেকে তিন মিনিটের মধ্যেই যদিও অনেক লম্বা সময় লম্পটটা অত্যাচার চালিয়ে যায় কিন্তু কে জানে তার মৃত্যু যন্ত্রনা কত ভয়ংকর হবে.!তার প্রতিটা মূহুর্ত হয়তো মৃত্যুর কঠিন কষ্টভোগ করতে হবে,ঈশ্বরের কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে থাকবে।
তোমার পূর্বপুরুষ উন্নত জীবনের আকাঙ্খা বুকে পোষণ করে হয়তো পাড়ি জমিয়েছিলেন কিন্তু গণতান্ত্রিক দেশ তোমাকে বাঁচাতে ব্যর্থ হলো,তাদের পুলিশ বিভাগের অদক্ষতা ও অশালীণ ব্যবহার সারাবিশ্বে সমালোচিত।তুমি কোন অপরাধে এই নির্মম বর্বরোচিত হত্যার শিকার মানুষ জানতে চায় না,শুধু জানতে চায় ওরা কি সভ্য জাতি?সভ্যতার সংজ্ঞায়ন কি দিবালোকে শ্বাসরুদ্ধ করে মানুষের বাঁধা উপেক্ষা করে সুঠামদেহী মানুষটাকে নিস্তেজ করা,নিথর দেহটাকে টেনেহেঁছড়ে এম্বুলেন্সে তোলা.!হায়রে সভ্যতা,হায়রে সভ্য জাতি তোমরা আবার বিশ্ব মোড়ল,পঞ্চায়েতের মাতব্বর।
বিধাতা সব দেখেছেন,তোমার মৃত্যু যন্ত্রনা বুঝেছেন,নীল আকাশ ভেদ করে নীরব হওয়া পর্যন্ত্য প্রতিটি শব্দ রেকর্ড হয়েছে,তোমার ঈশ্বরের উপর রইলো বিচারের ভার।তোমার ঈশ্বর কিন্তু হক বিচার করবেন,কৃষ্ণাঙ্গ বলে উনার কাছে কিছু নেই,তুমি উনার সৃষ্ট।তুমি চিন্তা করনা এই পিচডালা রাস্তাও রাজসাক্ষ্য হিসেবে প্রস্তুত।
কত নিষ্ঠুরতার শিকার হলে,নির্মমভাবে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ধরণী ত্যাগ করলে,সেই বিভিষিকাময় সময়ে নিশ্চয় পরিবারের কারো ছবি সামনে আসে,তাদের কাছেও হয়তো ফরিয়াদ করেছো তুমি আরো কিছুটা কাল পৃথিবীর আলো বাতাস পেতে চাও।সব চেষ্টা তোমার বিফলে তবে ঈশ্বর ফয়সালা করবেন,ততক্ষণে ঘুমাও তুমি।
বাবুল রহমান,কলামিস্ট, লন্ডন।